লেখক- মান্না ইসলাম মাহিম
পর্ব-২৭
———————————–
পরের দিন মাহিম এর বাসায় ফোন করে সবকিছু খুলে বলল প্রিয়া।
মাহিমের Accident এর কখবর শুনে সবাই চলে আসলো।
মাহিমের মা এসে প্রিয়াকে অনেক গুলা কথা শুনালো,অনেক বাকচকা করলো।প্রিয়া শুধু মাথা নিচু সবার কথা গুলো শুনলো।কারোই কোন কথার উত্রর করলো না।
মাহিমের সাথে দেখা করার পর তুন্নি ডাক্তারের কাছে গেলো।ডাক্তার বাবু ভালো করে মাহিম দেখার পর বলল মাহিমকে বাড়িতে নেওয়া যাবে বাট খুব সাবধানে থাকতে হবে মাহিমকে।
এরপর মাহিমকে Hospital a থেকে মাহিমকে নিয়ে সবাই শহর দিকে রওনা হলো,সাথে প্রিয়া সহ।
প্রিয়া যেতে চাইলো না বাট অর্পা কিছুতেই ছাড়লো না প্রিয়াকে।জোর করেই প্রিয়াকে সাথে করে নিয়ে রওনা হর্র বাই বাড়ি ফেরার পথে!
বাসাতে ফিরতে ফিরতে প্ররায় রাত হয়ে আসলো।
বাসার সামনে এসে গাড়ি ব্রেক করলো ড্রাইভার।
এরপর মাহিমকে সবাই ধরাধরি করে মাহিমের রুম বিছানার উপরে সুয়ে দিল।
“রাত ১১টা”
ডিনারের পর সবাই যে যার রুমে গিয়ে সুয়ে পরলো।প্রিয়া সবাইকে খাইয়ে মাহিমের জন্য আলাধা ভাবে কিছু খাবার তৈরি করে নিয়ে রুমে আসলো।
প্রিয়া মাহিমকে খাইয়ে দিচ্ছিল মাহিম খাচ্ছিল আর প্রিয়ার দিকে তাকিয়ে ছিল।
মাহিম প্রিয়ার দিকে তাকিয়ে দেখলো মেয়েটা না খেয়ে না খেয়ে মুখটা একদম সুখনা সুখনা লাগছে।
জ্ঞান ফেরার পর থেকেই প্রিয়াকে একটি বারের জন্যেও খেতে দেখেনি।সব সময়ই শুধু ও কে নিয়েই ব্যস্ত থাকতে দেখেছে।
খেতে মাহিম বলে উঠলো
মাহিম:-আপনি খেয়েছেন?
প্রিয়া:-(চমকে উঠে)না মানে…..
মাহিম:-কি না মানে করছেন খেয়েছেন আপনি?
প্রিয়া:-না!(চোখ দুটো নিচু করে)
মাহিম:-কখন খাবেন?
প্রিয়া:-আপনি খেয়েনিন আমি তারপর খেয়ে নিব।(মাহিমের দিকে তাকিয়ে)
এরপর মাহিম কিছু না বলে হাত প্লেট থেকে কিছু খাবার প্রিয়ার মুখের কাছে তুলে ধরে বলল
মাহিম:-নিন হ্যাঁ করুন…
মাহিমের এমন শান্তশিষ্ট ব্যবহার দেখে প্রিয়া একটু অবাক হয়েগেলো।Hospital এ যেমন রাগ নিয়ে রাগ নিয়ে কথা বলছিল এখন তা নেই।
একদম শান্তশিষ্ট ভাবে কথা বলছে।
মাহিম:-কি হলো নিন।এমন করে তাকিয়ে আছেন কেন?(প্রিয়ার দিকে তাকিয়েই)
এরপর মাহিম প্রিয়াকে খাইয়ে দিচ্ছিল আর প্রিয়া অন্যরকম একটা মায়ার দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল।
“মানুষটা যখন রেগে যায় তখন প্রতিটা মুহূর্তেই যেন মনে হয়,আমি ওর কেউ না।একটুও ভালোবাসেনা আমাকে।আর যখন ঠিক এভাবে শান্তশিষ্ট ভাবে আমার সাথে কথা বলে, তখন প্রতিটা মুহূর্তেই মনে হয়।ও আমার অনেক আপন।অনেক কাছের মানুষ।আমি যেমনটা চেয়ে ছিলাম ঠিক তেমনটাই।ও কি আমায় ভালোবাসে নাকি শুধু দয়া করে আমার উপর।যদি আমায় ভালোইবাসে,তাহলে তুন্নিকে বিয়ে করতে রাজি হলো কেন?ও আমায় ভালোবাসেনা।আমি তো ওর বাসার কাজের মেয়ে,ও শুধু আমায় দয়া করে আর কিচ্ছু না।যদি সত্যি ও আমায় এভাবে ভালোবাসতো তাহলে আমায় থেকে সুখি হয়তো আর কেউই হতো না।ও যখন ঠিক এভাবে আমার কথা বলে,আমাকে আদর করে,তখন আমার অনেক ভালো লাগে।আরো ইচ্ছে করে ওর ভালোবাসা পেতে,আরো হাজার বছর বাঁচতে ইচ্ছে হয় ও কে সঙ্গে নিয়ে।এটাকেই মনে হয় স্বামীর ভালোবাসা বলে।না না এইসব আমি কি ভাবছি।
আর মাত্র কয়েকদিন পর ও তুন্নিকে বিয়ে করবে।ও কেন আমাকে ভালোবাসতে যাবে।আমিও একদম আমার জীবনের শেষ মুহূর্তে এসে পরেছি।
তারপর চলে যাব না ফেরার দেশে।যেখান থেকে আর তখনই ফিরবো না।আমি চাই ও সুখে থাকুক।
ওর জীবনে আর কালো ছায়া হয়ে থাকতে চাইনা।
নাই বা পেলাম ওর ভালোবাসা।আমার জীবনের শেষ মুহূর্ত গুলো ওর সাথে এভাবে কাঠাতে পারছি ও কে চোখের সামনে দেখতে পারছি,এটাই আমার কাছে অনেক কিছু।(মনে মনে মাহিমের দিকে তাকিয়)
মাহিম:-কি হলো এভাবে তাকিয়ে কি দেখছেন!!!একি আপনি কাঁদছেন কেন?
প্রিয়া চমকে উঠে দেখলো কথা গুলো ভাবতে ভাবতে কখন যে তার চোখে পানি চলে এসেছে সে বুঝতেই পারেনি।
প্রিয়া:-না না কই আমি কাঁদছি।এএমনি চোখে যেন কি পরলো(বসে থেকে উঠে অন্যদিকে তাকিয়ে চোখের জল মুছতে মুছতে)
মাহিম:-কই দেখি এইদিকে তাকান(প্রিয়ার পিছন থেকেই)
প্রিয়া:-(নিশ্চুপ)
মাহিম:-কি হলো তাকান।(একটু বিরক্তিকর ভাবে)
প্রিয়া মাহিমের কথা শুনে চোখের পানি মুছে মাহিমের দিকে মাথা নীচু করে ঘুরে দাড়ালো।
মাহিম:-বসুন।
প্রিয়া কোন কথা না বলে বাচ্চাদের মতো মাহিমের কথা শুনতে লাগলো।মাহিমের সামনে মাথা নীচু করে মুখোমুখি হয়ে বসে পরলো।
মাহিম:-তাকান আমার দিকে।
প্রিয়া:-(নিশ্চুপ)
মাহিম:-কি হলো তাকান আমার দিকে।
এরপর প্রিয়া মাহিমের দিকে তাকালো।
মাহিম দেখতে পেলো প্রিয়ার মুখটায় অন্যরকম
একটা মায়া।প্রিয়ার চোখে এখনো জল জমে আছে।
মাহিম:-কি হয়েছে আপনার?
প্রিয়ার মুখ দিয়ে কোন শব্দ বেড় হচ্ছে না,শুধু চোখ দিয়ে পানি পরছে।ভেজা চোখে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মাহিমের দিকে।
মাহিম:-কি হলো কথা বলছেন না কেন?বলুন আমায় কি হয়েছে।(শান্ত ভাবে প্রিয়ার দিকে তাকিয়ে)
প্রিয়া মাহিমের এইরকম আচারণ দেখে মাহিমের প্রতি দুর্বল হয়ে পরছে।নিজেকে আর কন্ট্রোল করতে পারছে না।আর কিছুক্ষণ এভাবে মাহিমের সামনে বসে থাকলে হয়তো সত্যিটা মুখ দিয়ে বেড় হয়ে যাবে।প্রিয়া শুধু কেঁদে কেঁদে “কিছু হয়নি” বলেই দৌড়ে রুম থেকে বেড় গেলো।
মাহিম কিছুই বুঝতে পারলো না।সে পিছন থেকে এত করে ডাকলো কিন্তু প্রিয়া কোন কথাই উত্রর করলো না।
“৩দিন পর”
মাহিম Hospital থেকে আশার ৩দিন হলো।
এই ৩দিনে মাহিম প্ররায় সুস্থ হয়ে উঠেছে।
আর এই গত ৩দিন ধরেই প্রিয়া নার্স এর মতোই মাহিমের দেখা শুনা খাওয়া দাওয়া সবকিছুই করেছে।
গত ৩দিন ধরে ডাক্তারের লিখে দেওয়া সেই ঔষধ গুলো না খাওয়াতেই প্রিয়ার প্রবলেম গুলো বারতেই থাকে।
ইদানিং প্রিয়ার দিনে একবার হলেও নাক দিয়ে রক্ত বেড় হয়।
“রাত ১২টা”
প্রিয়া আর মাহিম একি বিছানায় সুয়ে আছে।মাঝখানে একটি বালিশ।
মাহিম ঘুমিয়ে পরেছে কিন্তু প্রিয়া এখনো ঘুময়নি।
তার মাথায় যন্ত্রণা শুরু হয়েগেছে।চোখ বন্ধ করে মাথা চেপে ধরে ঘুমানোর চেষ্টা করলো।কিন্তু না মাথার যন্ত্রণা কমছে না।প্রিয়া সোয়া থেকে উঠতে যাবে দেখলো মাহিমের একটা হাত তার গায়ের উপরে।প্রিয়া মাহিমের হাতটা সরিয়ে দিয়ে উঠে চেয়ারে মাথা চেপে ধরে বসে পরলো।কিন্তু কিছুই হচ্ছে।
বিছানা থেকে উঠার পর কেমন জানি বমিবমি লাগছে প্রিয়ার।মনে হচ্ছে পেটে যা আছে সব এক্ষনি বেড় হয়ে আসবে।
প্রিয়া খুব দ্রুত বেসিনের সামনে চলে গেলো।গিয়ে বমি করার চেষ্টা করলো কিন্তু কিছুই বেড় হলো না।প্রিয়া আয়নার দিকে তাকাতেই দেখলো তার ঠোঁটের নীচে রক্ত,তার নাক মুখ দিয়ে রক্ত বেড় হচ্ছে।এবং তার অজান্তেই চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পরছে।আগে রক্ত বেড় হতেই সমস্ত ব্যথা যন্ত্রণা দুর হয়ে যেতো।
কিন্তু আজকে এখনো পর্যন্ত কমছে না।
শুধু বেরেই চলেছে।প্রিয়া সহ্য করতে পারছে না।মনে হয় এক্ষনি মেঝেতে পরে যাবে সে।খুব কষ্ট হচ্ছে প্রিয়ার দাড়িয়ে থাকতে।প্রিয়ার পৃথিবীটা একদম অন্ধকার হয়ে আসছে।নিজেকে খুব একা লাগছে।গত ৩দিন প্রিয়া খুব ভালোই বুঝতে পেরেছে যে মাহিম এই ৩দিনে তার প্রতি বেশ অনেকটাই দুর্বল হয়ে পরেছে।
“আমি আমার জীবনের একদম শেষ মুহূর্ত এসে পরেছি।এই শেষ মুহূর্তে নতুন করে কাউকে জরাতে চাইনা।আমার সময় শেষ হয়ে এসেছে,আর হয়তো কিছুক্ষণের মধ্যেই আমি চলে যাব না ফেরার দেশে।না না আমার কিছু হয়ে যাওয়ার আগেই আমাকে এই বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে হবে।যাতে আমার লাশটাও কেউ খুজে না পায়।”আয়নার দিকে তাকিয়ে এইসব ভেবে দ্রুত মাহিমের খাটের কাছে চলে আসলো।
এসে মাহিমের হাঁটু ফেলে বসে পরলো।মাহিম ঘুমিয়ে আছে খুব ইচ্ছে করছে প্রিয়ার শেষবারের মতো মাহিমকে একটু সুয়ে দিতে।তাকে একটু স্পর্শ করতে।কিন্তু না মাহিমের ঘুম ভেঙ্গে গেলে সবকিছু এলোমেলো হয়ে যাবে।এটা ভেবে প্রিয়া মাহিমকে স্পর্শ করলো না।প্রিয়ার মাথা ভারি হয়ে আসছে।প্রিয়া কিছুক্ষণ মাহিমের পাশে বসে নিঃশব্দ হয়ে মাহিমের দিকে তাকিয়ে কান্না করার পর উঠে পরলো।তারপর কাঁদতে কাঁদতে রুম থেকে বেড় হয়েগেলো।
প্রিয়া রাস্তা দিয়ে হেটে চলেছে।
মাথা অনেক ভারি লাগছে আর যন্ত্রণা করছে।আর নাক দিয়ে রক্ত গড়িয়ে পরছে।চারদিকটা একদম ফাকা কিন্তু প্রিয়ার চারদিকটা একদম অন্ধকার লাগছে।ভালো করে হাটতে পারছে না।
এভাবে কিছু দুর গেতেই হঠাৎ একটা গাড়ির সাথে ধাক্কা লেগে রক্ত-তাক্ত হয়ে মাঠিতে পরে গেলো প্রিয়া।
পর্ব-২৮
———————————–
প্রিয়া ধাক্কা লেগে পরে যাওয়ার পর।গাড়ি চালক গাড়িটা ব্রেক করে তারাতারি গাড়ি থেকে নেমে আসলো।
(গাড়ি চালক আর কেউ নয় শিহাব)
শিহাব গাড়ি থেকে নেমে দেখলো প্রিয়া।শিহাব প্রিয়াকে দেখে দ্রুত প্রিয়া কাছে ছুটে এলো,এসে প্রিয়াকে কয়েকবার ডাকলো কিন্তু কোন সারা পেল না।প্রিয়া অজ্ঞান হয়েগেছে।তারপর শিহাব প্রিয়াকে মাঠি থেকে কোলে করে গাড়িতে উঠিয়য়ে খুব দ্রুত Hospital এ নিয়ে গেল।
গত রাত থেকে এখনো পর্যন্ত প্রিয়া Hospital এ ইমারজিন্সি তে অজ্ঞান অবস্থায়।
“রাত ৯টা”
প্রিয়া চোখ খুলতেই দেখলো সে Hospital এর বেডে সুয়ে।মাথায় খুব ব্যাথা অনুভাব করছে।মাথায় হাত দিতেই দেখলো কপালে ব্যান্ডেজ করা।
হাতেও খুব ব্যাথা অনুভাব করছে।মনে হচ্ছে অনেক গুলো স্যালাইন দেওয়া হয়েছে।পুরো শরিল ব্যাথার কারণে নড়াতেই পারছে না।
কিছুক্ষণ চুপ করে থাকার পর উঠে বসতে যাবে,
এমন সময়
শিহাব:-এই না না প্রিয়া একদম উঠার চেষ্টা করবে না।
প্রিয়া দরঝার দিকে তাকিয়ে দেখলো শিহাব ভিতরে আসতে আসতে বলল।শিহাব এর কথা শুনে প্রিয়া বসে উঠের চেষ্টা করলো না।আবার সুয়ে পরলো।
শিহাব প্রিয়ার কাছে আশার পর।
প্রিয়া:-শিহাব ভাই আপনি??(একদম শান্ত ভাবে শিহাব এর দিকে তাকিয়ে)
শিহাব একটা চেয়ার টেনে প্রিয়ার পাশে বসলো।
শিহাব:-হুম আমি।
প্রিয়া:-আপনি এখানে কেন?।
শিহাব:-কেন তোমার কিছুই মনে নেই?
প্রিয়া:-না নেই।আমি এখানে কেন?
শিহাব:-Hospital থেকে গাড়ি করে বাড়িতে ফির ছিলাম।হঠাৎ তুমি গাড়ির সামনে আসতেই ধাক্কা লেগে পরে যাও।এরপর তোমাকে উঠে দ্রুত গাড়ি করে Hospital এনে ইমারজিন্সিতে নিয়ে আসি।অনেক রক্তক্ষরণ হওয়াতে তোমার শরিলে আরো নতুন করে ৩ব্যাগ ব্লড দাওয়া হয়েছে।
প্রিয়া:-আমার Accident এর কথা আর কাউকে জানিয়েছেন?
শিহাব:-ওহ হ্যাঁ মনে পরেছে আসলে আমার ফোনটা চুরি হয়েছে।তাই তোমার Husband,Familyr কাউকেই জানাতে পারিনি।তোমার Husband এর নাম্বারটা আমায় বল।তোমাকে না পেয়ে হয়তো ওরা অনেক টেনশন করছে।
প্রিয়া:-না থাক।ওদের কাউকেই কোন কিছুই জানানোর কোন দরকার নেই।
শিহাব:-কি আবার তোমার Husband এর সাথে ঝগড়া হয়েছে তো?
