বউ যখন কাজের মেয়ে [১]

লেখক- মান্না ইসলাম মাহিম

Disclaimer: এটি একটা মিষ্টি প্রেমের রোমান্টিক উপন্যাস। এই গল্পটাতে কোন ইরোটিক কিছু নেই।

পর্ব-০১
———————————–
ভাঙা বেড়ার ফাঁক দিয়ে ভোরের প্রথম আলো এসে প্রিয়ার মুখে পড়ল। প্রিয়া ওপাশে ফিরে শোয়ার সময় অনুভব করলো গায়ে প্রচন্ড ব্যথা। চোখ খোলার চেষ্টা করলো। মাথাও ব্যথা করছে। হাত দিয়ে মাথা চেপে ধরলো।গায়ে জ্বর উঠেছে, আস্তে আস্তে উঠে বসলো। কিন্তু চোখ খুলতে ইচ্ছা করছে না। পায়ের কাছে রাখা ছেঁড়া কাঁথাটা গায়ে পেচিয়ে বসে রইলো। মানুষ যখন অসুস্থ থাকে, তখন নিজেকে খুব অসহায় মনে হয়। তবে কাছে আপনজন থাকলে অসহায়বোধ কিছুটা কম লাগে।
প্রিয়ার বাবা মা মারা গেছে ওকে ছোট রেখে, সেই থেকে প্রিয়া মামার সংসারে বড় হয়েছে। প্রিয়ার বাবার সামান্য কিছু সম্পত্তি ছিল, তা দিয়ে মামা প্রিয়াকে মেট্রিক পাশ করিয়েছে। তার জন্য মামীর মুখে রাতদিন গালমন্দ শুনতে হয় মামাকে। মামা এই বাড়ির ঘর জামাই। মামা অবশ্য এই বাড়িতে থাকতে চায়নি, কিন্তু মামা সামান্য বেতনের চাকরি করে। সেই টাকা দিয়ে থাকা খাওয়া কষ্ট হয়ে যাবে, তাই এই বাড়িতে পড়ে আছে। মামার অসহায় মুখটা দেখলে প্রিয়ার খুব কষ্ট হয়। মামার ইচ্ছা করে প্রিয়াকে বাবা মায়ের আদর ভালোবাসা দিতে, কিন্তু তার স্ত্রীর জন্য পারে না। কারণ মামী চাই না প্রিয়াকে কেউ আদর করুক। প্রিয়াকে মামী কাজের মেয়ের মতো রাখে, তাতেই প্রিয়া খুশি। কারণ প্রিয়ার আর যাওয়ার কোনো জায়গা নেই।
প্রিয়া ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়ালো, কাঁচা মাটিতে পাড়া দিতেই প্রিয়ার শরীর কেঁপে উঠলো। ইচ্ছে করছে শুয়ে পড়তে, কিন্তু ইচ্ছে করলেও প্রিয়া আর আরাম করতে পারবে না। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত সংসারের সব কাজ প্রিয়াকেই করতে হয়। ঘর থেকে বেরিয়ে বাইরে এসে দাঁড়ালো। উঠানের মাটি যেনো আরো বেশি ঠান্ডা মনে হচ্ছে। প্রিয়া অনেক কষ্টে উঠান ঝাড়ু দিয়ে নাস্তা তৈরী করতে বসলো। গ্রামের বাড়ি, ছোট ছোট ছেলে -মেয়েরা ঘুম থেকে উঠেই দৌড়াতে লাগলো। মাটির চুলার ধোঁয়া এসে প্রিয়ার চুখে লাগলো চোখ লাল হয়ে গেল। প্রিয়া চোখ মুছে রুটি বানাতে লাগলো। মামী এসে প্রিয়ার সামনে দাঁড়ালো। মামীকে দেখলেই ভয়ে প্রিয়ার শরীর ঠান্ডা হয়ে যায়
মামী রেগে বলতে লাগল:-এতো বেলা অইলো, এহনো নাস্তা তৈরি অয় নাই। আইজ কি না খাওয়াইয়া রাখবি?
প্রিয়া:-মামী গায়ে অনেক জ্বর ছিলো,তাই উঠতে একটু দেরি হয়ে গেছে। আপনি ঘরে গিয়ে বসুন। আমি নাস্তা নিয়ে আসছি।
মামী:-খবরদার আমার সামনে কহনো তোর অসুখের কথা কবি না। এই বাড়িতে থাকতে অইলে কাম কইরা ভাত খাওন লাগবো, শরীর সুস্থ না অসুস্থ তা আমি দেখুম না। আমি চাই কাম। চিৎকার শুনে মামা আর শীলা দৌড়ে এলো।
মামা:-কি হয়েছে রাহেলা?
মামী:-এতো বেলা অইছে এহনো নবাবজাদীর নাস্তা তৈরি অয় নাই,কয় কাইল রাইতে বলে জ্বর অইছে, তাই উঠতে আইজ দেরি অইছে, ওরে তুমি সাবধান কইরা দেও, কহনো যাতে ওর অসুখের কতা আমার সামনে না কয়।
মামা:-রাহেলা তুমিও তো একটি মেয়ের মা,নিজের মেয়েকে এতো আদর করো,এতো ভালোবাসো, আর এই অসহায় মেয়েটার সাথে একটু ভালোভাবে কথাও বলতে পার না তাই বলে।
মামী:-ভাগ্নির লাইগা যদি এতোই দরদ লাগে, তাইলে আলাদা বাড়ি ভাড়া কইরা রাখলেই পারো। মামা:-যদি আমার সেই সামর্থ থাকতো তাহলে দূরে কোথাও পাঠিয়ে দিতাম, তবুও তো এই যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতো।
প্রিয়া এসে মামার সামনে দাঁড়ালো।
প্রিয়া:-মামা আমার এখানে কোন কষ্ট হচ্ছে না, আর সংসারের কাজ তো সবাইকে করতে হয়। আমিও করি। আপনি এসব নিয়ে চিন্তা করবেন না।
মামী রেগে চলে গেল। প্রিয়া দাঁড়িয়ে রইলো। শীলা এসে প্রিয়ার কপালে হাত রেখে বলল,
শীলা:-আপু তোমার তো অনেক জ্বর, তুমি গিয়ে শুয়ে থাক, আজ সব কাজ আমি করবো।
প্রিয়া শীলার দিকে তাকিয়ে একটু হাসলো,তারপর একটা দীর্ঘ নিঃস্বাস ফেলে বললো
প্রিয়া:-শীলা তুই পড়তে বস, আমি নাস্তা নিয়ে আসছি।
শীলা:-না তুমি যাও আমি সব করছি
প্রিয়া:-বললাম না যা গিয়ে পড়তে বস
শীলা মাথা নিচু করে চলে গেলো।এই শীলাই প্রিয়ার একমাত্র সঙী, বয়স তেরো চৌদ্দ হবে, বয়স কম হলেও প্রিয়ার সুখ-দুঃখ সবই বুঝে। শীলা আর মামা আছে বলেই প্রিয়া সব দুঃখ ভুলে থাকতে পারে। প্রিয়া তাড়াতাড়ি নাস্তা তৈরি করতে লাগলো।
এভাবে আরো ২টা বছর কেটে যায়।
এই ২টা বছরে একএক করে প্রিয়ার তিনটি বিয়ে ভেঙে যায়,তিনটি বিয়ে ভেঙে যাওয়ার পর প্রিয়ার মামা প্রিয়ার জন্য আরো ছেলে দেখতে চেয়েছিল কিন্তু প্রিয়া না করে দেয় যে সে আর কোন দিনিই বিয়ে করবে না,তার কপালে বিয়ে নেই বারবার বিয়ে ভেঙে যায় লোকদের নানান ধরনের কথা শুনতে তার ভালো লাগেনা।
সে যেমনি আছে এমনি থাকতে চায়।
“আজকে শীলাকে ছেলে পক্ষ দেখতে আসছে,
শীলা মন খারাপ করে বসে আছে।
প্রিয়া:-কিরে তুই এখনো বসে,ঐদিকে তো সবাই তোর জন্য বসে আছে চল তারাতারি রেডি হয়েনে।
শীলা:-থাকুক বসে,আমি কিছুতেই তাদের সামসে যাব না।
প্রিয়া:-কেন?
শীলা:-আপু আমি এইবিয়ে কিছুইতেই করবো না
প্রিয়া:-আরে ছবির থেকেও ছেলেটা দেখতে অনেক সুন্দর একদম রাজপুত্র।আর ছেলেটা নাকি এখন তার বাবা কম্পানিতেই চাকরী করে।
শীলা:-তবুও আমি এইবিয়ে করবো না।
প্রিয়া:-সবকিছুই তো ভালোই আছে,তাহলে তোর বিয়েটা করতে সমস্যাটা কি?তুই কি কাউকে পছন্দ করিস নাকি?করলে বল আমি গিয়ে না করে দিচ্ছি।
শীলা:-না সেটা না।
প্রিয়া:-তাহলে?
প্রিয়া হচ্ছে শীলার বড় আর বড়বনের বিয়ে নাহতেই ছোট্টবনের বিয়ে এতে লোকে নানানধনের বাজে কথা বলবে, প্রিয়াকে নিয়ে গ্রামের লোকজন অনেক হাসা-হাসি করবে।
সে জন্য শীলা এখনি বিয়ে করতে চাইছে না।
শীলা:-আগে তোমার বিয়ে হবে,তুমি শ্বশুড় বাড়ি যাবে তারপর আমি বিয়ে করবো।
প্রিয়া:-ওহ্,এবার বুঝতে পারছি তোর সমস্যাটা কি?দেখ এইসব নিয়ে এখন আমি আর ভাবিনা,আমার জন্য তো মামা অনেক চেষ্টা করলো কিন্তু কোনো না কোনো কারণে সেটা ভেঙে যায়।তোর এখনো পুরো জীবনটা আছে তুই শুধু শুধু আমার জন্য তোর জীনবটা নষ্ট করিস না।
শীলা:-আচ্ছা আপু তোমার কি ছেলেটা কে পছন্দ হয়েছে?
প্রিয়া:-হ্যাঁ কেন?(অবাক হয়ে)
শীলা:-না কিছু না,চলো আমাকে রেডি করে দাও
এইবলে শীলা আয়নার সামনে বসে পড়লো।
প্রিয়া ঠিক বুঝলো না।একটু আগে সে বলল বিয়ে করবে না আর তার মুখে পছন্দের কথা শুনে এখন নিজেই রেডি হতে বসলো কেন?।
সবাই বসে আছে মেয়ে দেখবে বলে।একটু পর প্রিয়া শীলাকে নিয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে আসলো।
এসে শীলাকে বসিয়ে দিল,শীলা মাথা নিচু করে বসে আছে।
মাহিমের মা/ছেলের মা:-বাহ্ মেয়ে তো দেখতে খুবি মিষ্টি,আমার তো পছন্দ হয়েছে তুমি কি বলো মাহিমের বাবা?
মাহিমের বাবা/রায়হান সাহেব:-আমারও তো মেয়ে পছন্দ হয়েছে,এখন তাহলে কথা-বাত্রারা বলে বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করে ফেলি
মাহিমের বোন/অর্পা:-বাবা শুধু আমাদের পছন্দ হলে তো হবেনা, যে বিয়ে করবে তারও তো একটা পছন্দ-অছন্দের ব্যাপার আছে তাই না?
মাহিমের দুলাভাই/হুমম সেটাও ঠিক,আচ্ছা দুজন একটু আলাদা রুমে পাঠিয়ে দিন দুজনে একটু আলাদে ভাবে কথা বলুক
প্রিয়ার মামী:-হুমম,এই প্রিয়া যা শীলাকে আর জামাই বাবা অন্যরুমে নিয়া যা।
এরপর প্রিয়া শীলাকে আর মাহিমকে অন্যরুমে নিয়ে গেল।আর প্রিয়া রুম থেকে বেড়িয়ে গেল।
একটু পর প্রিয়া সেই রুমে আবার ঢুকতেই মাহিমের সাথে ধাক্কা লেগে প্রিয়া পরে যাচ্ছিল ঠিক তখন মাহিম প্রিয়ার কমড়ে একহাত ধরে কাছে টেনে নেয়।
দুজনি একদম চুপ কেউ কোন কথা বলছে না,শুধু দুজন-দুজনার চোঁখের দিকে তাকিয়ে আছে।
প্রিয়ার কিছু চুল তার কপালে এসে পরেছে মাহিম হাত দিয়ে সড়িয়ে দিতে যাচ্ছিল ঠিক তখনি প্রিয়া চমকে উঠে নিজেকে ছাড়িয়ে নিল। বলল:
প্রিয়া:-দুঃখিত আমি আসলে দেখতে পারিনি।(লজ্জিত ভাবে)বলেই দৌড়ে রুম থেকে বেড়ি গেল।আর মাহিম শুধু চুপ করে দাড়িয়ে প্রিয়ার চলে যাওয়াটা দেখছিল।
এরপর বিয়ে দিন-তারিখ ঠিক করলো ৭দিন পর তাদের বিয়ে।
রাতের বেলা প্রিয়া রান্না-বান্না শেষ করে হাত-মুখ ধুয়ে রুমে এসে একটু ফ্রেশ হচ্ছি,এমস সময় শীলার ফোনটা বেজে উঠলো।
প্রিয়া ফোনটা হাতে নিয়ে দেখলো রং নাম্বার(কোন নাম দিয়েই শেভ করা নেই)
প্রিয়া ফোনটা হাতে নিয়ে শীলাকে ডাখছিল।
একবার কেটে গেল আবার ফোন আসলো শীলা না আসাতেই প্রিয়া ফোনটা রিসিভ করলো।
প্রিয়া:-হ্যালো আসসালামু-আলাইকুম।
ফোনের ঐদিক থেকে:-ওআলাইকুম-সালাম।
প্রিয়া:-কে?
:-আপনি কে?
প্রিয়া:-আমি শীলার বোন “প্রিয়া
:-ওহ্,আমি মাহিম
প্রিয়া মাহিমের নামটা শুনা মাত্রই চমকে উঠলো আর তার পরে যাওয়াটা তার চোঁখের সামনে ভেসে উঠলো।
মাহিম:-হ্যাঁলো
প্রিয়া কিছু বলছেনা চুপ করে আছে
মাহিম:-এই যে কথা বলছেন না কেন?
প্রিয়া শুধু মাহিম তাকে ধরেছিল সেটাই ভাবছে।
মাহিম:-এই যে হাড়িয়ে গেলেন নাকি?
শীলা:-কে ফোন করেছে আপু(রুমে ঢুকতে ঢুকতে)
প্রিয়া চমকে উঠে ফোনটা নামিয়ে নিল।
শীলা:-কার ফোন?
প্রিয়া কিছু না বলে ফোনটা শীলার হাতে ধরিয়ে রুম থেকে দৌড়ে গেল।
এরপর শীলা কথা বলতে লাগলো মাহিমের সাথে।
এভাবে আরও ৩দিন যাওয়া পর।
রাতের বেলা খাওয়া-দাওয়া শেষ করে প্রিয়া আর শীলা ঘুমিয়ে ছিল রাত ১২টা ফোনের শব্দে প্রিয়ার ঘুম ভেঙে গেল।প্রিযা ঘুম ঘুম চোখে তাকিয়ে দেখলো মাহিম।
প্রিয়া উঠে বসে পরলো কি করবে বুঝতে পারছেনা।ফোনটা রিসিভ না করায় কেটে গেল।
আবার ফোন আসলো প্রিয়া শীলার দিকে তাকিয়ে দেখলো শীলা ঘুমিয়ে আছে।এতরাতে তাকে ডাকাটা ঠিক হবেনা।প্রিয়া ফোনটা রিসিভ না করে রেখে দিয়ে সুয়ে পড়লো
বারবার ফোন আসছিল কিন্তু প্রিয়া ফোনটা রিসিভ করছেনা।আবার ফোন আসলো এবার কেন জানি প্রিয়া ফোনটা রিসিভ না করে থাকতে পারছিল না,তাই ফোনটা রিসিভ করলো।
মাহিম:-কি ব্যাপার ফোনটা রিসিভ করছিলেন না কেন?
প্রিয়া:-(কাপা কাপা কন্ঠে) শীলা ঘুমিয়ে পরেছে আমি প্রিয়া।
মাহিম:-হুম,আমি জানি তাই তো বারবার ফোন দিচ্ছিলাম
প্রিয়া কি বলবে বুঝতে পারছেনা চুপ করে আছে।
মাহিম:-হ্যাঁলো কথা বলছেন কেন?
প্রিয়া:-(কাপা কাপা কন্ঠেই)শীলাকে ডেকে দিব?
মাহিম:-ও ঘুমচ্ছে ঘুমোক,আমরা একটু কথা বলি
প্রিয়া:-আমার ঘুম পাচ্ছে আমি ঘুমাবো
এইবলেই প্রিয়া ফোনটা কেটে দিল।
এভাবেই প্ররায় প্রতিদিনি প্রিয়া আর মাহিমের ১/২মিনিট করে কথা হতো।
আস্তে আস্তে প্রিয়া আর মাহিম অনেকটাই কাছের কেউ মনে করে কথা বলতে থাকে।
বিয়ের আগের দিন মাহিম শীলাকে তার সাথে দেখা করতে বলে একটা রেস্টুরেন্টে,সাথে প্রিয়াকে আসতে বলে।
“বিয়ের আগের দিন”
রেস্টুরেন্টে প্রিয়া,শীলা আর মাহিম একি টেবিলে বসে কফি খাচ্ছিল।প্রিয়া একটা নীল শাড়ি পড়েছে হাতে নীল চুড়ি বিবাহিত মহিলাদের মতো সাধারন ভাবে সেজেছে সুন্দর বউ বউ লাগছিল প্রিয়াকে।
প্রিয়া লজ্জিত ভাবে মাথা নিচু করে কফি খাচ্ছিল আর তার কিছু চুল কপালে এসে পড়ছে আর প্রিয়া সেটা বিরক্ত হয়ে বারবার সড়িয়ে দিচ্ছিল আর মাহিম সেটা অন্যরকম একটা দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে দেখছিল।
একটু পর শীলার ফোন বেজে উঠাতেই
শীলা:-আচ্ছা তোমরা একটু কথা বল আমি আসছি
এইবলে শীলা উঠে চলে গেল।একদিকে প্রিয়া আর একদিকে মাহিম বসে আছে।
মাহিম:-একটা কথা বলার ছিল?
প্রিয়া:-শীলা আসুক(ভয় ভয় করে)
মাহিম:-কথাটা আমি আগে আপনাকে বলতে চাই,তারপর আপনি সবাইকে সেটা বলবেন।
প্রিয়া:-হুম,বলুন(মাথা নিচু করে নাগা দিয়ে)
মাহিম:-দেখুন আমি আপনার বোনকে বিয়ে করতে পারবো না।
কথা শুনে প্রিয়া চমকে উঠলো।
প্রিয়া:-কেন শীলাকে আপনার পছন্দ হয়নি?
মাহিম:-হুম হয়েছে,বাট তেমন ভাবেনা যেমন ভাবে আপনাকে আমার পছন্দ হয়েছে।
প্রিয়া:-মানে?(অবক দৃষ্টিতে তাকিয়ে)
মাহিম:-মানেটা হলো যে আমি শীলাকে বিয়ে করতে চাইনা,আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই।
যেদিন আমি তোমাকে প্রথম সুয়ে ছিলাম তোমার ঐ মায়া ভড়া চোঁখের দিকে তাকিয়ে ছিলাম সেদিন থেকেই আমি তোমার ভালোবাসার মায়ার জালে পড়েগেছি।
কথা গুলো শুনে প্রিয়ার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়লো।
প্রিয়া:-(কাপা কাপা কন্ঠে)কিক কি সব আজে-বাজে কথা বলছেন?
মাহিম প্রিয়ার হাতটা ধরে বলে লাগলো।
মাহিম:-বিশ্বাস করো প্রিয়া তোমার ঐ মায়া ভড়া চোঁখে যেদিন আমি আমার পৃথিবীটা দেখেছিলাম সেদিন থেকেই আমি একটা রাত ঠিক মতো ঘুমতে পারিনি শুধ বারবার তোমার ঐ মুখটা আমার সামনে ভেসে উঠতো,মন চাইতো বারবার তোমার কাছে যাই, তোমার সাথে থাকি কথা বলি তোমাকে ভালোবাসি।প্রিয়া তোমাকে ছাড়া আমি আর কিছুই ভাবতে পরছিনা “আই লাভ ইউ প্রিয়া”I Really Love you
প্রিয়া:-(হাতটা ছানোর চেষ্টা করে)হাতটা ছাড়ুন মাহিম বাবু।
মাহিম:-প্রিয়া তুমি জাস্ট হ্যাঁ বলো আমি এইবিয়ে কিছুতেই হতে দিব না।তুমি শুধু বলো যে তুমি আমাকে বিয়ে করবে(দুহাত দিয়ে শক্ত করে ধরেই)
প্রিয়া:-(হাতটা ছাড়ানোর চেষ্টা করেই(হাতটা ছাড়ুন বলছি মাহিম বাবু(রাগি কন্ঠে)
মাহিম:-তুমি আগে হ্যাঁ বল
প্রিয়া:-হাতটা ছাড়ুন(এইবলে হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে ঠাসসস করে একটা চড় বসিয়ে দিল মাহিমের গালে)
রেস্টুরেন্টের সবাই তাদের দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো।মাহিম উঠে দাড়িয়ে মাথাটা নিচু করলো কারণ মাহিমের হলেন একজন নামি-দামি মানুষ অনাকে অনেকেই অনেক ভালো ভাবেই চিনে আর মাহিম অনার একমাত্র ছেলে।
প্রিয়া:-আপনাকে আমি একটা খুব ভালো ভদ্র ফ্যামিলির ছেলে মনে করতাম,কালকে আমার ছোট্টবনের সাথে আপনার বিয়ে আর আজকে আপনি আমাকে এইসব বাজে কথা বলছেন,আপনার একটুও লজ্জা করলো না আমাকে এইকথা গুলো বলতে?
মাহিম:-প্রিয়া আমি তোমাকে ভালোবাসি….
প্রিয়া:-খবরদার আর একটাও বাজে কথা বলবেন না,আপনাকে আমি একদমী পছন্দ করিনা,আপনার এই আসল রুপটা আমি আগে যানতে পারলে আমি কখনই আপনার মতো একটা অসভ্য লোকের সাথে শীলার বিয়েটা হতে দিতাম না।
এইরকম আরো অনেক কিছু বলে সবার সামনে মাহিমকে অপমান করে প্রিয়া রেস্টুরেন্ট থেকে বেড়িয়ে যাচ্ছিল।এমন সময় শীলা ভিতর আসছিল।
শীলা:-আপু কই যাও? কি হয়েছে?
প্রিয়া:-কিছু না চল তারাতারি বাড়িতে যাব
এইবলে শীলাকে নিয়ে প্রিয়া বাড়িতে ফিরলো।
প্রিয়া বাড়িতে এসে রাতের বেলা মন খারাপ করে সুয়ে আছে,আর ভাবছে এই প্রথম কোন ছেলে তাকে ভালোবাসার কথা বলল, বিয়ে করতে চাইলো।এর কোন ছেলে তাকে বিয়ের কথা বলেনি ভালোবাসার কথা বলেনি,সবাই শুধু বলতো ১ ঘন্টায় কত? একরাতে কত? এইসব বাজে কথা বলতো প্রিয়াকে।প্রিয়া সুয়ে সুয়ে কাঁদছে যে সে মাহিমকে সবার সামসে এভাবে থাপ্পড় দেওয়া অপমান করাটা ঠিক হয়নি।আসলে এখানে প্রিয়ারী বা দোষ কি? যেখানে রাত পোহালে ছোট্টবোনের সাথে যার বিয়ে তার মুখে এইসব কথা এটা যে কেউই এমনটাই করতো।
“বিয়ের দিন”
বিয়ের দিন সবাই কানা-কানি করছে শীলা ছোট্ট একটা চিঠি লিখে পালিয়েছে,আর তার বদলে প্রিয়া বউ।এটা শুনে বর পক্ষ কেউই না মেনে চলে যাচ্ছিল প্রিয়াকে বউয়ের সাজে রেখে
প্রিয়া মামা:-রায়হান সাহেব প্লিজ এমনটা করবেন না,এর আগে এই মেয়েটার আরও ৩টি বিয়ে ভেঙেগেছে এবারও এমনটা হলে আমার মা-বাবা মরা মেয়েটার গলায় দরি দেওয়া ছাড়া আর কোন উপায় থাকবে না।(সবার সামনে হাত জোর করে)
রায়হান সাহেব:-দেখুন আপনার যে মেয়ের সাথে আমার ছেলের বিয়ে ঠিক হয়েছিল তাকে ছাড়া আমি আমার ছেলের বিয়ে এইরকম একটা অশিক্ষিত গাইয়া মেয়ের সাথে কখনই হতে দিব না।
প্রিয়ার মামা:-রায়হান সাহেব প্রিয়া অনেক ভালো মেয়ে আপনারা ও কে যা বলবেন ও তাই করবে,দরকার হলে আপনারা ও কে আপনাদের কাজের_মেয়ে করে রাগবেন,শুধু দুবেলা-দুমুঠো ভাত দিলেই হবে,তবুও আমার এই মেয়েটা বাচান প্লিজ।আপনারা আজকে এভাবে চলেগেল এই গ্রামের মানুষ প্রিয়াকে বাঁচতে দিবেনা।(কেঁদে কেঁদে হাত জোর করে)
মাহিম কিছু বলছে না কারণ সেদিন প্রিয়া তাকে যে ভাবে সবার সামনে অপমান করেছে আর মূল কথা হলো যে প্রিয়াই তো মাহিম কে পছন্দ করেনা তার চোঁখে তো মাহিম একজন খারাপ অসভ্য মানুষ।
তাই মাহিম কিছু বলছেনা চুপ করে আছে।
রায়হান সাহেব:-দেখুন এটা কোন ভাবেই সম্ভবনা
এইবলে সবাই চলে যাচ্ছিল এমন সময়
মাহিমের মা:-দাড়াও মাহিম এই বিয়ে হবে
অর্পা:-বিয়ে হবে মানে কার সাথে মা?
মা:-প্রিয়া সাথেই মাহিমের বিয়ে হবে।কাজী সাহেব বিয়ের কাজ শুরু করুন
মাহিম:-মা আমি প্রিয়ার সাথে আলাদা ভাবে কিছু কথা বলতে চাই
মাহিমের কথা শুনে সবাই একটু দূরে সড়েগেল।
মাহিম প্রিয়ার কাছে যেতেই প্রিয়া চোঁখে জল নিয়ে কেঁদে কেঁদে হাত জোর করে বলতে লাগলো।
প্রিয়া:-প্লিজ শুধু আজকের জন্য আমাকে বিয়েটা করুন,কালকে সকাল হতেই আমি আপনাদের বাড়ি ছেড়ে চলে যাব।নয়তো এই গ্রামের লোকজন আমাকে আর মামাকে কিছুই বাঁচতে দিবেনা প্লিজ আমার জন্য না আমার মামার জন্য আমাকে বিয়েটা করুন এই পৃথিবীতে মামা ছাড়া আমার কেউ নেই প্লিজ(কেঁদে কেঁদে হাত জোর করে)
মাহিম প্রিয়ার দিকে তাকিয়ে দেখলো দেখলো আজকে ও যদি এইবিয়েটা না করে তাহলে সত্যিই মেয়েটা মনে হয় গলায় দরি দিবে।প্রিয়ার কাঁন্না মায়া ভড়া মুখ দেখে মাহিম বিয়ে করতে রাজি হল।
অবশেষে মাহিম আর প্রিয়ার বিয়েটা হয়েই গেল।
প্রিয়ার সবার কাজ থেকে বিদায় নিয়ে গাড়িতে গিয়ে উঠলো।
বউ সেজে প্রিয়া বসে আছে,মাহিম এখন বাসর ঘরের সামনেই দাড়িয়ে আছে।
অনেক কিছু ভেবে মাহিম ঢুকে পড়লো ঘরে।
মাহিম ঘরে আসা শব্দ পেয়ে প্রিয়া মাহিমের কাছে আসলো,এসে সালাম করতে প্রিয়া মাহিমের পা ছুতে যাবে ঠিক তখনি মাহিম পা সরিয়ে নিয়ে তারপর তার কাদ ধরে তুলে
ঠাসস করে একটা চর বসিয়ে দিল প্রিয়ার গালে।

