লেখকঃ Daily Passenger
১৬
“তুমি কি রঞ্জনবাবুর গ্লাসে বিষ দিয়েছিলে?” আমি হেসে বললাম “এই প্রশ্নের উত্তর আমি দেব না।” অফিসার আবার আমাকে জিজ্ঞেস করলেন “আবারও জিজ্ঞেস করছি গ্লাসে কি তুমি বিষ মিশিয়েছিলে?” আমি আবার একই জবাব দিলাম। উনি একটা হুম্ম মতন শব্দ করে বললেন “সবার সামনে আপনার এই স্টেটমেন্ট রেকর্ড করা হল। আপনার আইনি অধিকার আছে আমাদের কোনও প্রশ্নের উত্তর না দেওয়ার। আপনি যখন আপনার উকিলের সাথে কথা না বলে আমাদের প্রশ্নের উত্তর দেবেন না, তখন আপনাকে আমি অনুরোধ করব, এক্ষুনি আপনার উকিলকে কল করে এখানে আসতে বলুন। উনি যতক্ষণ না এখানে আসছেন ততক্ষণ আপনাকে এখানে বসে থাকতে হবে।”
আমি মোবাইলে বের করার কোনও তাগিদ অনুভব করলাম না। জিজ্ঞেস করলাম “স্যার একটু জল পাওয়া যাবে? খাব।” একজন এসে আমার হাতে একটা জলের গ্লাস ধরিয়ে দিল। ইসস কি তেতো জল। লোকে খায় কি করে! দোলনের মুখের উপর একবার চোখ বুলিয়ে নিলাম। কেঁদে কেঁদে মুখ ফুলে গেছে। দাঁত দিয়ে নিজের ঠোঁট কামড়ে ধরে মাটির দিকে তাকিয়ে আছে। রাকার চোখে এক রাশ বিস্ময়। বেলা মুখার্জির মুখের মেক আপ উঠে গেছে। মহিলা সুন্দরী তাতে সন্দেহ নেই। মুখের চামড়ায় এক ফোঁটা ভাঁজ পরে নি কোথাও।
আমি অফিসারকে বললাম “একটা কাগজ আর পেন পাওয়া যাবে?” ভদ্রলোক একটা প্যাডের কাগজ এগিয়ে দিলেন আমার দিকে। ওনার সামনে টেবিলের ওপর অনেকগুলো পেন সারিবদ্ধ ভাবে দাঁড় করিয়ে রাখা আছে। হাত দিয়ে সেই দিকে ইশারায় দেখিয়ে দিলেন। আমি চেয়ার থেকে উঠে ওরই মধ্যে থেকে একটা পেন উঠিয়ে নিলাম। অফিসারের ঠোঁটের কোনায় হাসি । উনি কি ভাবছেন যে আমি বসে বসে আমার জবানবন্দি লিপিব্দধ করছি? পাগল না ছাগল। অফিসার বললেন “যা লেখার ডিটেইলে লিখবে।” আমি একটু হেসে আবার কাগজের দিকে মননিবেশ করলাম। প্রায় দশ মিনিট হয়ে গেছে, এখনও আমি খসখস করেই চলেছি কাগজের ওপর। অফিসার আর ধৈর্য রাখতে পারলেন না। উঠে পড়লেন টেবিলের ওপাশ থেকে। আমার পিছনে এসে দাঁড়িয়ে ঝুঁকে পড়লেন কাগজের ওপর।
“হোয়াট? তুমি বসে বসে মিসেস বেলা মুখার্জির ছবি আঁকছ?” বললাম “আর পাঁচ মিনিট। হয়ে এসেছে প্রায়।” ভদ্রলোক কি বলবেন ভেবে পেলেন না। আড়চোখে গোটা ঘরের ওপর চোখ বুলিয়ে নিয়ে বুঝতে পারলাম যে সবাই আমার দিকে বিস্ময়ের সাথে তাকিয়ে আছে। উনি আবার ফিরে গেলেন নিজের সিটে। এবার ওনার গলার স্বরে এক রাশ বিরক্তি। “আপনি আপনার উকিলকে ফোন করুণ। এখানে সবার সময়ের অনেক দাম আছে। আগে আপনার উকিল আসুক, তারপর আপনার ব্যাপারে একটা হিল্লে হোক, তারপর আপনি জেলে বসে বসে যত খুশি যার খুশি ছবি আঁকতে পারবেন।” আমার ছবি আঁকা শেষ হয়েছে। পেনটা উঠে আবার যথাস্থানে রেখে দিলাম। কাগজটা দোলনের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললাম “এটা তোমার মায়ের জন্য।” কয়েক সেকন্ড সব চুপ।