প্রিয়া:-(নিশ্চুপ)
শিহাব:-দেখ সংসারের মাথে Husband wife এর ঝগড়া ঝাটি হয়েই থাকে।তাই বলে তোমার এতবড় একটা দুর্ঘটনার কথা তুমি তোমার Husband কে জানাবে না।
প্রিয়া কিছু বলছে না।
শিহাব:-আচ্ছা ঠিক আছে তোমার মামার নাম্বারটা বলো।তাদের কে তো জানানো দরকার।
প্রিয়া:-না শিহাব ভাই।মামা এমনিতেই অসুস্থ আমার Accident এর কথা শুনে হয়তো আরো বেশি অসুস্থ হয়ে পরবে।আমি আগে সুস্থ হয়ে উঠি তারপর মামাকে জানানো।
শিহাব:-ওকে তোমার যা ইচ্ছে তুমি যেটা ভালো বুঝো।আচ্ছা দাড়াও তোমার জন্য কিছু খাবার নিয়ে আসি।
তারপর খাবার খেয়ে ঔষধ খেয়ে নিও।
এরপর শিহাব উঠে প্রিয়ার জন্য খাবার আনতে গেলো।
এভাবে ২দিন যাওয়ার পর প্রিয়া একটু সুস্থ হয়ে উঠে।তারপর শিহাবের বাসায় চলে যায়।শিহাবের বাসায় শিহাব আর ওর মা এবং একটা কাজের মেয়ে।
শিহাব আগে গ্রামে থাকতো বিদেশে থেকে ডাক্তাটারিং শেষ করে এখন শহরে বড় একটা Hospital এর বড় ডাক্তার শিহাব।
শিহাবের বাড়িতে প্রিয়া যাওয়ার পর ওখান থেকে সেই ডাক্তারের চেম্বার থেকে সেই ঔষধ গুলো নিয়ে আসে প্রিয়া।
কিছুদিন যাওয়ার পর প্রিয়া একদম সুস্থ হয়ে উঠে।আর ঔষধ গুলো Continue করাতে মাথা যন্ত্রণা কিছুটা কন্ট্রোল করতে পারে।যদিও কষ্ট হয় বাট প্রিয়া সেটা সহ্য করে নেয়।
এখন প্রিয়া একদম সুস্থ।
প্রিয়াকে তার মামার বাড়িতে পৌছে দিতে শিহাব গাড়ি করে দুজনেই রওনা হলো।
কিছুদূর যেতেই রাস্তায় সামনে একটা ঝামেলা হওয়াতে অনেক জ্যাম পরে গেলো।জ্যাম ছাড়তে ৩০মিনিটের মতো লাগবে।পাশে রেস্টুরেন্ট থাকায় প্রিয়াকে সাথে নিয়ে কপি খেতে গেলো শিহাব।প্রিয়া যেতে চাইলো না বাট শিহাব এর জোরাজোরিতে আর না করতে পেলো না।
৩০মিনিট পর শিহাব আর প্রিয়া রওনা দিল গ্রামের উদ্দিশ্যে।শিহাব ড্রাইভিং করছে আর প্রিয়া পিছনে বসে।
প্রিয়া পিছনে বসে ভাবছে।মাহিমের বাবার কথা অনুযায়ী গত ৪দিন আগে মাহিম আর তুন্নির বিয়ের দিন ছিল।
আজ প্রিয়া বাড়ি ছেড়ে আশার ৭দিন হলো।কিন্তু মাহিম তাকে একটিবারের জন্য খুঁজতে শিহাব এর বাসায় এলো না।শিহাব এর বাসা চিনেনা বাট একি শহর চেষ্টা করলে তো অবসই দেখা পেত।হয়তো মাহিম আর তুন্নির বিয়ে হয়েগেছে।এর জন্য হয়তো খোজার চেষ্টা করেনি।এটা ভেবে প্রিয়া গ্রামে ফিরে যাচ্ছে।”ও আমায় কখনই ভালোবাসেনি শুধুই দয়া করেছিল আমার উপর।সেটা গত ৭দিনে ভালোই বুঝতে পেরেছি।যদি ও আমায় সত্যিই ভালোবাসতো তাহলে গত ৭দিনি ঠিক আমায় খুঁজে বেড় করতো।হয়তো বিয়ে নিয়ে অনেক ব্যস্ত তাই একটা কাজের মেয়েকে আর খোঁজার চেষ্টা করেনি।
আমি চাই ও সব সবময়ই ভালো থাকুক।আমাকে যখন খোঁজার চেষ্টা করেনিআমিও আর কখনই ওর চোখের সামনে যাব না।আর কখনই এই শহরে ফিরে আসবো না।
আর কোথাও যাব না।ছোট্ট থেকেই একটু থাকা খাওয়ার জায়গা খুঁজতাম।
কিন্তু এখন তো আমার একটা জায়গা রয়েছে।যতদিন বাঁচবো সেখানেই থেকে যাব।ছোট্ট বেলায় মা বাবার সাথে সুখটাও চলে গেছে।এবার মৃত্যুর পর তাদের কবরের পাশেই সুয়ে একটু শান্তিতে ঘুমাবো।আর কোথাও যাব না।”গাড়ির ঝানালা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে এইসব কথা মনে মনে ভাবতে ভাবতে প্রিয়ার চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পরতে লাগলো!
শিহাব প্রিয়ার তার মামার বাড়িতে ফিরতে ফিরতে প্ররায় রাত হয়ে আসলো।বাড়িতে ফিরে প্রিয়া তার মামীকে সবকিছু বলল।প্রিয়া মামা বাড়িতে নেই।ইস্কুলের কিছু কাজের জন্য শহরে যেতে হয়েছে।ফিরতে ৩দিন লাগবে।
প্রিয়া তার মামাকে ফোন করে জানালো।
শিহাব রাতের খাওয়া দাওয়ার পর গাড়ি নিয়ে প্রিয়ার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে রওনা হলো।
২দিন পর!
সেই সকাল থেকেই প্রিয়া বাড়িতে একা।তার মামী একটু বাহিয়ে বেরিয়েছে।রাত প্ররায় ৮টা বেজে গেছে কিন্তু এখনো বাসায় ফিরছে না।
প্রিয়া একা বাড়িতে একটু ভয় ভয় লাগছিল আর এমনিতেই বিকাল থেকে একটু মাথায় যন্ত্রণা করছিল প্রিয়ার।
প্রিয়া ঔষধ খেয়ে বাড়ির মেইন দরঝা খোলা রেখে রুমের দরঝা লাগিয়ে মাথা চেপে ধরে সুয়ে একটু ঘুমানোর চেষ্টা করছে।
“কিছুক্ষণ পর”
হঠাৎ দরঝায় শব্দ হতেই প্রিয়া চমকে উঠলো।কে আসলো রাতে।মামী আসলে আমায় ডাকতো।না ডেকে দরজা নক করছে কেন?
দরজা নক করতেই আছে।প্রিয়া বিছানা থেকে উঠে ভয় ভয় করে দরঝার কাছে এগিয়ে এসে।
প্রিয়া:-কেকে??(কাঁপা কাঁপা কন্ঠে)
কিছু বলছে না।শুধু দরঝায় নক করে যাচ্ছে।
প্রিয়া:-কে ককথা বলছে না কেকেন?(একি ভাবেই)
দরঝা নক করেই যাচ্ছে।
এরপর প্রিয়া আর কিছু না বলে সাহস করে দরঝা খুলতেই চমকে উঠলো।
দরঝার সামনে মাহিম দাড়িয়ে আছে।মাহিমকে দেখে প্রিয়ার ভিতরটা কেমন মচর দিয়ে উঠলো।ভাবলো ও যেটা ভেবে ছিল সেটা ভুল।মাহিম তাকে নিতে এসেছে।
প্রিয়া:-আআপনি এই সময়ে?(অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে)
মাহিম:-কেন অন্য কেউ আশার কথা ছিল নাকি?(ভিতরে আসতে আসতে)
প্রিয়া নীশ্চুপ।
মাহিম:-অবস্হ্ আশারি কথা।(প্রিয়ার দিকে তাকিয়ে)কি কেউ বুক করে রেখেছে নাকি?
প্রিয়া মাহিমের কথা কিছুই বুঝতে পারছে না।মাহিম এভাবে কথা বলছে কেন?
প্রিয়া:-মানে আপনি কি সব বলছেন আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।(অবাক হয়ে মাহিমের দিকে তাকিয়ে)
মাহিম:-(রেগে প্রিয়ার কাছে এসে)এই একদম নাটক করবেন না।আপনার এই ভালো মানুষী মুখোশটা না খুলে গেছে।(রাগি কন্ঠে)
মাহিমের এই রকম আচারণ দেখে প্রিয়া কি বলবে বুঝতে পারছে না।
প্রিয়া:-দেখুন আমি সত্যিই কিছু বুঝতে পারছি না।(শান্ত ভাবেই)
মাহিম:-কি এমন আছে আপনার ওর মাঝে যেটা আমার মধ্যে নেই।
প্রিয়া:-মানে আপনি কার কথা বলছেন?
মাহিম:-এখনো নাটক।যার সাথে রেস্টুরেন্ট এ বসে কপি খেলেন।আমি তার কথা বলছি।
প্রিয়া মাহিমের কথা শুনে চমকে উঠলো।
মাহিম:-কি এমন আছে আপনার শিহাব এর মাঝে যেটা আমার মাঝে নেই।
যার জন্য আপনি বাড়ি থেকে কাউকে কিছু না বলেই তার বাড়িতে গিয়ে থাকতে হলো।
প্রিয়া:-(নিশ্চুপ)
মাহিম:-কি দরকার ছিল একজন পুরুষ মানুষ তো।
প্রিয়া:-দেখুন মাহিম বাবু ভদ্র ভাবে কথা বলুন। আপনি যেটা ভাবছেন সেটা একদম ভূল ভাবছে।(একটু রেগে মাহিমের দিকে তাকিয়ে)
মাহিম:-(রেগে প্রিয়ার কাছে এগিয়ে এসে)আপনার মতো একটা অভদ্র নষ্টা মেয়ের সাথে।এর থেকে আর ভদ্র ভাবে কথা বলা যায় না।(রাগি চোখে তাকিয়ে)
প্রিয়া:-…..
মাহিম:-আপনার পুরুষ মানুষ লাগবে।সেটা আমাকেই বললেই তো পারতেন।যার সাথে নিজের ইচ্ছে মিঠানোর জন্য একটি রাত কাঠিয়ে ছিলেন।(প্রিয়ার কাছ থেকে সরে গিয়ে)
প্রিয়া:-আপনি প্লিজ চুপ করুন।
বিরক্তিকর ভাবে বলেই প্রিয়া চোখ বন্ধ করে হাতের মুঠো চেপে ধরলো।একটি রাতের জন্য নিজেকে নীলজ্জ বেহায়া মেয়ে মনে হচ্ছে।বার বার একি কথা শুনার চেয়ে নিজেকেই শেষ করে দিতে ইচ্ছে করছে প্রিয়ার।
মাহিম:-ওহ্ আপনাদের মতো মেয়েদের তো আজকে ওর কাছে কালকে এর কাছে, যেটা কে অভ্যাস বলে।(প্রিয়ার দিকে তাকিয়ে)
প্রিয়া:-আপনার মতো একটা নোংরা মনের মানুষ এইসবই তো ভাববে।(রাগি কন্ঠে মাহিমের দিকে তাকিয়ে)
মাহিম:-(রেগে গিয়ে প্রিয়ার একহাত ধরে কাছে টেনে চেপে ধরে)এই একদম গলা বাজি করবেন না আমার।(রাগি চোখ করে)
মাহিম প্রিয়াকে কাছে টেনে হাত চেপে ধরতেই প্রিয়া চোখ বন্ধ করে ফেললো।
মাহিম:-যার চরিত্রর ঠিক নেই সে আবার অন্যের চরিত্র নিয়ে কথা বলছে।(এইবলে প্রিয়া হাতটা ছেড়ে দিল)
মাহিম প্রিয়ার হাতটা ছেড়ে দিতেই প্রিয়ার হাতের চুরি গুলো টুকরো হয়ে মাঠিতে পরে গেলো।হাতে ব্যাথা অনুভাব করছে।প্রিয়া হাতের দিকে তাকিয়ে দেখলো হাত কেটে গেছে রক্ত গড়িরে মাঠিতে পরছে।এরপর প্রিয়া মাহিমের দিকে তাকালো।
মাহিম দেখতে পেলো প্রিয়ার চোখের কোনায় পানি চলে এসেছে।অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই পানি বেড় হয়ে আসবে।মাহিম কিছুক্ষণ চুপ তাকিয়ে থাকার পর।
মাহিম:-শুনেছি এই লাইনে বিবাহিত মেয়েরা তেমন একটা বুক হয় না।তো আপনি কাল এইসব শাড়ি গহনা খুলে,বাজারে উঠে……(মাহিম আর কিছু বলার আগেই)
প্রিয়া:-(মাহিমের শার্ট এর কলার টেনে ধরে মাহিমের চোখের দিকে তাকিয়ে)আপনি আর এক মুহূর্ত এখানে থাকলে শেষ দিব আপনাকে(রেগে চোখে জল নিয়ে)
মাহিম:-থাকার জন্য আমি আসিনি।আর আসতাম ও না একটা রিন রয়েগেছে আপনার।(এরপর পকেট থেকে একটা টাকার বান্ডিল বেড় করে প্রিয়ার হাতে ধরিয়ে দিয়ে)এখানে ১লক্ষ টাকা আছে।আপনার সাথে একটি রাত কাঠানোর টাকা।যদিও সেদিন আপনার ইচ্ছে ছিল বাট এই মাহিম চৌধুরী কাউকেই ঠকায়নি আর ঠকাবেও না।আপনার পাওনা।Good BYE…(প্রিয়ার চোখের দিকে তাকিয়ে)
এইবলে মাহিম রুম থেকে বেড় হয়েগেল।প্রিয়া টাকার বান্ডিল এর দিকে তাকাতেই চোখ দিয়ের পানি গরিয়ে মাঠিতে পরতে লাগলো।মাহিম এতদিন যেটা বলে আসতো প্রিয়াকে।আজ সেটা প্রমাণ করে দিল।প্রিয়া একটা চরিত্রহীন নষ্টা মেয়ে।কিছুক্ষণ টাকার ব্যান্ডিল এর দিকে তাকিয়ে চোখের জল ফেলার পর কাঁদতে কাঁদতে মেঝেতে হাঁটু ফেলে বসে পরলো।
পর্ব-২৯
———————————–
>Old Part is Flashback<
সকাল বেলা মাহিম ঘুম থেকে উঠে দেখলো প্রিয়া তার পাশে নেই।হয়তো ব্রেকফাস্ট রেডি করতে গেছে।এটা ভেবে মাহিম উঠে ফ্রেশ হয়ে নিল।
সকাল প্ররায় ৯টা বেজে গেলো কিন্তু প্রিয়া এখনো তার জন্য ব্রেকফাস্ট নিয়ে এলো না।
“কিছুক্ষণ পর”
অর্পা মাহিমের ব্রেকফাস্ট নিয়ে রুমে এলো।
অর্পা:-কিরে প্রিয়া কোথায়? ৯টা বেজে গেলো ও নীচে এলো না কেন?(ভিতরে আসতে আসতে)
অর্পার কথা শুনে মাহিম চমকে উঠলো।
এরপর অর্পার দিকে ঘুরে
মাহিম:-প্রিয়া কোথায় মানে? ও নীচে নেই?(অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে)
অর্পা:-না ও এখন নীচে যায়নি বলেই তো আমি তোর ব্রেকফাস্ট নিয়ে এলাম।(মাহিমের দিকে তাকিয়ে)
মাহিম:-বলছ কি তুমি ও নীচে নেই?
অর্পা:-না নেই।আমি ভাবলাম হয়তো শরিল খারাপ তাই হয়তো উঠেনি।
মাহিম:-আমি তো ঘুম থেকে উঠেই দেখি প্রিয়া রুম নেই।
অর্পা:-সেকি তাহলে গেলো কোথায় মেয়েটা।
প্ররায় রাত হয়ে আসলো মাহিম অনেক খোজাখুজি করলো কিন্তু কোথায় প্রিয়াকে পেলো না।প্রিয়ার মামার বাসায় ফোন করেছিল তারাও অনেক খোজাখুজি করলো তারাও কোথাও পেলো না প্রিয়াকে।
কিছুদূর যেতেই রাস্তায় সামনে একটা ঝামেলা হওয়াতে অনেক জ্যাম পরে গেলো।জ্যাম ছাড়তে ৩০মিনিটের মতো লাগবে।পাশে রেস্টুরেন্ট থাকায় প্রিয়াকে সাথে নিয়ে কপি খেতে গেলো শিহাব।প্রিয়া যেতে চাইলো না বাট শিহাব এর জোরাজোরিতে আর না করতে পেলো না।
মাহিম গত ৭দিন ধরে প্রিয়াকে পুরো শহর খুঁজে বেড়াচ্ছে।কিন্তু কোথাও পাচ্ছে না।
সেই সকাল বেলা বেড় হয়েছে মাহিম শিহাব এর বাসা খুঁজতে।অনেক জায়গায় খুঁজলো কিন্তু কোথাও পেলো না।গত ৭দিন ধরেই মাহিম শিহাব এর নাম্বার ট্রাই করে যাচ্ছে বাট নাম্বার শুধু বন্ধই বলছে।
মাহিম শিহাব এর নাম ছাড়া তার সম্পর্কে আর কিছুই জানেনা।শহরে শিহাব নাম এ অনেকেই রয়েছে শুধু নাম দিয়ে কি আর খুজে পাওয়া যায়।অনেক খোজাখুজির পর মাহিম ক্লান্ত হয়ে রেস্টুরেন্ট এ বসে কপি খাচ্ছিল।এমন সময় চোখ পরলো একটা টেবিলে প্রিয়া বসে কপি খাচ্ছে।
মাহিম প্রিয়াকে দেখে চমকে উঠলো।
সে দ্রুত কপির কাপটা রেখে উঠে প্রিয়ার দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল এমন সময় চোখে পরলো প্রিয়া সাথে সেদিনের সেই ছেলেটা।
প্রিয়া সাথে হেসে কথা বলছে।তার মানে এটাই সেই শিহাব।মাহিম এটা ভেবে একদম ধমকে গেলো।প্রিয়া আর শিহাব কে একসাথে দেখে মাহিমের মাথায় যেন আগুন ধরে গেলো।মাহিম নিজেকে কন্ট্রোল করে রাগি চোখে দাড়িয়ে তাদের দিকে লক্ষ করতে লাগলো।মাহিম দেখতে পেলো প্রিয়া শিহাব কিছুক্ষণ কথা বলার পর দুজনি হাসাহাসি করে রেস্টুরেন্ট থেকে বেড় হয়েগেলো।তারা দুজনি বেড় হয়ে যাওয়ার পর মাহিম একটা চেয়ার টেনে বসে পরলো।ও কোথায় আছে কেমন আছে ওর কিছু হয়ে যায়নি তো।এটা ভেবে আমি গত ৭দিন ধরে ও কে পাঁগলের মতো খুজে বেড়াচ্ছি আর ও ওর শিহাব এর সাথে হাসাহাসি করে ঘরে বেড়াচ্ছে।
তার মানে আমি এতদিন যেটা ভেবে এসে ছিলাম সেটাই রাইট।তুমি জানোনা প্রিয়া তুমি আজ তোমার অজান্তেই আমায় কতটা কষ্ট দিলে।আমি এর প্রতিশোধ নিব তোমার চোখের জলের বিনিময়ে!