পর্ব-০২
———————————–
মাহিম অনেক কিছু ভেবে মাহিম ঢুকে পড়লো
রুমে ঢুকে বলতে লাগলো
মাহিম:-বলছি আপনার ব্যাক গোছানো আছে? নাকি এখনো গুছিয়েনেন্নি?
প্রিয়া মাহিমের কথার কোন উত্রর না দিয়ে প্রিয়া মাহিমের কাছে আসলো,এসে সালাম করতে প্রিয়া মাহিমের পা ছুতে যাবে ঠিক তখনি মাহিম পা সরিয়ে নিয়ে তারপর তার কাদ ধরে তুলে
ঠাসস করে একটা চর বসিয়ে দিল প্রিয়ার গালে।
মাহিমের এমন কাজ দেখে প্রিয়া অসহায় চোখে তাকিয়ে রইলো।
মাহিম:-(রাগি কন্ঠে)আমি কি বলছি আপনার কানে যাচ্ছেনা? নাকি ভেবে নিয়েছেন বিয়ে করেছি বলে আগের সবকিছু ভূলে আপনাকে আমার স্ত্রী হিসাবে মেনে নিয়েছি।
প্রিয়া কিছু বলছেনা চুপ করে আছে
মাহিম:-যদি সেটা ভেবে থাকেন, তাহলে সেই স্বপ্ন মাটি চাপা দিয়ে দিন,কারন আমি আগের কিছুই ভূলিনি,আর ভূলবও না।আর আপনাকে আমার স্ত্রী হিসাবে মেনে নেওয়ার তো কোন প্রশ্নই উঠেনা,কারণ আমার স্ত্রী হওয়ার আপনার কোন যোগ্যতাই নেই।! নিন তারাতারি রেডি হয়েনিন অনেকটা পথ যেতে হবে।
প্রিয়া মাহিমের কথা শুনে মাথা নিচু করে শুধু চোখের জল ফেলছে।
মাহিম:-কি হলো আপনি এখনো দাড়িয়ে আছেন কেন?আমার কথা কি এখনো বুঝতে পারেননি?(ধমক দিয়ে)
প্রিয়া:-(কাঁপা কাঁপা কন্ঠে)কোথাও যাব আমি?(কেঁদে কেঁদে)
মাহিম:-হাহা সেটা আমি কি করে বলবো যে আপনি কোথায় যাবেন?(একটু হাসি দিয়ে)
প্রিয়া:-ঐ বাড়িতে আমি আবার ফিরে গেলে আমার মামী আমাকে মেরেই ফেলবে,কিছুতেই ঐ বাড়িতে আমাকে ঢুকতে দিবেনা(কেঁদে কেঁদে)
মাহিম:-এই দেখুন আপনার এইসব কাহিনি শুনার কোন ইচ্ছে আমার নেই।আপনি হাত জোর করে আপনাকে বিয়ে করতে বলেছেন বলেই আমি আপনার কথা মতো আপনাকে বিয়েটা করেছি,সো এখন কথা মতো আপনিও একখনি এই মুহূর্তে এই বাসা থেকে বেড়িয়ে যাবেন ব্যাস্(বিরক্তির ভাবে)
প্রিয়া:-(হাত জোর করে)প্লিজ শুধু আজকে রাতটা আমাকে এখানে থাকতে দিন,কাল সকাল হতেই আমি আপনাদের বাসা ছেড়ে চলে যাব(কেঁদে কেঁদেই)
মাহিম:-বাহ্,আসতে না আসতে দেখি আপনি এখন উল্টা সুর গাইছেন?
প্রিয়া:-প্লিজ শুধু আজকের রাতটা আমি কথা দিচ্ছি আমি কাল ভর হতেই আমি চলে যাব,দয়া করে যখন বিয়েটা করেছেন এবার দয়া করে শুধু আজকের রাতটা থাকতে দিন প্লিজ(হাত জোর করে কেঁদে কেঁদে)
“”মাহিম:-“”সেদিন যদি তুমি আমাকে ঐভাবে সবার সামনে চর না মারতে,অপমান না করতে,আমার ভালোবাসাকে অবহেলা না করতে,তাহলে হয়তো আজকে তোমাকে আর এইদিনটা দেখতে হতো না।আমার কাছে তোমাকে এভাবে হাত জোর করে কেঁদে কেঁদে একটা রাত থাকার জন্য চেতে হতোনা,তোমাকে সারা জীবনের জন্য আমার বুকে রাগলে রাখতাম কোন কষ্ট হতে দিতাম না তোমার।
আজকে তুমি যতটা কষ্ট পাচ্ছ সেদিন তোমার থেকে বেশি কষ্ট আমি পেয়েছি,যেদিন তুমি আমার ভালোবাসাকে ঐভাবে ফিরিয়ে দিয়েছো,আরো কষ্ট দিব তোমাকে,কষ্ট কষ্ট দিতে শেষ করে দিব তোমাকে।(মনে_মনে)””
মাহিম:-এই আপনাদের মতো মেয়ে গুলোকে না আমি খুব ভালো ভাবেই চিনি,এখন বলছেন শুধু আজকের রাতটা,আর কালকে বলবেন আর দুইটা দিন তারপর নিজের স্ত্রীর অধিকার চাইবেন।
প্রিয়া:-না না আমি সত্যি বলছি আমি কাল ভর হতেই আপনাদের বাসা ছেড়ে চলে প্লিজ বিশ্বাস করুন(কেঁদে কেঁদেই)
মাহিম ভাবছে এতরাতে একলা একটা মেয়ে চিনেনা-জানেনা কোথায় কার কাছেই বা যাবে।
প্রিয়া মায়া ভড়া মুখ দেখে মাহিমের মনে একটু মায়া হলো,তাই সে আর কিছু না বলে খাঁট থেকে শুধু একটা বালিশ মেঝে ছুড়ে মেরে বলল
মাহিম:-এই নিন মনে রাগবেন শুধু আজকের রাতটা,বাট আমার রুমেরর ভিতরে না।
এইবলে মাহিম খাটের উপরে সুয়ে চোখ বন্ধ করলো।
প্রিয়া চোখের পানি মুছতে মুছতে বালিশটা কুরে হাত নিয়ে বাহিরে চলে আসলো।
বাহিরে হিম পরছে হালকা হওয়া খুব ঠান্ডা ইচ্ছে করছে কাতা গায় দিয়ে সুতে,কিন্তু প্রিয়ার পরনে শুধু একটা শাড়ি আর কিছুই নেই।
প্রিয়া বালিশটা মেঝেতে দিয়ে শাড়িটা পেচিয়ে সুয়ে কাঁন্না করছে আর ভাবছে,আজকে তো থাকার জন্য একটা বালিশ হলেও পেয়েছি কিন্তু কালকে কোথায় যাব? কার কাছে যাব? পৃথিবীতে তো আপন বলতে শুধু মামা কিন্তু সেখানেও তো যাওয়া যাবেনা।এমনিতেই বিয়ে ভেঙে যাওয়াতে গ্রামের লোকজন সব সময় হাসি-ঠাট্টা আজে-বাজে কথা বলে,আর এখন বিয়ের পর স্বামী ছাড়া সেখানে ফিরেগেলে গ্রামের লোকজন আর তার মামী তাকে শেষ করে ফেলবে।সাথে তার মামারও জীবনটাও শেষ হয়ে যাবে,তাই সেখানে যাবেনা।
তাহলে প্রিয়া যাবে কোথায়? থাকবে কোথায়?
এইসব ভাবছে আর সুয়ে সুয়ে কান্না করছে প্রিয়া।
আসলে পৃথিবীর নিয়মটাই এমন।
যার আছে তো সবকিছুই আছে,আর যার নেই তো কিছুই নেই।সেই রকম হলো প্রিয়া,সেই ছোট্ট থেকে অনেক কষ্ট করে বড়হয়েছে,ছোট্ট বেলায় ভাবতো বড়হলে হয়তো আর কষ্ট থাকবেনা,কিন্তু বড়হয়েও কষ্ট দূর হলো না মামীর জ্বালায় জীবন শেষ।
তারপর ভাবতো বিয়ে হলে শ্বশুড় বাড়ি গেলে তখন আর কোন কষ্ট থাকবেনা কিন্তু বিয়ের পরেও কষ্ট প্রিয়া পিচু ছাড়লো না।
মাহিম সুয়ে সুয়ে ভাবছে যে অপমানের জ্বালা তার ভিতরে জ্বলছে,সেই অপমানের এক একটা কথার প্রতিশোধ প্রিয়ার চোঁখের জল দিয়ে সে নিভাবে।আর সেটা কাল সকাল থেকে প্রিয়াকে কষ্ট দিয়ে শুরু করবে,ওর ভালোবাসাকে সবার সামনে যতটা অপমান অবহেলা করেছে সেটা মাহিম প্রিয়াকে ডাবল অপমান অবহেলা কষ্ট দিয়ে তার প্রতিশোধ নিবে।
সকাল বেলা মাহিমেরর আগে ঘুম ভেঙে য়ায়,ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে সকাল ৭টা বেজেগেছে।মাহিম উঠে দেখলো সে ছাড়া আর কেউই রুমে নেই,প্রিয়াকে রুমে কোথাও দেখতে পেলো না।প্রিয়া সত্যি সত্যি ভর হতেই চলেগেছে নাকি?সেটা ভেবে তারাতারি উঠে ওয়াশরুমে গেল,গিয়ে দেখলো কেউ নেই।তারপর যখন রুমের বাহিরে আসতে যাবে ঠিক তখনি দেখলো প্রিয়া তার রুমের দরজার সামনে ঠান্ডায় ছোট্ট বাচ্চাদের মতো গুটিসুটি হয়ে শুয়ে আছে।
মাহিম প্রিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে,কি মায়া ভরা নিষ্পাপ মুখ,প্রিয়াকে ঘুমন্ত আবস্তায় ঠিক যেমন একটা ঘুমন্ত পরীর মতো লাগছে।
মাহিম প্রিয়াকে এভাবে দেখে একহাটু ফেলে বসলো,বসে খেয়াল করলো কালকে রাতের চরটার আঙ্গুলের ছাপ প্রিয়ার গালে এখনো দ্যাগ হয়ে আছে।প্রিয়ার গালে আঙ্গুলের ছাপ দেখে মাহিমের মনে কেমন জানি একটু মায়া লাগছিল,মাহিম হাত দিয়ে প্রিয়ার গালে দেখলো জ্বরে প্রিয়ার গাঁ পুরে যাচ্ছে।মাহিমের স্পর্শ পেয়ে অমনি প্রিয়ার ঘুম ভেঙে যায়।প্রিয়া মাহিমকে দেখে চমকে উঠে শাড়িটা ঠিক করতে লাগলো।
প্রিয়া:-আআপনি?
মাহিম খেয়াল করলো প্রিয়ার মুখ কেমন সুকিয়ে গেছে দেখে মনে হচ্ছে গতকাল থেকে কিছুই খায়নি, ঠিক মতো দাড়াতে পাচ্ছেনা।
মাহিম:-হুম,আমি
প্রিয়া:-আসলে খুব ঘুম ধরেছিল তাই আগে উঠতে পারিনি,আমি এখনি আমার ব্যাক নিয়ে চলে যাচ্ছি
মাহিম””এখনো দেখি তেস কমেনি(#মনে_মনে)
প্রিয়া রুমে থেকে তার ব্যাকটা নিয়ে চলে যাচ্ছিল এমন সময় মাহিম বলে উঠলো।
মাহিম:-দাড়ান
প্রিয়া মাহিমের কথা শুনে দাড়ালো
মাহিম:-কই যাচ্ছেন?
প্রিয়া:-তা জানিনা,কিন্তু আপনার বাসা ছেড়ে চলে যাচ্ছি,আপনাকে তো কথা দিয়েছি সকাল বেলা আপনার বাসা ছেড়ে চলে যাব।তাই সবাই উঠার আগেই চলে যাচ্ছি(শান্ত ভাবে)
“”মাহিম”-এখনো দেখি তেস কমেনি,ঠিক মতো দাড়াতে পাচ্ছেনা আর বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যাচ্ছে,,তোমাকে এত সহজে ছেড়ে দিচ্ছিনা,আমার এক একটা অপমানের প্রতিশোধ নিব তারপর(#মনে_মনে)”!
মাহিম:-চলুন আমিও যাব আপনার সাথে
মাহিমের কথা শুনে প্রিয়া কিছু অবাক হয়ে বলল
প্রিয়া:-আপনিও যাবেন মানে?
মাহিম:-আপনাকে আপনার গ্রামে দিয়ে আসবো
প্রিয়া:-আমি গ্রামে ফিরে যাব না।
মাহিম:-তো কই যাবেন?আপনার তো ঐখানে যাওয়া ছাড়া আর কোন জায়গা নেই
প্রিয়া:-জানিনা,আর আপনার আমাকে নিয়ে ভাবতে হবেনা।আমি ঠিক একটা থাকার জায়গা ম্যানেজ করে নিব।(অভিমানী সুরে)
মাহিম:-আপনাকে যেখান থেকে এনেছি সেখানে দিয়ে আসবো আমি
প্রিয়া:-থাক আপনাকে আর আমার জন্য কষ্ট করতে হবেনা,এমনিতেই আপনি আমার জন্য অনেক কিছু করেছেন।আর কিছুই করতে হবেনা আপনার
মাহিম:-“যা করছি সেটা শুধু আমার প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য করছি,এত সহজে তোমাকে মুক্তি দিচ্ছিনা।(মনে মনে)
মাহিম:-দেখুন আশার সময় আপনার মামা আপনার হাত আমার হাতে তুলে দিয়েছিল,এখন আমি আপনার হাত আপনার মামার হাতে তুলে দিয়ে আসবো।তারপর আপনি যেখানে ইচ্ছে সেখানে যাবেন(বিরক্তিকর ভাবে)
প্রিয়া আর কিছু বললো না,কারণ সে কথাই বলতে পারছেনা।২দিন থেকে ঠিত মতো খাওয়া-দাওয়া ঘুম হয়নি প্রিয়ার সরিল তেমন দুর্বল হয়েগেছে,তাই সে আর কথা না বারিয়ে মাহিম আর প্রিয়া রহনা হলো প্রিয়ার গ্রামে।
সবাই ঘুম থেকে উঠার আগেই মাহিম গাড়ি বেড় করলো,মাহিম ড্রাভিং ছিটে বসলো আর প্রিয়াকে বলল
মাহিম:-ভিতরে এসে বসুন(তার পাশের ছিটে বসতে বলল)
প্রিয়া মাহিমের কথা মতো এসে বসে গাড়ির দরজাটা লাগিয়ে দিল।
মাহিম:-ছিটবেলটা আটকে নিন।
প্রিয়া ছিটবেল নিয়ে টানা-টানি করছে আটকাতে পারছেনা।মাহিম সেটা দেখে প্রিয়ার ছিটবেলটা লাগিয়ে দিল।
মাহিম ড্রাভিং করছে আর প্রিয়া মন খারাপ করে চুপ করে আছে।
“”কিছু দুরে যাওয়া পর””
একটা রেস্টুরেন্টে মাহিম গাড়ি থামিয়ে মাহিম আর প্রিয়া কিছু খেয়েনিল।তারপর মাহিম ড্রাভিং করছে আর প্রিয়া ছিটের মাথা দিয়ে ঘুমাচ্ছিল,ঝানালা দিয়ে আসা হাওআয় প্রিয়ার চুল গুলো উরে তার কাপালে পরে দল খাচ্ছিল,আর মাহিম সেটা বারবার প্রিয়ার দিকে তাকিয়ে দেখছিল,আর ড্রাভিং করছিল।
প্ররায় সারাদিন গেল,কিন্তু রাস্তায় জ্যাম থাকার কারণে এখনো তাদের গ্রামে যেতে পারলো না।
মাহিম ড্রাভিং করছে আর প্রিয়া ঘুমাচ্ছিল,এমন সময় মাহিম দেখতে পেল রাস্তায় অনেক লোকজন ভির করে চিতকার-চেচামিচি করছে।মাহিম সেটা দেখে গাড়িটা ব্রেক করলো।
গাড়িটা ব্রেক করাতে প্রিয়ার ঘুম যায়।প্রিয়া ঘুম থেকে উঠে তার ব্যাকটা নিয়ে গাড়ি থেকে নামতে যাচ্ছিল এমন সময়
মাহিম:-এখনো আপনাদের গ্রাম আসেনি
প্রিয়া:-তাহলে গাড়ি থামালেন কেন?(অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে)
মাহিম:-সামনে দেখতে পাচ্ছেন না(রাগি কন্ঠে)
প্রিয়া সামনে তাকিয়ে
প্রিয়া:-কি হয়েছে?
মাহিম:-যানলে কি আর গাড়িটা এখানে ব্রেক করতাম? যত্রসব(রাগি কন্ঠে)
এইবলেই মাহিম গাড়ি থেকে মেনে দাড়ালো।মাহিম গাড়ি থেকে মেনে আর কাউকে দেখতে না পেয়ে এক বয়স্কি ভদ্র লোক দেখে ডাকলো।
ভদ্র লোক:-কি বাবা?
মাহিম:-আচ্ছা চাচা সামনে আর গাড়ি যেতে দিচ্ছেনা কেন?সবাই এতভির করে আছে কেন?
ভদ্র লোক:-একটু আগে অনেক বড় একটা Accident হয়েছে,১টা বাচ্চাের মারাগেছে আর অনেক লোকজনের ক্ষতি হয়েছে,সেটা নিয়েই গ্যাম-জ্যাম বর্তমান কোন গাড়ি যেতে দিচ্ছেনা
মাহিম:-এইরকম কতখন থাকবে বলতে পারেন?
ভদ্র লোক:-যেভাবে দেখলাম তাতে মনে হয় কাল ছাড়া হবেনা
মাহিম:-আচ্ছা এই রাস্তা ছাড়া যাওয়ার মতো আর কোন রাস্তা নেই?
ভদ্র লোক:-কোথায় যাবেন আপনারা বাবা?
মাহিম:-***গ্রামে
ভদ্র লোক:-না নেই,আর সেতো এখনো যেতে ৩/৪ঘন্টা লাগবে,হেটেও যাওয়া যাবেনা।
মাহিম ভদ্র লোকের কথা শুনে টেনশনে পরে গেল।
ভদ্র লোক:-আচ্ছা বাবা যদি কিছু মনে না কর একটা কথা বলি?
মাহিম:-জ্বি বলুন?
ভদ্র লোক:-***গ্রাম তো এখনো অনেক দূরে,আর সন্ধাও তো হল আর আশে-পালে থাকার মতো কোন ব্যাবস্তাও নেই।এই জায়টা বেশি ভালো না,আমি বলি কি রতটা এখানে না থেকে আমার সাথে আমার বাড়িতে থেকে যেতে পারো
মাহিম:-না না চাচা লাগবেনা।
ভদ্র লোক:-ভয় নেই বাবা আমার বাড়িতে শুধু আমি আর আমার স্ত্রী ছাড়া আর কেউ নেই।
মাহিম ভদ্র লোকের কথা শুনে ভাবতে লাগলো,এখন তো বাড়ি ফিরতে ফিরতে প্ররায় রাতটাই শেষ হবে।আর এখানে থাকাও যাবেনা চার দিকে জাগাটা কেমন ভয়ানক ভয়ানক।মাহিম প্রিয়ার দিকে তাকিয়ে দেখলো প্রিয়ার গাঁয়ে তো জ্বর আর প্রিয়াকে খুব ক্লান্ত ক্লান্ত লাগছে।আর লোকটা কে দেখে ভদ্রই মনে হচ্ছে,তাই সে আর কিছু না ভেবেই রাজি হলো,আর ভদ্র লোক সহ গাড়ি নিয়ে তার বাড়ির দিকে রহনা দিল।
গ্রামের রাস্তা গাড়ি করে আসতে আসতে প্ররায় রাত ৯টা বেজে গেল।
মাহিম গাড়িটা ভদ্র লোকের বাড়ির সামনে ব্রেক করে ভদ্র লোকের বাড়িতে ঢুকলো।
ভদ্র লোক তার স্ত্রীকে ডাকলো তারপর সবকিছুই খুলে বললো।
তারপর ভদ্র লোকের স্ত্রীর প্রিয়া আর মাহিমকে রুমের ভিতরে নিয়ে গেল,নিয়ে সবাই মিলে খেতে বসলো,প্রিয়া প্রথমে খেতে চাইলো না,কিন্তু ভদ্র লোকের স্ত্রীর জোরা-জুরিতে অল্প করে খেলো।
খাওয়া-দাওয়ার পর
ভদ্র লোকের স্ত্রী:-বাবা তোমরা কি স্বামী-স্ত্রী?
কথাটা শুনে প্রিয়া আর মাহিম দুজনি চুপ হয়েগেল।কেউই কিছু বলছেনা দুজনি-দুজনার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।
প্রিয়া মাহিমের চুপ করা দেখে বলতে যাবে যে না,তখনি মাহিম বলে উঠলো
মাহিম:-জ্বী আমরা স্বামী-স্ত্রী,নতুন বিয়ে হয়েছে গ্রামে ব্যারাতে যাচ্ছিলাম।
মাহিমের কথা শুনে প্রিয়া হতাস হয়ে অন্যরকম একটা মায়া নিয়ে তাকিয়ে রইলো,হতে পারে এইটা মিথ্যে কিন্তু মাহিমের নিজের মুখে এই কথাটাই প্রিয়ার কাছে অনেক কিছু।
ভদ্র লোকের ছোট্ট দুইটা ঘর,যেটা সব থেকে একটু ভালো সেটাই মাহিম আর প্রিয়াকে থাকতে দিল।
মাহিম রুমে এসে দেখলো ছোট্ট একটা বিছানা, একটা বালিশ,একটা কাতা আর একটা চ্যায়ার ছাড়া আর কিছুই নেই।
মাহিম রুমে এসে বিছানাটায় বসে পরলো।
একটু পর প্রিয়া রুমে আসলো,এসে দরঝাটা লাগিয়ে দিল,দিয়ে মাহিমেরর কাছে আসলো
মাহিম:-এখানে তো একটাই বিছানা?
প্রিয়া:-আপনি অনাদের কে মিথ্যে বলতে গেলেন কেন?সত্যিটা বলতেন যে ব্যারাতে না আমাকে রেখে আসতে যাচ্ছেন।তাহলে তো অনারাই একটা ব্যাবস্তা করে দিতেন
মাহিম:-(বসা থেকে উঠে)এই দেখুন একদম আমাকে কিছু শিখাতে আসবেন না,আমি আপনার থেকে অনেক কিছুই জানি।অনাদের কে সত্যিটা বললে না এইশিতের রাতে গাঁছ তলায় কাঁটাতে হতো(রাগি কন্ঠে)
প্রিয়া:-ঠিক আছে,আপনি বিছানায় সুরে পড়ুন আমি এই চ্যায়ার টায় বসে রাতটা কাঠিয়ে দিব।
মাহিম প্রিয়ার দিকে তাকিয়ে দেখলো প্রিয়াকে খুব ক্লান্ত ক্লান্ত লাগছে।
মাহিম:-এই বিছানায় আমার কিছুতেই ঘুম আসবেনা
প্রিয়া:-বলেছিলাম না আসতে, আর এসেই যখন পরেছেন তখন আজকে রাতটা একটু কষ্ট করে কাঠিয়ে দিন
মাহিম:-এই আপনার কি মনে হয়? আমি আপনার সাথে এসেছি বলে কি আমি আপনাকে ভালোবাসি,আপনাকে স্ত্রী হিসাবে মেনে নিব(চেঁচিয়ে)
প্রিয়া:-বালাইশাঁট(গ্রাম্য ভাষা)আমি কেন সেটা ভাবতে যাব?আপনার স্ত্রী হওয়া এইটা তো আমি কল্পনাও ভাবিনি
মাহিম””-এতটা ঘূনা করো আমাকে,এতটা খারাপ ভাব আমাকে যে আমার স্ত্রী হওয়া তুমি সেটা কল্পনাও ভাবো না(মনে মনে প্রিয়ার দিকে তাকিয়ে)
প্রিয়া:-“”তুমি তো আমাকে ভালোইবাসো না,আমাকে সয্যই করতে পারো না।তোমার স্ত্রী হওয়ার কোন যোগ্যই তো আমার নেই।তাই তোমার স্ত্রী হওয়ার কথা আমি কল্পনাও ভাবিনা।(মনে মনে মাহিমের দিকে তাকিয়ে)