তারপর ধীরে ধীরে ও আমার হাত থেকে কাগজটা নিয়ে নিল। কাগজটা কয়েক মুহূর্তের ভেতর চলে গেল মিসেস মুখার্জির হাতে। এইবার আমি অফিসারের দিকে তাকিয়ে বললাম “ আমি বলেছি আপনার প্রশ্নের জবাব আমি দেব না। একবারও বলিনি যে উকিলি পরামর্শ না নিয়ে জবাব দেব না। বলেছি একেবারেই দেব না।” অফিসার যেন আমার দিকে তেড়ে আসতে যাচ্ছিলেন, কিন্তু তার আগেই আমি ধীর গলায় বললাম “ জবাব দেব না কারণ জবাব দেওয়ার কোনও প্রয়োজন হবে না। বাই দা ওয়ে, আপনাদের সব রিপোর্ট এসে গেছে?” উনি বললেন “ না। কিছুক্ষনের মধ্যেই চলে আসবে বলে এক্সপেক্ট করছি।” আমি ঘাড় ঝাঁকিয়ে বললাম “তাহলে আর কি? অপেক্ষা করুণ। রিপোর্ট আসার পরও যদি আপনার বা আপনাদের আমার ওপর কোনও সন্দেহ থাকে তবে আমি নিশ্চয় জবাব দেব। তবে আবারও বলছি, জবাব দিচ্ছি না কারণ জবাব দেওয়ার কোনও প্রয়োজন হবে না।”
আমি উঠে পড়লাম। “কাইন্ডলি কাউকে আমার সাথে বাইরে আসতে বলবেন? সিগারেট খাব। আপনারা হয়ত ভাববেন যে এই সুযোগে আমি পালিয়ে যাব। তাই কাউকে সঙ্গে দিলে খুব ভালো হয়।” উনি বললেন “ক্যাম্পাসের বাইরে যাবে না। আর পালিয়ে যাবেই বা কোথায়?” আমি বেরিয়ে এসে একটা সিগারেট ধরালাম। ক্ষিদেও পেয়েছে বেশ। কিন্তু এই থানার ক্যাম্পাসের ভেতর কোনও খাওয়ার দোকান নেই। ভেতরে ঢুকে দেখলাম অফিসার ফোনে কথা বলছেন। আর খস খস করে কিসব লিখে চলেছেন। প্রায় পাঁচ মিনিট কথা বলার পর ফোন রেখে বললেন “সংকেত, (আপনি থেকে তুমি তে নেমে গেছেন এই পাঁচ মিনিটে) তোমাকে এতক্ষন বসিয়ে রাখার জন্য আমি দুঃখিত। রিপোর্ট এসে গেছে।”
তারপর সবার দিকে তাকিয়ে বললেন “
১। গ্লাসের জলে কোনও রকম বিষ পাওয়া যায় নি। পিওর এইচ টু ও। গ্লাসের জল খেয়ে ওনার মৃত্যু হয়নি সেই ব্যাপারে আমাদের ফরেনসিক বিভাগ নিঃসন্দেহ।
২। গ্লাসের গায়ে শুধু ওই হাসপাতালের কর্মচারী আর রঞ্জনবাবুর হাতের আঙুলের ছাপ পাওয়া গেছে। জলের ট্রে তে অবশ্য আরেকজন অজানা তৃতীয় ব্যক্তির আঙুলের ছাপ পাওয়া গেছে। (বলাই বাহুল্য আমার আঙুলের ছাপ পাওয়া গেছে)
৩। পিস্তলে দীপক ছাড়া আর কারোর আঙুলের ছাপ পাওয়া যায় নি।
৪। পিস্তলটা বাজারে পিস্তল। চোরাবাজারিদের কাছ থেকে কেনা। কারও নামে রেজিস্টার্ড নয়।
৫। গাড়ির যে স্ক্রুগুলো লুস করে রাখা হয়েছিল তাতে আর গাড়ির চাকায় দীপকের আঙুলের ছাপ পাওয়া গেছে। এমনকি গাড়ির ভেতরের কিছু পার্টসেও অপ্রত্যাশিত ভাবে দীপকের আঙুলের ছাপ পাওয়া গেছে।