এইসব কথা মাহিম বসে ভাবতে ভাবতে রাগে মাহিম চোখ মুখ একদম লাল হয়েগেছে।
>Old Part is Flashback The End<
মাহিম চলে যাওয়া পর প্রিয়া কিছুক্ষণ টাকার ব্যান্ডিল এর দিকে তাকিয়ে চোখের জল ফেলার পর কাঁদতে কাঁদতে মেঝেতে হাঁটু ফেলে বসে পরলো।মৃত্যুর আগেই শেষ পর্যন্ত মাহিম তাকে নষ্টা মেয়ে প্রমাণ করেই ছাড়লো।
“রাত ১২টা”
প্রিয়া একা একটা রুমে সুয়ে আছে।মাহিম চলে যাওয়ার পর থেকে প্রিয়ার চোখ দিয়ে পানি পরা বন্ধ হচ্ছেই না।
যাকে জীবনের থেকে বেশি ভালোবাসে আজ সেই তাকে নষ্টা মেয়ে প্রমাণ করলো।
কতটা খারাপ ঘৃণা করলে নীজের স্ত্রীকে একটা নষ্টা মেয়ে বলে একজন স্বামী এই কাজটা করতে পারে।
আজকে ও টাকা দিয়ে প্রমাণ করে গেলো আমি সত্যি ওর স্বামীর অধিকার পাওয়ার আমার কোন যোগ্য নেই।
আমি এতদিন সত্যিই ওর কাছে একটা কাজের মেয়েই ছিলাম।ও আমায় একটুও ভালোবাসেনি।একটা অসহায় কাজের মেয়ে মনে করে শুধু দয়াই করেছে আমার উপর।আর কিছু না।ঠিকি তো আমি যেটার যোগ্য সেটাই তো পাব।
মা-বাবা কে ভালোবেসে ভালো করে তাদের ভালো পায়নি আর নিজের স্বামীকে ভালোবেসে কখনই তার যোগ্য হয়ে উঠতে পারিনি।অবহেলা অপমান কষ্ট ছাড়া কখনই স্বামীর আদর সোহাগ ভালোবাসা কিছু পাইনি।
ছোট থেকেই সবার কাছ থেকে অবহেলা অপমান কষ্ট জ্বালা যন্ত্রণা ছাড়া কখন কারোই একটু ভালোবাসা পাইনি।মৃত্যুর আগেও কখনই পাব না।”এইসব ভাবতেই প্রিয়ার চোখের জল আরো বেড়ে গেলো।
“২দিন পর”
সকাল বেলা।অনেক্ষণ ধরে প্রিয়াকে ডাকছে কিন্তু প্রিয়া রুম থেকে কোন সারা পাচ্ছে না।কিছুক্ষণ পর প্রিয়াকে ডাকতে প্রিয়ার রুমে এলো এসে দেখলো ৯টা বাজে প্রিয়া এখনো ঘুমাচ্ছে।প্রিয়া মামী প্রিয়াকে ডাকতে প্রিয়ার গায়ে হাত দিতেই চমকে উঠলো।প্রিয়া গাঁ জ্বর এ পুড়ে যাচ্ছে।মাথা দিয়ে আগুন এর তাফ উঠেছে।যত দ্রুত সম্ভব চল পট্টি দিতে হবে। এরপর প্রিয়ার মামী দ্রুত মাথায় চল পট্টির ব্যবস্থা করলো।কিছুক্ষণ বসে প্রিয়ার মাথায় চল পট্টি দেওয়ার পর।দ্রুত ডাক্তার ডেকে নিয়ে আসলো।ডাক্তার এসে দেখলো প্রিয়ার অবস্থা বেশি ভালো না।গত ২দিন ধরে ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া শরিল এর যত্নআত্তি না করায় শরিল একদম অনেক অসুস্থ হয়ে পরেছে।যত দ্রুত সম্ভব সেলাইন দিতে হবে।এরপর ডাক্তার সাহেব সেলাইন আর খাওয়ার জন্য কিছু ঔষধ দিয়ে চলে গেলো।
প্ররায় সারাটা দিন প্রিয়া সেলাইন এর উপর ছিল।সারাটা দিন বিছানা থেকে উঠতে পারেনি।
বিকালের ঐদিকে সেলাইন শেষ হওয়ার পর প্রিয়া উঠে কিছু খেয়ে আবার সুয়ে পরলো।সারাটা দিন সুয়ে থাকায় মাথা উঠিয়ে দাড়াতে পারছে না।
রতের বেলা প্রিয়ার মামী বাড়ির মেইন দরঝা বন্ধ করতে যাবে ঠিক তখনি দেখতে পেলো মাহিম গেটের সামনে দারিয়ে আছে।
মাহিম প্রিয়ার মামীকে দেখে দিলেন অনি সালামের উত্রর করলেন।
প্রিয়ার মামী:-আইসো বাজান ভিতরে আইসো।
এরপর মাহিম ভিতরে এসে প্রিয়ার কথা জিজ্ঞেস করলো।
প্রিয়ার মামী:-কি আর কমু বাবা আমি সেদিন বাইরে গিয়ে ছিলাম একটা কাজে।আইশা শুনলাম তুমি নাকি আইছিলা আবার চইলাও গোছো।তুমি যেইদিন গেছো সেই দিন রাত থাইকা গত ২দিন ধইরা প্রিয়া মা সব সবময় দেহি খালি কান্না করে।ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করেনা।ঘর থাইকা কোথাও বেড়ও হয় না।
এত বকাচকা করি তাও হারাদিন দেখি সমসয়ই মন মরা হইয়া থাকে।আমি এত কইরা কই তোর কি হইছে আমারে ক খালি কিছু না।আর সময়ই কেমন কইরা যেন কথা কয়।
মাহিম খুব মনযোগী হয় প্রিয়ার মামীর কথা গুলো শুনছে।
প্রিয়ার মামী:-আজকে সকাল থাইকা ঘরে সুইয়া।গা এ অনেক জ্বর ডাক্তার আইশা সেইলাইন ঔষধ দিয়া গেলো।আল্লাহ্ই জানে বাপ মা মরা মেয়েটার যে আবার কি হইলো।
আইচ্ছা বাজান তুমি ঘরে যাও প্রিয়া মা হুইয়া আছে।আমি তোমার জন্য খাওয়ার ব্যবস্থা করতেছি।
এইবলে প্রিয়ার মামী চলেগেলো।মাহিম প্রিয়ার মামীর কথা গুলো শুনে কিছুক্ষণ চুপ করে দাড়িয়ে থাকার পর প্রিয়ার রুমের দিকে এগিয়ে আসলো।তারপর কিছুক্ষণ চুপ করে থাকার পর দরঝা ধাক্কা দিয়ে খুলতেই চমকে উঠে প্রিয়া দরঝার দিকে তাকালো।মাহিম দরঝা খুলতেই দেখতে পেলো প্রিয়া বিছানার উপর বসে কান্না করছিল।সে রুমের ভিতর আসতেই অসহায় হতাশ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।কাঁন্না করতে করতে প্রিয়ার চোখ গুলো একদম লাল হয়েগেছে।চোখের নীচ দিয়ে পানি গরিয়ে পরছে।একটা অভূত অহায় মায়ার দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মাহিমের দিকে।দুজন দুজনার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর মাহিম ভিতরে আসতেই প্রিয়া চোখের জল মুছে বিছানা থেকে নেমে পরলো।মাহিম দেখতে পেলো প্রিয়া ঠিক মতো দাড়াতে পারছে না।
প্রিয়া:-আপনি আবার কেন এসেছেন(মাহিমের দিকে তাকিয়ে অভিমানী সুরে)
প্রিয়ার “আপনি আবার কেন এসেছেন” এই কথাটা শুনে মাহিমের রেগে হলো।
এই কথার মানে প্রিয়া সত্যি আর চায় না যে আমি ওর কাছে আসি।ও সত্যই হয়তো সবকিছু শেষ করে দিতে চায়।একটু আগে যেটা ভেবে ছিলাম করবো না।এখন সেটাই করবো।তুমি যখন সবকিছু শেষ করে দিতে চাইছো তাহলে আমিও সবকিছুই শেষ করে দিব।(প্রিয়ার দিকে তাকিয়ে মনে মনে)
প্রিয়া:-কি হলো তাকিয়ে আছেন কেন?বলুন কেন এসেছেন?
মাহিম:-আপনা সাথে একটা হিসাব চুকাতে এলাম।
প্রিয়া:-আবার কিসের হিসাব।সেদিন তো সব হিসাব চুকে দিয়ে গেছেন আপনি।(কাঁদার মতো করে মাহিমের দিকে তাকিয়ে)
মাহিম:-আপনার সাকিছু শেষ মনে হলেও আমার কাছে এখনো শেষ হয়নি।
প্রিয়া কিছুক্ষণ চুপ করে থাকার পর…
প্রিয়া:-তাহলে কি ডিভোর্স পেপার নিয়ে এসেছেন তো?(কাঁদার মতো করেই)
মাহিম:-Exactly…সেটাই চুকাতে এসেছি আমি বুঝতে পেরেছেন।Actually আপনার মতো….(আর কিছু বলার আগেই)
প্রিয়া:-আমার মতো একটা খারাপ নষ্ট চরিত্রহীন মেয়ের সাথে বিয়ে নামক মিথ্যে সম্পর্কটা আর রাখতে চান তাই তো(কাঁদার মতো করে মাহিমের দিকে তাকিয়েই)
মাহিম:-হুম রাইট!
প্রিয়া:-কই দিন ডিভোর্স নোটিশ দিন আমি সাইন করে দিচ্ছি।(মাহিমের দিকে হাত বারিয়ে দিয়ে)
মাহিম দেখতে পেল প্রিয়া আজকে একদম শান্তশিষ্ট ভাবে কথা বলছে।রাগ অভিমান কিছু করছে না।প্রিয়াকে দেখতে আজকে একটু অন্যরকম লাগছে।অন্যরকম একটা সৌন্দর্য প্রিয়ার মাঝে ভেসে উঠেছে।একদম মায়াবী পরীর মতো লাগছে।যেটা এর আগে আর কখনো দেখেনি।ইচ্ছে করছে ওর মায়া ভরা চোখ দুটোর দিকে তাকিয়ে থাকতে।প্রিয়াকে আজ দেখতে এমন লাগছে কেন?
মাহিম কিছু না বলে ডিভোর্স পেপারটা প্রিয়ার হাতে দিল।প্রিয়া ডিভোর্স পেপারটা হাতে নিয়ে টেবিলের উপরে রেখে সাইন করতে লাগলো।
তুমি তাহলে সিদ্ধান্ত নিয়েই নিয়েছ তুমি আর আমার সাথে থাকবে না।তুমি তোমার শিহাব ওর সাথে থাকবে।তানাহলে তুমি কখনই ডিভোর্স পেপারে সাইন করতে না।যদি তুমি তোমার শিহাব এর কাছে গিয়ে সুখে থাকো।তাহলে আমিও সুখি।আঠকাবো না তোমাকে(মনে মনে প্রিয়ার দিকে তাকিয়ে)
প্রিয়া ডিভোর্স পেপারে সাইন করার পর মাহিমের কাছে এসে।
প্রিয়া:-নিন হয়েগেছে।(মাহিমের দিকে এগিয়ে দিয়ে)
মাহিম কিছু না বলে ডিভোর্স পেপারটা হাতে নিয়ে দেখলো প্রিয়া সত্যিই সাইন করে দিয়েছে।
এরপর প্রিয়ার দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলো
মাহিম:-ধন্যবাদ ভালো থাকবেন।আর কখনই আপনাদের বাসায় আসবো না।
এইবলে মাহিম রুম থেকে বেড় হয়েগেলো।
মাহিম কথা বলার সময় প্রিয়া অন্যরকম একটা দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে ছিল।এটাই হয়তো মাহিমকে শেষ দেখা।শেষ বারের মতো খুব ইচ্ছে করছিল প্রিয়ারর মাহিমকে জরিয়ে কাঁদতে।কিন্তু মাহিম তো সেই অধিকার টুকুও শেষ করে দিয়ে চলেগেলো।শেষ বারের মতো আর একটু স্পর্শও করতে পারলো না মাহিম।
এটা ভেবে প্রিয়া সেদিনেই মতোই কাঁদতে কাঁদতে হাঁটু ফেলে মেঝেতে বসে পরলো।
একটু পর প্রিয়া ভেজা চোখে দেখতে পেলো তার মা-বাবার শেই ছবিটা কে যেন তার চোখের সামনে ধরে আছে।প্রিয়া ছবিটার দিকে তাকানোর পর উপরে তাকিয়ে দেখলো মাহিম।
মাহিম:-সব তো শেষ কিন্তু আপনার এই প্রিয়ও জিনিসটা আমার কাছে রেয়ে গিয়ে ছিল।হয়তো আর কোনদিন আমাদের দেখা হবে না।তাই এটা ফিরত দিতে এলাম।(ছবিটা প্রিয়ার দিকে বারিয়ে দিয়ে)
প্রিয়া মাহিমের দিকে তাকিয়ে মাহিমের কথা গুলো শুনে দাড়িয়ে গেলো।প্রিয়া দেখতে পেলো কথা গুলো বলতে মাহিমের ও চোখের কোনায় জল চলে এসেছে।প্রিয়া আর নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারলো কিছু না বলে কাঁদতে কাঁদতে মাহিমকে জরিয়ে ধরলো।প্রিয়া মাহিমকে জরিয়ে রইতেই মাহিমের ও চোখ দিয়ে পানি গরিয়ে পরতে লাগলো।মাহিমও প্রিয়াকে আরো শক্ত করে জরিয়ে ধরলো।
দুজন দুজনকে জরিয়ে ধরে কাঁন্না করার পর হঠাৎ প্রিয়া একদম নিঃশব্দহীন হয়েগেলো।
একটু নোড়চোড় করছে না।মাহিম কিছুই বুঝতে পারছে না।একটু পর প্রিয়া নিজ থেকেই মাহিমকে ছেড়ে দিয়ে মাঠিতে পড়ে যাচ্ছিল এমনি মাহিম প্রিয়াকে ধরে ফেললো আর প্রিয়ার মুখের দিকে তাকাতেই প্রিয়া নাক মুখ দিয়ে রক্ত বেড় হচ্ছে,প্রিয়া অজ্ঞান হয়েগেছে।
পর্ব-৩০
———————————–
প্রিয়ার এমন অবস্থা থেকে মাহিমের চোখ উপরে উঠে গেলো।হতাশ দৃষ্টি নিয়ে প্রিয়াকে ডাকতে লাগলো।কিন্তু কোন কিছুই হচ্ছে না।
মাহিমের আত্ত চিৎকার শুনে প্রিয়ার মামী রুমে ছুটে এলো।
এসে প্রিয়াকে এভাবে দেখে চিৎকার দিয়ে কেঁদে উঠলো।
তারপর কেঁদে কেঁদে প্রিয়াকে ডাকতে লাগলো কিন্তু প্রিয়া কোন সারা দিচ্ছে না।
এরপর মাহিম প্রিয়াকে কোলে উঠিয়ে গাড়িতে করে প্রিয়ার মামী সহ দ্রত Hospital এ নিয়ে গেলো।
হসপিতাল এর নীচে গাড়ি ব্রেগ করে মাহিম প্রিয়াকে গাড়ির ভিতর থেকে কোলে উঠিয়ে হসপিতাল এর ভিতরে নিয়ে ডাক্তার ডাক্তার বলে চিৎকার করতে লাগলো।মাহিমের আত্ত চিৎকার শুনে হসপিতাল এর নার্স ডাক্তার বেড় হয়ে আসলো।
এরপর প্রিয়া বেড এ করে দ্রুত ইমারজিন্সি তে নিয়ে গেলো।
“১ঘণ্টা পর”
মাহিম ইমার্জিন্সি রুমের সামনে দাড়িয়ে।
ভাবছে হঠাৎ করে প্রিয়ার এমন হলো কেন?
এর আগে তো কখনো এমনটা দেখিনি।
হঠাৎ প্রিয়ার কি হলো?
কিছুক্ষণ পর ইমারজিন্সি থেকে ডাক্তার বেড় হতেই মাহিম খুব অস্থিরতা কন্ঠে বলতে লাগলো..
মাহিম:-কি অবস্থা ডাক্তর?
ডাক্তার:-জ্বী ভালো।উনি এখন অজ্ঞান ঘুমন্ত অবস্থায় রয়েছেন।
ডাক্তারের কথা শুনে মাহিম একটু শান্ত হলো।
এরপর বলতে লাগলো….
মাহিম:-কি হয়েছে ওর??
ডাক্তার:-স্যরি,রিপোর্ট না দেখা পর্যন্ত আমি এখন কিছুই বলতে পারছি না।
মাহিম:-রিপোর্ট আসতে কতক্ষণ সময় লাগবে?
ডাক্তার:-ইমার্জিন্সি ঠিক বলতে পারছি না,কাল সকাল বেলাও আসতে পারে।আপনি ওয়েটিং রুমে ওয়েট করুন।আমি আপনাকে ডেকে নিব।
মাহিম:-ওকে ডাক্তর…!
কিছুক্ষণ পর নার্স এসে প্রিয়াকে বেড এ করে অন্য রুমে নিয়ে গেল।প্রিয়া এখন নর্মাল বাট সেলাইন এর সাথে ঘুমের মেডিসিন দাওয়াতে জ্ঞান ফিরে প্রিয়া এখন ঘুমচ্ছে!
প্রিয়াকে বেড এ করে অন্য কেবিনে নিয়ে যাওয়ার সময় মাহিম শুধু একটা মায়ার দৃষ্টিতে প্রিয়ার ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে ছিল।ঘুমন্ত অবস্থায় প্রিয়াকে দেখতে একদম নিঃপাপ লাগছিল মাহিমের কাছে!মেয়েটার মায়া ভরা মুখের দিকে তাকালেই মাহিমের ভিতরটা কেমন মছর দিয়ে উঠে।চোখের নিচে ভেজা কান্নাকাটি করায় গাল-মুখ গুলো লাল হয়েগেছে।মায়াবী ঘুমন্ত পারীর মতো লাগছে প্রিয়াকে!
“রাত ১২টা”
মাহিম ওয়েটিং রুমে বসে ওয়েট করছিল ডাক্তার কখন ডাকবে আর রিপোর্ট এ বা কি আসবে।
টেনশন নিয়ে বসে আছে মাহিম।
“কিছুক্ষণ পর”
মাহিম প্রিয়ার পাশে বসে প্রিয়ার ঘুমন্ত মায়াবী মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো।মাহিম প্রিয়ার মায়াবী মুখের দিকে তাকাতেই আগের সমস্ত কিছু তার চোখে সামনে ভেসে উঠতে লাগলো।কারণে অকারণে প্রতিটা মুহূর্তে প্রিয়াকে কষ্ট দেওয়া।ভূল বুঝে প্রিয়াকে আঘাত করা।প্রিয়াকে কোলে নেওয়া,খাইয়ে দেওয়া।সমস্ত কিছু মাহিমের চোখের সামনে ভেসে উঠতে লাগলো।
মাহিম অন্যরকম একটা মায়ার দৃষ্টিতে প্রিয়ার দিকে তাকিযে রইলো।মাহিম কিছুক্ষণ চুপ করে প্রিয়ার দিকে তাকিয়ে থাকার পর হঠাৎ প্রিয়ার ঘুম ভেঙ্গে গেলো।
প্রিয়ার ঘুম ভাঙ্গতেই মাহিম চোখ সরিয়ে নিল।প্রিয়া চোখ খুলতেই দেখলো মাহিম তার পাশে বসে,আর সে হসপিতাল এর বেডে।প্রিয়ার আর বুঝতে বাকি রইলো না।মাহিম কে এভাবে তার পাশে বসে থাকা দেখে প্রিয়া”মানুষটা কে ঠিক বুঝতে পারিনা।ডিভোর্স পেপারে সাইন করিয়ে নিয়ে আবার আমায় হসপিতালে নিয়ে এসেছে।তাহলে কি ও আমায় ভালোবাসে?না না কি সব ভাবছি ও শুধু আমায় একটা রাস্তার মেয়ে ভেবে দয়া করে আর কিচ্ছু না।যদি আমায় সত্যিই ভালোবাসতো তাহলে অত অপমান করে ডিভোর্স পেপারে সাইন করিয়ে নিত না।(মনে মনে মাহিমের দিকে তাকিয়ে)
প্রিয়া দেখতে পারছে মাহিম কিছু বলছে না শুধু তার তাকিয়ে আছে।দুজনি কিছুক্ষণ চুপ করে তাকিয়ে থাকার পর….
প্রিয়া:-এভাবে বসে আছেন কেন?(মাহিমের দিকে তাকিয়ে একদম শান্ত ভাবে)
মাহিম:-(নিশ্চুপ)
প্রিয়া:-অনেক রাত হয়েছে।তুন্নি হয়তো আপনার টেনশন করছে।আপনি বাসাতে ফিরে যান আমি কালকে সকাল বেলা হসপিতাল থেকে বাড়িতে ফিরে যাব।
মাহিম কিছু বলছে না,শুধু প্রিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।মাহিমকে প্রিয়ার দিকে তাকিয়ে থাকা দেখে…
প্রিয়া:-কি হলো কথা বলছেন না কেন.?(মাহিমের দিকে তাকিয়েই)
মাহিম কিছু বলার আগেই হঠাৎ মাহিমের ফোন বেজে উঠলো।মাহিম ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখলো তুন্নির নাম্বার থেকে ফোন।
প্রিয়া ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখলো তুন্নি ফোন করেছে।তুন্নির ফোন দেখে মাহিম প্রিয়ার দিকে তাকাতেই দেখলো প্রিয়া মুখটা অন্যদিকে ফিরে নিল।মাহিম ফোন রিসিভ করে রুম থেকে বেড় হয়েগেলো।মাহিম রুম থেকে বেড় হতেই পিছন থেকে প্রিয়া মাহিমের বেড় হয়ে যাওয়া দেখেই প্রিয়ার অজান্তেই চোখে পানি চলে আসলো।
পরেরদিন সকাল বেলা নার্স ডাকে ঘুম ভাঙ্গলো প্রিয়ার।প্রিয়া ঘুম থেকে উঠে দেখলো মাহিম নেই।গতকাল রাত মাহিমের জন্য অপেক্ষা করতে করতে কখন যে ঘুমিয়ে পরেছে বুঝতে পারেনি।
সকাল ৮টা বেজে গেলো কিন্তু মাহিমেনরকোন খোঁজ নেই।প্রিয়া নার্স কে মাহিমের কথা জিঙ্গেস করতেই নার্স বলল”উনি চলে গেছেন আর আমাকে বলে গেছেন আপনার খেয়াল রাখতে”
নার্স এর কথা শুনে প্রিয়া”ওহ তাহলে তুন্নির জন্য ও আমাকে হসপিতালে রেখেই বাসাতে ফিরে গেছে।ও শুধু আমায় দয়া করে হসপিতালে ভর্তি করিয়েছে।আর কিচ্চু না।আমার কি হলো না হলো তাতে ওর কি?আমি তো কেউই না।(চোখের কোনায় জল নিয়ে মনে মনে)
৯টার এইদিকে রিপোর্ট দেখার জন্য প্রিয়া ডাক্তারের কেবিনে গেলো।রিপোর্ট এ কি আসবে প্রিয়া তো সেটা খুব ভালো করেই জানে।বাট তারপরেও…!