পর্ব-০৩
———————————–
“কিছুক্ষন পর”
প্রিয়া:-কি হলো আপনি দাড়িয়ে আছে কেন?বিছানায় সুয়ে পড়ুন
মাহিম প্রিয়াকে ক্লান্ত দেখে বলল
মাহিম:-সমস্যা নেই,এখানে দুজনের জয়গা হবে।আপনি কাতা নিয়ে সুয়ে পড়ুন
প্রিয়া:-বললাম তো আমি চ্যায়ারটায় বসে রাতটা কাঠিয়ে দিব,আপনি সুয়ে পড়ুন
মাহিম””এত অহংকার তোমার?এতটা খারাপ ভাবো আমাকে? একটুও বিশ্বাস করো না আমাকে।যদি আমাকে খারাপ না ভাবতে তাহলে আজকে চ্যায়ারে বসে রাতটা কাঠা চাইতে না।প্রিয়া তুমি প্রতিটা মুহূর্তেই আমাকে অবহেলা অপমান করছো,কষ্ট দিচ্ছ আমাকে।তুমিও মনে রেখ আমি যতটা কষ্ট পাব,তার বেশি কষ্ট আমি তোমাকে দিব,এর এক একটা মূল্য তোমাকে তোমার চোঁখের জল দিয়ে দিতে হবে,মনে রেখ।(দাড়িয়ে এইসব মনে মন বলেই মাহিম কাতা গায় দিয়ে সুয়ে পরলো।)
প্রিয়া””তোমার পাশে সোওয়া কোন যোগ্যতা আমার নেই,যদি থাকতো তাহলে বাসর রাতে তোমার রুম থেকে আমাকে কেহিয়ে যেতে বলতে না।(মাহিমের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলেই চ্যায়রটা টেনে বসে পরলো প্রিয়া)
মাঝরাতে কারো ভয়ানক সব্দে ঘুম ভেঙে যায় মাহিমের।
মাহিম ঘুম থেকে উঠে বসে পরলো,ঘনো-ঘনো নিঃশ্বাস নিচ্ছে আর কাপা কাপা কন্ঠে কি যেন বলছে ভালো করে বুঝতে পারছেনা।মাহিম এইদিক-ঐইদিক তাকাকেই চ্যায়ারের দিকে চোখ পরতেই দেখলো প্রিয়া নেই,মেঝেতে পোরে আছে।মাহিম প্রিয়াকে দেখে বিছানা থেকে নেমে প্রিয়াকে তুলতে প্রিয়ার গাঁয়ে হাত দিতেই দেখলো প্রিয়া সারা সরিল জ্বরে পোড়া যাচ্ছে।প্রিয়া ঘনো-ঘনো নিশ্বাস নিচ্ছে আর কাপা কাপা কন্ঠে পানি বলছে।
মাহিম:-এইযে শুসছেন?
এইভাবে কয়েকবার ডাকলো কিন্তু প্রিয়ার কোন সাড়া পেল না,শুধু ঘনো নিঃশ্বাস নিচ্ছে আর পানি চাইছে।এরপর মাহিম প্রিয়াকে কোলে করে তুলি বিছানায় সুয়ে দিলো।