৬। কোলাঘাটের কাছ থেকে যে সিসিটিভি ফুটেজ পাওয়া গেছে সেইগুলো পরীক্ষা করে দেখা হয়ে গেছে। শান্তনুদের গাড়ি ওই চেক পোস্ট ক্রস করার ত্রিশ মিনিট আগে থেকে ত্রিশ মিনিট পর অব্দি গুনে গুনে ঠিক ছটা গাড়ি চেকপোস্ট ক্রস করেছে। প্রত্যেকটা গাড়ির নাম্বার নোট করে নেওয়া হয়েছে। পাঁচটা গাড়ির মালিকের সাথে ইতি মধ্যে কথাও বলা হয়েছে। কিন্তু একটা কালো রঙের স্যান্ট্রোর মালিকের সাথে এখনও কন্ট্যাক্ট করা যায়নি। কারণ গাড়ির নাম্বারটা জালি। (দীপক বলেছিল দুর্ঘটনার পর একটা কালো রঙের গাড়ি কিছু দূরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছিল।)
৭। আকস্মিক জোরে ব্রেক দেওয়ার ফলে চাকা স্থানচ্যুত হয়ে যায়, যার ফলে এই দুর্ঘটনা হয়।
আপাতত এই অব্দি জানা গেছে। বডি পরীক্ষাও হয়ে গেছে। রিপোর্ট এই এলো বলে। “
উনি থামলেন। রাদার থামতে বাধ্য হলেন, কারণ তখনই একজন লোক হন্তদন্ত হয়ে ভেতরে ঢুকে পরে ছেন। অফিসারের কানে গিয়ে কি সব ফিসফিস করে বলে ওনার হাতে একটা কাগজের খাম ধরিয়ে দিয়ে বেরিয়ে গেলেন। অফিসার খাম খুলে এক তাড়া কাগজ বের করে মন দিয়ে অনেকক্ষণ ধরে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে সেই কাগজের লেখা গুলো পড়লেন। পাতা উলটিয়ে উলটিয়ে পড়লেন। ওনার মুখ দেখে বুঝতে পারলাম যে উনি যারপরনাই বিস্মিত হয়েছেন। কাগজের তাড়াটা টেবিলের ওপর নামিয়ে রেখে চেয়ারে হেলান দিয়ে উপরে সিলিঙের দিকে তাকিয়ে প্রায় মিনিট খানেক চুপ করে বসে কি যেন ভাবলেন। তারপর সামনের দিকে ঝুঁকে পরে বললেন “ পোস্টমর্টেম রিপোর্ট চলে এসেছে।”
আবার চুপ করে বসে থাকলেন কিছুক্ষণ। বুঝতে পারছি উনি কোনও একটা ব্যাপার ঠিক বুঝে উঠতে পারছেন না, বা ভাবনার তল পাচ্ছেন না। আবার শুরু করলেন। “ বিষের জন্যই ওনার মৃত্যু হয়েছে। একটা বিশেস ধরণের বিষ প্রয়োগ করা হয়েছে। কোলকাতায় সচরাচর এই বিষ পাওয়া যায় না। বিষের ক্রিয়া হতে সময় লাগে ঠিক কুড়ি মিনিট। মিস্টার মুখার্জির বডিতে অ্যালকোহল থাকায় বিষের ক্রিয়া কিছু আগেই শুরু হয়ে যায়। সেপসিস হয়ে গেছিল। আর, হার্ট বন্ধ হয়ে গেছিল। কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়ে মারা গেছেন মিস্টার মুখার্জি। সব থেকে আশ্চর্য হল কিভাবে বিষটা ওনার শরীরে ঢোকানো হয়েছে। “ একটু থেমে আবার উনি বলতে শুরু করলেন “মিস্টার মুখার্জির কোমরের ঠিক নিচে একটা মাইক্রো নিডল, কেউ ওনার শরীরের ভেতর ঢুকিয়ে দিয়েছিল। সেই নিডলের গায়েই মাখানো ছিল বিষ। আর তাতেই মৃত্যু। নিডলটা ওনার শরীরের একদম গভীরে গেঁথে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু… প্রশ্ন হল মিস্টার মুখার্জি যেখানে বসেছিলেন সেখানটা পুরোটা দেখা যাচ্ছে সিসিটিভি ফুটেজে। ওনার বডি গার্ড ছাড়া আর কেউ সেই সময় ওনাকে ছোঁয়নি। তাহলে কিভাবে সেই মাইক্র নিডলটা ওনার শরীরের ভেতরে প্রবেশ করল?”