প্রিয়া কি বলবে বুঝতে পারছে না।
সব সত্যি কথা বললে ডাক্তার বাবু যদি মামাকে সব বলে দেয় তো মামা একদম ভেঙ্গে পরবে।মাহিম আর আমার সম্পর্কে সমস্ত সত্যিটা বলা যাবে না।এটা ভেবে প্রিয়া আগের টিউমরটির ব্যাপারে সবকিছু খুলে বলল ডাক্তার কে!
ডাক্তার:-অপারেশন টা খুব তারাতারিই আপনাকে করাতে হবে।আপনার মাথায় ব্রেনে যে টিউমরটি ছিল তার ঠিক পাশেই আরো ছোট্ট একটি টিউমর এর জন্ম নিয়েছে।
ডাক্তারের কথা শুনে প্রিয়া চমকে উঠলো প্রিয়া একদম ভেঙ্গে পড়লো।চোখের কোনায় পানি আসলো প্রিয়ার।ডাক্তার প্রিয়ার চোখের কোনায় পানি দেখে বলতে লাগল….
ডাক্তার:-না না ভয় এর কিছু নেই।এটা জন্ম নেওয়ায় আপনার পক্ষ ভালোই হয়েছে।
আপনার মাথায় যে টিউমরটি ছিল তার পাশে এটা জন্ম নেওয়াতে আগের টিউমরটি বড় হয়ে উঠতে পারেনি।এখন ধিরেধিরে দুটো টিউমরি বড় হয়ে উঠছে বলেই তো আপনার এই প্রবলেম গুলো বেশি হচ্ছে।আগামী এক-ডেড় মাসের মধ্যেই আপনাকে অপারেশন করাতেই হবে নাহলে…..
প্রিয়া:-বুঝতে পেরেছি ডাক্তার বাবু……(চোখে জল নিয়ে)
এরপর প্রিয়া হাতে রিপোর্ট প্রেসক্রিপশনে লিখে দাওয়া সেই মেডিসিন গুলি নিয়ে হসপিতাল বেড় কিছুদূর যেতেই প্রিয়ার সামনে এক car এসে দাড়ালো।দাড়িয়ে দেখলো গাড়ির ভিতর থেকে মাহিম বেড় হয়ে আসলো।মাহিম প্রিয়ার সামনে দাড়াতেই প্রিয়া রাগি চোখে মাহিমের দিকে তাকিয়ে কিছু না বলে মাহিম পাস কাঁঠিয়ে যাচ্ছিল এমন সময় মাহিম আবার প্রিয়ার সামনে গিয়ে দাড়ালো।
প্রিয়া:-কি ব্যাপার আপনি পথ আঠকে দাড়ালেন কেন?
মাহিম:-দেখুন কাল রাতে….
প্রিয়া:-আমি আপনার কাছে কিচ্চু শুনতে চাইছি না।আপনি পথ ছাড়ুন।(একটু রাগ দেখিয়ে)
মাহিম:-লিসেন! কাল রাতে যা……
প্রিয়া:-বলছি না আমি আপনার কাছে কিচ্চু শুনতে চাইছি না।আপনি প্লিজ পথ ছাড়ুন মাহিম বাবু(বিরক্তিকর ভাবে মাহিমের দিকে তাকিয়েই)
মাহিম:-দেখুন রাস্তায় মাঝে একদম সিক্রেট করবেন না বলে দিচ্ছি(রাগি কন্ঠে প্রিয়ার দিকে তাকিয়ে)
প্রিয়া:-আমি সিক্রেট করছি না।আপনি আমাকে সিক্রেট করতে বাধ্য করছেন।
মাহিম:-ওকে!আপনার রিপোর্টটা দিন, রিপোর্ট এ কি আসছে দেখি?
প্রিয়া:-সেটা জেনে আপনি কি করবেন?
মাহিম:-খেয়ালী করবেন না যেটা বলছি সেটা শুনুন।আপনার রিপোর্টটা দিন আমাকে(একটু রাগ দেখিয়ে)
প্রিয়া:-সব আপনার কথা মতো হবে নাকি?আপনি যখন যেটা বলবেন সেটাই হবে।
মাহিম:-হুমম মনে করুন তাই।এখন বেশি কথা না বরিয়ে রিপোর্টটা আমার হাতে দিন।(একটু রেগে)
প্রিয়া:-আপনার সাথে তো আমার কোন সম্পর্ক নেই।আমার রিপোর্ট এ কি আসলো না আসলো তাতে আপনার কি?
মাহিম:-আমার কিছুই না বাট সেটা জানার অধিকার আমার নেই?
প্রিয়া:-না নেই।আপনার সাথে আমার সবকিছুই তো শেষ হয়েগেছে।আপনিই তো সবকিছু শেষ করে দিয়েছেন।(মাহিমের দিকে মুখের দিকে তাকিয়ে)
মাহিম:-ওহ তার মানে আপনি বলতে চাইছেন যে আগে আপনার সাথে আমার কিছু ছিল নাকি?
প্রিয়া:-হুম ছিল তো।
মাহিম:-কি সেটা শুনি?
প্রিয়া:-এই যে আমি আপনাদের বাসার কাজের মেয়ে আর আপনি ছিলেন আমার মালিক।(মাহিমের মুখের দিকে তাকিয়েই)
মাহিম নিশ্চুপ।
প্রিয়া:-এখন তো আর আমি আপনাদের বাসার কাজের মেয়েও নই।তাই আমার উপর আপনার কোন অধিকারী নেই!এবার পথ ছাড়ুন।
মাহিম:-খুব তেজ না আপনার?(রেগে প্রিয়ার দিকে তাকিয়ে)
প্রিয়া কিছু বলল না।চুপ করে মাহিমের দিকে তাকিয়ে রইলো।
মাহিম:-এতদিন তো আমাদের বাসায় কাজের মেয়ে হয়ে থাকতেন।এখন কি করবেন? আবার আপনার ঐ মামা-মামীর মাথায় বোজা হয়ে থাকবেন নাকি?
প্রিয়া:-আমি আর কারোই মাথায় বোজা থাকবো না।(মাহিমের চোখের দিকে তাকিয়ে)
মাহিম:-ওহ অন্যকারো সাথে থাকার ব্যবস্থা করে ফেলেছেন তাহলে।
প্রিয়া:-শুনুন এটা না রাস্তা!এখানে আজে-বাজে কথা বললে না আমি কিন্তু চিৎকার করে লোকজন জোরো করবো।(রাগ দেখিয়ে মাহিমের দিকে তাকিয়েই)
মাহিম:-আপনার মতো মেয়েরা এটা ছাড়া আর কিবা করতে পারে।(প্রিয়ার দিকে তাকিয়েই)
প্রিয়া:-বুঝে গেছেন তো।বুঝে যখন গেছেন তখন আমার পথটা ছাড়ুন বলছি।(বিরক্তিকর ভাবে মাহিমের দিকে তাকিয়েই)
মাহিম:-এখন আমার সায়া দেখতেই বিরক্তিকর লাগছে নিশ্চই?
প্রিয়া:-আপনি যেটা মনে করেন সেটাই(একই ভাবে)
মাহিম কিছু বলছে না।মাহিমও কিছুক্ষণ রাগ নিয়ে প্রিয়ার দিকে তাকিয়ে থাকার পর….
মাহিম:-তো এখন কি লোকজন বাসাতে নিয়ে আসবেন নাকি অন্য কোথাও গিয়ে উঠবেন?
মাহিমের কথা শুনে প্রিয়া কিছুক্ষণ চুপ করে মাহিমের দিকে তাকিয়ে থাকার পর…..
প্রিয়া:-কেন আপনিও আবার আসবেন নাকি?….এক রাতের জন্য?(মাহিমের দিকে তাকিয়েই)
মাহিম:-(রেগে প্রিয়ার কাছে একটু এগিয়ে এসে)এই আপনি আবারও কিন্তু আপনার Limit Cross করে যাচ্ছেন।এরপর কিন্তু আমি…..
প্রিয়া:-কি মারবেন আমাকে?
মাহিম:-প্রয়জন হলে তাই করবো(প্রিয়ার চোখের দিকে তাকিয়ে)
প্রিয়া:-মারুন না দেখি।এটা আপনার বাসা নয়।আর আমিও আপনার বাসার কাজের মেয়ে নই যে আপনার সমস্ত কিছু সহ্য করবো।
মাহিম নিশ্চুপ কিছু বলল না।শুধু রাগি চোখে প্রিয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো
প্রিয়া:-ভূলে যাবেন যে এটা একটা পাবলিক রোড।চারদিকে লোকজন আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে।লোকজন ডেকে আমিও কিন্তু আপনাকে…..
প্রিয়া আর কিছু বলার আগেই মাহিম পছন্ড রাগ নিয়ে।খুব জোর দিয়ে ঠাসস করে একটা চড় বসিয়ে দিল প্রিয়ার গালে।মাহিম প্রিয়ার গালে চড় বসাতেই চারদিকে লোকজন অবাক দুষ্টিতে তাকিয়েই রইলো তাদের দিকে।প্রিয়ার গালে চোখ পরতেই মাহিম দেখতে পেলে মুহূর্তেই প্রিয়ার গাঁলে আঙ্গুলের দ্যাগ বসে গেল।কিছুক্ষণ পর প্রিয়া মাহিমের দিকে তাকাতেই মাহিম দেখতে পেলে প্রিয়ার ঠোঠের কোনায় রক্ত আর চোখ দিয়ে জল গড়ি পরছে। ভেজা চোখ নিয়ে একটু রাগি ভাবে তাকিয়ে আছে মাহিমের দিকে।
পর্ব-৩১
———————————–
কিছুক্ষণ মধ্যেই চারদিকে অনেক লোকজন জোরো করে হয়েগেল।সবাই দাড়িয়ে দাড়িয়ে তাদের তাকিয়ে আছে।সবাই নানানধনের প্রশ্ন করছে মাহিমকে”কি হয়েছে?কেন মারলেন অনাকে?কি অপরাধ করেছে অনি?অনি কি হয় আপনার?
মাহিম কি বলবে বুঝতে পারছে না।সবাই নানানধনের প্রশ্ন শুনে রেগে একটা থমক দিয়ে বলল”আমাদের মাঝে কেউই কোন কথা বলতে আসবেন না”
একেই তো একটা মেয়ের উপর হাত তুলে রক্ততাক্ত করেছে আবার তার বড় কড় কথা(পাশে থাকা এক ভদ্রলোক)
প্রিয়া চোখে জল একদম চুপ করে আছে কিছু বলছে না।
প্রিয়ার ঠোঠে রক্ত আর চোখে জল দেখে এক ভদ্রলোক মাহিমের কাছে এসে..
ভদ্রলোক:-কিছু বলছেন না কেন?আপনি রাস্তার মাঝে এভাবে একটা মেয়ে কে মেরে রক্ততাক্ত করলেন কেন?(রাগি কণ্ঠে মাহিমের দিকে এগিয়ে আসতে আসতে)
ভদ্রলোকটি মাহিমের কাছে এগিয়ে আসতেই মাহিম রেগে ভদ্রলোকের শার্ট কলার ধরে”বলছি না আমাদের কেউই কথা বলতে আসবেন না”
মাহিম ভদ্রলোকের শার্ট এর কলার চেপে ধরতেই সবাই রেগে চিৎকার দিয়ে উঠে মাহিমের দিকে আসতে লাগলো এমন সময় প্রিয়া দৌড়ে এসে ভদ্রলোকটির শার্ট কলার ছাড়িয়ে দিয়ে মাহিমের সামনে দাড়িয়ে হাত জোর করে মিনতি করে বলতে লাগলো…
প্রিয়া:-আপনার প্লিজ সবাই চুপ করুন।আমরা দুজনি স্বামী স্ত্রী।এটা আমাদের স্বামী স্ত্রীরর ব্যাপার।অনার হয়ে আমি আপনাদের কাছে হাত জোর করে ক্ষমা চাই।আপনারা প্লিজ সবাই এখন থেকে চলে যান।(চোখে জল নিয়ে সবার সামনে হাত জোর করে মিনতি করতে করতে)
এরপর তাদের মাঝ থেকে..
–সেটা আগে বললেই হত!(প্রথম জন)
–ঘরের ঝামেলা ঘরেই মিঠালে ভালো হয় না!(দ্বিতীয় জন)
–শুধু আপনি আপনার স্বামীর হয়ে হাত জোর করে ক্ষমা চাইলেন বলেই কিন্তু আপনার স্বামীকে আজকে ছেড়ে দিলাম।নাহলে একজন পুলিশ অফিসারের গায়ে দাওয়ার জন্য আপনার স্বামীকে থানায় নিয়ে জেতাম!..এই সবাই যাও যে যার কাজে চলে যাও!(সেই ভদ্রলোকটা)
এরপর কিছুক্ষণের মধ্যেই সবাই চলেগেলে।সবাই চলে যাওয়ার পর প্রিয়া মাহিমের দিকে তাকালো।মাহিম দেখতে প্রিয়া অসহায় দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে কিছু না বলে চোখের চল মুছতে মুছতে চলেগেলো।
মাহিমও কিছু বলছে না।একদম চুপ হয়ে প্রিয়ার চলে যাওয়া।
হঠাৎ প্রিয়া বলে চিৎকার ভেসে আসতেই প্রিয়া তাকিয়ে দেখলো তার মামা তাকে ডাকছে।মাহিমও দেখতে পেলেও প্রিয়ার মামা হাতে খাবার নিয়ে রাস্তারর ওপাশে দাড়িয়ে প্রিয়াকে ডাকছে।
প্রিয়া তার মামার চিৎকার শুনে রাস্তার এপাশে দাড়িয়ে রইলো মাহিমের থেকে অল্প একটু দুরে!
প্রিয়ার মামা প্রিয়ার কাছে আসতে মাঝ রাস্তায় আসতেই হঠাৎ একটা গাড়ির সাথে ধাক্কা লেগে রক্ততাক্ত হয়ে পরতেই প্রিয়া চিৎকার দিয়ে কেঁদে উঠে হাতের সমস্ত কিছু ফেলে দিয়ে প্রিয়ার মামার কাছে দৌড়ে গেলো।
এরপর মাহিম সহ প্রিয়ার মামাকে দ্রুত হসপিতালে নিয়ে গেলো।ডাক্তার Peasant এর অবস্থা দেখে দ্রুত ইমার্জিন্সিতে নিয়ে।
একটু পর ডাক্তার বেড় হতেই প্রিয়া দৌড়ে ডাক্তারের কাছে ছুটে আসলো এসে…
প্রিয়া:-ডাক্তার বাবু আমার মামা ঠিক আছে তো? আমার মামার কিছু হয়ে যায়নি তো?(কেঁদে কেঁতে অস্থিরতা কন্ঠে)
ডাক্তার:-দেখুন অনার মাথায় অনেক জোরেই আঘাত লেগেছে।যত তারাতারি সম্ভবনা খুব দ্রুত অপারেশন করাতে হবে।আপনি তারাতারি হসপিতালে ৩লাক্ষ টাকা পেমেন্ট করে দিন।
ডাক্তারের কথা শুনে প্রিয়া মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ার মতো আবস্থা।কি বলবে বুঝতে পারছে না।
মাহিম:-নো প্রবলেম! আপনি অপারেশন এর ব্যবস্থা করুন আমি টাকা পেমেন্ট করে দিচ্ছি।
প্রিয়া:-না!
প্রিয়া কথা শুনে দুজনি অবাক দৃষ্টিকে তাকালো প্রিয়ার দিকে।
মাহিম:-না মানে?(প্রিয়ার তিকে তাকিয়ে)
প্রিয়া:-আপনি কেন টাকা দিবেন?আপনার জন্যই আজকে এই অবস্থা।এই সবকিছুই জন্য একমাত্র আপনিই দায়।আর আপনি ভাবলেন কি করে যে আমি আপনার টাকা নিব(চোখের জল মুছে মাহিমের দিকে তাকিয়ে রাগি কন্ঠে)
ডাক্তার:-দেখুন এখন কথা বলার সময় নয়! Peasant এর অবস্থা বেশি ভালো নয়।৫ঘণ্টার মধ্যেই অপারেশন করাতে হবে।আপনারা টাকার ব্যবস্থা করুন!
প্রিয়া:-আপনি অপারেশন এর ব্যবস্থা করুন আমি যত দ্রুত সম্ভব টাকা জমা করে দিচ্ছি।
প্রায় সারাদিনিই চলেগেল কিন্তু প্রিয়া শত চেষ্টা করেও কোথাও টাকা ম্যানেজ করতে পারলো না।ক্লান্ত হয়ে হসপিতালে এসে..
প্রিয়া:-ডাক্তার বাবু আপনি অপারেশন এর কাজ শুরু করুন আমি যত দ্রুত সম্ভব আপনাদের টাকা দিয়ে দিব(ডাক্তারের কাছে হাত জোর করে কেঁদে কেঁদে)
ডাক্তার:-আপনার Peasant এর অপারেশন হয়েগেছে তো।জ্ঞান ফিরলেই অনি সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠবেন।
ডাক্তারের কথা শুনে প্রিয়ার কান্না থেমে গেলো।
প্রিয়া:-অপারেশন হয়েগেছে?
ডাক্তার:-হুমম হয়েগেছে।
প্রিয়া:-আর টাকা?
ডাক্তার:-আপনার সাথে যে ভদ্রলোকটি ছিল অনিই সময় মতো টাকা পেমেন্ট করেছে বলেই তো সময় মতোই অপারেশন Success হয়েছে।
ডাক্তারের কথা প্রিয়া একদম থমকে গেলো।মুখ দিয়ে কোন কথা বেড় হচ্ছে না।
ডাক্তারের কেবিন থেকে বেড় হতেই দেখলো মাহিম ওর মামার কেবিনের সামনে দাড়িয়ে আছে।
প্রিয়া মাহিমের কাছে যেতেই মাহিম প্রিয়াকে দেখে…
মাহিম:-কই টাকা এনেছেন?(প্রিয়ার দিকে তাকিয়ে)
প্রিয়া কিছু বলছে না চুপ করে রইলো।
মাহিম:-কি হলো কথা বলছেন না কেন?
প্রিয়া:-না কিন্তু আমি আপনার টাকা শোধ করে দিব।
মাহিম:-কি ভাবে আমার রিন শোধ করবেন শুনি?
প্রায় রাত হয়ে আসলো।
মাহিম ড্রাইভিং করছে আর প্রিয়া তার সিটে মন খারাপ করে একদম চুপ করে বসে আছে কিছু বলছে না।
মাহিম:-কি ব্যাপার চুপ করে আছেন কেন?
প্রিয়া শুধু মাহিমের দিকে একবার তাকালো।কিছু বলল না।
মাহিম:-তখন আপনার ব্যবহারে খুব অবাক হয়েছি।
প্রিয়া:-(কিছুক্ষণ চুপ করে থাকার পর)এ আর নতুন কথা কি?
মাহিম:-না আমার কাছে বিষয়টা নতুন!…তখন লোকগুলো যখন আমাকে চারদিকে ঘিরে ধরেছিল।…তখন আপনি সবার সামনে আমাকে নিজের স্বামী বললেন?