পর্ব-০৪
———————————–
সকাল বেলা মাহিম আর প্রিয়া ঘুম থেকে উঠে,ভদ্র লোক আর অনার স্ত্রীর কাছে বিদায় নিয়ে রওনা হলো প্রিয়ার গ্রামের বাড়ির দিকে।
দুজনি গাড়িতে একদম চুপ করে বসে আছে,কেউই কিছু বলছেনা।প্রিয়া তার ব্যাগটা হাতে নিয়ে ব্যাগের ভিতর থেকে তার মা-বাবার আর তার ছোট্ট বেলার ছবিটা বেড় করে দেখতে লাগলো।মাহিম খেয়াল করলো প্রিয়া ছবিটার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে তার চোখ দিয়ে পানি বেড় হতে লাগলো।
ছোট্ট বেলায় প্রিয়ার মা-বাবা Accident এ মারা যাওয়া পর থেকেই এই ছবিটা প্রিয়া তার সঙ্গেই রাখে।এই ছবিটা ছাড়া প্রিয়ার মা-বাবার কোন অস্তিত্ব এই পৃথিবীতে নেই।যখন প্রিয়ার খুব বেশি মন খারাপ আর একা অসহায় লাগে,তখন এই ছবিটা বেড় করে আর মনে মনে ভাবে যে তার মা-বাবা তার সাথেই।এটা ভেবে কান্না করে নিজের মনকে সান্তনা দেয়।
প্রিয়ার গ্রামে আসার কিছু দূরে যাওয়ার পর
প্রিয়া:-গাড়িটা থামান আমি এখানেই নামবো।
মাহিম:-এখনো তো আপনার মামার বাড়ি আসেনি
প্রিয়া:-না আসুক, আমি বলছি আপনি গাড়িটা থাম করুন
এরপর মাহিম গাড়িটা রাস্তার একদিকে সাইট করলো,আর গাড়ি থেকে মেনে পরলো।প্রিয়াও গাড়ি থেকে মেনে তার ব্যাগটা হাত নিল।
মাহিম:-এখনো তো অনেকটাই পথ?
প্রিয়া:-থাকুক আমি হেটেই যেতে পারবো,আমার জন্য আর আপনাকে কষ্ট করতে হবেনা।
মাহিম”’আর অল্প কিছুক্ষন আমরা একসাথে থাকবো,এটুকু সময়-ই তুমি আর আমার সাথে থাকতে চাইছো না,এতটাই বিরক্তির লাগছে আমাকে।তুমিও যখন একসাথে থাকতে চাইছো না তাহলে আমিও না(মনে মনে)
মাহিম:-হুমম সেটাই,আমারও অনেক বোরিং লাগছে।
মাহিমের কথা শুনে তার ভিতরটা যেন ফেটেগেল এটা ভেবে যে সে পৃথিবীতে এতটাই অপ্রয়োজনীও যে তার কাছেই যায় তারে মাথা বোঝা হওয়ে দাড়ায়।প্রিয়া আর মাহিমের দিকে তাকিয়ে থাকতে পারছেনা,তার চোখের কোনায় পানি চলে এসেছে,মুখ দিয়ে কোন কথা বেড় হচ্ছেনা,শুধু বলল:
প্রিয়া:-ঠিক আছে ভালো থাকবেন।
এইবলেই প্রিয়া ব্যাগটা নিয়ে চলে যাচ্ছিল,আর মাহিম দাড়িয়ে দাড়িয়ে দেখছিল।প্রিয়া যাচ্ছে আর চোখের জল ফেলছে।মাহিম দাড়িয়ে শুধু দেখছে কিছু বলছেনা।এভাবে কিছু দুরে যাওয়া পর মাহিম আর দাড়িয়ে না থেকে গাড়িতে উঠে গাড়িটা স্টার্ট করে চলে যাচ্ছিল।প্রিয়া গাড়ির চলে যাওয়া সব্দ পেয়ে পিছনে ঘুরে দাড়িয়ে মাহিমের চলে গাড়ির দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো।এভবে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর হাত দিয়ে দুচোখের পানি মুছে তার মামার বাড়ির দিকে রওনা হলো।
প্রিয়া তার মামার বাড়ির ভিতরে ঢুকতেই তার মামা দেখে অনেটাই খুশি হয়ে প্রিয়ার কাছে ছুটে আসলো আর বলতে লাগলো
মামা:-প্রিয়া মা তুই,কেমন আছিস?কখন আসলি?
প্রিয়ার মামার কথা শুনে ঘুম থেকে প্রিয়ার মামী বেরিয়ে আসলো।
মামা:-জামাই বাবা কই?
প্রিয়া কিছু বলছেনা,মাথা নিচু করে চুপ করে দাড়িয়ে আছে।
মামা:-কিরে মা তুই কিছু বলছিস না কেন?কি হয়েছে বল,জামাই বাবা কই বাহিরে দারিয়ে আছে নাকি?
এইবলে প্রিয়ার মামা বাহিরে যাচ্ছিল এমন সময় প্রিয়া বলে উঠলো
প্রিয়া:-মামা তোমার জামাই চলেগেছে
প্রিয়া কথা শুনে তার মামা আবার প্রিয়ার কাছে এসে অবাক দৃষ্টিতে প্রিয়ারর দিকে তাকিয়ে বলল
মামা:-চলে গেছে মানে?
প্রিয়ার মামী:-এখনো বুঝতে পারো নাই,তোমার জামই তোমার প্রিয়ারে রাইখা গেছে,মানে ছাইড়া গেছে।
মামা:-কি সব বাজে কথা বলছো তুমি(একটু রাগি কন্ঠে)
মামী:-ঠিকি কইতাছে আমি,তোমার কি মনে হয় এই প্রিয়ার মতো একটা অশিক্ষিতা গাইয়া মাইয়্যারে অতবড় বাড়ির বউ হিসাবে মাইনা নিব।ঐ পোলার বউ হওয়ার কি যোগ্যতা আছে তোমার প্রিয়া যে ওর বউ হিমাবে মাইনা নিব।
মামা:-সবকিছুই আছে আমার প্রিয়ার!!(প্রিয়া কাছে এসে)এই প্রিয়া মা তুই কিছু বলছিস না কেন?বল তোর মামী বলছে সব মিথ্যে বল।
প্রিয়া কিছু বলছেনা শুধু তার চোখ দিয়ে পানি গরিয়ে পরছে।
মামা:-কিরে মা তুই কাদছিস কেন?বল যে তোর মামী যা বলছে সব মিথ্যা বল(প্রিয়ার দুকাধে হাত দিয়ে ধাক্কা দিতে দিতে)
এভাবে বলছিল আর প্রিয়াকে ধাক্কা দিচ্ছিল প্রিয়ার মামা।
প্রিয়া:-(কেদে কেদে বলতে লাগলো)হ্যাঁ মামা মামী যা বলছে তাই সত্যি
প্রিয়ার কথা শুনে প্রিয়ার মামার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পরলো,অনি প্রিয়াকে ছেড়ে দিয়ে পিছন দিকে পিছতে পিছতে চেঁয়ারে বসে পরলো।আর প্রিয়ার মামী প্রিয়ার কথা শুনে প্রিয়ার দিকে এগিয়ে আসতে লাগলো আর বলতে লাগলো
মামী:-তুই শীলার ব্যাপারে সব যানতি,আমার উপর প্রতিশোধ নেওয়ার লাইগা আর অতবড় বাড়ি বড়লোক জামই দেইখা তুই আমারে কিছুই বলোস নাই,যাতে তোর ঐ বাড়িতে বিয়াডা হইয়া যায়। তাই না।
প্রিয়া কিছু বলছেনা শুধু দাড়িয়ে দাড়িয়ে চোখের জল ফেলছে।
মামী:-কি এখনো হইছে তো?বড় বাড়ির বউ হওয়া শখ মিডলো তো তোর?লুবি মাইয়্যা বড়লোক জামই দেইখা কত নাটক-টাটক কইরা বিয়া করলি,এখনো দিছে তো গলা ধাক্কা দিয়া বাড়ি থাইকা বেড় কইরা।
বড়লোকের গলা ধাক্কা খাইয়্যা এখন আবার আইচোস আমার বাড়িতে থাকতে,আমি তো কিছুতেই আর তোরে আমার বাড়িতে থাকতে দিমু না,এক্ষনি আমার বাড়ি থাইকা বেড় হইয়া যা(রাগি কন্ঠে চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে)
প্রিয়া তার মামীর সামনে দু’হাটু ফেলে দু’হাত জোর করে কেদে কেদে বলতে লাগলো
প্রিয়া:-(কেঁদে কেদে)মামী প্লিজ আমাকে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে বলবে না,এই পৃথিবীতে তুমি আর মামা ছাড়া আর কে আছে বলো?আর কোথাও তো আমার যাওয়ার জায়গা নেই,কোথাও যাব আমি কার কাছে যাব?(হাও-মাও করে কাঁদতে কাঁদতে)
মামী:-এইবার আর কোন কামহইবো না,তোর এই নাটক সেই ২০বছর ধইরা আমি দেখতেছি,আর না,যা আমার বাড়ি থাইকা বেড় হই যা।(এইবলে প্রিয়া চুলের মুঠি ধইলো)
প্রিয়া:-মামী তোমার দু’পা ধরি(দু’পা ধরলো)আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দিওনা,তুমি যাই বলবে আমি তাই করবো(কেঁদে কেঁদে)
মামী:-বুঝছি ভালো কথায় কামহইবো না
এইবলেই প্রিয়ার মামী প্রিয়াকে পা’দিয়ে একলাঠি মারলো,আর প্রিয়া ছিটকে গিয়ে তার মামার বসে থাকা চেঁয়ারের সাথে ধাক্কা গেলে প্রিয়ার কপাল ফেটে রক্ত বেড় হতে লাগলো।প্রিয়া কাপালে হাত দিয়ে দেখলো রক্ত বেড় হচ্ছে,মাঠি থেকে উঠলো,প্রিয়া ঠিক মতো দারাতে পারছেনা,সে অনেক কষ্টে নিজেকে সামলিয়ে দাড়ালো।
তারপর চোঁখেরর জল মুছে,ব্যাগটা হাতে নিয়ে বাড়ি থেকে বেড় হয়েগেল।বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় প্রিয়া মামা প্রিয়াকে অনেক আটকানোর চেষ্ট করেছিল কিন্তু প্রিয়া শুধু”আমি ঠিক একটা থাকার জায়গা খুজে নিব,তুমি নিজের খেয়াল রেখ মামা”বলেই কান্না করতে করতে বেরিয়ে এসেছে।
প্রিয়া প্ররায় সারাদিনি ঘুরলো কারো বাসায় কাজ করার জন্য, কিন্তু কোথাও কোন পেলো না।
গভীর রাত,সারাদিনি গেল এখনো কিছুই খায়নি,মাথায় ব্যাথা ভালো করে হাটতে পারছেনা প্রিয়া।ব্যাগটা বুকে জরিয়ে ধরে রাস্তার একসাইদ দিয়ে হাটছে হঠাৎ করে তার পিছনে কারো পায়ের আওয়াজ পায়।প্রিয়া দাড়িয়ে কান খাড়া করলো,আবার শুনতে পেল কারো পায়ের আওয়াজ।প্রিয়া ধীরে ধীরে পিছনে ঘুরে দাড়ালো,অন্ধকারে কিছুই দেখা যাচ্ছে না।প্রিয়া ভয় পেয়ে চারদিকে ভালো করে তাকাতে লাগলো,এমন সময় হঠাৎ করে দু’টা ছেলে প্রিয়ার সামনে এসে দাড়ালো,প্রিয়ার শরীর ভয়ে কাঁপতে লাগলো,মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না।প্রিয়া ব্যাগটা আরো শক্ত করে বুকের মধ্য জরিয়ে ধরলো।
প্রিয়া:-(কাঁপা কাঁপা কন্ঠে)কারা আপনারা? পথ ছাড়ুন(ভয় ভয় করে)
১ম ছেলে:-আমরা তো মানুষ কিন্তু এই গভির রাতে পরীটা আসলো কোথা থেকে?(সিগারেট টানতে টানতে)
২য় ছেলে:-কি সুন্দরি আজকে কেউ তোমায়,নিয়ে যায়নি?চল আমাদের সাথে চল আমরা দুজন আছি যা লাগে দিব,কোন সমস্যা হবেনা।
প্রিয়া:-(কাঁপা কাঁপা কন্ঠে)দেখুন আপনারা ভূল করছেন,পথ ছাড়ুন আমাকে যেতে দিন।(ভয় ভয় করে)
এইবলে প্রিয়া চলে যাচ্ছিল এমন সময় ২য় ছেলেটা প্রিয়ার হাত ধরে নেয়।
২য় ছেলে:-আরে সুন্দরি কই যাও?আমাদের কি মাল্দার মনে হয় না।(শক্ত করে প্রিয়ার হাত ধরে)
প্রিয়া অনেক কষ্ট করে হাতটা ছারিয়ে নিয়ে দৌরতে থাকে,আর ছেলে গুলা প্রিয়ার পিছু পিছু।
প্রিয়া পিছনে বারবার তাকাচ্ছিল এমন সময় একটা গাড়ির সাথে প্রিয়া ধাক্কা লেগে পরে যায়।আর গাড়ি চালক তারাতারি গাড়িটা ব্রেক করে গাড়ি থেকে মেনে যায়।প্রিয়া চোখ উঠে দেখে গাড়ি চালকটা আর কেউ নয় মাহিম।প্রিয়া মাহিমকে দেখে মাঠি থেকে উঠে গিয়ে মাহিমের পিছনে গিয়ে দাঁড়িয়ে কাঁদতে লাগলো।ছেলে গুলো মাহিমকে দেখে ভয় পেয়ে পালিয়ে যায়।
মাহিম পিছনে ঘুরে তাকিয়ে দেখলো প্রিয়া অনেকটা ভয় পেয়ে ঠান্ডায় বুকের মাঝে ব্যাগটা চেপে ধরে বাচ্চাদের মতো দারিয়ে আছে।
প্রিয়া:-(কাপা কাপা কন্ঠে) আপনি এখানে?
মাহিম কিছু না বলে গাড়ির ভিতর থেকে একটা ছবি বেড় করে দিয়ে বলল
মাহিম:-এটা আপনাকে দিতে এসেছিলাম
প্রিয়া ছবিটা হাতে নিয়ে দেখলো তার মা-বাবার ছবিটা ভূলে ছেড়ে আসছিল সেটা।
মাহিম আর কিছু না বলে চলে যাচ্ছিল,এমন সময় প্রিয়া মাহিম সামনে দাড়িয়ে হাত জোর করে কেঁদে কেঁদে বলতে লাগলো।
প্রিয়া:-প্লিজ মাহিম বাবু আমাকে ছেড়ে চলে যাবেন না,আপনার বউ হিসাবে মেনে না নেন কিন্তু আপনাদের বাড়ির #কাজের_মেয়ে হিসাবে আমাকে,নিয়ে যান।আমি কোন দিনও আপনার কাছে স্ত্রীরর অধিকার বা আপনার স্ত্রী সিহাবে নিজেকে দাবি করবো না।আপনাদের বাড়ির কাজের মেয়ে হয়ে থাকবো
আমাকে টাকাও দিতে হবেনা,থাকার জন্য একটু জায়গা আর দুবেলা-দুমুঠো ভাত, আর কিছুই চাই না আমি,প্লিজ মাহিম বাবু আমাকে ছেড়ে যাবেন না।(হাত জোর করে কেঁদে কেঁদে)