আমরা সবাই চুপ করে বসে আছি। উনি যেন সম্বিত ফিরে পেয়ে বললেন “ বাকি দের পোস্টমর্টেম রিপোর্টও এসে গেছে। তেমন উল্লেখযোগ্য কিছু নেই সেগুলোতে। আপনারা এখন যেতে পারেন। বডি রিলিস করে দেওয়া হয়েছে। ওনার বডি ওনার বাড়ির দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। শান্তনু মুখার্জির বডিও নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।”
আমরা উঠে পড়লাম। অফিসার থানার বাইরে অব্দি এলেন বেলা মুখার্জিকে ছেড়ে দিতে। দোলন আর বেলা মুখার্জি গাড়িতে উঠে চলে গেলেন। আমার সাথে দোলনের আর চোখা চুখি হয়নি এর মধ্যে। সত্যি আশ্চর্য মৃত্যু। অগত্যা সামনের একটা দোকানে গিয়ে দাঁড়িয়ে একটা এগ রোল অর্ডার করলাম। দেখলাম থানার সেই অফিসার পায়ে পায়ে আমার দিকে এগিয়ে এসেছেন। বললাম “স্যার সকাল থেকে কিছু খাওয়া হয়নি। আর চারপাশে যা চলছে। আপনি খাবেন?” উনি বললেন “শুধু চা।” আমিও ওনার সাথে এক কাপ চা নিলাম। কারোর মুখে কোনও কথা নেই। আমি নিরবতা ভেঙ্গে বললাম “স্যার ব্যাপারটা কিন্তু ধীরে ধীরে বেশ জটিল হয়ে উঠেছে।” উনি হেসে বললেন “এতেই ঘাবড়ে গেছ? এর থেকে ঢের জটিল রহস্য আমাদের শলভ করতে হয়। চিন্তা করো না। এই রহস্যের সমাধানও হয়ে যাবে। তবে দীপক যে এই ব্যাপারের মধ্যে আছে সেটা মোটামুটি ক্লিয়ার। কিন্তু …” উনি চুপ করে গেলেন। আমি আর কথা বাড়ালাম না। আমার ইচ্ছে হচ্ছিল জিজ্ঞেস করি যে ছেলেটাকে আটক করে রেখেছেন তার সাথে কি করবেন, কিন্তু অজথা কথা বলার সময় এটা নয়। সময় খুব দ্রুত বেরিয়ে যাচ্ছে হাতের বাইরে
ট্যাক্সিতে উঠেই কল করলাম সঞ্চিতা ম্যাডাম কে। “এখন চলে আসব ম্যাডাম? একটু দেরী হয়ে গেছে বলে সরি।” উনি বললেন “চলে এসো। সমস্যা নেই।”
কলিং বেল বাজার একটু পরে ম্যাডাম এসে দরজা খুলে দিলেন। উনি কিছু বলার আগেই আমি বললাম “থানা থেকে আসছি। অনেক হুজ্জুতি গেছে।” ভেতরে ঢুকলাম। ম্যাডাম কে আজ আরও অন্য রকম লাগছে। একটা ঢিলে সালোয়ার আর হাতকাটা একটা কামিজ পরেছেন। ওড়না দিয়ে অবশ্য বুক আর হাতের ওপরের দিকের অনাবৃত অংশগুলো ঢাকা। সদর দরজায় ভেতর থেকে ছিটকিনি তোলার সময় ওড়নাটা কাঁধের ওপর থেকে সরে যাওয়াতেই বুঝতে পারলাম যে উনি হাতকাটা কামিজ পরেছেন, নইলে এমনিতে বোঝার কোনও উপায় নেই। হাতের উপরের দিকটা যেন আরও বেশী ফরসা।
আমাকে বসতে বলে খাবার জল নিয়ে এলেন। এক ঢোকে জল খেয়ে থানায় কি কি হয়েছে সব কথা বললাম। গতকালের পার্টির ব্যাপারটাও গোপন করলাম না। ম্যাডাম পাখা ছেড়ে দিয়েছেন। ওনার চোখগুলো একটু ফোলা ফোলা, মনে হয় এক্ষুনি ঘুম থেকে উঠে এসেছেন। উনি সোফায় বসে বললেন “সংকেত, তুমি বাইরের ছেলে। তোমাকে একটা সাজেশন দিচ্ছি। মানা না মানা তোমার ব্যাপার। তোমাদের বয়সে সবাই জীবন ভোগ করতে চায়। কিন্তু এই সব ছেলে মেয়েদের সাথে তোমার মতন ছেলের বেশী না মেশাই ভালো। এদের সাথে মিশে তোমার কোনও লাভ হবে না, বরং এইসব হাবি যাবি ঝামেলায় জড়িয়ে পড়তে হবে বারবার। “