মাহিমের কথা শুনে প্রিয়ার দিকে তাকালো।কিছুক্ষণ চুপ করে তাকিয়ে থাকার পর…
প্রিয়া:-ভূল হয়েগেছে ক্ষমা করবেন।
মাহিম:-কি?
প্রিয়া:-বলছি ভূল হয়েগেছে!অতগুলো লোকের সামনে আপনাকে আমার স্বামী বলে অপমান করেছি তার জন্য ক্ষমা চাইছি আপনার কাছে।
মাহিম:-তার মানে আপনি দয়া করেছেন আমার উপর তাই তো?
প্রিয়া:-আমি দয়া করবো তাও আবার আপনাকে?…আমাকেই সবাই দয়া করে!
মাহিম:-তাই তো করেছেন!অতগুলো লোকের হাত থেকে আমাকে বাঁচালান।নাহলে অতগুলো লোকের সামনে আপনি মিথ্যে কথা বলতে যাকেন কেন?
প্রিয়া নিশ্চুপ কিছু বলল না।
মাহিম:-যাইহোক আজকে পর থেকে তো আপনার সাথে আমার….
প্রিয়া:-মালিক আর ভিত্তের সম্পর্ক,এটা আমি কোনদিনও ভুলবো না।(মাহিমের দিকে তাকিয়ে)
মাহিম নিশ্চুপ কিছু বলছে না।শুধু প্রিয়ার দিকে একবার তাকালো!
প্রিয়া:-আগে মিথ্যে মূল্যহীন একটা সম্পর্কের বিনিময় আপনাদের বাসায় থাকতাম।
আর এখন সেটাও নেই জানি আমি।
মাহিম:-দেখুন আমি কিন্তু আপনাকে আমার নিজের প্রয়জনে নিয়ে যাচ্ছি না।
প্রিয়া:-হ্যা দয়া করে নিয়ে যাচ্ছেন।(মাহিমের দিকে তাকিয়ে)
মাহিম:-প্রথমে তো দয়া নিতে চাইছিলেন না।
প্রিয়া:-তারপর নিয়েছি তো।
মাহিম:-হঠাৎ মত বদলালেন যে?
প্রিয়া:-(নিশ্চুপ)
মাহিম:-কি হয়েছে টাকা খচর হয়েছে তাতে আপনার কি?
প্রিয়া:-আমি খারাপ মেয়ে ঠিকি।কিন্তু এতটা খারাপ হতে পারিনি যে সুযোগ নিয়ে একজনকে শর্ব-শ্বান্ত করে দিব।
মাহিম:-ওর তার মানে আপনি আমাকে দয়া দেখাচ্ছেন।
মাহিমের কথা শুনে প্রিয়া মাহিমের একবার তাকালো কিছু বলল না।
“কিছুক্ষণ পর”
মাহিম:-আমাদের বাড়িতে ঔভাবে থাকতে আপনার ভালো লাগবে?
প্রিয়া:-আপনার কি মনে হয় আমার জীবন ভালো মন্দ আর কিছু বাকি আছে?
পর্ব-৩২
———————————–
প্রিয়া:-আপনার কি মনে হয় আমার জীবন ভালো মন্দ আর কিছু বাকি আছে?
মাহিম:-সেটা আপনার দোষে,আপনার নিজের দোষে(একটু বিরক্তিকর ভাবে)
প্রিয়া:-হ্যা সব তো আমি-রি দোষ(রেগে মাহিমের দিকে তাকিয়ে বলেই মুখটা অন্যদিকে ঘুরে নিল)
মাহিম প্রিয়ার দিকে তাকানোর পর…
মাহিম:-আপনি চাইলে বাড়ির কাজের বদলে আমি আপনাকে একটা চাকরীর ম্যানেজ করে দিতে পারি।
প্রিয়া:-বাড়ির কাজের মেয়ে কে হঠাৎ চাকরী ম্যানেজ করে দিতে চাইছেন?
প্রিয়ারর শুনে মাহিম প্রিয়ার দিকে একটু রাগি লুক দিয়ে তাকাতেই….
প্রিয়া:-না অবস্স আপনার মতো নিশ্চই অনেক লোক-ই আছে যারা এখনো…..
মাহিম:-জাস্ট স্টাফ!একদম চুপ!….(রাগি কন্ঠে ধমক দিয়ে)
প্রিয়া:-…
মাহিম:-খুব কথা বেড় হচ্ছে না মুখ দিয়ে?এখন আবার আমায় টিজ ও করছেন?আপনার এত সাহস হলো কি করে?(রেগে)
প্রিয়া:-আপনিই বা বাড়ির কাজের মেয়ে কে চাকরীর কথা বলছেন কেন?
মাহিম:-আপনাকে কিচ্চু করতে হবে না।আপনি সারা জীবনই বাড়ির কাজের মেয়ে হয়েই থাকুন।
আমি আর কখনই আপনাকে ভালো কথা বলবো না ওকে!(রেগে প্রিয়ার দিকে তাকিয়ে)
এরপর আর মাহিম কিছু বলল না।প্রিয়াও চুপ করে বসে রইলো!কিছুদূর যেতেই মাহিম একটা রেস্টুরেন্ট এর সামনে গাড়িটা ব্রেক করলো।
তার মাহিম গাড়ির ভিতর থেকে বেড় হয়ে আসলো।
কিন্তু প্রিয়া এখনো গাড়ির ভিতরেই বসে রইলো।
মাহিম প্রিয়াকে গাড়ির এখনো পর্যন্ত বসে থাকা দেখে…
মাহিম:-(রেগে)কি হলো আপনি এখনো বেড় হচ্ছেন না কেন?(প্রিয়ার দিকে তাকিয়ে)
প্রিয়া:-আপনি খেয়ে আসুন আমি কিছু খাবো না!(একটু অভিমানী সুরে)
মাহিম:-এই দেখুন আপনি কিন্তু আমার wife না।আর আমিও কিন্তু আপনার Husband না।so আমার সামনে এত ন্যাকামি করবেন না।এইসব আমার একদম ভালো লাগেনা।(রাগি কন্ঠে বিরক্তিকর ভাবে)
প্রিয়া মাহিম এর দিকে তাকাতেই দেখলো মাহিম অনেকটাই রাগি দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে।এরপর প্রিয়া আর কিছু না বলে চুপচাপ বেড় হয়ে আসলো!
রাতের dnnr শেষ করে প্রিয়া আর মাহিম দুজনি রেস্টুরেন্ট এর থেকে বেড় হয়ে আবার গাড়ি করে রওনা হলো।কিছুদূর যেতেই মাহিমকে তুন্নি ফোন ফোন করলো।
প্রায় ১০/১৫মিনিট কথা বলল।ফোনটা রেখে মাহিম প্রিয়ার দিকে তাকাতেই দেখলো প্রিয়া সিটে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে আছে।
মাহিম:-তো আপনারা বিয়ে করছেন কবে?
মাহিমের কথা প্রিয়ার কানে পরতেই প্রিয়া চোখ।তারপর মাহিমের দিকে তাকিয়ে..
প্রিয়া:-মানে?
মাহিম:-এমন ভাব করছেন যেন কিছুই জানেন না!বলছি আপনি আর আপনার শিহাব ভাই বিয়ে করছেন কবে?
প্রিয়া:-দেখুন আপনার এইসব আজে-বাজে শুনতে আমার একদম ভালো লাগছে!প্লিজ আপনি একটু চুপ থাকবেন।(বিরক্তিকর ভাবে মাহিমের দিকে তাকিয়ে)
মাহিম:-বিয়ের আগে নাকি আপনার শিহাব প্রায় আসা যাওয়া করতো!আপনিও তাদের বাসা যেতেন নাকি….?
প্রিয়া:-(রেগে)হুমম যেতাম তো কি হয়েছে?তাতে আপনার কি?(বিরক্তিকর ভাবেই)
প্রিয়ার কথা বলা শেষ হতেই মাহিম গাড়িটা ব্রেক করলো।তারপর প্রিয়ার দিকে তাকিয়ে….
মাহিম:-আপনি যে একটা খারাপ নষ্টা চরিত্রহীন মেয়ে।এই কথাগুলোই হচ্ছে তার প্রমাণ।
প্রিয়া কিছু বলছে না হতাশ দৃষ্টিতে মাহিমের দিকে তাকিয়ে রইলো!
মাহিম:-এখন আমার কি ইচ্ছে করছে জানেন?ইচ্ছে করছে আপনাকে ধাক্কা দিয়ে গাড়ি থেকে বেড় করে এই মাঝ রাস্তায় আপনাকে রেখে যেতে(রাগি কন্ঠে প্রিয়ার দিকে তাকিয়ে)
কিছুক্ষণ শান্ত ভাবে মাহিমের দিকে তাকিয়ে থাকার পর….
প্রিয়া:-হ্যা দিন না এটাই তো আমার জায়গা।এইসবই তো আমি যোগ্য(চোখের কোনায় জল নিয়ে কাঁদার মতো করে)
মাহিম কিছুক্ষণ প্রিয়ার দিকে তাকিয়ে থাকার পর আবার গাড়ি স্টার্ট করলো!
বাসায় ফিরতে ফিরতে রাত রাত ১১টা বেজে গেলো।
মাহিম প্রিয়াকে নিয়ে বাসায় ঢুকতেই অনেক প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হলো মাহিমকে!প্রিয়াকেও অনেক কথা শুনতে হলো বাট প্রিয়া শুধু মাথা নিচু করে সবার সব কথা শুনলো।কোন উত্রর করলো না।
সবাই চলে যাওয়ার পর প্রিয়া চোখের জল মুছে উপরে চলেগেলো।
ক্লান্ত লাগছিল মাহিম রুমে এসে সুয়ে পরলো!
ভোরের এইদিকে মাহিমের ঘুম ভাঙ্গলো।কেমন জানি শিত শিত অনুভাব করছে।মাহিম চোখ খুলতেই দেখলো বাহিরে পছন্ড বৃষ্টি হচ্ছে!হালকা বাতাশও উঠেছে।জানালাটা বন্ধ না করায় অনেকটা বেশিই শিত করছে।মাহিম উঠে জানালাটা বন্ধ করে আবার সুতে যাবে তখনি চোখে পরলো প্রিয়া রুমে কোথাও নেই!
কাল রাতে বাসায় ফেরার পর তো মেয়েটার আর কোন খোজই নেওয়া হয়নি!এই ভোর বেলা আবার কোথায় গেলো।তারপর যখন রুমের বাহিরে আসতে যাবে ঠিক তখনি দেখলো প্রিয়া সেই প্রথম রাতের মতো করেই তার রুমের দরজার সামনে।
বাহিরে বৃষ্টি ঠান্ডায় ছোট্ট বাচ্চাদের মতো গুটিসুটি হয়ে শুয়ে আছে।মেয়েটার মায়া ভরা মুখটির দিকে একবার “নজর” পরলে ইচ্ছে করে সরিয়ে নিতে।
মাহিম কিছুক্ষণ প্রিয়ার দিকে তাকিয়ে থাকার পর।প্রিয়াকে কয়েকবার ডাকলো কিন্তু কোন সারা পেলো না।তারপর একহাটু ফেলে বসে প্রিয়াকে ডাকতে প্রিয়ার গা এ হাত দিতেই দেখলো সারা রাত ঠান্ডা লাগাতে গা অনেক জ্বর।এরপর আর ডাকাডাকি না করে মাহিম প্রিয়াকে কোলো উঠিয়ে রুমে ভিতরে আসলো।মাহিম প্রিয়াকে কোলে করে খাটের এইদিকে আসছিল অমনি আকাশে বিদ্যুৎ চমকাতেই প্রিয়া ঘুমের মধ্যেই ভয়ে মাহিমের বুকে মুখটা লুকিয়ে মাহিমের শার্ট এর কলার চেপে ধরলো!মাহিম খেয়াল করলো প্রিয়া তাকে এমন ভাবে জরিয়ে ধরে যেন মনে হচ্ছে প্রিয়া তার পৃথিবীর থেকে আপন মানুষটা কে কাছে পেয়েছে।ছাড়তেই চাইছে না!
পর্ব-৩৩
———————————–
মাহিম কিছুক্ষণ প্রিয়ার দিকে তাকিয়ে দেখলো প্রিয়ার শরিল ঠান্ডায় কাপছে।
এরপর মাহিম প্রিয়াকে খাঁটের কাছে এনে সুইয়ে কম্বল গা এ দিয়ে দিল।
মেয়েটা কে ঘুমন্ত অবস্থায় দেখতে অনেক নিষ্পাপ লাগে।ইচ্ছে করে ওর মায়া ভরা মুখের দিকে তাকিয়ে থাকতে!প্রিয়ার মায়া ভরা নিষ্পাপ মুখের দিকে তাকিয়ে থাকায় মাহিমের মনে প্রিয়ার জন্য মায়া জন্ম নিল।সত্যি মেয়েটা কে অনেক কষ্ট দিয়েছি।অনেক অবহেলা অপমান করেছি আর না।মাহিম প্রিয়ার দিকে তাকিয়ে মনে মনে ঠিক করলো।এবার থেকে আর প্রিয়ার সাথে খারাপ ব্যাবহার করবে না!সব সময়ই তার সাথে ভালো ব্যাবহার করবে।
সকাল বেলা মাহিম ফ্রেশ হয়ে প্রিয়ার কাছে এসে দেখলো প্রিয়া কম্বলটা ভালো করে পেচিয়ে এখনো ঘুমচ্ছে!
প্রিয়াকে ঘুমন্ত অবস্থায় দেখে মাহিম আর প্রিয়াকে ডাকলো না।জ্বর আছে কিনা সেটা দেখতে মাহিম প্রিয়া গা এ হাত দিতেই প্রিয়ার ঘুম ভাঙ্গল!
প্রিয়া চোখ খুলতেই মাহিম কে দেখে তারাহুরো করে উঠে বসে পরলো!নিজেকে খাটের উপর আর গা এ কম্বল দেখে অবাক দৃষ্টিতে মাহিমের দিকে তাকিয়ে..
প্রিয়া:-আআমি এখানে কি করে?(অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে)
মাহিম:-(কিছুক্ষণ চুপ করে প্রিয়ার দিকে তাকিয়ে থাকার পর)কৈফত চাইছেন আমার কাছে?(প্রিয়ার দিকে তাকিয়ে)
প্রিয়া:-না না কৈফত চাইতে যাব কেন?কাল রাতে বাহিরে সুয়ে ছিলাম।আর এখন দেখছি খাটের উপরে।তাই জানতে চাইছি আমি এখানে কি করে এলাম?
মাহিম:-সেটা আমি কি করে বলবো?আমি আপনাকে মেঝে থেকে উঠিয়ে খাটের উপরে আনিনী।(বসা থেকে উঠে প্রিয়ার কাজ থেকে সরে গিয়ে)
প্রিয়া খেয়াল করলো।মাহিম আজকে ওর সাথে অন্যরকম ভাবে কথা বলছে।আগের মতো রাগি রাগি ভাবে কথা বলছে না।একদম শান্ত ভাবে কথা বলছে।যার মাঝে কোন রাগ অভিমান নেই!
মাহিম:-কি হলো এমন করে কি ভাবছেন?
প্রিয়া:-না মানে আপনিই এনেছেন।নাহলে আমি তো ঘুমিয়ে পরে ছিলাম।আমি তো আর ঘুমের মাঝে হেটে হেটে আসিনি খাটে।
মাহিম:-যদি এনে থাকি তাহলে বেস করেছি।আপনাকে বাহিয়ে সুতে কে বলেছে?(প্রিয়ার দিকে তাকিয়েই)
প্রিয়া:-বাড়ির কাজের মেয়ের তো ওটাই আসল জায়গা।
মাহিম:-তাই বলে আমার রুমের সামনে?
প্রিয়া:-আমি কোথায় সুবো সেটা আমার ব্যাপার। আপনি আমাকে খাটে নিয়ে এসেছেন কেন সেটা বলুন?(মাহিমের দিকে তাকিয়ে)
মাহিম কিছু না বলে প্রিয়ার দিকে তাকাতেই…
প্রিয়া:-না এই কৈফত আমি আপনার কাছে চাইতেই পারি তাই না?
মাহিম কিছু বলছে না।শুধু প্রিয়ার কথাগুলো শুনছে!
প্রিয়া:-আর এখন বা আমার কপালে হাত দিয়ে জ্বর দেখতে আপনাকে কে বলেছে?
মাহিম:-সবকিছু আপনি বলে দেওয়ার পর আমি করবো নাকি?
প্রিয়া:-হ্যা অন্তত আমার ব্যাপারে আপনাকে তাই করতে হবে।
মাহিম:-(প্রিয়ার দিকে এগিয়ে এসে)এই এত কথা বলছেন কেন?এমন একটা ভাব করছেন যেন আমি আপনাকে কাল রাতে…..
প্রিয়া:-দেদেখুন একদম আজে-বাজে কথা বলবেন না বলে দিচ্ছি।আমি আপনাকে ঐসব কথা বলেছি নাকি?
মাহিম:-হয়েছে হয়েছে! এবার উঠে তারাতারি আমার জন্য নাস্তা নিয়ে আসুন যান!
“আজকে সূর্য কোনদিকে উঠেছে? মানুষটা কেমন জানি অচেনা অচেনা মনে হচ্ছে!(মনে মনে)
মাহিম:-কি হলো?
প্রিয়া:-(চমকে উঠে)না কিছু না।আপনি একটু অপেক্ষা করুন আমি এক্ষনি নিয়ে আসছি!
এইবলে প্রিয়া উঠে রুম থেকে বেড় হয়েগেল!
৭দিন পর…প্রিয়া মাহিমদের বাসায় আগের মতো করেই বাসার সমস্ত কাজ করে বাট আগের সবাই খারাপ ব্যাবহার করে না!শুধু মাহিম মা আর মাহিমের বাবা এনারা দুজনি একটু সুযোগ পেলেই শুধু করে দেয়।বাট মাহিম আর অর্পা দুজনি প্রিয়ার পক্ষ নিয়ে কথা।অর্পা আগের মতো প্রিয়ার সাথে খারাপ ব্যাবহার করে না!ফ্রেন্ড এর মতোই অর্পা প্রিয়ার সাথে সবকিছুই শেয়ার করে।মাহিম ও এই ৭দিনে প্রিয়ার সাথে খারাপ ব্যাবহার করেনি।
প্রিয়া এইরকম অসুস্থ শরিল নিয়ে বাসার সমস্ত কাজ করতে কষ্ট হলেও”জীবনে কখন কিছুই পাইনি আর কিছু আশাও করি না!জীবনের শেষ মুহূর্ত গুলো এভাবেই কাঠিয়ে দিব!এটা ভেবে প্রিয়া নিজের মন কে শান্তনা দিয়ে সমস্ত যন্ত্রণা সহ্য করে বাড়ির সমস্ত কাজ করে!
আজকে সারাটা দিন প্রিয়ার অনেক কষ্টে কাঠলো!সকাল থেকেই মাথায় হালকা ব্যাথা আর যন্ত্রণা করছে।একদম কিছুই ভালো লাগছিল না!ইচ্ছে করছিল সুয়ে থাকতে বাট কোন উপায় নেই!সারাদিন মাথায় যন্ত্রণা নিয়ে বাড়ির সমস্ত কাজ তারাতারি শেষ করতে প্রায় সন্ধা হয়ে আসলো!রাতের রান্নাবান্না করতে ৯টা বেজেগেলো!রাতের রান্নাবান্না শেষ করে টেবিলের উপর সব রেডি করে রেখে দিল!
সারাদিন এভাবে কাজ করে খুব ক্লান্ত অনুভাব করছিল তাই একটু ফ্রেশ হয়ে সুয়ে পরলো!মাহিম এখনো বাসায় ফিরেনি তাই খাঁটের উপরে সুয়ে চোখ বন্ধ করে একটু রেস্ট নিচ্ছিল।এমন সময়….
অর্পা:-এই প্রিয়া??(রুমের ভিতর আসতে আসতে)
অর্পার ডাক কানে পরতেই প্রিয়া চমকে তারাতারি উঠে বসে…
প্রিয়া:-হ্যা বলুন কিছু লাগবে?