পর্ব-০৫
———————————–
মাহিম প্রিয়ার দিকে তাকিয়ে দেখলো,চোখে জল কপাল দিয়ে রক্ত বেড় হচ্ছে,কেমন অসহায় হয়ে হাত জোর করে কাঁদছে।প্রিয়াকে এভাবে দেখে তার মায়া হলো,আর জায়গাটাও ভালো না,তাই প্রিয়া নিয়ে তাদের বাড়ির দিকে রওনা হলো।
মাহিম প্রিয়াকে নিয়ে বাড়ির ভিতরে ঢুকে সিরি দিয়ে উপরে উঠছিল এমন সময় মাহিমের বাবা বলে উঠলো
বাবা:-দাড়াও
মাহিমের বাবার শুনে মাহিম আর প্রিয়া দুজনি দাড়িয়ে গেল।
বাবা:-মাহিম এই মেয়ে এখানে কি করছে?(প্রিয়ার দিকে তাকিয়ে)এই মেয়ে তোমার কি লজ্জা সরম বলতে কিছু নেই নাকি?বিয়ের আগে তো মাহিমকে হাত জোর করে বিয়ে করতে বলেছি,যে তুমি বিয়ের পরের দিনি এই বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাবে।
প্রিয়া কিছু বলল না,মাথা নিচু করে দাড়িয়ে রইলো।
মাহিমের বোন অর্পা-মাহিমের বউ হওয়া
কি যোগ্যতা আছে তোমার?অশিক্ষিত গাইয়্যা মেয়ে একটা(মাহিমের দিকে তাকিয়ে)মাহিম,তুই তো এই মেয়ে রেখে আসতে গিয়েছিলি,তাহলে আবার তাকে সঙ্গে করে নিয়ে আসলি কেন?
মাহিম:-আপু অনার মামী অনাকে বাসা থেকে বেড় করে দিয়েছে,আর কোথাও যাওয়া মতো কোন জায়গা নেই।
অর্পা:-প্রিয়ার যাওয়ার মতো কোন জায়গা নেই তাতে আমাদের কি?
বাবা:-তাই বলে তুমি একটা গাইয়্যা মেয়েকে তোমার স্ত্রীর হিসাবে মেনে নিবে,তাকে স্ত্রী মর্যাদা দিয়ে বাড়িতে নিয়ে আসবে?
মাহিম:-বাবা অনি এই বাড়িতে একটা কাছে মেয়ে হিসাবে এসেছে,আমার স্ত্রী হিসাবে নয়।আর অনাকে আমার স্ত্রী হিসাবে মেনে নেওয়ার তো কোন প্রশ্নই উঠেনা(বিরক্তির ভাবে)
বাবা:-আমাদের বাড়িতে আর কোন কাছে মেয়ে লাগবেনা,(প্রিয়া দিকে তাকিয়ে)এই মেয়ে তুমি এক্ষনি এই বাড়িত থেকে বেরিয়ে যাও বলছি(রাগি কন্ঠে)
প্রিয়া ব্যাগটা ফেলে দিয়ে মাহিমের বাবার পা এর কাছে হাটু ফেলে বসে।
প্রিয়া:-(কেঁদে কেঁদে)বাবা আমায় কিছুই দিতে হবেনা,শুধু থাকার জন্য একটু জায়গা আর দুবেলা-দুমুঠো ভাত,আর কিচ্ছুই চাইবো আপনাদের কাছে।
অর্পা:-বাবা তুমি কিছুই এই মেয়ে কে এই বাড়িতে থাকতে দিবেনা,এইসব মেয়েদের কে না আমি খুব ভালো করেই চিনি।প্রথমে একটু থাকার জায়গা তারপর নিজের অধিকার, তারপর একদিন দেখবে আমাদের কেই এই বাড়ি থেকে বেড় করে দিবে।
প্রিয়া:-বাবা আমি সারাজিবন আপনাদের বাড়ির কাছের মেয়ে হয়ে থাকবো,কোন দিনও আপনাদের কাছে আমার অধিকার চাইবো না।শুধু আমাকে একটু থাকার জায়গা দিন প্লিজ বাবা(হাত জোর করে কেঁদে কেঁদে)
এভাবে কেঁদে কেঁদে অনেক ভাবে প্রিয়া অনুরধ করছিল কিন্তু মাহিমের বাবা আর মাহিমে বোন অর্পা কিছুতেই মানছিল না।এমন সময় মাহিমের মা বেরিয়ে আসে বলল।
মাহিমের মা:-তুমি থাকবে,এই বাড়িতেই থাকতে।
মাহিমের মা এর কন্ঠ শুনে সবাই অনার দিকে তাকালো।
মাহিমের বাবা:-থাকবে মানে?
মাহিমে মা:-হুম,প্রিয়াকে যখন কেউই এই বাড়ির বউ হিসাবে মেনে নিবে না,তখন আমি চাইছি প্রিয়া এই বাড়িতে কাছের মেয়ে হয়েই থাকবে।
অর্পা:-আমাদের বাড়িতে কি কাছের মেয়ে নেই নাকি?(রাগি কন্ঠে)
মাহিমের মা:-আজ থেকে প্রিয়া ছাড়া এই বাড়িতে আর কোন কাজের মানুষ থাকবে না,বাড়ির সব কাজ প্রিয়াই করবে।,আশা করি আমার এই কথাটা রাখবেন(মাহিমের বাবা দিকে লক্ষ করে বলল)
এইবলেই অনি ভিতরে গেলেন।আর মাহিমের বাবাও আর কিছু না বলে উপরে চলে গেলেন।মাহিমও আর দাড়িয়ে না থেকে উপরে তার রুমে চলো গেল।
আসলে এই মা-মনি হচ্ছে মাহিম শত মা,কিন্তু মাহিম অনাকে নিজের মা ছাড়া কখনই শত মা ভাবেনি।
কিছু বুঝলেন না তো।
মাহিমের বাবা এই মা-মনি প্রথম বিয়ে করে বিদেশে যায়,আর ঐখানে মাহিমের বাবা ২য় বিয়ে করে।মাহিম আর অর্পা হলো ২য় স্ত্রীর সন্তান। দেশে আশার পর মাহিমের বয়স যখন ৫ তখন মাহিম এই মা-মনির কাছে রেখে আবার বিদেশে যায়।
আর তখন থেকেই মাহিম এই মা-মনি কে নিজের মা মনে করে কখনই শত মা ভাবেনা।
এই বাড়িতে মাহিমের বাবার কথাই শেষ কথা,কিন্তু মাহিমের বাবা এই মা-মনিকে তার জীবনের একটুও সময় দিতে পারিনি বলে মাহিমেরর মা-মনির কিছু কথা রাখে।
মাহিম রাত রুমে এসে খুব টায়ার্ড লাগছিল তার, তাই সে রুমে এসেই ঘুমিয়ে পরলো।
কিছুক্ষণ পর প্রিয়া রুমে আসলো এসে দেখলো মাহিম জুতো না খুলেই ঘুমিয়ে পরেছে।প্রিয়া মাহিমের কাছে এসে মাহিম জুতো গুলো খুলে পা গুলো ভালো উঠে দিয়ে একটা কম্বল গা এ দিয়ে দিল।
তারপর অন্যরকম একটা মায়া নিয়ে মাহিমের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর রুম থেকে বেরিয়ে গেল।
খুব সকালে মাহিমের ঘুম ভেঙ্গে যায়, মাহিম ঘুম থেকে উঠে দেখলো তার জুতো খুলা গাঁ এ কম্বল,ব্যাপারটা ঠিক বুঝলো না।মাহিম খেয়াল করলো প্রিয়াকে রুমে কোথাও দেখা যাচ্ছে না।কাল রাতে মেয়ে কোথাও থাকলো কিছু খেয়েছে কিনা কিছুই তো জানেনা।মাহিম উঠে প্রিয়াকে খুজতে দরজা খুলতে দেখলো প্রিয়া সেদিনের মতো প্রিয়া তার রুমের দরজার সামনে ঠান্ডায় ছোট্ট বাচ্চাদের মতো গুটিসুটি হয়ে শুয়ে আছে।
মাহিম দেখে কিছুক্ষণ দাড়িয়ে থাকার পর প্রিয়া ডাকলো।
মাহিমের ডাকে প্রিয়ার ঘুম ভেঙে যায়, প্রিয়া মাহিমকে দেখে উঠে দাড়ালো।
মাহিম:-কাল রাতে কিছু খেয়েছেন?
প্রিয়া:-(মাথা নেরে বলল না)
মাহিম:-সারা রাত এখানেই ছিলেন নাকি?
প্রিয়া:–(মাথা নেরে বলল হ্যাঁ)
মাহিম:-কেন? ভিতরে গিয়ে সুয়ে পরেন নি কেন?
প্রিয়া:-আপনি তো সেদিন বলেছিন আপনার রুমের বাহিরে থাকতে(বাচ্চাদের মত মাথা নিচু করে)
মাহিম:-তো মা-মনির রুমে যাননি কেন?(একটু রাগি কন্ঠে)
প্রিয়া:-আমি তো অনার রুম চিনিনা
মাহিম দেখলো কাল থেকে কান্নাকাটি আর না খাওআয় মুখটা কেমন সুখনা-সুখনা লাগছে। সে বলল
মাহিম:-আচ্ছা যান মা-মনির ওয়াশরুমে গিয়ে একটু ফ্রেশ হয়ে কিছু খেয়ে নিন।
প্রিয়া:-না,সবার জন্য নাস্তা ডেরি করতে হবে।
মাহিম:-আমাদের বাড়িতে মা-মনি ছাড়া এত সকালে কেউই ঘুম থেকে উঠে না,আমি যেটা বললাম সেটা করুন,আর সুনুন কাল থেকে বারিয়ে থাকার দরকার নেই,আমার রুমের মেঝেতে থাকবেন।(বিরক্তির ভাবে)
প্রিযা:-আচ্ছা(মাথা নিচু করে)
এরপর প্রিয়া চলেগেল,আর মাহিম ওয়াশরুমে গেল,ফ্রেস হয়ে বিছানায় বসে ফোন ফোন টিপছিল।
কিছুক্ষন পর প্রিয়া রুমে আসলো।
পরনে একটা শাড়ি,চুল গুলো ভেজা,ঠোঁটে হালকা করো লিবিস্টিক,আর শাড়ির আচলটা কমড়ের একদিকে গোজা।
প্রিয়াকে দেখতে এখনো একটু অন্যরক লাগছে।
মাহিম না চাইতেও চোখ বার বার তার দিকে যাচ্ছে।মাহিম প্রিয়ার পেটের দিকে তাকাতেই মাহিম তার চোখ ফিরো নিল,কারন আর বেশিক্ষণ এভাবে প্রিয়ার দিকে তাকালে নিজেকে ঠিক রাখতে পারবে না।এভাবে যে কেউ তার স্ত্রীকে দেখলে,জরিয়ে ধরতে চাইবে,একটু রুমান্স করতে চাইবে।
মাহিমের খুব ইচ্ছে করছিল প্রিয়ার ঠোঁঠের সাথে তার ঠোঁঠ এক করে দিতে,কিন্তু প্রিয়া এই বাড়িতে এসেছে কাজের মেয়ে হিসাবে,মাহিম বউ হিসাবে না।তাই মাহিম মনে মনে প্রিয়ার উপর অনেকটাই রেগে রইলো।
প্রিয়া:-আপনার জন্য কি চা আনবো?(মাথা নিচু করে)
মাহিম:-এতে বলার কি আছে,
যান নিয়ে আসুন(একটু রাগি চোখে তাকিয়ে)
প্রিয়া আরর কথা না বলে রুম থেকে বেরিয়ে গেল।
কিছুক্ষন পর প্রিয়া হাতে চায়ের কাপ নিয়ে মাহিমের সামনে এসে বলল
প্রিয়া:-এই নিন আপনার চা(কাপটা মাহিমের দিকে এগিয়ে দিয়ে)
মাহিম চারকাপটা হাতে নিয়ে কাপে চুমুক দিল দেওয়ার সাথে সাথে কাপের গরম চারকাপটা চা গুলো সহ প্রিয়ার হাতে ছুরে মারলো আর প্রিয়া সাথে সাথে চিৎকার দিয়ে উঠলো।
প্রিয়ার চিৎকার শুনে মাহিমের মা-মনি রুমে ছুটে আসলো।
মা মনি:-কি হয়েছে মা,এভাবে চিল্লানি দিলি কেন?
প্রিয়া:-কিছু না মা-মনি,চারকাপটা হাত থেকে পরে ভেঙে গেছে(প্রিয়া পিছনে হাত করে)
মা-মনি:-দেখে শুনে কাজ করবি,(এইবলে অনি রুম থেকে বেরিয়ে গেল)
আর প্রিয়া ভেঙে যাওয়া কাপের টুকরো গুলো কুরাতে লাগলো।আর মাহিম কিছু না বলে রুম থেকে বেরিয়ে গেল।
সারাদিন গেল,কিন্তু মাহিম বাড়ি ফিরেনি।রাত সাড়ে এগারোটায় মাহিম বাড়ি ফিরে এল।সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে,শুধু প্রিয়া জেগে আছে।মাহিম হাত-মুখ ধুয়ে ফ্রেস হয়ে খাবার এর টেবিলে বসলো। প্রিয়া এসে সামনে খাবার দিল,প্রতিদিনি মাহিম কে তার মা-মনি খাবার দেয়।কিন্তু আজকে প্রিয়া দিচ্ছে,সেটা দেখে মাহিম চেঁচিয়ে তার মা-মনিকে ডাকতে লাগলো।
প্রিয়া:-মা-মনি ঘুমিয়ে পড়েছে,আপনিও খেয়ে গিয়ে শুয়ে পড়ুন।
মাহিম আর কিছু না বলে খেতে বসলো।আর খাওয়া শেষ করো নিজের রুমে আসলো।
কিছুক্ষন পর প্রিয়া রুমে আসলো,মাহিম প্রিয়ার দিকে তাকালো মুখটা কেমন সুখিয়ে গেছে।দেখে মনে হচ্ছে প্রিয়া এখনো কিছু খায়নি।
মাহিম:-রাতে খেয়েছেন?
প্রিয়া চমকে উঠলো,মাহিম তাকে এই প্রশ্ন করবে সেটা কখনি প্রিয়া ভাবেনি।তাই সে অবাক দৃষ্টিতে মাহিমের দিকে তাকিয়ে রইলো
মাহিম:-না,মানে এমনি জিগ্যেস করছিলাম।আপনি খেলেন কি না খেলোন তাতে আমার কি?আমার মনে হলো তাই বললাম আর কিছু না।খেয়েছেন রাতে?
প্রিয়া:-না
মাহিম:-আপনি এতরাত পর্যন্ত না খেয়ে আছেন কেন?(প্রিয়া কাছে এগিয়ে এসে)
প্রিয়া:-আমার ক্ষিতে লাগেনি,তাই আজকে আর খাব না।
মাহিম:-(প্রিয়া কাছে এগিয়ে এসে)এই দেখুন আপনাকে আমি জোর করে বিয়ে করে ঘরের বউ করে আনিনি,উল্টা আপনি আমাকে হাত করে বিয়ে করেছে।আর আপনি এই বাড়িতে আমার বউ হিসাবে না,বাড়ির কাজের মেয়ে হিসাবে এসেছেন।সো এইসব নাটক না করে যান গিয়ে খেয়ে আসুন(রাগ দেখিয়ে(
প্রিয়া:-বললাম তো আমার ক্ষিদে নেই
মাহিম:-আমি বলছি তো যান গিয়ে খেয়ে আসুন(রাগি কন্ঠে)
প্রিয়া:-একটু আগেই তো আপনি বললেন আমি খেলাম কি খেলাম না এতে আপনার কিছু যায় আসেনা? তাহলে আমি এখন না খেয়ে থাকলে আপনার কি?
মাহিম:-আমার কি সেটা যদি বুঝতেন তাহলে হয়তো আপনার কপালটা ভালো হতো,চলুন খাবেন চলুন।
এইবলে মাহিম প্রিয়ার একহাত ধরে টানতেই প্রিয়া চিৎকার দিয়ে কেঁদে উঠলো।মাহিম কিছু বুঝতে পারলো না,প্রিয়ার হাতের দিকে তাকাতেই দেখলো সকালে চা পরাতেই প্রিয়ার হাতে অনেটাই জায়গা পুড়েগেছে।আর মাহিম সেখানেই ধরতেই প্রিয়া ব্যাথা পেয়ে চিৎকার দিয়ে কেঁদে উঠেছে।