আমি বললাম “সেটা ম্যাম হাড়ে হাড়ে বুঝে গেছি। আমাদের ফ্যামিলিতে কেউ আজ অব্দি থানার পথ মাড়ায়নি। শেষ অব্দি কিনা আমাকে থানায় ডেকে নিয়ে গিয়ে বসিয়ে রাখা হয়েছে।” ম্যাডাম শান্ত ভাবে হেসে বললেন “যাক সে সব কথা। তবে মনে হয় এখন আর তোমাকে কেউ জ্বালাবে না। যা হওয়ার আপাতত হয়ে গেছে। এইবার কাজের কথায় আসা যাক।” আমার কান খাড়া। “তুমি কি এখন অব্দি কোনও মেসের বন্দবস্ত করতে পেরেছ?” আমি বললাম “কখন আর সময় পেলাম ম্যাম। দুই দিন ধরে যা চলছে। কেন যে মরতে কাল ওদের দলে গিয়ে ভিড়েছিলাম…”
ম্যাডাম বললেন “ আমার এক মাসতুতো বোন আছে। আর তার দুজন বন্ধুও আছে। জয়েন্টে বসবে সামনের বছর। মাসে ৬০০ টাকা করে দিতে রাজি হয়েছে প্রত্যেকে। অঙ্ক পড়াতে হবে। সপ্তাহে দুই দিন টাইম দিতে হবে কারণ তিনজনেই অঙ্কে কাঁচা। মাসে ১৮০০ টাকা কিন্তু কম নয়। পারবে পড়াতে?” আমি যেন নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছি না। এটা হিসাবের বাইরে ছিল। ম্যাডাম বললেন “ এইবার তুমি আমায় বল যে সপ্তাহে দু-দিন পড়ানোর জন্য কত নিতে চাও?” আমি বললাম “না না, আপনার কথাই ফাইনাল। টিউশনি পেলে তো ভালোই হয়। তবে কোথায় পড়াতে হবে?” ম্যাডাম বললেন “শোনো সংকেত কোলকাতায় টিকতে হলে একটু দরদাম করা শেখ। এটা তোমাদের গ্রাম নয়। এখানে সবাই তোমাকে ঠকাতে চাইবে। “ একটু থেমে বললেন “ কথা হয়েছে ৭০০ টাকায় সপ্তাহে দুই দিন। আর পড়াবে এই বাড়িতে বসে। এই যেখানে বসে আছ সেখানে বসে।”
আমি বললাম “ফ্যান্টাস্টিক।” আমি উঠতে যাচ্ছিলাম ম্যাডাম আবার আমাকে বসতে ইশারা করলেন। বসে পড়লাম। “ তোমার এখন খাওয়া দাওয়া নিয়ে কত পড়ছে?” বললাম “৭৫০০ এরও বেশী।” ম্যাডাম বললেন “ তুমি ৪৫০০ অব্দি উঠবে বলেছিলে, তাই না?” আমি মাথা নেড়ে সম্মতি জানালাম। ম্যাডাম বললেন “ দেখো এখন তোমার তিনটে টিউশনিও আছে। এখন কি তুমি ৫০০০ অব্দি উঠতে পারবে? লাঞ্চ, ডিনার, ব্রেকফাস্ট, থাকা সব মিলিয়ে? ভেবে দেখে বল।”
এতে ভাবার কিছুই নেই। বললাম “হ্যাঁ, আমার তো লাভই হয়। তবে হাইজিনিক হতে হবে জায়গাটা।” ম্যাডাম বললেন “নেশা করো?” এই প্রশ্নের কোনও উত্তর হয় না। কে জানে হাসপাতালের বাইরে কে কে আমাকে সিগারেট খেতে দেখেছে। আর কাল যে পার্টিতে গিয়ে মদ খেয়েছি সেটা কি আর ওনার অজানা। হাসপাতালে ঢুকতে না ঢুকতেই বোধহয় সেই খবর ওনার কানে পৌঁছে গেছে। আমি চুপ করে বসে রইলাম।