অর্পা:-এভাবে সুয়ে আছিস কেন? শরিল খারাপ?
প্রিয়া:-না এমনি!কি লাগবে বলুন?
অর্পা:-গলাটা কেমন সুখনা সুখনা লাগছে, ১কাপ কপি হবে?
প্রিয়া:-আপনি বসুন আমি এক্ষনি বানিয়ে নিয়ে আসছি!
এইবলে প্রিয়া উঠে রুমে বেড় হয়ে যাচ্ছিল এমন সময়…
অর্পা:-আচ্ছা শোন(প্রিয়ার পিছন থেকে)
প্রিয়া:-(পিছন দিকে ঘুরে)জ্বী?(অর্পার দিকে তাকিয়ে)
অর্পা:-তোর জন্য ১কাপ সহ নিয়ে আশিস কেমন!
প্রিয়া:-ঠিক আছে!
১০টার এইদিকে মাহিম বাসায় ফিরলো!
আজকে মাহিম এর ও অফিসে অনেক ধকল গেছে।মাহিমও আজকে প্রায় সারাটা দিনিই কাজের ব্যস্ততায় কাঠিয়েছে।দুপুর বেলা লান্স করারও সময় পায়নি!আজকে অনেক জায়গায় মাহিম কে মিটিং Mntn করতে হয়েছে।অনেক টায়ার্ড মাহিম!
মাহিম বাসায় এসে রুমে ঢুকতেই দেখলো প্রিয়া আর অর্পা কপির কাপ হতে বসে গল্প করছে।
মাহিম রুমে আসতেই প্রিয়া একবার মাহিম এর তাকিয়ে আবার গল্পে মনযোগী হলো!অর্পা তাদের ছোট্ট বেলার গল্প বলছে প্রিয়াকে!
মাহিম রুমে এসে বাথরুম গেলো!তারপর ফ্রেশ হয়ে ফোনটা হতে নিয়ে প্রিয়ার দিকে তাকিয়ে দেখলো তারা একটু হাসাহাসি করছে।মাহিম কিছু না বলে খাটের উপর বসে ফেসবুকিং করতে লাগলো!
কিছুক্ষণ পর অর্পা রুম থেকে বেড় হয়েগেলো।
প্রিয়া খেয়াল করলো মাহিম মুখটা কেমন করে যেন বসে আছে।এরপর প্রিয়া এক গ্লাস জল নিয়ে মাহিমের কাছে এসে…
প্রিয়া:-এই নিন জল…(মাহিমের দিকে এগিয়ে দিয়ে)
মাহিম কিছু না বলে জলের গ্লাসটা প্রিয়া থেকে নিয়ে ছুড়ে মারতেই প্রিয়া হাত এগিয়ে দিতেই, প্রিয়ার হাতে সাথে লেগে ভেঙ্গে প্রিয়ার হাত কেটে গেলো!প্রিয়ার হাত কেটে যেতেই প্রিয়া চিৎকার দিয়ে হাতটা চেপে ধরলো।তারপর মাহিমর দিকে তাকালো।প্রিয়া কিছুই বুঝতে পারলো সে হাত চেপে ধরেই অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে…
প্রিয়া:-গ্লাসটা এভাবে ফেলে দিলেন কেন?(মাহিমের দিকে তাকিয়ে)
মাহিম:-কুকুর কে লায় দিলে মাথায় উঠে জানতাম।মানুষেও যে একি অবস্থা সেটা জানতাম না!(প্রিয়ার দিকে তাকিয়ে)
প্রিয়া:-মানে?
মাহিম:-আমি আপনার অনুগত দাস নাকি?….নাকি প্রজা মনে করেন আমাকে?(রাগি চোখে প্রিয়ার দিকে তাকিয়ে)
প্রিয়া একদম নিশ্চুপ হতাশ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মাহিমের দিকে কিছু বলছে না!
মাহিম:-সমস্ত হাহাহিহি শেষ হলো,এবার নিজের সময় মতো আমাকে জল দিতে এসছেন!আমি কি আপনার কাছে জল চেয়েছি নাকি?(রাগি কন্ঠে প্রিয়ার দিকে তাকিয়েই)
প্রিয়া:-…..চাননি ভালো কথা তবুও দিতে এসেছিলাম তো?(মাহিমের দিকে তাকিয়েই)
মাহিম:…
প্রিয়া:-খাবেন না সেটা বললেই হতো,এভাবে ছুড়ে ফেলে দিলেন কেন?
মাহিম:-(রেগে বসা থেকে উঠে)বেস করেছি ফেলে দিয়েছি,আবার দিতে আসলে আবার ফেলবো!আর আপনি এনে দিতে বাধ্য কারণ…আপনি এই বাড়ির কাজের মেয়ে।কথাটা সব সময়ই মনে রাখবেন(প্রিয়ার কাছে এগিয়ে এসে রাগি কন্ঠে প্রিয়ার দিকে তাকিয়ে)
প্রিয়া কি বলবে বুঝতে পারছে না।প্রিয়ার চোখ ছলছল করছে।চোখের কোনায় পানি চলে এসেছে।
চুপ করে কিছুক্ষণ মাহিমের দিকে তাকিয়ে থাকার পর..
প্রিয়া:-হুমম ঠিকি বলেছেন আপনি…ধন্যবাদ আপনাকে মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য(কাদো কাদো ভাবে মাহিমের চোখের দিকে তাকিয়ে)
এরপর প্রিয়া চোখে জল নিয়ে মেঝে থেকে গ্লাস ভাঙ্গা টুকড়ো গুলো কুড়াতে লাগলো!
পর্ব-৩৪
————————————————————-
এরপর সমস্ত গ্লাস টুকড়ো গুলো কুড়িয়ে চোখের জল ফেলতে ফেলতে রুম থেকে বেড় হয়েগেল।মাহিম কিছুক্ষণ চুপ করে দাড়িয়ে প্রিয়ার বেড় হয়ে যাওয়াটা দেখলো।তারপর খাটের উপর বসে পরলো!
সকাল বেলা মাহিম ঘুম থেকে উঠে দেখলো প্রিয়া রুমে নেই।ও উঠার আগেই উঠে গেছে!কিছুক্ষণ সুয়ে থাকার পর মাহিম উঠে বাথরুমে গেলো!
একটু পর বেড় হয়ে এসে ফ্রেশ হতে ডেসিন এর সামনে যেতেই চোখে পর তার সকালের ব্রেকফাস্ট টেবিলে রেডি করে রাখা!
অন্যদিনের মতো প্রিয়া আজকে আর মাহিমকে কিছুই জিঙ্গেস করেনি যে ও খাবে?উপরে খাবে নাকি নিচে খাবে?
এইসব কিছুই জিঙ্গেস না করে নিজের দায়িত্ব মতো নাস্তা টেবিলে রেখে দিয়েছে!
মাহিম অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে কিছুক্ষণ রুমে ওয়েট করলো কিন্তু প্রিয়া একটি বারের জন্যও রুম আসলো না।
এরপর মাহিম ব্রেকফাস্ট না করেই অফিসে চলেগেল!
কেটে যাওয়া হাত দিয়ে প্রিয়া কোন কাজেই করতে পারছে না।একটু পানি লাগতেই শুধু জ্বলে উঠছে।
অর্পাও আজকে বাসাতে নেই যে ওর কাছ থেকে ঔষধ লাগিয়ে নিবে।অর্পা আজকে ওর এক ফ্রেন্ড বাসাতে গেছে।
কি আর করার কাজ তো করতেই হবে।
এরপর প্রিয়া নিজের শাড়ির আচল ছিড়ে হাতে বেধে কাজ করতে লাগলো!
রাত ৯টার এইদিকে মাহিম বাসায় ফিরলো।রুমে এসে দেখলো প্রিয়া রুমে নেই!
এরপর মাহিম ফ্রেশ হতেই একটু পর প্রিয়া রুমে আসলো এসে…
প্রিয়া:-আপনার খাবার খাবেন নাকি নিয়ে যাব?(দরজায় দাড়িয়ে)
মাহিম প্রিয়ার দিকে তাকিয়ে”সকালে ব্রেকফাস্ট না করেই অফিসে গিয়েছি আর অনি এখন এসে বলছে খাব কিনা?(মনে মনে প্রিয়ার দিকে তাকিয়ে)
প্রিয়া:-কি হলো কিছু বলছেন না কেন?
মাহিম:-না রাতে খাব না নিয়ে যান!
এরপর প্রিয়া আর কিছু না বলে খাবার নিয়ে চলেগেলো!মাহিম দেখলো আজকে প্রিয়া কোন জোরাজুরি করলো না।চুপচাপ খাবার নিয়ে চলে গেলো!
কিছুক্ষণ পর প্রিয়া রুমে আসলো!তারপর দরজাটা আঠকে ভিতরে আসতেই…
মাহিম:-আপনি খাবার গুলো রেখে আসলেন কেন?(প্রিয়ার দিকে তাকিয়ে)
প্রিয়া:-আপনিই তো বললেন খাবেন না।এরজন্য তো আমি খাবার গুলো রেখে আসলাম(অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে)
মাহিম:-আমি বললাম বলেই আপনি খাবার গুলো রেখে আসবেন?
প্রিয়া:-অতভূত ব্যাপার তো?…আপনি তো দেখছি ডায়ে গেলে কাঠেন বায়ে গেলেও কাঠেন?(মাহিমের দিকে তাকিয়ে)
মাহিম:-ওহ তার মানে আজকে রাতে আর আমার খাবার জুটবে না তাই তো?
প্রিয়া:-আমি আপনার জন্য খাবার উপরে আনতে পারবো না।খাবার খেতে হলে নিচে যেতে হবে।
আর এমনিতেই খাবার গুলো ঠান্ডা হয়েগেছে।(মাহিমের দিক খেকে চোখ গুলো সরিয়ে নিয়ে)
মাহিম:-থাক আমাকে দয়া করতে হবে না!
প্রিয়া:-আমি আপনাকে দয়া করি?(মাহিমের দিকে তাকিয়ে)
মাহিম:-হ্যা তাই তো করছেন!একটু খাবার খেতে চাইছি বলে শর্ত দিচ্ছেন, নিচে যেতে বলছেন।
প্রিয়া:-আমি কোন শর্ত দেইনি।আপনি এমন কোন অসুস্থ না যে নিচে যেতে পারবেন।(একটু বিরক্তিকর ভাবে)
মাহিম খেয়াল করলো প্রিয়াকে দেখতে কেমন জানি লাগছে।মুখটা একদম সুখনা সুখনা লাগছে।একদম শান্ত ভাবে কথা বলছে।কোন রাগ কোন জোর নেই!
হাতের দিকে তাকিয়ে দেখলো টেকে যাওয়া জায়গায় আচল দিয়ে বেধে রেখেছে!
প্রিয়া:-কি হলো চুপ করে আছেন কেন?নিচে যাবেন?
মাহিম:-হুম ঠিক আছে নিচে না হয়া যাব!…..আপনি হাতে ওষধ(ঔষধ) লাগিয়েছেন?(প্রিয়ার দিকে তাকিয়ে)
প্রিয়া মাহিমের দিকে তাকালো, কিছু বলছে না।শুধু অন্যরকম একটা দৃষ্টি নিয়ে মাহিমের দিকে তাকিয়ে রইলো!মাহিম ও কিছু বলছে না প্রিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে!
কিছুক্ষণ পর…
প্রিয়া:-সেটা জেনে আপনি কি করবেন?
মাহিম:-যেটা বলছি সেটার উত্রর দিন আগে।আসলে কাল রাগের মাথায় যেটা করেছি সেটা করা একদমি উচিৎ হয়নি।
মাহিমের কথা শুনে প্রিয়ার চোখে জল চলে আসলো..
প্রিয়া:-কতটা নিলজ্জ আপনি!এখন আবার আমাকে টিজ করছেন।এতটা সজতা মনে করেন আমাকে?(কাদার মতো করে মাহিমের দিকে তাকিয়ে)
মাহিম:-আমি আপনাকে কি মনে করি সেটা আপনি কোদিনও বুঝেন-নি আর…আমি আশাও করিনা যে আপনি কোদিন বুঝবেন!
প্রিয়া:-যথেষ্ট বুঝি আমি!আপনি আসলে আমাকে কাঠের পুতুল মনে করেন।আমার মন শরিল বলে কিছু নেই।কষ্ট দিলেও আমি ব্যাথা পাইনা!
তাই আপনি আমাকে যখন ইচ্ছে অবহেলা অপমান এমন কি গা এ হাত পর্যন্ত উঠাতে দিধা করেন না।(চোখে জল নিয়ে মাহিমের দিকে তাকিয়ে)
মাহিম কিছু বলছে না।চুপ করে প্রিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।
প্রিয়া:-শুধু যে আমাকে শরিলে কষ্ট দেন তা তো নয়।আমার মনটা কেও আপনি….
মাহিম:-অন্যকথা বলুন শুনে নিব বাট মনের কথা না!কারণ মন বলে বস্তুটা আপনার নেই।(প্রিয়ার দিকে তাকিয়ে)
প্রিয়া নিশ্চুপ কিছু বলছে না!
মাহিম:-রাগের মাথায় আপনাকে ব্যাথা দিয়ে ফেলেছি,তার জন্য স্যরি!
প্রিয়া কিছুক্ষণ চুপ করে মাহিমের দিকে তাকিয়ে থাকার পর…
প্রিয়া:-আপনার এই ব্যাথা দাওয়াটা না আমি এখন সহ্য করতে পারি….কিন্তু আপনার এই শান্তনা দাওয়াটা সহ্য করতে পারি না(চোখে জল নিয়ে মাহিমের দিকে তাকিয়েই)
পর্ব-৩৫
———————————–
মাহিম:-একদিন যখন আমার কাছ থেকে দূরে চলে যাবেন।কোনকিছুই হয়তো মনে থাকবেন না।
কিন্তু এই ব্যাথাটা থেকে যাবে।আপনার মনে পরবে যে “আমার জীবন একজন মানুষ ছিল সে শুধু আমায় ব্যাথা দিয়েছে কষ্ট ছাড়া আর কিছু দেয়নি!
আপনার সুখের জীবনে না হয় এইটুকু ব্যাথা থেকেই গেলো(প্রিয়ার চোখের দিকে তাকিয়ে)
প্রিয়া মাহিমের কথা শুনে একদম নিশ্চুপ হয়েগেল।চোখে জল নিয়ে অবাক দৃষ্টিতে মাহিমের দিকে তাকিয়ে রইলো!মাহিম ও কিছু বলছে না চুপ করে প্রিয়ার চোখের দিকে তাকিয়ে আছে।দুজন দুজনার চোখের দিকে তাকিয়ে একদম নিশ্চুপ হয়ে আছে!
কিছুক্ষন পর মাহিম একটা শাড়ি বেড় করে প্রিয়ার দিকে দিয়ে…
মাহিম:-এটা আপনার জন্য এনেছি।
প্রিয়া কিছু না বলে শাড়িটা হাতে নিল!
মাহিম:-কালকে সকাল বেলা স্লান করে এই শাড়িটা পড়ে থাকবেন!কালকে আমার কিছু ফ্রেন্ড আপনাকে দেখতে।তারা কালী বিদেশে যাবে। আপনার রাতের রান্না খেতে আসবে(প্রিয়ার দিকে তাকিয়ে)
প্রিয়া”ওহ তার মানে তুমি তোমার প্রয়জনের জন্য আমায় us করবে।!(মনে মনে মাহিমের দিকে তাকিয়ে)
মাহিম:-আপনার পছন্দ হয়েছে কি’না জানিনা।বাট আমার মনে হয় এই শাড়িতে আপনাকে অনেক সুন্দর লাগবে(প্রিয়ার চোখের দিকে তাকিয়ে)
প্রিয়া কিছু বলছে না চুপ করে মাহিমের দিকে তাকিয়ে আছে!
আজকে বাসায় কেউ নেই মাহিম আর প্রিয়া ছাড়া।
অর্পা ওর ফ্রেন্ড এর বাসায় এখনো ফিরেনী।
গতকাল রাতে মাহিম এর মা-বাবা মাহিম এর বাবার ফ্রেন্ড এর ছেলের বিয়ে তে গেছেন!
সকাল বেলা মাহিম ঘুম থেকে উঠে দেখলো প্রিয়া নেই!মাহিম মনে মনে”প্রিয়া রুমে নেই।তার মানে ও স্লান করতে গেছে,আমার দেওয়া শাড়িটা ও পরবে!
মাহিম ফ্রেশ হয়ে রুমে প্রিয়ার জন্য ওয়েট করছে।
প্রিয়া কখন রুম আসবে।অনেক্ষন ওয়েট করার পর ও দেখলো প্রিয়া রুমে আসলো না!মাহিম মনে মনে ভাবছে”কি ব্যাপার প্রিয়া এখনো রুমে আসছে না কেন?ও কি তাহলে আমার দেওয়া শাড়িটা পরবে না।ওর গতকাল রাতের কিছুই মনে নেই নাকি?
এটা ভাবতেই মাহিম খাটের উপর বসে পরলো।
মনে মনে প্রিয়ার একটু রেগে বসে রইলো খাটের উপর!
একটু পরে…
প্রিয়া:-আপনার কপি?
প্রিয়ার কন্ঠ শুনে মাহিম বিরক্তিকর ভাবে প্রিয়ার দিকে তাকাতেই মাহিম চমকে উঠলো।মাহিম বসা থেকে উঠে অবাক দৃষ্টিতে প্রিয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো।প্রিয়া স্লান করে*************।।হাতে কপির কাপ নিয়ে দাড়িয়ে আছে প্রিয়া!
অপূর্ব সুন্দর লাগছে ঠিক যেন একটা পরী।***প্রিয়া একদম শান্ত হয়েগেলো।**কেউই কোন কথা বলছে না।দুজনি একদম নিশ্চুপ হয়ে দুজন দুজনার চোখে দিকে তাকিয়ে আছে।
কিছুক্ষণ পর মাহিম প্রিয়াকে…** ***… করে ধরলো!
কিছুক্ষণ পর প্রিয়া *******—-*!বাড়ির কলিংবেল বেজে উঠলো।এরপর মাহিম প্রিয়া রুম থেকে বেড় হয়ে আসলো!
(up..cg)
মাহিম দরজা খুলতেই দেখলো তার ফ্রেন্ডরা সবই এসে গেছে।
এরপর সবাইকে প্রিয়ার সাথে পরিচয় করিয়ে দিল তারপর প্রিয়ার হাতের রান্না খেলো।
খাওয়া-দাওয়ার পর সবাই এক সাথে বসে গল্প করছে।
প্রিয়া তাদের সাথে গল্প করলো তারা অনেক মজা করে প্রিয়া আর মাহিম কে কিছুই বললো!
প্রিয়া সবার সাথে হেসে কথা বললেও ভিতরটা একদম ফেটে যাচ্ছে।শুধু মাহিম এর ফ্রেন্ড এর সামনে মাহিম এর অনেক মিথ্যে কথায় হ্যাঁ বলতে হচ্ছে।তাকে মিথ্যে স্ত্রীর অভিনয় করতে হচ্ছে।
যদি সত্যি এমনটা হতো তাহলে হয়তো প্রিয়ার মতো সুখি আর কেউ হতো না!