পর্ব-০৬
———————————–
মাহিম প্রিয়ার হাতের পোরা জায়গাটা দেখে প্রিয়ার হাতটা ছেড়ে দিল।মাহিম প্রিয়া হাতটা ছেড়ে দিতেই প্রিয়া দুহাত বুকের কাছে টেনে নিল।মাহিম দেখলো প্রিয়া দু’হাত বুকের কাছে এনে চোখ বন্ধ করে দাড়িয়ে চোখের জল ফেলছে,মাহিম বুঝতে পারলো প্রিয়া অনেকটাই ব্যাথা পেয়েছে।
মাহিম:-দেখি(হাতটা ধরে)
প্রিয়া:-ছাড়ুন(হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে)
মাহিম:-(রেগে)বললাম তো দেখি।
এইবলে প্রিয়ার হাতটা ধরার পর।
মাহিম:-ইসসসস অনেকটাই জায়গা তো পুড়েগেছে,চলুন ড্রেসিং করিয়ে দেই।
প্রিয়া:-(অভিমানী সুরে)ছাড়ুন জুতো মেরে গরু দান করার কোন দরকার নেই।(হাতটা ছারিয়ে নিয়ে)
মাহিম:-আমি বলছি না চলুন।
এইবলে প্রিয়াকে জোরে নিয়ে বিছানায় বসালো।
মাহিম প্রিয়ার হাতে ড্রেসিং করে দিচ্ছিল আর প্রিয়া অন্যরকম একটা মায়া নিয়ে দেখছিল।
প্রিয়ার হাতে ড্রেসিং করার পর।
মাহিম:-এখনে বসুন আমি আসছি।
প্রিয়াকে বসিয়ে রেখে মাহিম রুম থেকে বেরিয়ে গেল।
কিছুক্ষন পর মাহিম প্রিয়া জন্য রাতের খাবার নিয়ে আসলো।প্রিয়া মাহিমের হাতে খাবারের প্লেট দেখে অবাক হয়ে মাহিমের দিকে তাকিয়ে রইলো।মাহিম রুমে এসে খাবার গুলো মাহিম টেবিলে রেখে চেঁয়ার টেনে দিয়ে প্রিয়াকে বলল।
মাহিম:-এখানে এসে বসুন।
প্রিয়া শুধু অবাক দৃষ্টিতে মাহিমের দিকে তাকিয়ে আছে,কিছু বলছে না।
মাহিম:-কি হলো আসুন?
এরপর প্রিয়া গিয়ে চেঁয়ারে বসে পরলো,আর মাহিমও প্রিয়ার পাশে একটা চেঁয়ার টেনে বসে পরলো।
প্রিয়া:-এইসব কার জন্য?(অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে)
মাহিম:-কার জন্য আবার আপনার জন্য
এইবলে মাহিম প্রিয়াকে খাবার বেরে দিচ্ছিল।
প্রিয়া সেটা দেখে বলল।
প্রিয়া:-ছিঃ ছিঃ আমি থাকতে আপনি আমাকে খাবার বেরে দিচ্ছেন কেন?দিন আমাকে দিন আমি বেরে নিচ্ছি।
মাহিম:-কেন আমার দুটো হাত নেই?
প্রিয়া:-এইগুলো মেয়েদের কাজ
মাহিম:-কোথায় লেখা আছে যে এগু মেয়েদের কাজ?
প্রিয়া:-কোথায় আবার লেখা থাকবে,রান্না-বান্না থেকে শুরু করে এসব কাজ তো মেয়েরাই করে।তাই বললাম।
মাহিম:-এসব কাজ মাঝেমাঝে ছেলেদেরও করতে হয়।নিন এবার বেশি কথা না বলে খাওয়া শুরু করুন।
প্রিয়া খাবারের প্লেট হাতে নিল,প্রিয়া যে হাত দিয়ে খাবে সেই হাতেই ড্রেসিং করা।প্লেট টা হাতে নিয়ে কি করবে বুঝতে পারছেনা।মাহিম বিষয়টা লক্ষ করে বলল
মাহিম:-ও আপনার তো হাতে ড্রেসিং করার,আমাকে দিন আমি খাইয়ে দিচ্ছি।
এইবলে প্রিয়ার হাত থেকে খাবারের প্লেট টা হাতে নিল।প্রিয়া শুধু অবাক দৃষ্টিতে এইসব তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছিল।
মাহিম:-নিন হাঁ করুন…
এইপর মাহিম প্রিয়াকে খাইয়ে দিচ্ছিল।
কিছুক্ষন পর মাহিম দেখলো প্রিয়া চোঁখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পরছে।মাহিম কিছু বুঝতে পারলো না সে বলল
মাহিম:-কি ব্যাপার আপনি কাঁন্না করছেন কেন?(অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে)
প্রিয়া:-ছোট্ট বেলায় যখন আমি রাগ করে খেতাম না,তখন ঠিক আপনার মতো করেই আমার বাবাও আমাকে এভাবে খাইয়ে দিতেন,তাই বাবার কথা মনে পরেগেল(কেঁদে কেঁদে)
মাহিম:-আপনার বাবা বেঁচে থাকলে হয়তো আপনাকে আমার সাথে এভাবে আসতে হতো না,মানে প্রয়জনি হয়তো না।
প্রিয়া:-হুমম সেটা অবর্ষ ঠিক,! বাবা বেচে থাকলে হয়তো আপনার সাথে আমার বিয়েটাই হতো না।
মাহিম প্রিয়ার কথা শুনে থমকে গেল।
মাহিম”-তুমি এভাবো প্রিয়া আমি না।তোমাকে দেখার পর থেকেই আমি বুঝতে পেরেছি আমার জীবনে নতুন কিছু ঘটবে,নতুন কেউ আসবে।আর সেটা হলো তুমি,শুধু তুমি।তোমাকে দেখার পর থেকেই তো আমি ভেবে নিয়েছি এই পৃথিবীতে তুমি শুধু আমার জন্যই এসেছো।আর তুমি কি অবলিলায় বলে দিলে আমার সাথে তোমার বিয়েটাই হতো না।তুমি তো আমাকে অসভ্য খারাপ মানুষ ভাবো,আমাকে খারাপ না ভাবলে এই কখাটা বলতে না।তার মানে আমার সাথে তোমার বিয়েটা যে করেই হোক তুমি একটুও খুশি হওনি(মনে মনে প্রিয়ার দিকে তাকিয়ে)
এইসব মাহিম মনে মনে বলেই প্লেট টা টেবিলে রেখে মাহিম হাতটা ধুয়ে নিল।প্রিয়া কিছু,বুঝতে পারলো না।সে বলল
প্রিয়া:-কি ভাবছেন?
মাহিম কিছু না বলে পানির গ্লাসটা হাতে নিল,নিয়ে প্রিয়ার মাথায় গ্লাসের পানি গুলো ঠেলে দিল।
মাহিম প্রিয়ার মাথায় পানি দিতেই প্রিয়া উঠে দারিয়ে গেল।এরপর প্রিয়ার দিকে রাগি চোখে দেখে রুম থেকে বেড় হয়েগেল।
সকাল বেলা মাহিম ঘুম থেকে উঠে দেখলো ৮টা বেজেগেছে কিন্তু প্রিয়া এখনো ঘুম থেকে উঠেনি,প্রিয়া মেঝেতে সুয়ে আছে।মাহিম প্রিয়াকে ২-৩বার ডাকলো কিন্তু কিছুতেই প্রিয়া ঘুম ভাঙলো না।মাহিম খাঁট থেকে মেনে প্রিয়াকে ডাকতে গা এ হাত দিতেই দেখলো প্রিয়া গা এ অনেক জ্বর।
এমনিতেই আগে থেকেই প্রিয়ার গা এ জ্বর ছিল, কিন্তু কালকে রাতে এই ঠান্ডায় পানি দিয়ে প্রিয়াকে ভিজাতে ঠান্ডা গেলে জ্বরটা আরো বেশি হয়েছে।মেয়েটার গা এ এত জ্বর তাই এখনো টের পায়নি,আর একটু ঘুমক এটা ভেবে সে আর প্রিয়াকে না ডাকে ওয়াশরুমে চলেগেল।
কিছুক্ষন পর মাহিম ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে দেখলো প্রিয়া নেই,ঘুম থেকে উঠে গেছে।মাহিম ওয়াশরুম থেকে বেড় হয়ে ফ্রেশ হয়ে,রেডি হতে লাগলো অফিসে যাওয়ার জন্য।এমন সময় প্রিয়া রুমে আসলো।
প্রিয়া:-আপনার চা?
মাহিম প্রিয়ার কন্ঠে শুনে পিছনে ঘুরে প্রিয়ার দিকে তাকালো,দেখলো জ্বরটা বেশি হওয়াতেই প্রিয়া ঠিক মতো দাড়াতে পারছেনা,ঐষধ খেয়ে একটু প্রিয়ার ঘুমানোর দরকার।কিন্তু কোন উপায় নেই প্রিয়া তো এই বাড়িতে কাজের মেয়ে হয়ে এসেছে,তাই প্রিয়ার যতই কষ্ট হোক না কেন প্রিয়াকে কাজ করেই খেতে হবে।
মাহিম কিছু না বলে প্রিয়া কিছু ঐষধ দিয়ে প্রিয়াকে খেতে বলে মাহিম অফিসে চলেগেল।
এইদিকে অর্পা প্রিয়া প্রিয়া বলে চিৎকার দিয়ে প্রিয়াকে ডাকছিল,প্রিয়া আর ডেরি না করে ঐষধ গুলো টেবিলে রেখে হাতে চা এর কাপ নিয়ে তারাতারি অর্পার রুমে গেল।
প্রিয়া:-এই নিন আপু আপনার চা(কাপটা অর্পার দিকে দিয়ে)
অর্পা চা এর কাপটা হাতে নিয়ে ঠাসসস করে একটা চর বসিয়ে দিল প্রিয়ার গালে।প্রিয়া অসহায় দৃষ্টিতে অর্পার দিকে তাকিয়ে রইলো
অর্পা:-(রাগি কন্ঠে)৯টা বাজে আর এখন এসে বলছিস আপনার চা?
প্রিয়া কিছু বলছে না মাথা নিচু করে দারিয়ে রইলো।
অর্পা:-কাল তোকে না বলছি যে ঠিক ৭টার সময় আমার রুমে চা নিয়ে আসতে?(চোখ বড় বড় করে)
প্রিয়া:-আপু ঘুম থেকে উঠতে একটু লেট হয়েছে,আর কখনো এমনটা হবেনা(মাথা নিচু করে)
অর্পা:-এটা কি তোর বাবার বাসা নাকি যে যখন তোর মন চাইবে তখন ঘুম থেকে উঠবি?(রাগ দেখিয়ে)
প্রিয়া:-গা এ অনেক জ্বর…(আর কিছু বলার আগেই)
অর্পা:-এই বন্ধ কর এইসব ফালতু কথা,পাশের রুমে তোর দুলা ভাই আছে যা গিয়ে ওকে চা দিয়ে আয়দ।যা ভাগ এখন আমার সামন থেকে।(রাগি কন্ঠে চোখ বড় বড় করে প্রিয়ার দিকে তাকিয়ে)
এরপর প্রিয়া মাথা নিচু করে অর্পার রুম থেকে বেড় হয়ে অর্পার Husband নীলয় এর রুমে চা নিয়ে গেল।
প্রিয়া:-আপনার চা(নীলের দিকে কাপটা এগিয়ে দিয়ে)
নীল চা এর কাপ না নিয়ে প্রিয়ার বুকের দিকে কেমন খারাপ দৃষ্টি নিয়ে আছে।প্রিয়া সেটা বুঝতে পেরে বুকের কাপড়টা একটু টেনে নিয়ে।
প্রিয়া:-(কাঁপা কাঁপা কন্ঠে)আআপনার চা(ভয় পেয়ে)
নীল:-(চমকে উঠে)ওহ হ্যাঁ আমার চা
এইবলে নীল চা এর কাপটা না নিয়ে প্রিয়ার হাতটা ধরে ফেলল।
প্রিয়া:-(কাঁপা কাঁপা গলায়)কি ব্যাপার আপনি আমার হাত ধরছেন কেন?(হাতটা ছাড়ানোে চেষ্টা করে)
নীল:-কেন ধরেছি এখনো বুঝতে পারোনি(আরো শক্ত করে ধরে)
প্রিয়া:-আমার হাতটা ছাড়ুন বলছি(ছাড়ানো চেষ্টা করে)
প্রিয়া যতই ছাড়ানোর চেষ্টা করছিল নীল ততই আর শক্ত করে প্রিয়ার হাতটা ধরছিল এমন করতে করতে এমন সময় অর্পা রুমে এলো
অর্পা:-নীল এই নীল?(রুমে ঢুকতে ঢুকতে)
নীল অর্পার কন্ঠে শুনে চমকে উঠে প্রিয়ার হাতটা ছেড়ে দিল।আর ভয় পেয়ে নীল উঠে দাড়ালো।
নীল প্রিয়ার হাত ছেড়ে দিতেই প্রিয়া কাঁদতে কাঁদতে রুম থেকে দৌড়ে বের হয়েগেল।
সারাদিন চলে যাওয়ার পর রাতে মাহিম রুমে ঢুকতেই প্রিয়া ঘুম ভেঙে গেল।
প্রিয়া এত জ্বর নিয়ে সারাদিন কাজ করার পর খুব টায়ার্ড লাগছিল,তাই বিকালের এইদিকে একটু সুয়ে ছিল সে কখন যে ঘুমিয়ে পরেছে তার মনে নেই।
মাহিম রুমে ঢুকতেই প্রিয়া মাহিমকে দেখে চমকে উঠে মেঝে থেকে বালিশটা উঠিয়ে নিয়ে নিল।
মাহিম:-কি হলো উঠলেন কেন?
প্রিয়া:-না মানে মাথাটা খুব ব্যাথা করছিল তাই একটু সুয়ে ছিলাম!!সন্ধা হয়েগেছে বুঝতে পারিনি(বালিশটা খাটের উপর রেখে দিতে দিতে)
মাহিম:-জ্বর কমেছে আপনার?
প্রিয়া কিছু বলল না
মাহিম ফোনটা রাখতে টেবিলের কাছে যেতেই সকালে প্রিয়া দেওয়া ঔষধ দেখতে পেল।
মাহিম:-কি ব্যাপার আপনি সকালে ঔষধ গুলো খান-নি??
প্রিয়া:-না খাওয়া হয়নি?
মাহিম:-ওহ তার মানে আমার কথাটার আপনি কোন গুরুত্ব দেননি তাই তো?(প্রিয়ার কাছে এগিয়ে এসে)
প্রিয়া:-না না আমি ভেবেছিলাম..(আর কিছু বলার আগেই)
মাহিম:-কি ভেবেছেন?ভেবেছিলেন যে আমার কথাটা পাত্রা দেওয়ার কথা নয় তাই পাত্র দেননি কি তাই তো?
প্রিয়া কিছু বলছেনা চুপ করে আছে।
মাহিম:-সকাল বেলা আমি আপনাকে ঔষধ গুলো দিয়ে বলে গেলাম খেতে,তাও কেন আপনি ঔষধ গুলো খাননি?
প্রিয়া এখনো কিছু বলছেনা।
মাহিম:-কি হলো?কথা গুলো আমি কাকে বলছি?
প্রিয়া:-ঔষধ খেতে আমার ভালো লাগেনা তাই খায়নি।
মাহিম:’আমি তোমার ভালোর জনই সকালে ঔষধ গুলো দিয়ে গেলাম,আর তুমি সেটা এড়িয়ে গেছ।
আমি যতই তোমার কেয়ার করার চেষ্টা করছি তুমি ততই আমাকে দূরে সরে দিচ্ছ,আমাকে অপমান করছো।তুমি আমাকে যতটা আঘাত করবে তার বেশি আঘাত আমি তোমাকে করবো(মনে মনে)
মাহিম:-এই দেখুন আপনার কি ভালো লাগলো না লাগলো সেটা আমার দেখার বিষয় নয়,আমাদের বাড়িতে থাকতে হলে আপনাকে সুস্ত হয়ে থাকতে হবে(প্রিয়া দিকে এগিয়ে এসে)
প্রিয়া:-আমি কি জ্বরটা ইচ্ছে করে বাধিয়েছি নাকি?
মাহিম:-ইচ্ছে করে বাধেননি কিন্তু জ্বরটা আপনি ধরে রেখেছেন।
প্রিয়া:-হ্যাঁ তাতে আমার খুব লাভ শরিল খারাপ থাকলে তো আমায় কাজ করে খেতে হয় না,তাই আমি জ্বরটা তাকে ধরে রেখেছি তাই না?
মাহিম:-বলা যায় না,হতে পারে আপনি কাজে ফাকি দেওয়ার জন্য ঔষধ গুলো খাননি
প্রিয়া:-কি বললে?(অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে)
মাহিম:-হ্যাঁ আপনি যা শুনেছেন আমি তা ঠিক বলেছি,,,শরিল খারাপ হয়ে পরে থাকলে তো কাজ করতে হবেনা তাই আপনি প্লান করে ঔষধ গুলো খাননি।
প্রিয়া:-(রাগ দেখিয়ে)আপনি….(কিছু একটা বলতে গিয়ে বলল না)
মাহিম:-কি আমি?(আরো কাছে এসে)
প্রিয়া:-না কিছু না
মাহিম:-না না বলুন কি আমি?(রাগি কন্ঠে)
প্রিয়া:-বললাম তো কিছু না(বিরক্তির ভাবে)
এইবলে প্রিয়া রুম থেকে চলে যাচ্ছিল।
মাহিম:-কোথায় যাচ্ছে,আপনাকে বলতেই হবে আমি কি?
এইবলে প্রিয়ার এক হাত প্রিয়ার পিছনে দিক দিয়ে ধরে মাহিমের কাছে টেনে নিল।
প্রিয়া:-মাহিম বাবু ছাড়ুন আমার লাগছে(কাঁদো কাঁদো ভাবে)
মাহিম:-লাগুক তাতে আমার কি?আমাকে বলুন আমি কি?(রাগি কন্ঠে)
প্রিয়া:-মাহিম বাবু ছাড়ুন আমার খুব ব্যাথা লাগছে(ছাড়ানোর চেষ্টা করে কাঁদো কাঁদো ভাবে)
মাহিম:-বললাম তো লাগুক,আপনাকে বলতেই হবে আমি কি?(রাগি কন্ঠেই)
এইবলেই মাহিম আরো শক্ত করে প্রিয়ার হাতটা চেপে ধরতেই প্রিয়ার হাতের চুড়ি ভেঙে চুড়ির টুকড়ো প্রিয়ার হাতে ঢুকতেই প্রিয়া চিৎকার দিয়ে উঠলো।

পর্ব-০৭
———————————–
“অর্পা আর নীলের রুমে”
অর্পা রুমে ঢুকতেই নীল রুম থেকে বেরিয়ে যাচ্ছিল এমন সময়
অর্পা:-দাড়াও নীল(নীলের পিছন থেকে)
অর্পার কথা শুনে দাড়িয়ে গেল।অর্পা নীলের কাছে যেতেই
নীল:-কিছু বলবে?
অর্পা:-হুমম
নীল:-কি বলো শুনি?
অর্পা:-আচ্ছা সকাল বেলা ঐ রুমে আমি যেতেই প্রিয়া কেন ঐ রুম থেকে কাঁন্না করতে করতে বেরিয়ে গেল?
অর্পার কথা শুনে নীলের ভিতর যেন সুকিয়ে গেল,তার শরিল ভয়ে ঘামতে লাগলো সে কি বলবে বুঝতে পারছেনা।
নীল:-(নিশ্চুপ)
অর্পা:-কি হলো বলো?
নীল:-(কাপা কাপা কন্ঠে) না মানে(অর্পা কাজ থেকে দূরে সরিয়ে গিয়ে)
অর্পা:-হুমম বলো কি?
নীল:- না মানে(ঠিক একি ভাবেই)
অর্পা:-কি না মানে না মানে করছো?(এগিয়ে গিয়ে একটু রেগে)
নীল:-না মানে সেটা আমি কি করে বলবো(ভয় ভয় করে)
অর্পা:-না মানে আমি যখন ওকে থাপ্পড় দিলাম তখন ও কাঁন্না করলো না,কিন্তু আমি ঐ রুমে যেতেই প্রিয়া তোমার কাজ থেকে ঐভাবে কাঁন্না করতে করতে দৌরে বেড় হয়েগেল কেন?
নীল:-বললাম তো আমি জানিনা কেন(অর্পার কাজ থেকে সড়ে গিয়ে)
অর্পা:-কি করছিলে ওর সাথে?
নীল:-মামামানে তুমি কি বলতে চাইছো অর্পা
অর্পা:-আমি কি বলতে চাইছি সেটা তুমি ঠিকি বুঝতে পারছো
নীল:-অর্পা তুমি কি আমাকে সন্ধেয় করছ নাকি?(ভয় করে অর্পার দিকে ঘুরে)
অর্পা:-যদি তোমার মনে হচ্ছে আমি তোমাকে সন্ধেয় করছি,তাহলে সেটাই।
নীল:-অর্পা তুমি আমাকে সন্ধেয় করছো?তাও আবার একটা কাজের মেয়ে কে নিয়ে?
অর্পা:-(নিশ্চুপ)
নীল:-এই তোমার ভালোবাসা? আমার প্রতি তোমার একটুও বিশ্বাস নেই?(অর্পার কাছে এগিয়ে এসে)
অর্পা এখনো চুপ করে আছে কিছু বলছেনা।
নীল:-বুঝতে পেরেছি,আমি ঘর জামাই বলে তোমার কাছে আমার কোন মূল্য নেই।
অর্পা:-আমি সেটা বলিনি।
নীল:-তুমি সেটাই বুঝাতে চাইছো,যদি তোমার কাছে আমার মূল্য থাকতো তাহলে তুমি কখনই একটা কাজের মেয়ে কে নিয়ে আমাকে সন্ধয় করতে না।আমি চলে যাব থাকবো না।
কাঁদো কাঁদো ভাবে বলেই নীল রুম থেকে বেরিয়ে যাচ্ছিল এমন সময়
অর্পা:-নীল দাড়াও কোথায় যাচ্ছ?
পিছন থেকে বলেই নীলের সামনে গিয়ে দাড়ালো।
অর্পা:-কোথায় যাচ্ছ?
নীল:-আমি থাকবো না আর তোমার বাসায়।
অর্পা:-নীল I am sorry আমার ভূল হেয়েগেছে।তুমি প্লিজ এমন করোনা।
নীলা:-না এখানে থাকলে তুমি আরো প্রিয়াকে নিয়ে আমাকে সন্ধেয় করবে। তার চেয়ে বেটার আমি চলে যাই এই বাসা থেকে।সরো সামন থেকে(কেদে কেদে অর্পাকে সরানো চেষ্টা করে)
অর্পা:-আর কখনই আমি প্রিয়াকে নিয়ে তোমাকে সন্ধেয় করবো না,প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দাও।
নীল:-অর্পা সরো সামন থেকে,আমাকে যেতে দাও
অর্পা:-নীল আমি তোমাকে ভালোবাসি বলেই সন্ধেয় করি,আমি কথা দিচ্ছি আর কখনই তোমাকে ামি সন্ধেয় করবো না, i Love you Nil
এইবল কেঁদে অর্পা নীল জরিয়ে ধরলো।
নীলও অর্পাকে জরিয়ে ধরে একহাত দিয়ে চোখে পানি মুছতে মুছতে
নীল:-“উফফফ একটুর জন্য আমার এতদিনের স্বপ্ন সবকিছুই শেষ হয়ে যেতো।যে স্বপ্ন নিয়ে এতদিন ধরে আমি এই বাড়িতে ঘর জামাই হয়ে আছি আজ একটুর জন্য সব শেষ হতো।অর্পা আমি তোমাকে বিয়ে করেছি শুধু তোমার বাবার টাকা,পয়সা,বাড়ি,গাড়ির জন্য।এতদিন ধরে স্বপ্ন ছিল তোমার বাবার এইসব কিছুই আমার করে নেওয়ার,কিন্তু এখন তো আরও একটা জিনিস আমার চাই।যা এইসব কিছুর চেয়ে আমার কাছে অনেক দামি আর সেটা হলো প্রিয়া।যতদিন এই দুটো জিনিস আমি আমার করে পাচ্ছি,ততদিন তোমার সামনে এই ভালো মানুষ হওয়ার অভিনয়টা আমাকে চালিয়ে যেতে হবে।(অর্পাকে জরিয়ে ধরে মনে মনে)
এরপর
“মাহিম আর প্রিয়ার রুমে”
মাহিম আরো শক্ত করে প্রিয়ার হাতটা চেপে ধরতেই প্রিয়ার হাতের চুড়ি ভেঙে চুড়ির টুকড়ো প্রিয়ার হাতে ঢুকতেই প্রিয়া চিৎকার দিয়ে উঠলো।(এরপর)মাহিম প্রিয়ার মুখের দিকে তাকালো দেখলো প্রিয়া আর চিৎকার করছে না,হাতটা ছাড়ানোর চেষ্টা করছে না,শুধু চোখ বন্ধ করে চোখের জল ফেলছে।মাহিম বুঝতে পারলো মেয়েটা সত্যি অনেক ব্যাথা পেয়েছে।মাহিম প্রিয়ার মুখে দিকে তাকানো পর প্রিয়ার হাতটা ছেড়ে দিয়ে পিছন দিকে পিছিয়ে গেলপ্রিয়ার হাতটা মাহিম ছেড়ে দেওয়ার পর ভেঙ্গে যাওয়া চুড়ির টুকরো গুলো নিছে পরে গেল।আর প্রিয়া নিজের হাতটা নিজের বুকে টেনে নিয়ে
প্রিয়া:-(কেঁদে কেঁদে)এভাবে আমার উপর এত অত্যাচার করেন আপনার একটুও বাধেনা না।কেন আমি দূর্বল অসহায় মুখ বুঝে সবকিছু সহ্যই বলে।হাত জোর করে আপনাদের বাসায় থাকতে এসেছি বলে।(কেঁদে কেঁদে)
মাহিম:-(নিশ্চুপ)
প্রিয়া:-আপনাদের বাসায় তো আর কেউ আমাকে বসে বসে খাওয়াবে না,এই দুটো হাত দিয়ে আমাকে কাজ করে খেতে হবে।(কেঁদে কেঁদে)
মাহিম কিছু বলছে না।
প্রিয়া:-আর তা নাহলে আপনাদের বাসায় কেউ আমাকে থাকতেই দিবে না।(কেঁদে কেঁদে)
মাহিম শুধু দাড়িয়ে প্রিয়ার কথা গুলো শুনছে কিঠু বলছেনা।
প্রিয়া:-কি চেয়েছি আমি?শুধু দু-বেলা দু-মুঠো ভাত আর থাকার জন্য একটু জায়গা,ারর তো কিছু চায়নি আমি।তবুও কেন আপনি আমার সাথে এমন করেন?আমি তো একটা মানুষ আমারও মন বলে একটা জিনিস আছে(কেঁদে কেঁদে)
কথাগুলো প্রিয়া কেঁদে কেঁদে বলেই দাড়িয়ে রইলো।
মাহিম প্রিয়ার হাতের দিকে তাকালো দেখলো ভেঙ্গে যাওয়া চুড়ির টুকরো দিয়ে প্রিয়ার হাত কেটে রক্ত বেড় হচ্ছে।প্রিয়ার অনেকটাই ব্যাথা পেয়েছে।
মাহিম:-“তুমি নিজেকে যতটা আমার কাজ থেকে রাগবে,আমি তার চেয়ে বেশি কষ্ট দিয়ে তোমাকে আমার কাজ দূরে সরিয়ে দিব।(মনে মনে প্রিয়ার দিকে তাকিয়ে)
প্রিয়া কিছুক্ষন দাড়িয়ে কাঁন্না করার পর
প্রিয়া:-আপনি যানতে চাইছিলেন না আপনি কি?আপনি একটা খুব খুব খুব খারাপ মানুষ,বাজে মানুষ।(বাচ্চাদের মতো কেঁদে কেঁদে)
মাহিম:-তাহলে এই খারাপ মানুষটার সাথে হাত জোর করে নিয়ে আসতে বলে ছিলেন কেন?আর এই খারাপ মানুষটার বাড়িতে আছেন কেন? বেরিয়ে যান(রেগে প্রিয়ার কাছে এসে)
প্রিয়া:-হুমম,যাব আমি চলে যাব,থাকবো না আমি আপনাদের বাসায়,একটা থাকার জন্য জায়গা হলে আমি ঠিকি চলে যাব।আর এখন থাকার জন্য কোথাও জায়গা নেই তো তাই বাধ্য হয়ে আমাকে আপনাদের বাসায় থাকতে হচ্ছে।
মাহিম:-হুমম জানি তো,এই আপনাদের মতো মেয়েদের থাকার জন্য নিদদির্স ঘর থাকেনা।
কথাটা শুনেই প্রিয়ার মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পরলো,সে মাহিমের দিতে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো।প্রিয়া কখন ভাবতে পারিনি যে মাহিম এই কথা প্রিয়া কে বলবে।
প্রিয়া:-কিহ? কি বললেন আপনি?(অবাক দৃষ্টিতে মাহিমের দিকে তাকিয়ে)
মাহিম:-হুম যেটা আপনি শুনলেন,এই আপনাদের মতো মেয়েদের শহরে,বন্দরে,হাটে,বাজারে সব জাগায় ঘর থাকে তো।(প্রিয়া থেকে দূরে যেতে যেতে)
প্রিয়া:-আপনি কি বলছেন এইসব?
মাহিম:-আমি একদম ঠিক কথা বলেছি,যা বলেছি একদম ঠিক বলেছি(প্রিয়ার কাছে এসে)
প্রিয়া:-আপনি আর কত অপমান করবেন আমাকে?আজকে যদি আমার মা-বাবা বেচে থাকতো তাহলে আপনি এই কথাটা আমাকে বলতে পারতেন?
মাহিম কিছু বলছেনা।
প্রিয়া:-(কেঁদে কেঁদে)আপনার মুখে তো তার কিচ্ছু আটকায় না,আপনার নিজের বউ আপনি কখন এই কথাটা বলতে পারতেন,কোদিনও পারতেন এই কথাটা বলতে?
মাহিম:-এই আপনি কি আমার বউ নাকি?(প্রিয়ার কাছে এগিয়ে এসে)নাকি নিজেকে মনে মনে আমার বউ ভাবেন,একটা কথা মাথায় রাগবেন আপনি কিন্তু এই বাড়ির কাজের মেয়ে আমার বউ না।আর কখনই আমার বউ হওয়ার চেষ্টাও করবেন না।(রাগি কন্ঠে ধমকের মতো করে)
প্রিয়া:-আমি জানি আপনার বউ না,আর কখনো আপনার বউ হওয়া চেষ্টা করিনা,কিন্তু আমি যে আপনার কেউ না সেটা যানতাম না।!!একটা রাস্তায় মেয়েকেও আপনি যেটা সম্মান করেন আমাকে আপনি সেটাও করেন না।
মাহিম শুধু কথা গুলো শুনছে কিছু বলছে না।
প্রিয়া:-তার মানে আপনি একটা রাস্তার মেয়ের থেকেও আমাকে খারাপ ভাবেন,একটা মানুষ একটা মানুষকে কতটা ঘৃণা করলে এইরকম একটা কথা বলতে পারে(কেঁদে কেঁদে)
মাহিম:-আমি যা বলেছি একদম ঠিক বলেছি(প্রিয়া দিকে তাকিয়ে)
মাহিমের কথা শুনেই প্রিয়া মাহিমের কাছে এসে মাহিমের শার্ট এর কলার ধরে
প্রিয়া:-(মাহিমের শার্ট টা টেনে ছিড়তে ছিড়তে)ঠিক বলেন-নি আপনি কিচ্ছু ঠিক বলেন-নি কিচ্ছু ঠিক বলেন-নি,ভূল বলেছেন আপনি(রেগে চিৎকার করে কেঁদে কেঁদে)
প্রিয়া মাহিমের শার্ট টা টেনে ছিড়ে দিয়ে মাহিম হালকা ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে।
প্রিয়া:-পেটে বৃদ্ধা থাকলে আর কয়েকটা ডিগরি থাকলে ভালো একটা চাকরি পাওয়া যায়,কিন্তু ভালো মানুষ হওয়া যায় না।
মাহিম প্রিয়ার দিকে আছে
প্রিয়া:-মানুষের বিচারের দিক দিয়ে না আপনার থেকে অনেক এগিয়ে(মাহিম দিকে আঙ্গুল উঠিয়ে)
মাহিম প্রিয়ার দিকে কিছুক্ষন রাগি চোখে থাকার পর নিজের বুকের দিকে একবার তাকালো আর প্রিয়া দিকে এগিয়ে এসে
মাহিম:-কি হলো এটা(প্রিয়া দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে)
প্রিয়া:-যা হয়েছে ঠিকি হয়েছে,বেশ করেছি আমি(রাগি কন্ঠে)
মাহিম:-বেশ করেছেন।
এইবলে মাহিম আবার ঠিক আগের মতো করে প্রিয়া হাতটা পিছন দিক দিয়ে চেপে ধরলো আর প্রিয়াও ঠিক আগের মতো করে চিৎকার দিয়ে কেঁদে উঠলো।
মাহিম:-এবার যদি আমি আপনার এই হাতটা ভেঙ্গে গুরিয়ে দেই,তাহলে আমি কিন্তু বেশ করবো(প্রিয়ার হাতটা শক্ত করে চেপে ধরে)
প্রিয়া:-(কেঁদে কেঁদে)হ্যাঁ দিন না,শুধু ভেঙ্গে কেন মেরে ফেলুন আমাকে,পুরো মেরে ফেলুন আমাকে(কেঁদে কেঁদে)