উনি বললেন “তুমি বলছ থাকা খাওয়ার টানাটানি অথচ পার্টি করে বেড়াচ্ছ বন্ধু দের সাথে?” এই প্রশ্নের উত্তর আমার ঠোঁটের ডগায় ছিল। বললাম “ ম্যাম, একজন পার্টি দেবে বলেছিল তাই গেছিলাম। বলেছিল যে আমাকে ধর্মশালা অব্দি ড্রপ করে দেবে। নইলে কি যেতাম? তবে হ্যাঁ, মিথ্যে বলব না সিগারেট খাই। পয়সা জমিয়ে কিনতে হয়।” উনি বললেন “ অত ডিটেলে বলতে হবে না। ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ছেলেদের কি কি গুন বদগুণ থাকে সব আমার জানা। সিগারেট খেলে ঘরের জানলা খুলে খাবে। আর মদ খেয়ে এসে মাতলামি করা আমি টলারেট করব না একেবারে।” আমি একটা ঢোক গিলে বললাম “ আমি সিগারেট খাই বটে, কিন্তু আপনার বাড়িতে পড়ানোর সময় আমি সিগারেট খাব না। আর মদ…” কি যে বলব বুঝে উঠতে পারছি না ঠিক। ম্যাডাম বললেন “ এসো। “ উনি সিঁড়ি ভেঙ্গে উপরে উঠতে শুরু করলেন, পেছনে আমি, নাহ ম্যাডামের পাছার আকারটা মন্দ নয়। একবার খামচে ধরতে পারলে…
উপরে উঠেই দেখলাম যে তিনটে বড় বড় ঘর। তিনটেরই দরজা খোলা। সিঁড়ির ঠিক মুখেই যে ঘরটা আছে সেটাকে দেখেই বোঝা যায় যে সেটা কারোর কাজের ঘর। দেওয়াল আলমারিতে অনেক আইনি বই রাখা আছে। ঘরের মাঝে কাজের টেবিল। তার এক পাশে একটা বড় চেয়ার। আর টেবিলের উল্টো দিকে সারি বদ্ধ ভাবে তিনটে চেয়ার রাখা আছে। টেবিলে কালো রঙের একটা বড় টেলিফোন। এই জাতীয় টেলিফোন আজকাল খুব একটা দেখা যায় না। অনেক বড় বড় ভারী ভারী ফাইল স্তূপ করে রাখা আছে টেবিলের ওপর। টেবিলের এক কোণে একটা পেপার ওয়েটের পাশে একটা বড় ছাইদানি সাজিয়ে রাখা আছে। ঘরের পেছন দিকে দুটো জানলা, দুটোই খোলা। দেওয়ালের ওপর একটা এসি বসানো আছে। কাজের ঘরের দুপাশে দুটো বেডরুম। দুটোর সাথেই লাগোয়া বাথরুম। একটা দেখে বুঝতে পারলাম যে এতে ম্যাডামরা থাকেন। বিছানার চাদরটা দেখে স্পষ্ট বুঝতে পারছি যে কেউ কিছুক্ষণ আগে এই বিছানায় শুয়ে ছিল। চাদরের ওপর মানুষের শরীরের অবয়ব আঁকা হয়ে আছে।
অন্য ঘরটা দেখিয়ে উনি আমায় জিজ্ঞেস করলেন “এতে থাকতে পারবে? “ ঘরে এসি নেই। কোনও বাহুল্যও নেই। কিন্তু ঘরটা একজনের জন্য যথেষ্ট। আর ভীষণ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। লাগোয়া বাথরুম থাকাটা একটা অ্যাডেড সুবিধা তো বটেই। বই রাখার জায়গা আছে, টেবিল আছে, মানে এক কথায় একজন ছাত্রের জন্য যা যা দরকার সব আছে। অপ্রয়োজনীয় জিনিস পত্র যেমন, টিভি, মিউজিক সিস্টেম, কিছুই নেই। ম্যাম বললেন “এটা আমাদের গেস্ট রুম। কেউ বেড়াতে এলে এখানে থাকে। বছর খানেক ধরে খালিই পরে আছে। তুমি থাকতে চাইলে থাকতে পারো। “ আমার চোখ মুখের চেহারা দেখে উনি নিশ্চয় এতক্ষনে এটা বুঝে গেছেন যে আমার ঘরটা পছন্দ হয়েছে। আমি বললাম “ঘরটা তো ভালো, কিন্তু আপনার কোনও গেস্ট এসে হাজির হলে তখন কি হবে?” ম্যাডাম নিচে নেমে গেলেন, পেছনে আমি। আবার নিচে এসে বসলাম আমরা দুজনে।