মাহিম আর মাহিম এর ফ্রেন্ডরা তারা অনেক হাসাহাসি করছে।আর প্রিয়া একদম নিশ্চুপ।
প্রিয়ার মাথা ঘুড়ছে বমিবমি ভাব হচ্ছে।
এইসব কিছুই ভালো লাগছে না বাট বাধ্য হয়ে প্রিয়াকে এইসব-ই করতে হচ্ছে।প্রিয়া নিজেকে অনেক কষ্টে কন্ট্রোল করে অন্যরকম একটা মায়ার দৃষ্টিতে মাহিম এর দিকে তাকিয়ে আছে।
প্রিয়া এমনটা দেখে মাহিম এন এক ফ্রেন্ড বলল”আরে ভাবি কি হলো আপনার?(প্রিয়ার দিকে তাকিয়ে)
প্রিয়া চমকে উঠেনা কিছু না”বলেই প্রিয়া আর বসে থাকতে পারলো না।বেসিনের সামনে গিয়ে হড়হড় করে বমি করতে লাগলো।মাথাটার ভিতরে পছন্ড যন্ত্রণা করতে লাগলো।প্রিয়া বমি করে আয়নার দিকে তাকিয়ে দেখলো তার নাক দিয়ে রক্ত পরছে আর নিজের অজান্তেই চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পরছে।এরপর মাথা চেপে ধরে বসেই চোখ বন্ধ করে ফেললো!
এভাবে কিছুক্ষণ মাথা চেপে ধরে থাকার পর প্রিয়ার মাথার ভিতরে যন্ত্রণা একটু কমলো।এরপর প্রিয়া উঠে ফ্রেশ হয়ে নর্মাল হয়ে মাহিম এর ফ্রেন্ড সবার জন্য কপি বানিয়ে নিয়ে আসলো!
কপি খেতে খেতে সবাই মিলে আরো কিছুক্ষণ হাসাহাসি আড্ডা দিয়ে,মাহিম ফ্রেন্ড-রা সবাই চলে গেলো।
মাহিম তার ফ্রেন্ডদের এগিয়ে দিতে তার সঙ্গে বাহিরে চলে আসলো।তারপর তাদের বিদায় দিয়ে রুমে এসে দেখলো প্রিয়া একটু রাগি ভাবে খাটের উপর আছে।
মাহিম:-বলছি…
প্রিয়া:-আজকে আমি বলবো আপনি শুনবেন(বসা থেকে উঠে একটু রেগে)
কিছুক্ষণ চুপ করে প্রিয়ার দিকে তাকিয়ে থাকার পর…
মাহিম:-ওহ আজকে মনে হচ্ছে বকত্রিতা দিবেন।(মজা করে)
প্রিয়া:-হ্যা তাই!নাহলে আপনাদের মতো মানুষ আমাদের মতো মেয়েরা যে যন্ত্রু জানোয়ার নই।এটা তো ভুলেই যান!(একটু রেগে)
প্রিয়া:-দেখুন আমি কিন্তু আপনাকে Thanks বলতে আসছি।…যে ভাবে আপনি আমার ফ্রেন্ড….
প্রিয়া:-দেখুন আমি আপনার প্রশংসা পাওয়ার জন্য কিছু করিনি।(বিরক্তিকর ভাবে)
মাহিম কিছুক্ষণ অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকার পর…..
মাহিম:-আচ্ছা বাদ-দিন।আজকের দিন কি জানেন?(প্রিয়ার দিকে তাকিয়ে)
প্রিয়া:-আমি আপনাদের এত শিক্ষিত না।এইসব দিন-ক্ষণ দেখে আমার কিছু হয় না।
আমি আপনাকে যেটা বলছি সেটা মন দিয়ে শুনুন।
মাহিম খেয়াল করলো প্রিয়া ওর সাথে কেমন রাগারাগি ভাবে কথা বলছে।কিছুই বুঝতে পারছে না।এতক্ষন ভালোই ছিল হঠাৎ আবার কি হলো।মাহিম কিছুক্ষণ চুপ করে প্রিয়ার দিকে তাকিয়ে থাকার পর…..
মাহিম:-ওকে বলুন কি বলবেন(শান্ত ভাবে)
প্রিয়া:-আপনি আজকে আপনার ফ্রেন্ড এর সামনে আমাকে এত অপমান কেন করলেন?(মাহিম এর দিকে তাকিয়ে)
মাহিম:-আমি আপনাকে অপমান করেছি?(অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে)
প্রিয়া:-বুঝতে পারছেন না?নাকি জানেনি না যে কোনটা অপমান?
মাহিম:-দেখুন আমি যতদূর জানি যে আজকে অন্তত আমি আপনাকে একটাও বাজে কথা বলিনি।আপনাকে অপমান করিনি!
প্রিয়া:-আপনি মিথ্যে কথা বলেছেন।আপনি আপনার ফ্রেন্ড এর সামনে হাজারটা মিথ্যে কথা বলেছেন(রাগ দেখিয়ে)
মাহিম:-(রেগে প্রিয়ার কাছে এগিয়ে এসে)এই আপনি নিজেকে কি মনে করেন?এত বড় বড় কথা বলছেন কেন?কে দিয়েছে আপনাকে এত সাহস?(রাগি কন্ঠে)
প্রিয়া কিছুক্ষণ মাহিম এর দিকে তাকিয়ে থাকার পর…
প্রিয়া:-শুনে ছিলাম চোরের মা এর বড় গলা।আজ সেটা আপনাকে দেখে প্রমাণ পেলাম(মাহিম এর কাছ থেকে সরে গিয়ে)
মাহিম:-মানে?
প্রিয়া:-মানে আপনি আমাকে নিয়ে একটার পর একটা মিথ্যে কথা বলে যাবেন আর আমি চুপ করে থাকবো?(মাহিমের দিকে তাকিয়ে)
মাহিম:-(নিশ্চুপ)
প্রিয়া:-আপনি আপনাকে নিয়ে যা খুশি তাই করুন। যত খুশি মিথ্যে কথা বলুন।কিন্তু আমাকে নিয়ে মিথ্যে কথা বলার অধিকার আপনাকে কে দিয়েছে?
মাহিম কিছু বলছে না।নিশ্চুপ হয়ে প্রিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।
প্রিয়া:-আমি কবে যাচ্ছি আপনার সাথে Honeymoon এ?কখন যাচ্ছি(মাহিম এর দিকে তাকিয়েই)
মাহিম কিছুক্ষণ প্রিয়া দিকে তাকিয়ে থাকার পর…
মাহিম:-শতি লক্ষি।তাও যদি আমার কিছু অজানা থাকতো?
এইবলে মাহিম রেগে খাটের উপর বসে পরলো।
প্রিয়া:-কি জানেন আপনি?(রেগে মাহিম এর কাছে এগিয়ে আসতে)
মাহিম:-(রেগে বসা থেকে উঠে)এই আমি আপনার সাথে ভালো ভাবে কথা বলছি বলে এটা ভাববেন যে আমি আপনার এইসব কিছু সহ্য আমি করবো।(রাগি চোখে প্রিয়ার দিকে তাকিয়ে)
পর্ব-৩৬
———————————–
মাহিম:-(রেগে বসা থেকে উঠে)এই আমি আপনার সাথে ভালো ভাবে কথা বলছি বলে এটা ভাববেন যে আমি আপনার এইসব কিছু সহ্য আমি করবো।(রাগি চোখে প্রিয়ার দিকে তাকিয়ে)
প্রিয়া:- হ্যাঁ আপনাকে সহ্য করতে হবে। আমি যেমন আপনার মিথ্যে কথা গুলো সহ্য করেছি তাই আপনাকে ও করতে হবে।
মাহিম:- কি মিথ্যে বলেছি আমি
প্রিয়া:- সবার কাছে আমার মতো নষ্ট মেয়েকে আপনি কেন বউ বলে পরিচয় দিলেন।
মাহিমঃ- নিশ্চুপ
প্রিয়াঃ- আপনার মতো আমি মিথ্যে অভিনয় করতে পারি না । আমার অনেক কষ্ট হচ্ছে এই মিথ্যে অভিনয়ের জন্য।
(আমি তো তোমাকে আমার স্ত্রী মনে করি। তোমাকে অনেক ভালোবাসি। তোমাকে কোন কষ্ট দিতে চাই না।
তুমিই তো আমাকে দূরে সরিয়ে রাখো ভুল বুঝো আমাকে। মাহিম মনে মনে বলছে)
মাহিমঃ আসলে আমি আপনাকে কষ্ট দিতে চাইনি। বন্ধুরা সবাই আমার বউকে দেখতে চেয়েছে তাই আমি বাধ্য হয়ে ওদের আসতে বলেছি আপনাকে কিছু না বলেই।
(তুমিই তো আমার পাগলী পরী বউ মনে মনে বলে মাহিম)
প্রিয়া মাহিমের দিকে তাকিয়ে আছে আর ওর কথা গুলো শুনছে। এমন ভাবে মাহিম বাবু কথা বলতে পারে ।
মনে মনে ভাবছে।
মাহিমঃ আপনাকে কষ্ট দেয়ার জন্য সরি। অনেক সরি।
প্রিয়াঃ আপনার সরি আপনার কাছেই রাখুন ।
মাহিমঃ সরি বললাম তার পরও এতো রাগ দেখান কেন?
প্রিয়াঃ রাগ দেখালাম কই,,, সব সময় সরি দিয়ে কষ্ট দূর হয়না।
মাহিমঃ তাহলে কি করতে হবে বলেন
প্রিয়াঃ একটা গান শুনান তাহলে ।
(মনে মনে প্রিয়া হাসতেছে)
মাহিমঃ কি????
প্রিয়াঃ কি মানে! আপনাকে একটা গান শুনাতে বলছি
মাহিমঃ আমি গান পারি না অন্য কিছু বলেন।
প্রিয়াঃ না। আপনাকে গান গাইতে হবে আমার মন ভালো করার জন্য। আর না হয় কিছু করতে হবে না। আপনি গিয়ে শুয়ে পরুন। আমি কে আপনার যে আমার জন্য গান গাইবেন ।
এই বলে প্রিয়া রুম থেকে বেরিয়ে আসতে লাগলো তখন মাহিম প্রিয়ার হাতটা টেনে ধরে কাছে নিয়ে আসলো
তারপর প্রিয়ার চোখের দিকে তাকিয়ে গান গাইতে গাগলো।
আমারো পরানে যাহা চায়,
তুমি তাই, তুমি তাই গো !
তোমা ছাড়া আর এ জগতে
মোর কেহ নাই কিছু নাই গো !
তুমি সুখ যদি নাহি পাও
যাও সুখের সন্ধানে যাও
আমি তোমারে পেয়েছি হৃদয়মাঝে,
আর কিছু নাহি চাই গো ।
আমি তোমার বিরহে রহিব বিলীন,
তোমাতে করিব বাস,
দীর্ঘ দিবস, দীর্ঘ রজনী, দীর্ঘ বরষ মাস ।
যদি আর কারে ভালোবাস,
যদি আর ফিরে নাহি আস,
তবে তুমি যাহা চাও
তাই যেন পাও,
আমি যত দুখ পাই গো ।”
আমারো পরানে যাহা চায়,
তুমি তাই, তুমি তাই গো !
প্রিয়া মুগ্ধ হয়ে মাহিমের গান শুনছে। আর মনে মনে ভাবছে এই রাগী ছেলেটা আবার এতো সুন্দর ভাবে গান গাইতে পারে।
মাহিম গানটা শেষ করে প্রিয়াকে জরিয়ে ধরে প্রিয়া ও মাহিমের উপর দুর্বল হয়ে পড়লো।
মাহিম তার ঠোঁট প্রিয়ার ঠোঁটের কাছে নিতেই
মাহিমের ফোনটি বেজে উঠল।
তুন্নি ফোন করেছে। ফোনের আওয়াজে প্রিয়া মাহিমের চোখের থেকে চোখ সরিয়ে নিলো।
(তুন্নি আর ফোন করার সময় পেলো না রাগী হয়ে মনে মনে বলতে লাগলো মাহিম)
মাহিম ফোনটা রিসিভ করে কথা বলতে লাগলো…..
প্রিয়া লজ্জাবোধ নিয়ে নিচে নেমে আসলো কলিং বেলের আওয়াজ শোনা।
মাহিমের মা-বাবা বাসায় ফিরে আসেছে।
রাতা বাহিরে থেকে খেয়ে আসেছে বলে তাদের জন্য আর রান্না করতে হয়নি।
প্রিয়া উপরে গিয়ে দেখে মাহিম রুমে নেই ওয়াশ রুমে গেছে। প্রিয়া ওর বিছানা করে শুয়ে পরে।
মাহিম ওয়াশ রুম থেকে আসে দেখে প্রিয়া ঘুমিয়ে আছে।
সত্যি প্রিয়া একটা পরী। কিন্তু অনেক রাগী আর পাগলী।
মাহিম তার বিছানা গিয়ে শুয়ে পরে।
আমি প্রিয়াকে সত্যি অনেক ভালোবাসি এটা কি প্রিয়া বুঝে না নাকি বুঝতে চায় না এসব ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পরে মাহিম।
সকালে ঘুম থেকে উঠে প্রিয়া সবার জন্য নাস্তা বানিয়ে রেডি করে টেবিলে রাখলো এমন সময় কলিং বেল বেজে উঠল। এতো আবার কে আসলো ভাবতে ভাবতে প্রিয়া দরজা খুলে দেখে তুন্নি দারিয়ে আছে।
পর্ব-৩৭
———————————–
কেমন আছো প্রিয়া বলে তুন্নি ভিতরে এসে।
প্রিয়াঃ ভালো আছি তুন্নি আপু আপনি কেমন আছো।
তুন্নিঃ ভালো আছি। মাহিম কে দেখতে পাচ্ছি না,,, মাহিম কোথায়?
প্রিয়াঃ উপরে শুয়ে আছে। আচ্ছা তুন্নি আপু আপনাকে একটা কথা বলতে পারি,, যদি রাগ না করেন।
(ভয়ে ভয়ে কথাটি বললো প্রিয়া)
তুন্নিঃ রাগ করবো কেন,,, কি বলবে বলো।
প্রিয়াঃ আপনার সাথে তো মাহিম বাবুর বিয়ের কথা ছিলো। আপনারা তো একসাথে থাকেন না,, তার মানে আপনাদের বিয়ে হয়নি???
তুন্নিঃ মাহিম তোমাকে কিছু বলেনি!
প্রিয়াঃ না,,, মাহিম বাবুকে আমি কিছু জিজ্ঞেস করিনি।
আপনাকে তাই জিজ্ঞেস করলাম।
তুন্নিঃ মাহিম কাল রাতেও তোমাকে কিছু বলেনি প্রিয়া?
প্রিয়াঃ না আমাকে কিছু বলেনি। কেন কি বলবে তুন্নি আপু?
তুন্নিঃ মাহিম আর আমি বেষ্ট ফ্রেন্ড,,,, ছোট বেলায় থেকে একসাথে লেখাপড়া করেছি।
মাহিম যেদিন তোমাকে প্রথম দেখেছিলো সেদিন থেকেই শুধু তোমাকেই ভালোবাসে।
তোমাদের বাড়ি থেকে এসে মাহিম আমাকে ফোন করে তোমার কথা বললো। কফিশপে তুমি মাহিম কে অনেক কষ্ট দিয়েছো অপমান করেছো। সেদিনও মাহিম আমাকে ফোন দিয়ে সবকিছু বলো,,মাহিম সেদিন অনেক কষ্ট পেয়েছিলো।
ভাগ্যক্রমে তোমার বনের পরির্বতে তুমি মাহিমের বউ হয়ে এই বাড়িতে আসলে। মাহিম তার অপমানের প্রতিশোধ নেয়ার ও একটা রাস্তা পেয়ে গেলো। মাহিম চেয়েছিলো কিছু দিন তোমাকে কষ্ট দিয়ে বুঝাবে ভালোবাসার মানুষ কষ্ট দিলে কেমন লাগে।
কিন্তু তুমি মাহিমকে অনেক খারাপ মানুষ হিসাবে জানো,,,,, প্রতিনিয়ত অপমান, অবহেলা, কষ্ট দিয়েছো।
মাহিম তার এই কষ্টের প্রতিশোধ তোমার চোখের পানি দিয়ে নিবে বলেই তোমার সাথে এমন খারাপ আচরণ করতো।
তুমি শুধু মাহিমের রাগ অভিমান আর প্রতিশোধ টা দেখছো মাহিমের ভালোবাসা টা দেখোনি প্রিয়া।
মাহিম সত্যি তোমাকে অনেক ভালোবাসে তার নিজের জীবনের থেকেও বেশি। কিন্তু মুখ ফোটে কোন দিন বলতে পারেনি কারণ তোমার চোখে মাহিম চরিত্রহীন।
তুমি যখন কোন ভাবেই মাহিমের ভালোবাসা বুঝতে পারছো না৷ তখন মাহিম আর আমি আমাদের বিয়ের জন্য একটা মিথ্যে অভিনয় করবো প্লান করি। যাতে তুমি মাহিমকে বিয়ে করতে নিষেধ করো।তুমি মাহিমকে ভালোবাসো এইকথা শুনতে চেয়েছিলো মাহিম।
একটি মেয়ে সব কিছু মেনে নেয় কিন্তু তার স্বামীর ভাগ কাউকে দেয়না। তাই মাহিম আর আমার বিয়ের প্লান করা হয়।
কিন্তু তুমি তো আমাদের বিয়ের আগেই বাড়ি থেকে কাউকে কিছু না বলে চলে গেলে। তুমি চলে যাওয়া পর মাহিম তোমাকে পাগলের মতো খুঁজেছে কিন্তু তোমাকে কোথাও খুঁজে পায়নি। তার ৭ দিন পর তোমাকে সিহাবের সাথে রেস্টুরেন্টে দেখতে পেয়ে অনেক কষ্ট পায় আর রেগে যায় তাই সেদিন তোমার মামার বাড়িতে গিয়ে তোমাকে অনেক অপমান করে আসে।
মাহিম তোমাকে কষ্ট দিত ঠিকই কিন্তু মাহিমের মনের মাঝে শুধু তুমি আছো। তুমি সত্যি অনেক ভাগ্যবতী,,, যে তোমাকে সত্যিকারের ভালোবাসে এমন একটা মানুষ পেয়েছো । মাহিম মাঝে মাঝে আমাকে আর তোমার সিহাব ভাইকে জড়িয়ে তোমাকে কথা বলতো তার কারণ ছিলো তুমি রাগে গিয়ে বলো যে তুমি শুধু মাহিমকে ভালোবাসো আর কাউকে না। কিন্তু তুমি সেটা কোন দিন বুঝনি।
মাহিম তো কাল রাতে ওর ভালোবাসার কথা তোমাকে জানাবে বলেছিলো কিন্তু কেন বললো না! তুমি কি মাহিমের সাথে আবার ঝগড়া করছো প্রিয়া?
( প্রিয়া তুন্নির কথা গুলো শুনছে আর দু’চোখ দিয়ে পানি পরছে,,, মাহিম বাবু আমাকে এতো ভালোবাসে কিন্তু একবারও মুখ ফোটে বললো না। আমিও অনেক বোকা শুধু মাহিম বাবুর রাগ অভিমান দেখে গেলাম তার ভালোবাসা টা বুঝলাম না। আর যখন বুঝতে পারলাম আমার সময় শেষ হয়ে আসছে। আর কিছু হয়তো পৃথীবিতে বেঁচে আছি আমি।তাই আমার ভালোবাসা মাহিম বাবুর কাছে প্রকাশ করা যাবে না। আমি চাই না আমার জন্য মাহিম বাবুর জীবনটা নষ্ট হোক। মাহিম বাবু বিয়ে করে স্ত্রী নিয়ে সুখী হোক এটাই চাই আমি,,তার জন্য আমাকে তার থেকে দূরে সরে যেতে হবে।)
প্রিয়াঃ জানি না মাহিম বাবুর আমাকে কেন কিছু বলেনি তবে মাহিম বাবুকে আমি ভালোবাসি না।। আমি এই বাড়ির কাজের মেয়ে তাই কাজের মেয়ে হয়ে মালিকে কিভাবে ভালোবাসবো। এই কথা বলে প্রিয়া উপরে চলে যায়।
উপরে উঠে রুমে যাওয়ার সময় মাহিমের সাথে ধাক্কা খেয়ে প্রিয়া পরে যেতে লয় তখনি মাহিম প্রিয়ার কোমড়ে হাত দিয়ে ধরেফেলে। ঠিক মাহিমের সাথে প্রিয়ার প্রথম দেখার সেই ধাক্কা খাওয়ার মতো । তার কিছুখন দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে থাকে।।
নিচের থেকে তুন্নির ডাকে প্রিয়া আর মাহিম দুজনেই দুজনকে ছেড়ে দেয়। প্রিয়া মাহিমকে বলো তুন্নি আপু এসেছে। যান গিয়ে দেখা করুন আর নাস্তা করে নেন।
মাহিম নিচে আসলো তুন্নির সাথে কথা বলছে।
তুন্নিঃ মাহিমকে বললো কিরে তুই প্রিয়াকে কিছু বলিসনি কেন?