পর্ব-০৮
———————————–
মাহিম দেখলো প্রিয়ার অনেকটাই ব্যাথা পাচ্ছে, খুব কাঁন্না করছে,তাই সে প্রিয়ার হাতটা ছেগে দিল।
মাহিম প্রিয়ার হাতটা ছেড়ে দিয়ে প্রিয়ার কাজ থেকে একটু দূরে সরিয়ে গেল।
প্রিয়া:-ছেড়ে দিলেন কেন? ভেঙ্গে দিন না,মেরে ফেলুন আমাকে(কেঁদে কেঁদে)
মাহিম:-(নিশ্চুপ)
প্রিয়া:-এইরকম ভাবে কষ্ট দেওয়া চেয়ে আমাকে একদম মেরে ফেলুন,এইরকম ভাবে আমি আর বাচতে না(কেঁদে কেঁদে)
কথা গুলো বলেই প্রিয়া কাঁন্না করতে লাগলো।
মাহিম প্রিয়ার দিকে তাকালো দেখলো প্রিয়া খুব কাঁন্না করছে,এমনতেই মেয়েটা গাঁ এ অনেক জ্বর,আর এই জ্বর নিয়েই বাড়ির সমস্ত কাজ করতে প্রিয়ার অনেক কষ্ট হয়।আর এখন সেও যদি এভাবে প্রিয়ার উপর অত্যাচার করে তাহলে মেযেটা সত্যি কিছু একটা হয়ে যাবে,এমনিতেই প্রিয়ার শরিলের অবস্থা বেশি ভালো না।এটা ভেবে মাহিম কিছুক্ষন দাড়িয়ে থেকে আর কিছু বলে রুম থেকে বেরি গেল।
>রাত ১১টা<
মাহিম রুম থেকে বেড় হয়ে কিছুদূর যেতেই তার মা-মনি কে হাতে খাবারের প্লাট নিয়ে তার রুমের দিকে যেতে দেখে বলল।
মাহিম:-মা-মনি তুমি এতরাতে কোথায় যাচ্ছ?
মা-মনি:-তোর রুমেই যাচ্ছিলাম।
মাহিম:-আমার রুমে?(অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে)
মা-মনি:-হুম,নতুন বউ কোথায় নাকি?
মাহিম:-নতুন বউ আবার কে?
মা-মনি:-আরে নতুন বউ মানে তোর বউ প্রিয়া কোথায়?
মাহিম:-রুমে কেন?
মা-মনি:-আর বলিস না,তোর খাবার নিয়ে আশার সময় কত করে বললাম যে নতুন বউ সারাদিন জ্বর নিয়ে কত কাজ করলি এখন একটু তুই খেয়ে নিয়ে
বিশ্রাম-নে, মাহিমের আসতে অনেক রাত হবে।সে কিছুতেই আমার কথা শুনলো না,বলল যে তুই আগে খাবি তারপর নাকি নতুন বউ খাবে।দেখ এখন কয়টা বাজে কিন্তু এখনো আমার রুম থেকে খাবারটা নিয়ে আসেনি।এই বাড়িতে তো আমি ছাড়া আর কেউ মেয়েটার সাথে ভালো করে কথাই বলেনা,তাই খাবারটা নিয়ে তোর রুমে যাচ্ছিলাম।তা কি নতুন বউ ঘুমিয়েছে নাকি?
মাহিম:-না এখনো ঘুমোয়-নি
মা-মনি:-ওহ্ তাহলে যাই খাবারটা দিয়ে আসি,সারাদিন গাঁয়ে জ্বরের কারনে কিছুই খায়নি।রাতেও না খেলে মেয়েটা কালকে বিছানা থেকে উঠতেই পারবেনা।মেয়েটা যেমন আমার ভালো-মন্দ খোঁজ-খবর রাখে,আমারও মেয়েটার ভালো-মন্দ খোঁজ-খবর রাখতে হবে।
এইবলে মাহিমের রুমের দিকে যাচ্ছিল।মাহিম ভাবলো প্রিয়ার প্রতি তার মা-মনির অনেকটাই ভালোবাসা, প্রিয়ার তো হাত দিয়ে রক্ত পরছে আর কাঁন্না করছে।এভাবে প্রিয়াকে তার মা-মনি দেখলে অনেটাই রেগে যাবে তার উপর।মা-মনি মাহিমের নিজের মা না কিন্তু মাহিম ওনাকে নিজের মা ভাবে আর নিজের মা এর মতই ভয় করে সে বলল
মাহিম:-মা-মনি দাড়াও
মাহিমের কথা শুনে দাড়িয়ে গেল।
মাহিমের তার মা-মনির কাছে এসে’
মাহিম:-খাবার গুলো আমাকে দাও আমি নিয়ে যাচ্ছি, অনেক রাত হয়েছে যাও তুমি গিয়ে ঘুমাও।
মা-মনি:-না থাক আমি-ই নিয়ে যাচ্ছি।
মাহিম:-বললাম না অনেক রাত হয়েছে তুমি গিয়ে ঘুমাও।
এইবলে জোর করে ওনার হাত থেকে খাবার গুলো নিয়ে ওনাকে ওনার রুমে পাঠিয়ে দিল।
কিছুক্ষন পর মাহিম খাবারের প্লেট টা নিয়ে নিজের রুমে আসলো,এসে দেখলো প্রিয়া মেঝেতে বসে অসহায় হয়ে চোখের জল ফেলছে।
মাহিম দাড়িয়ে প্রিয়ার দিকে ভাবছে”-মেয়েটা গাঁ এ এত জ্বর নিয়ে সারাদিন না খেয়ে তার জন্য অপেক্ষা করছিল আর সে শুধু তাকে এতটা কষ্ট দিল।মা-বাবা মরে একটা অসহায় মেয়ে কে এতটা কষ্ট দেওয়া ঠিক হচ্ছে না।এইভাবে কিছুক্ষন দাড়িয়ে ভাবার পর মাহিম খাবারের প্লেট টা টেবিলে গিয়ে রাগলো।তারপর প্রিয়ার কাছে গেল,গিয়ে তার পাশে বসলো।
মাহিম রুমে কখন এমেছে প্রিয়া বুঝতে পারে-নি,মাহিম প্রিয়ার পাশে বসতেই প্রিয়া চমকে উঠে মাহিমের দিকে তাকালো।মাহিম প্রিয়ার মুখের দিকে তাকিয়ে দেখলো প্রিয়ার চোঁখ দিয়ে পানি পরছে কিন্তু কোন শব্দ হচ্ছে না।কেমন একটা অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে।
মাহিম প্রিয়ার দিকে তাকাতেই প্রিয়ার হাতের দিকে মাহিমের চোখ পরলো।মাহিম প্রিয়ার হাতের দিকে তাকিয়ে দেখলো চুড়ির টুকরো দিয়ে কেটে যাওয়া জায়গাটায় রক্ত জমে আছে।
কিছুক্ষন পর মাহিম প্রিয়ার কেটে যাওয়া হাতটা ধরলো,প্রিয়া কিছু বলল না অবাক দৃষ্টিতে মাহিমের দিকে তাকিয়ে রইলো।
মাহিম:-(প্রিয়ার হাতটা ধরে)সরি(প্রিয়ার দিকে তাকিয়ে)
প্রিয়া:-(কাঁদার মতো করে)আপনি সরি বলছেন কেন?(অভিমানী সুরে)
মাহিম:-আমি আসলে বুঝতে পারিনি আপনার এতটা লাগবে।
প্রিয়া:-আমি ব্যাথা পেলে আপনার কি? আপনি তো চান-ই আমার ব্যাথা লাগুক আমি কষ্ট পাই।
মাহিম:-(নিশ্চুপ)
প্রিয়া:-আমি তো এই বাড়ির কাজের মেয়ে আপনার বউ না।আমি ব্যাথা পেলে আপনার তো কিছু জায়-আসে না।(কাঁদো কাঁদো ভাবে)
মাহিম:-“আমি ইচ্ছে করে তোমাকে কষ্ট দেই,তুমি আমাকে বাধ্য করো তোমাকে কষ্ট দিতে।আমি সব সময় তোমার কাছে যেতে চাই তোমাকে আপন করে নিতে চাই।কিন্তু তুমিই আমাকে প্রতিটা মুহূর্তে দূরে সরিয়ে দাও,আমাকে আঘাত করো।তুমি কিছুতেই আমাকে বুঝতে পারো না,ভূল বুঝো আমাকে।খারাপ ভাবো আমাকে।যতদিন তুমি আমাকে ভূল বুঝছে ততদিন আমিও তোমাকে কষ্ট দিব।(মনে মনে প্রিয়ার দিকে তাকিয়ে)
মাহিম:-হুম আমার কিছুই জায়-আসেনা,কিন্তু মানুষ হিসাবে তো একটা দায়িত্ব আছে আপনার প্রতি।এখন বেশি কথা না বলে টেবিলে চলুন আমি হাতে ব্যান্ডেজ করে দিচ্ছি।
প্রিয়া:-(অভিমানী সুরে)লাগবে না আপনার ছাড়ুন(হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে)
মাহিম:-বলছি তো চলুন
প্রিয়া:-আপনাকে আমার উপর দয়া করতে হবেনা,এমনিতেই আপনি আমার উপর অনেক দয়া করেছেন।দয়া করে যে আপনাদের বাড়িতে আমাকে একটু থাকা-খাওয়ার জায়গা করে দিয়েছেন।এটাই অনেক আর কোন করতে হবে না আপনার।(অভিমানী সুরে কাঁদো কাঁদো ভাবে)
মাহিম:-বলছি না চলুন হাতে ব্যান্ডেজ করে দিচ্ছি।
প্রিয়া:-করবো না আমি হাতে ব্যান্ডেজ।
মাহিম:-করবেন না মানে?
প্রিয়া:-করবো না মানে করবো না।
মাহিম:-আপনি করবেন না,আপনার ঘাড় করবে।
প্রিয়া:-ঠিক আছে,তাহলে সেটাই করুন।
এইবলে প্রিয়া বসা থেকে উঠে রুম থেকে বের হয়ে যাচ্ছিল।এমন সময় মাহিম প্রিয়ার হাত ধরে ফেললো আর বলল
মাহিম:-আমি যখন বলেছি আপনাকে হাতে ব্যান্ডেজ করতে হবে তখন করতেই হবে।(ধমক দিয়ে)
প্রিয়া:-মাহিম বাবু আপনি একটা কাজের মেয়ের সাথে এভাবে হাত জোর করতে পারেন না, কোন অধিকার আপনার নেই।(অভিমানী সুরে)
মাহিম:-এই চুপ একদম চুপ।হাত দিয়ে রক্ত পরছে আর সে আছে তার জেদ নিয়ে।(রেগে)
এরপর মাহিম প্রিয়ার হাত ধরে টেনে নিয়ে টেবিলে চেঁয়ার টেনে বসালো।
মাহিম:-এখানে একদম চুপ করে বসে থাকবেন(রাগি কন্ঠে)
প্রিয়া:-কেন আমি আপনাদের বাসায় কাজ করে খাইবলে কি সব সময় আপনার কথা শুনতে হবে নাকি?(বাচ্চাদের মতো করে)
মাহিম:-হ্যাঁ শুনতে হবে,আমি যখন যা যে সময় এ বলবো তখন সেটাই সে সময় এ আপনাকে শুনতে হবে।
প্রিয়া:-কেন শুনবো আমি আপনার কথা?
এরপর মাহিম প্রিয়া চেঁয়ারে বসানো প্রিয়ার দু-দিকে দু-হাত দিয়ে তার কাছে এগিয়ে এসে।
মাহিম:-আমার কথা শুনতে আপনি বাধ্য আমি যাই বলবো আপনাকে তাই শুনতে হবে।আর আমার কথা আপনি কেন শুনবেন কারণ জানেন?কারন উপরওলার পরে আপনার একমাত্র হলাম আমি।(প্রিয়ার চোঁখের দিকে তাকিয়ে)