উনি বলে চললেন “ দেখো এত দিন ধরে ঘরটা খালি পরে আছে, একদিনের জন্য কেউ এলো না। সেই ঘর থেকে যদি কিছু আয় হয় তো খারাপ কি। এখনও আমাদের কিছু লোণ আছে বাড়িটার জন্য। অবশ্য আমি ঠিক শুধু টাকার জন্য তোমাকে এখানে থাকতে বলছি না। “ আমার কান আবার খাড়া, একটু থেমে শুরু করলেন, “ সিকিউরিটিও একটা ফ্যাক্টর। আসলে আমার হাজবেন্ডকে কাজের জন্য মাঝে মাঝেই বাইরে যেতে হয়। তখন আমি একা হয়ে যাই। চারপাশে বাড়ি অনেক ছাড়া ছাড়া। কোনও বিপদ আপদ হলে চট করে কাউকে পাওয়া যাবে না। সেদিন রাতের দিকে বোধহয় চোর এসেছিল বাড়িতে। বাড়িতে ঢুকতে পারেনি। বাইরের গেট রাতে বন্ধ থাকে। সেটা টপকে ঢুকেছিল। একজন মেয়ে একলা বাড়িতে থাকলে চোরের যে সুবিধা সেটা তো বুঝতেই পারছ। কপাল ভালো যে আমি তখনও জেগেই ছিলাম। ঝপ মতন একটা শব্দ পেয়ে বাইরে বেরিয়ে আমি গ্রিলের ভেতর থেকে আওয়াজ দিই আর তাতেই চোর পালিয়ে যায়। ব্যাপারটা আমি হাজবেন্ডকে বলেছি। আর তোমার কথাও বলেছি। ও রাজি হয়েছে। হাজবেন্ড এখানে থাকলে আমার কোনও চিন্তা থাকত না। যাই হোক সিকিউরিটিটা আমার স্বার্থ। আর দ্বিতীয়ত আরেকটা সমস্যায় পরে ছি এই দুই দিন যাবত। তোমার সে কথা শুনে কাজ নেই। কিন্তু সেটার কারনেও আমি চাই যে বাড়িতে কেউ থাকুক রাতে। আর খুব তাড়াতাড়ি ব্যাপারটা করতে চাই আমি। আমি দুপুরে বাড়ি এসে লাঞ্চ সেরে যাই। তুমিও চলে আসবে। তবে হ্যাঁ কলেজ যাবে আসবে নিজে নিজে। খাওয়া দাওয়া ভীষণ ভালো পাবে এমন বলতে পারছি না। তবে ডাল ভাত পেয়ে যাবে। আর হাইজিনিক খাবার পাবে। আমরা যা খাই তাই পাবে। তাতে তোমার পোষালে বলে ফেল। কোনও জোরাজুরি নেই। “
আমি বললাম “ কবে আমি শিফট করতে পারব? আর কত অ্যাডভান্স লাগবে?” ম্যাম হেসে ফেললেন “ আগাম কিছু দিতে হবে না। শুধু ভাড়া আর খাবারের খরচাটা দিলেই চলবে। সমস্যা হলে সেটাও খেপে খেপে দিতে পারো। “ আমি বললাম “সেটা দিতে পারব।” উনি মাথা নেড়ে বললেন “বেশ ভালো কথা। কালই চলে এসো তাহলে। কাল তো কলেজ ছুটি, জানো নিশ্চয় ।” আমি একটু অন্যমনস্ক হয়ে পরে ছিলাম, কালই? মাথা নেড়ে বললাম “হ্যাঁ। জানি। তবে ম্যাম কাল আসতে পারব না। দুই তিন দিন পরে চলে আসব। আরও দুই তিন দিনের টাকা দেওয়া আছে ওখানে। ফেরত করবে না। দেখি কথা বলে, যদি ফেরত দেয় তো কালই চলে আসছি। নইলে তিন দিন পরে চলে আসছি।” ম্যাডাম বললেন “একটা জিনিস তোমার জেনে রাখা ভালো। আমার হাজবেন্ড কিন্তু খুব কড়া মেজাজের লোক। তাই ওনার সামনে একটু সামলে চলবে। টিউশানি শুরু করো সামনের সপ্তাহ থেকে। “ ঠিক এই সময় ওনার কথা থেমে গেল। ওনার মোবাইলে একটা মেসেজ ঢুকেছে। উনি মোবাইলটা তুলে নিয়ে একবার তাতে চোখ বুলিয়ে নিলেন। স্পষ্ট বুঝতে পারলাম যে ওনার মুখের রঙ উড়ে গেছে। উনি বললেন “এক্সকিউজ মি। তুমি এইবার এসো। পরে কথা হবে।”
আমি উঠে পড়লাম। দেখলাম উনি তড়িঘড়ি করে উঠে গিয়ে একতলার খোলা জানলাগুলো বন্ধ করে দিচ্ছেন। আমি অবাক হয়ে ওনার দিকে তাকিয়ে আছি দেখে উনি বললেন “সন্ধ্যায় এখানে খুব মশা হয়। আগে ভাগে বন্ধ করে দিতে হবে। “ উনি কথা বলছেন ঠিকই , কিন্তু ওনার মন পরে আছে মোবাইলের স্ক্রিনের ওপর। একটাই তো মেসেজ ঢুকেছে, সেটা বার বার এত মন দিয়ে পড়ার কি আছে? আর কেনই বা মেসেজ আসার সাথে সাথে উনি এরকম ব্যস্ত আর অন্যমনস্ক হয়ে পড়লেন?