মাহিমঃ বলবো কি করে,, কালকে রাতে ফ্রেন্ডসরা যাওয়ার পর প্রিয়ার সাথে আবারও ঝগড়া লেগে যায়। আবার আমি ইচ্ছে করে ঝগড়া করিনি,,, প্রিয়া’ই ইচ্ছে করে করেছে ঝগড়া। তার আমি কিছু বলার আগে মা-বাবা আসে পরলো। আমি ফ্রেশ হতে বলে যাই,,, এসে দেখি প্রিয়া ঘুমিয়ে পরেছে,,,, তাই আর প্রিয়াকে কিছু বলা হয়নি।
তুন্নিঃ আমি তো সব প্রিয়াকে বলে দিয়েছি ।
মাহিমঃ সব বলে দিয়েছি মানে????
তুন্নিঃ সব বলে দিয়েছি মানে সব বলেছি। তুই আমার বেষ্ট ফ্রেন্ড। আমাদের বিয়ে একটা প্লান ছিলো। তুই প্রিয়াকে অনেক ভালোবাসিস।
মাহিমঃ প্রিয়া কি বললো তোর কথা শুনে।
তুন্নিঃ প্রিয়া তুকে ভালোবাসে না বললো,, তবে আমার মনে হয় প্রিতা তুকে অনেক বেশি ভালোবাসে,,আমি প্রিয়ার চোখ দেখে বুঝতে পারলাম।
মাহিমঃ দেখলি তো প্রিয়ার কথা রাগ আর অহংকার। আমাকে একটূও সয্য করতে পারে না। ভালোবাসে না ছাই,,, ভালোবাসে আমাকে এতো কষ্ট দিতে নাকি।।।
তুন্নি আর মাহিমের কথা হচ্ছিলো এমন সময় মাহিমের মোবাইলে একটা কল আসে। মাহিম মোবাইলটি হাতে নিয়ে দেখে নীল কল করেছে,,,,,,,,,,,,,,
পর্ব-৩৮ (শেষ পর্ব)
———————————–
তুন্নি আর মাহিমের কথা হচ্ছিলো এমন সময় মাহিমের মোবাইলে একটা কল আসে। মাহিম মোবাইলটি হাতে নিয়ে দেখে নীল কল করেছে,,,,,,,,,,,,,,
মাহিম কলটি রিসিভ করলো,,,
নীলঃ তোমার একমাত্র আদুরের বোন অর্পা আমার কাছে বন্ধি আছে। (আজ সকালে ফ্রেন্ড এর বাসার থেকে আসার সময় নীল অর্পাকে কিডন্যাপ করে) সেদিন তোমার পরিবারের সবাই মিলে আমাকে অনেক অপমান করেছিলে,,, আজ সেই অপমানের প্রতিশোধ আমি নিবো। তোমার পরিবার ও আমার জান প্রিয়াকে নিয়ে আমার বলা মতো ঠিকানায় এক ঘণ্টার মধ্যে না আসলে তোমার আদুরের বোনের লাশ পাবে,,,,, পুলিশ নিয়ে আসার কোন চিন্তা ভুলেও করোনা সালা বাবু?,, কথাটা যেনো মাথায় থাকে ১ঘন্টা সময় আছে তোমার হাতে।
তারপর মাহিন তার মা-বাবাকে সবটা খুলে বললো,,, মাহিমের মা কান্না করে দিলেন,,, আমার আদুরের মেয়েটা কে নীল কষ্ট দিচ্ছে। মাহিমের বাবা প্লিজ আমার মেয়েকে এনে দাও। প্রিয়া আর মাহিম তার পরিবার নিয়ে নীলের কাছে যাওয়ার জন্য গাড়িতে উঠে রওনা দিলে তখন প্রিয়া শিহাবকে কল করে পুলিশ নিয়ে নীলের বলা মতো ঠিকানায় আসতে বললো।
নীলের কাছে আসার পর দেখতে পেলো অর্পাকে একটি চেয়ারে বসিয়ে হা-পা বেধে রেখছে।
মাহিমের বাবা নীলকে বললো,,,
মাহিমের বাবাঃ আমি জানতাম তুমি অনেক খারাপ একটা মানুষ কিন্তু এতটা খারাপ সেটা জানতাম না। যে কিনা নিজের স্ত্রীকে বন্ধি করে রাখে।
নীলঃ কে আমার স্ত্রী ????,, আমি অর্পাকে শুধু বিয়ে করেছি আপনার সম্পত্তির জন্য,, অর্পাকে ভালোবেসে নয়। আর প্রিয়াকে দেখার পর আমি প্রিয়ার জন্য পাগল হয়ে গেসি। তুন্নির সাথে মাহিমের বিয়ে হয়ে গেলে আমি প্রিয়াকে বিয়ে করতাম কি সব শেষ করে দিলো মাহিম,, আমাকে অপমান করে বাড়ি থেকে বের করে দিলো।
নীল মাহিমের বাবাকে বললো তার সব সম্পত্তি নীলের নামে লিখে দিতে আর মাহিমকে বললো প্রিয়াকে নীলের হাতে তুলে দিতে আর ডিভোর্স এর কাগজে সই করতে।
মাহিম নীলের কথা শুনে রেগে গিয়ে বলে তুকে সেদিন বাড়ি থেকে বের না করে পুলিশ দিয়ে ধরিয়ে দেয়া উচিৎ ছিল শুধু তুই আমার বোনের স্বামী বলে এমনটা করিনি।
নীলের হাতে একটি পিস্তল নিয়ে মাহিমের বাবার কাছে গিয়ে সই করতে বলে,,, সই না করলে সবাইকে গুলি করে মেরে ফেলবো,,,
মাহিমের বাবা তার সব সম্পত্তি নীলের নামে লিখে দেয়।
নীল মাহিমের কাছে এসে ডিভোর্স এর কাগজে সই করতে বলে কিন্তু মাহিম সই করতে রাজি হয় না।
নীল মাহিমকে আঘাত করার জন্য হাত তুলতে নেয় তখন প্রিয়া নীলের হাত ধরে বলে ওনাকে মারবেন না প্লিজ। আপনি যা বলবেন তাই হবে।
প্রিয়ার মাথা ব্যাথা আবার উঠে যায়,,,, মাহিম নীলকে আঘাত করে নীলের হাত থেকে পিস্তলটি ফেলে দেয়।
তারপর তাদের মধ্যে হাতাহাতি-মারামারি হতে লাগে।
নীল পিস্তলটি হাতে নিয়ে মাহিমকে গুলি করে কিন্তু প্রিয়া এসে মাহিমের সানমে দারিয়ে পরে,,,, প্রিয়ার হাতে গুলি লাগে,,,, প্রিয়া অজ্ঞান হয়ে যায়,,, এমন সময় শিহাব পুলিশ নিয়ে হাজির হয়। পুলিশ নীলকে ধরে নিয়ে যায়,,,
মাহিম প্রিয়াকে হাসপাতালে নিয়ে যায়,,, ডাক্তার ডাক্তার বলে চিৎকার করে,,, ডাক্তার নার্স আসে,,প্রিয়াকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যায়।
ডাক্তার সাহেব আসে মাহিম বাবুকে বলবো
ডাক্তারঃ রোগী আপনার কি হয়???
মাহিমঃ রোগী আমার স্ত্রী,,,,
ডাক্তারঃ কি বলেন এসব,, এই রোগীকে তো আমি অনেক আগে থেকেই চিনি,, সে আপনার স্ত্রী কখনো বলেনি তো।
মাহিমঃ আপনি প্রিয়াকে কিরে চিনেন???
ডাক্তারঃ আপনার স্ত্রী প্রায় আমাদের হাসপাতালে আসতেন,,, তার মাথায় টিউমার হয়েছে তাই আসতেন ,,
কেন আপনি কিছু জানেন না মাহিম সাহেব? আমাদের হাতে বেশি সময় নেই খুবদ্রুত সম্ভব রোগীর অপারেশন করাতে হবে,,,তানা হলে রোগীকে বাঁচানো সম্ভব হবে না।
মাহিমঃ না আমি কিছুই জানি না,,প্রিয়া আমাকে কিছু বলেনি। ডাক্তার সাহেব আপনি এখনি অপারেশনের প্রস্তুতি নেন প্লিজ,, যেভাবেই হোক প্রিয়াকে সুস্থ করে তুলুন। ( প্রিয়া কাউকে কিছু না বলে ডাক্তারের কাছে আসতো আর আমি প্রিয়াকে কতই না বাজে কথা বলেছি শিহাব ভাইকে জড়িয়ে,,,, প্রিয়া বার বার বাড়ি ছেড়ে যাবার কথা বলতো,,, কোথায় যাবে সেটা বলতো না।।এবার বুঝেছি প্রিয়ার না বলা মনের কথা গুলো,, একটি বার আমাকে বলতে পারতে না তুমি অসুস্থ,, তাহলে তোমাকে আমি এতো কষ্ট দিতাম নাকি,,এসব মনে মনে ভাবেই চোখে পানি এসে পরলো মাহিমের)
মাহিম তার প্রিয়ায় মামাকে ফোন করে আসতে বলে।
মাহিম হাসপাতালে বসে বসে ভাবতে থাকে কতটা ভালোবাসলে প্রিয়া নিজের জীবনের কথা না ভেবে আমাকে বাঁচাতে নিজে গুলিবীব্ধ হলো। আমাকে প্রিয়া এতো ভালোবাসে কিন্তু একবারও মুখ ফোটে বললো না আর আমিও কি বোকা প্রিয়ার ভালোবাসা বুঝলাম না। রাগ আর অভিমান,, প্রতিশোধ,, কষ্ট দিয়েই গেলাম প্রিয়াকে। কতো না কষ্ট দিয়েছি প্রিয়াকে আর প্রিয়া শুধু আমার জন্য আমার ভালোবাসার জন্য সব কষ্ট মুখ বুঝে সহ্য করছে।
মাহিমের বাবা -মা মাহিমের পাশে এসে মাহিমকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন আর বলছে,,
মাহিমের বাবাঃ প্রিয়ার সাথে আমরা সত্যি অনেক অন্যায় করেছি,,, আমরা চাই তুমি প্রিয়াকে স্ত্রীর মর্যাদা দাও,,, যে মেয়ে নিজের জীবন দিয়ে তোমার জীবন বাঁচাতে পারে তার থেকে তোমাকে আর কেউ ভালোবাসতে পারে না,,,
মাহিমের বাবার কথা শুনে মাহিম খুশি হয়ে বাবা-মা কে জরিয়ে ধরলো।
দীর্ঘ ৩ঘন্টা অপারেশন করার পর ডাক্তার আসলেন এবং
মাহিম কে জানালেন অপারেশন successful,,, আর কোন ভয় নেই,, কিছুখনের মধ্যে প্রিয়ার জ্ঞান ফিরে আসবে তবে কিছু দিন প্রিয়াকে হাসপাতালে থাকতে হবে,,, ঠিক মতো take care ও ঔষধ খাওয়াতে হবে।
এইসব বলে ডাক্তার সাহেব চলে গেলেন। ডাক্তার সাহেবের কথা শুনে সবার মুখে একটু হাসি আসলেন প্রিয়া এখন বিপদ মুক্ত তাই।
মাহিম OT (অপারেশন থিয়েটার) এর দরজা দিয়ে দেখতে পেলো প্রিয়া শুয়ে আছে। প্রিয়ার মায়া মাখা মুখটা থেকে মাহিমেন চোখে পানি এসে পরে। এতো কষ্ট যন্তনা বুকে চেপে কিভাবে সবার ভালোর কথা চিন্তা করতো।
নিস্পাপ শিশু ও পরীর মতো দেখতে আমার প্রিয়া পাগলী বউটা ??????????????।
নার্স এসে মাহিম বাবুকে বললো কিছুখন পর ওনাকে ব্রেডে নিয়ে যাওয়া হবে তারপর ওনাকে দেখতে পারবেন ও জ্ঞান ফিরলে কথা বলতে পারেবন।
প্রিয়ার জ্ঞান ফিরার পর চোখে খুলে মাহিমের মুখটা সবার আগে দেখতে পায়। মাহিম তার পাশেই বসে আছেন।
মাহিমের মা-বাবা ও আছেন।
মাহিমের মা-বাবা প্রিয়ার কাছে ক্ষমা চায়,, আমাদের ভুলে হয়ে গেসে মা,, তোমাকে আমরা কোন দিন বুঝতে পারিনি। টাকার অহংকারে মানুষদের মানুষ মনে করতাম না। তাই তোমার মতো হীরের টুকরো মেয়েকে আমরা চিনতে পারিনি,,,
প্রিয়াঃ ছি ছি মা-বাবা কি বলেন এসব,, জন্মের পর মা-বাবা হারিছি,,, আমি আপনাদের মা-বাবা বলেই জানি। সন্তানের কাছে ক্ষমা চেয়ে আমাকে আর কষ্ট দিবেন না।
মাহিমের মাঃ আমরা তোমাকে আমাদের মাহিমের স্ত্রী হিসাবে মেনে নিতে চাই,,,, তুমি সব কিছু ভুলে আমাদের আপন করে নিবেনা মা??
প্রিয়াঃ আপনারাই তো আমার আপনজন মা। সত্যি আজ আমি অনেক খুশি আপনাদের পেয়ে। আমি আজ আর একা না আমার পাশে আমার পরিবার আছে যেই পরিবার আমি স্বপ্নে দেখতাম।
তারপর মাহিমের মা-বাবা বাহিরে চলে গেলো প্রিয়া আর মাহিমকে কথা বলার সুযোগ করে দিলো।
মাহিম প্রিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে কিছু বলছে না।
প্রিয়া ও কিছু বলছে না। প্রিয়া তার হাতের দিকে তাকিয়ে দেখে তার হাতটা মাহিমের হাতের মধ্যে।
মাহিমঃ আপনি যানেন আপনার এই হাতটি আমি এই ভাবে ধরে রাখতে চাই।
প্রিয়াঃ কেন আপনি আমার হাত ধরে রাখতে চান ??
মাহিমঃ আপনি আমার স্ত্রী তাই???
প্রিয়াঃ কবে থেকে আমি আপনার স্ত্রী ?
মাহিমঃ যেদিন আপনাকে প্রথম দেখেছি সেদিন থেকেই আপনাকে আমার স্ত্রী মনে করেছি☺
প্রিয়াঃ হইছে আর ডং করতে হবে না।।। অনেক কষ্ট দিয়েছেন আমাকে সব কিছু শোধ নিবো ?
মাহিমঃ তুমি মনে হয় আমাকে কষ্ট দাও নাই,,, আসছে আবার ভালো বউটা,, রাগী পাগলী বউটা ?। আগে আপনি থেকে তুমি বলো তারপর দেখা যাবে কে শোধ তুলে?।
প্রিয়াঃ এই তুমি আমাকে পাগলী বউ বললে কেন ?,,, তোমার কান টেনে ছিড়ে দিবো।
তাদের ঝগড়া দেখে নার্স এসে বলে এবার থামেন আপনারা,, অনেক হইছে আপনাদের ঝগড়া,,, আসলে আপনারা দুজনেই পাগল ?।
এই বলে নার্স চলে গেলো,,, যেই কয়দিন প্রিয়া হাসপাতালে ছিলো,,, মাহিম প্রিয়ার সাথে থেকে তার যত্ন সেবা করে,,, কিন্তু তাদের ঝগড়া বন্ধ হয়নি ।
আজ প্রিয়াকে মাহিমের স্ত্রী মর্যাদা দিয়ে তার বাসায় নিয়ে যাবে,,, যেটা প্রিয়ার স্বপ্ন ছিলো,,, প্রিয়াকে নিয়ে আসে,,,
প্রিয়ার ও মাহিমের জন্য সম্পুর্ণ বাড়ি সাজিয়ে আলোকিত করে,,, এবং প্রিয়া ও মাহিমের জীবন যেন এমন আলোকিত হয়,, কখনো তাদের জীবনের অন্ধকার না আসে সেই দোয়া করে তাদের ঘরে নিয়ে আসে।
প্রিয়া সবাই কে সালাম করে বুকে জরিয়ে নেয়।
প্রিয়ার মামা প্রিয়াকে মুখে হাসি দেখে খুশিতে কেঁদে দেয়,,,
মা-বাবা মরা মেয়েটা জীবনের এই বুঝি সুখ আসলো।
মাহিম ও প্রিয়ার হাসিতে যেনো পুরো বাড়ি হাসতেছে।
আজ প্রিয়া ও মাহিমের বাসর রাত,,,,,
প্রিয়া বউ সেজে খাটের নিচে বসে আছে,,, মাহিম ঘরে এসে দেখে প্রিয়া নিচে বসে আছে,,,,
মাহিমঃ কি ব্যাপার প্রিয়া তুমি নিচে কেন খাটে এসে বসো?,,,
প্রিয়াঃ না,, আমি খাটে যাবো না,,, আমার নিচে শুতেই ভালো লাগে,, আর আমার সাথে থাকতে হলে তোমাকে ও নিচে শুতে হবে ?।
মাহিমঃ তোমার সাথে আমি নিচে কেন রাস্তায়ও থাকতে পারবো ?,,৷ প্রিয়া আসো না খাটে প্লিজ তুমি নিচে শুলে আমার কষ্ট লাগে ?
প্রিয়াঃ তাই নাকি ?? তাহলে আমি যে এতোদিন নিচে শুয়েছিলাম কই আপনার তো কষ্ট হলো না।।।?
আজ থেকে আমি খাটে ঘুমাবো আর তুমি নিচে ঘুমাবে?
মাহিমঃ প্লিজ আমাকে কি ক্ষমা করা যায় না প্লিজ ?
প্রিয়াঃ ক্ষমা করা যায় কিন্তু ???
মাহিমঃ কিন্তু কি???
প্রিয়াঃ আপনাকে কান ধরে উঠবস করতে হবে ?
মাহিমঃ ওকে ঠিক আছে,,( ঘরেই তো আছি কেউ দেখবে না,,, আপনারা সবাই চোখ বন্ধ করেন প্লিজ)
এই বলে মাহিম যখন কান ধরতে নিয়েছে তখন প্রিয়া মাহিমের হাতটা টেনে ধরে ও জরিয়ে ধরে,,,
মাহিমঃ সারা জীবন আমাকে এইভাবে শক্ত করে জরিয়ে ধরেরেখো কখনো ছেড়ে দিও না,, আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচবো না,,, অনেক ভালোবাসি তোমাকে,,
….I Love you Priya….
প্রিয়াঃ I love you paglu jograti?…
তারপর মাহিম প্রিয়াকে কোলে করে বিছানায় নিয়ে আসে,,, প্রিয়াকে শুয়ে দেয়,,, প্রিয়ার কপালে চুমু খায়,,,,,
তারপর আবার কি হুম।।। সব কি বলতে হবে নাকি?,,,
মাহিম সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখে প্রিয়া রুমে নেই,,, নিচে চলে গেসে সবার জন্য নাস্তা বানাতে,,,, প্রিয়া এখন আর কাজের মেয়ে হয়ে নয় এই বাড়ির বউ হিসাবে তার দায়িত্ব পালন করছে,,, যেটা বাংলাদেশের প্রতিটা স্ত্রী পরিবারকে ভালোবেসে করে থাকে।
————————-সমাপ্ত ———————–