পর্ব-০৯
———————————–
প্রিয়া:-মানে?
মাহিম:-না মানে হলো যে আমিই তো আপনাকে এই বাড়িতে এনেছি সো আপনার মালিক আমি।এখন বেশি কথা না বলে অনেক রাত হয়েছে চলুন ফ্রেশ হয়ে খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ুন।(প্রিয়ার থেকে সরে গিয়ে)
প্রিয়া:-আমি রাতে খাবো না।আপনি খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ুন।(অভিমানী সুরে চোখের জল মুছতে মুছতে)
মাহিম:-ওকে তাহলে আমিও না খেয়ে সুয়ে পরি।
প্রিয়া:-কেন?
মাহিম:-কেন আবার আপনার জন্য।
প্রিয়া:-আমার জন্য মানে?
মাহিম:-মানে আপনি খাবেন না বলে আমিও রাতে খাবো না।
প্রিয়া:-আমি তো আপনার কেউ না।আমি না খেলে আপনিও না খেয়ে থাকবেন কেন? আপনার সাথে আমার কিসের সম্পর্ক?(অভিমানী সুরে)
মাহিম:-(রেগে প্রিয়ার কাছে এসে)এই দেখুন আপনার সাথে আগেও আমার কোন সম্পর্ক ছিল না।না এখনো আছে।আর কোনদিনও থাকবেও না।(বিরক্তিকর ভাবে)
প্রিয়া:-(নিশ্চুপ)
মাহিম:-এখন বেশি কথা না বলে খেতে বসুন।
এরপর প্রিয়া আর কথা না বারিয়ে মাহিম এর সাথে খেয়ে সুয়ে পরলো।
সকাল বেলা প্রিয়া মাহিম ঘুম থেকে উঠার আগেই প্রিয়া উঠে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা তৈরি করতে গেল।
প্রিয়া ঘুম থেকে উঠার কিছুক্ষণ পর মাহিমের ঘুম ভাঙ্গলো।মাহিম ঘুম থেকে উঠে দেখলো প্রিয়া নেই তার আগেই উঠে গেছে।
মাহিম ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে ফ্রেশ হচ্ছিল এমন সময় প্রিয়া রুমে আসলো।
প্রিয়া:-নাস্তা রেডি চলুন নিছে চলুন আপনার তো আবার অফিসে যেতে লেট হবে।
মাহিম:-আজকে আর অফিসে যাব না।
প্রিয়া:-ওহ আচ্ছা আপনি আসুন আমি নিচে আছি।(এইবলে চলে যাচ্ছিল)
মাহিম:-আজকে বাহিরে খেতে যাবো।
প্রিয়া:-আচ্ছা ঠিক আছে।
মাহিম:-রেডি হয়ে নিন।
প্রিয়া:-আমি রেডি হবো মানে?আমি রেডি হয়ে কি করবো?
মাহিম:-কেন আমার সাথে যাবেন না বুঝি?
প্রিয়া:-আমি আপনার সাথে যাবো মানে?(অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে)
মাহিম:-যাবেন মানে যাবেন।
প্রিয়া:-আমাকে নিয়ে আপনি বাহিরে খেতে যাবেন কেন? আমি আপনার কে যে আমাকে নিয়ে আপনি বাহিরে খেতে যাবেন?(অভিমানী সুরে)
মাহিম:-কেউ না বাট বাসাতে মাত্র দু-জন মানুষ,একজন বাহিরে খেতে যাবে আর অন্যজন বাসাতে খাবে।এটা কেমন দেখায় না।তাই বলছি,এখন বেশি কথা না বলে তারাতারি রেডি হয়ে নিন।(রেগে)
প্রিয়া:-আমি যাবো না।
মাহিম:-(প্রিয়ার কাছে এগিয়ে এসে)আপনি যাবেন আপনান ঘাড় যাবে।কাল রাতে আমি আপনাকে বলেছি না যে আমি আপনার মালিক।সো আমি আপনাকে যাই বলবো আপনাকে সেটা বাধ্য হয়ে করতে হবে।আমি বাহিরে আপনার জন্য ওয়েট করছি,তারাতারি রেডি হয়ে আসুন।(রাগ দেখিয়ে বলেই রুম থেকে বের হয়ে গেল)
মাহিম গাড়ি বের করে গাড়ির পাশে দাড়িয়ে প্রিয়ার জন্য ওয়েট করছিল।
কিছুক্ষণ পর প্রিয়া রেডি হয়ে বের হয়ে আসলো।
মাহিম প্রিয়াকে দেখে গাড়িতে গিয়ে বসলো।প্রিয়া গাড়ির কাছে এসে পিছনে গিয়ে বসলো।
মাহিম:-“”এত অনিচ্ছুে তোমার আমার পাশে বসতে,আমি কি এতটাই খারাপ যে আমার পাশেও বসতে চাওনা তুমি(মনে মনে)
“কিছুক্ষণ পর”
মাহিম:-এতবড় হয়েছেন তবুও কাটিসিবড নেই কোন।
প্রিয়া:-(ভয় ভয় করে)কি মানে আমি আবার কি করলাম?
মাহিম:-না দেখছি ঠিকি আপনি কিছুই শিখেন নি।(রেগে)
প্রিয়া:-আমি কি করলাম সেটাই তো বুঝতে পারছি না।
মাহিম:-আমি তো আর ভাড়া করা ড্রাইভার না আপনার?দেখলেন তো আমি সামনে বসে আছি আপনিও কোথায় আমার পাশে এসে বসবেন তানা আপনি গিয়ে পিছনে বসে পরলেন।
প্রিয়া:-“”তোমার পাশে বসার কোন অধিকারী-ই তো আমার নেই।তুমি তো আমাকে বাড়ির কাজের মেয়ে হিসাবে এই বাড়িতে এনেছো, নিজের স্ত্রী হিসাবে না।তোমার পাশে বসার কোন যোগ্যতা আমার নেই।(মনে মনে মাহিমের দিকে তাকিয়ে)
মাহিম:-লোকে কি ভাব্বে যে আমি আপনার ড্রাইভার(রাগি কন্ঠে)
প্রিয়া কিছুক্ষণ চুপ করে থাকার পর।
প্রিয়া:-যাকে পছন্দ করেন না সে যে শুধু এই কাচ্ছি(গ্রাম্য ভাষা)রক্ষা করার জন্য আপনার পাশে গিয়ে বসতে পারে,তাকেও তো সেটা জানতে হবে।(অভিমানী সুরে)
মাহিম:-বাবা আপনার তো দেখি ভালোই মুখে কথা ফুটেছে।(প্রিয়ার দিকে তাকিয়ে)
প্রিয়া:-(নিশ্চুপ)
মাহিম:-শুনুন আমার কাছে সৌজন্য রক্ষাটাই সবচেয়ে ইমপর্টেন্ড।বাহিরের লোকে আমাকে আপনার ড্রাইভার ভাব্বে সেটা তো আমার ভালো লাগবেনা।
প্রিয়া এখনো চুপ করে আছে।
মাহিম:-এই আপনি তো দেখি আচ্ছা ঠেটা,এখনো বসে আছেন?(বিরক্তিকর ভাবে)
প্রিয়া:-তো কি করবো আপনার পাশে গিয়ে বসবো নাকি?(ভয় ভয় করে)
মাহিম:-না তাহলে কি আমি এমনি এমনি গাড়িটা দাড় করে রেখেছি।
এরপর প্রিয়া গাড়ি থেকে মেনে মাহিমের পাশে গিয়ে বসলো।
“কিছু দূরে যাওয়া পর”
প্রিয়া:-আর কত দূর?
মাহিম:-কেন কোন তারা আছে নাকি?
প্রিয়া:-আপনাকে তো দেখছি কোন প্রশ্নই করা যায় না শুধু দোষ খুজেন।
মাহিম:-তাহলে প্রশ্ন করছেন কেন? চুপ করে থাকুন।
প্রিয়ার মাথাটা কেমন জানি ব্যাথা করছে কথা বলতে ভালো লাগছেনা,তাই সে আর কথা না বলে চুপ করে বসে রইলো।
আর কিছু দূরে যাওয়ার পর মাহিম ভালো একটা রেস্টুরেন্ট এর সামনে গাড়িটা ব্রেক করলো।
তারপর দু-জনি গাড়ি থেকে নেমে রেস্টুরেন্ট এর ভিতরে গেল।
দু-জনি খাওয়া-দাওয়া শেষ করার পর বের হয়ে আসলো।মাহিম গাড়ির দরজাটা খুলে দিয়ে বলল
মাহিম:-নিন বসুন।
এইবলে মাহিম ড্রাইভিং সিটে গিয়ে বসলো।
বিয়ে পর সব মেয়েরাই চায় তার husband এর সাথে ঘুরতে যেতে।মাহিম আর প্রিয়ার বিয়ে হওয়া প্ররায় ২/৩ মাসের মতো হলো।কিন্তু এ ২/৩মাসে প্রিয়া কষ্ট ছাড়া আর কিছুই পায়নি।
আর কোখাও ঘুরতে যাওয়াও হয়নি।
তাই মাহিম ঠিক করেছে যে সে প্রিয়া নিয়ে আজ সারাদিনটা ঘুরবে + প্রিয়া সাথে আর খারাপ ব্যবহার করবে না।
মাহিম:-কি হলো বসুন?
প্রিয়া মাহিমের কথা না শুনে গাড়ির পিছন দিকে এগিয়ে যেতে লাগলো।
মাহিম:-আরে কই যাচ্ছেন?(গাড়ির ভিতর থেকে)
প্রিয়ার কোন উত্রর নেই।
মাহিম:-আরে কি হলো কথা বলছেন না কেন?
No Answer..!
এরপর মাহিম গাড়ি থেকে নেমে দেখলো একটা ছেলে কিছুটা দূরে দাড়িয়ে ফোনে কথা বলছে।
আর প্রিয়া সেই ছেলেটার দিকেই এগিয়ে যাচ্ছে।
মাহিম:-কোথায় যাচ্ছেন?(প্রিয়ার পিছন থেকে)
প্রিয়ার মাহিমের কথার কোন উত্রর না দিয়ে ছেলেটার কাছে গেল।প্রিয়া ছেলেটার কাছে যেতেই ছেলেটা প্রিয়াকে দেখে খুশি হয়ে ফোন রেখে হাসি মুখে কথা বলতে লাগলো।
১০ মিনিট ধরে মাহিম প্রিয়ার জন্য গাড়ির পাশে দাড়িয়ে আছে,কিন্তু প্রিয়া এখনো আসছে না।
১০মিনিট ধরেই প্রিয়া সেই ছেলেটা কথা বলে যাচ্ছে।
মাহিম প্রিয়াকে সেই ছেলেটার সাথে কথা বলা দেখে আর দাড়িয়ে না থেকে প্রিয়ার উপর পছন্ড রেগে গাড়ি করে একা বাসা ফিরে আসলো।
প্রিয়া বাড়িতে ফিরে দেখলো মাহিমের বাবা-মা,অর্পা,নীল আর সাথে করে একটা মেয়ে সহ তারা বাড়িতে ফিরেছে।প্রিয়া রান্না না করায় তাকে অর্পা আর মাহিমের মা অনেক বকা-চকা কথা শুনালো।
সারাদিন সবার জন্য রান্না আর বাড়িতে বিদেশ থেকে আসা মাহিমের মা আর তার সাথে আসা মেহমান আসার কারণে।আজকে একটু বেশিই রান্না-বান্না আর বাড়ির কাজ করতে হয়েছে।
রাতে সবাই খাওয়া-দাওয়া শেষ করার পর প্রিয়া সবকিছু ঠিক করে রাখলো।
আজকে একটু প্রিয়াকে খুব বেশিই ক্লান্ত ক্লান্ত লাগছে।মাথাটা কেমন জানি আবার ব্যাথা করছে,আর ঘুম ঘুম পাচ্ছে।
প্রিয়া রেডরুমে ঢুকে মেঝেতে বিছানা করতে লাগলো।এমন সময় মাহিম বলে উঠলো
মাহিম:-ছেলেটা কে ছিল?
প্রিয়া:-কি কোন ছেলে?
মাহিম:-যার সাথে সকালে ওমন ন্যাকামি করে কথা বলছিলেন সেই ছেলেটা কে ছিল?(প্রিয়ার কাছে এগিয়ে এসে)
প্রিয়া:-ওহ ওর নাম “শিহাব” আমাদের গ্রাম এই বাড়ি।ছোট্ট বেলা একসাথে লেখাপড়া করতাম।৫বছর পর তার সাথে দেখা হলো।এই ৫বছর বিদেশে ছিল,এখন এই শহরের থাকে।
মাহিম:-তার সাথে কি সম্পর্কে আপনার?
প্রিয়া:-কোন সম্পর্ক নেই একি গ্রামে থাকি আমি শিহাব ভাই বলে ডাকি।
মাহিম:-শুধু ভাই বলে ডাকেন নাকি অনি আপনার অন্যকিছুই হয়।
প্রিয়া:-অন্যকিছু হবে মানে?(অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে)
মাহিম:-মানেটা খুব ভালো করেই বুঝতে পারছেনন আমি কি বলতে চাইছি।
প্রিয়া:-এই দেখুন আমার এখন কিছু ভালো লাগছেনা মাথা ব্যাথা করছে আমি ঘুমাবো সরুন।(বিরক্তিকর ভাবে)
মাহিম:-“ওহ আমার সাথে কথা বলতে তোমার ভালো লাগেনা আর অন্য ছেলের সাথে রাস্তায় দাড়িয়ে কথা বলতে তোমার ভালো লাগে।(মনে মনে)
প্রিয়া:-কি হলো সরুন।
মাহিম শুধু রাগি চোখে প্রিয়ার দিকে তাকিয়ে আর কিছু না বলে গিয়ে বিছানায় সুয়ে পরলো।আর প্রিয়াও মেঝেতে সুয়ে পরলো।
সকাল বেলা প্রিয়া নাস্তা রেডি করছিল এমন সময় মাথাটা কেমন করে উঠলো।প্রিয়া সাথে সাথে মাথাটা চেপে ধরে বসে পরলো।এমন সময় অর্পা কিচেনে আসলো এসে দেখলো প্রিয়া ব্রেকফাস্ট রেডি না করে চোখ বন্ধ করে মাথা চেপে ধরে বসে আছে
অর্পা:-বাহ্ তুই কাজ না করে এভাবে চুপ করে বসে আছিস?
প্রিয়া অর্পার কন্ঠ শুনে চমকে উঠে বসা থেকে উঠে দাড়ালো।
অর্পা:-খুব তো কাজে ফাকি দিচ্ছিস।কয়টা বাজে এদিকে কি খেয়াল আছে কা?(রাগি চোখে প্রিয়ার দিকে তাকিয়ে?
প্রিয়া:-না মানে হঠাৎ করে কেন জানি মাথাটা ব্যাথা করে উঠলো তাই বসে পরে ছিলাম।(ভয় ভয় করে)
অর্পা:-আমার রুমে এখনো চাঁ যায়নি কেন?(রেগে)
প্রিয়া:-আপনি উপরে যান আমি এক্ষনি চা নিয়ে যাচ্ছি
“দুপুর বেলা”
অর্পা:-এই প্রিয়া তোকে যে বাবার জন্য খাবার রেডি করতে বলেছিলাম করেছিস?
প্রিয়া বাড়ির ভিতরটা মুছা-মুছি করছিল এমন সময় অর্পা বললো।
প্রিয়া:-জ্বী করেছি।
অর্পা:-আচ্ছা খাবারটা বাবা কে দিয়ে একটু আমার রুমে আয় তো কিছু কাজে।
প্রিয়া:-জ্বী আমি এক্ষনি যাচ্ছি।
“রাতের বেলা”
প্রিয়ার মাথা ব্যাথা করছিল তাই তারাতারি সব কাজ শেষ করে সুয়ে পরলো।
মাহিম রাত করে বাড়িতে ফিরলো।মাহিম রুমে ঢুকতেই দেখলো প্রিয়া তার খাবার রেডি করে দিয়ে ঘুমিয়ে পরেছে।সারাদিন অনেক কাজ করে একটু ঘুয়িছে ডাকা ঠিক হবে না।এটা ভেবে মাহিম প্রিয়াকে না ডেকে খাবার খেয়ে সুয়ে পরলো।
“এভাবে কিছুদিন যাওয়া পর”
প্রিয়া রান্না করছিল এমন সময় আবার তার মাথাটা কেমন জানি ব্যাথা করে উঠলো আর প্রিয়া মাথাটা চেপে ধরে বসে পরলো।ইদানিং প্ররায় প্রিয়া মাথাটা কেমন জানি ব্যাথা করে উঠে কিছু ভালো লাগেনা কিছু খেতে ইচ্ছে করেনা,মাথাটা কেমন ঘুরতো।
এই সমস্যা গুলোর কারণে মাঝে-মাঝে প্রিয়া কাজ বাদ-দিয়ে সুয়ে পরতো আর অর্পা আর তার মা এর চোখে পরলেই বকা-চকা খেতে হতে।এরকম ভাবে কাজ করতে একদম ইচ্ছে করেনা প্রিয়ার,কিন্তু উপায় নেই।কারণ সে এই বাড়ির কাজের মেয়ে বউ না।
তাই এই মাথা ব্যাথা নিয়ে কাজ করতে প্রিয়ার কষ্ট হলেও বাধ্য হয়ে কাজ করেই খেতে হয়।
ঠিক মতো ঘুম না হওয়ার কারণে হয়তো এই সমস্যা এটা ভেবে কেয়ার না করে কাজ করতো।
এভাবে আরও কিছুদিন চলেগেল কিন্তু কিছু হলো না।শেষ পর্যন্ত আর কোন উপায় না পেয়ে তার মামা দেওয়া জোমে রাখা কিছু টাকা ছিল প্রিয়ার কাছে,সেটা নিয়ে ডাক্তার দেখাতে চলেগেল।
ডাক্তারের কাছে গিয়ে সবকিছু খুঁলে বলল প্রিয়া।
ডাক্তার প্রিয়ার প্রবলেম এর কথা শুনে ভালো চ্যাগ করে কিছু টেস্ট করলো আর বলল যে রিপোর্ট দিতে ২দিন সময় লাগবে,আর যদি আজকেই রিপোর্ট নেয় তো রাত হবে।
”২দিন পর”
২দিন পর প্রিয়া একা রিপোর্ট আনতে গেলে।
ডাক্তার সাহেব একটু বিজি থাকার কারণে প্রিয়া দেখতে প্ররায় রাত হয়ে গেল।
প্রিয়া রিপোর্ট নিতে ডাক্তারের চেম্বারে বসে আছে।
ডাক্তার রিপোর্ট দেখছে।কিছুক্ষণ ডাক্তার সাহেব ভালো করে প্রিয়ার রিপোর্ট দেখার পর
ডাক্তার:-আপনার সাথে কেউ আসেনি?।
প্রিয়া:-রিপোর্টে কি আসছে?
ডাক্তার:-তেমন কিছু না,আপনার সাথে কেউ এসেনি?
প্রিয়া:-না এসেনি।কোন সমস্যা নেই আপনি আমাকেই বলতে পারেন।
ডাক্তার:-না মানে আপনাকে বলাটা….
প্রিয়া:-বললাম তো কোন সমস্যা নেই আপনি আমাকেই বলুন।
ডাক্তার সাহেব চুপ করে আছে কিছু বলছেনা।
প্রিয়া:-বললাম তো কোন সমস্যা নেই আপনি বলুন কি হয়েছে?
ডাক্তার:-আসলে আপনার ব্রেনে ছোট্ট একটা টিউমার হয়েছে,আর এর কারনেই আপনার এই প্রবলেম গুলো হচ্ছে।
ডাক্তার সাহেবের কথা শুনে প্রিয়ার মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পরলো,আর কাছে পুরো পৃথিবীটা ঘুরতে লাগলো,আর নিজের অজান্তেই প্রিয়া চোখ দিয়ে পানি বের হয়ে আসলো।
ডাক্তার:-একি আপনি কাঁদছেন কেন?এটা তেমন কিছু না,এখনো তত বড় হয় নি টিউমারটা।একটা ছোট্ট অপারেশন করালে আপনি সম্পূর্ন সুস্থ হয়ে যাবেন।
প্রিয়া:-অপারেশন না করালে আর কতদিন বাচবো আমি?(চোখে জল নিয়ে)
ডাক্তার:-তা তো সিওর বলতে পারছি না।যত দিন যাবে টিউমারটা তত বড় হবে।লাইফ রিস্ক বেড়ে যাবে।বড় জোর ২/৩ মাস সময় আছে আপনার হাতে,এর মধ্যেই অপারেশন করতে হবে আপনাকে।
ডাক্তারের কথা শুনে প্রিয়া ডাক্তারের চেম্বার থেকে চোখে জল নিয়ে বের হয়ে আসলো।পিছন থেকে ডাক্তার সাহেব অনেক ডাকা-ডাকি করলো কিন্তু প্রিয়া কোন কথা না শুনে চলে আসলো।

গল্পটি কেমন লাগলো ?

ভোট দিতে স্টার এর ওপর ক্লিক করুন!

সার্বিক ফলাফল 2.7 / 5. মোট ভোটঃ 3

এখন পর্যন্ত কোন ভোট নেই! আপনি এই পোস্টটির প্রথম ভোটার হন।

Leave a Comment