আমি বেরিয়ে পড়লাম। যাক শস্তায় খাওয়া দাওয়ার একটা বন্দবস্ত করা গেল। এই হোটেলে রোজ কাবাব খেয়ে খেয়ে পেটে চড়া পরে গেছে। তবে মনটা খুঁত খুঁত করছে মালিনীর জন্য। তবে প্রেম করতে হলে যে হোটেলেই থাকতে হবে সেটাই বা কোথাকার নিয়ম। তাছাড়া এখন আমার হাতে দোলন আছে। দোলন কে পেলে মালিনীর কথা যে মন থেকে মুছে যাবে সেটা কি আর বুঝিয়ে বলার কোনও প্রয়োজন আছে! তাছাড়া একবার গিয়ে শিখার সাথেও দেখা করতে হবে। মাগীটা বুঝে গেছে যে আমি ওকে সেদিন ভোগ করে এসেছি। হাসপাতালে আজ ওকে সামলে রাখতে পেরেছি বটে, কিন্তু বেশী দিন সামলে রাখতে পারব বলে মনে হয় না। একবার গিয়ে ওই মাগীর সাথেও দেখা করতে হবে। শিখা যদি আমাকে আবার ওর শরীরটা ভোগ করার সুযোগ দেয় তাহলে তো কথাই নেই, মালিনীকে ছেড়ে থাকতে আমার এক ফোঁটা কষ্ট হবে না। প্রেম টেম সব ফালতু, যে মাগী আমার সামনে পা ফাঁক করে শোবে, আমি তাকেই ভালবাসব, মানে তার সামনেই ভালোবাসার ভান করব।
হোটেলে ঢুকে কাউন্টারে মালিনীকে দেখতে পেলাম না। ওকে একটা এস এম এস পাঠালাম “একটু জরুরি দরকার আছে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমার ঘরে এসো। চিন্তা করো না, বেশীক্ষণ আটকাবো না।” উত্তর এলো, “আসছি। পাঁচ মিনিট।” মালিনীকে দেখে আজ একটু অন্য রকম লাগলো। বুঝলাম বেচারির ডিউটি ফাইনালি শেষ হয়েছে। একটা অফ হোয়াইট রঙের শাড়ি আর ম্যাচিং ছোট হাতা ব্লাউজ। আমার দেওয়া কানের দুলগুলো কিন্তু এখনও কান থেকে খোলা হয়নি। আমি ওকে বললাম “ শোন বাইরে একটা শস্তায় থাকার জায়গা পেয়ে গেছি। “ ওর মুখটা ক্ষণিকের মধ্যে ফ্যাকাশে হয়ে গেল। বলল “তুমি চলে যাবে?” বললাম “হোটেল থেকে। তোমার জীবন থেকে না। আর এরপর থেকে আমরা বাইরে দেখা করব।” বুঝলাম তাতেও বেচারি শান্তনা পেল না। বললাম “দেখো এখানে থাকলে সবার নজর এড়িয়ে তোমাকে আমার কাছে আসতে হয়। বাইরে থাকলে আমরা যেখানে খুশি দেখা করতে পারি। “
ও কিছুক্ষণ কি যেন ভাবল, তারপর দেখলাম ওর মুখের সাবলীল ভাবটা ধীরে ধীরে ফিরে এসেছে। “যাক আমার সোনার মুখে হাসি ফুটেছে এতক্ষনে। “ ও বলল “যাওয়ার আগে একটা জিনিস বলবে?” বললাম “কি?” ও বলল “গতকাল তুমি আমাদের সিকিউরিটিকে ধরে পেটালে কেন? আর তোমার গায়ের জোড় তো কম নয় সোনা? ওকে একা সামলালে কি করে?” আমি একটা সিগারেট ধরিয়ে দুটো রিং ছেড়ে বললাম “তুমি কি তোমার ম্যানেজমেন্টের হয়ে আমার সাথে কথা বলতে এসেছ?” বলল “না। কিন্তু আমি মানে আমরা জানি যে তুমিই এই কীর্তিটা করেছ। “ আমি বললাম “তাহলে ফুটেজ দেখিয়ে আমাকে পুলিশের হাতে তুলে দিচ্ছ না কেন? (একটু থেমে আরও কয়েকটা ধোয়ার রিং ছেড়ে একটু নরম হয়ে বললাম) এইটা যদি তোমাদের ম্যানেজমেন্ট প্রশ্ন করত তাহলে অন্য জবাব দিতাম, বা হয়ত কোনও জবাব দিতামই না। কিন্তু এটা করছে আমার সেক্সি মালিনী, তাই সত্যি কথাই বলব। হ্যাঁ আমিই পিটিয়েছি লোকটাকে। তোমার ম্যানেজমেন্ট যদি আমাকে দোষ দেয় তো আমি বলব তার ঠিক আগে তোমাদের সেই ভি আই পি আমাকে ফিসিকালি অ্যাঁবিউস করেছে। এই কথাটাও কিন্তু সত্যি। সুতরাং খেসারত দিলে দুজনকেই দিতে হবে। “
মালিনী বলল “যতদূর শুনেছি, ওরা তোমাকে ওদের সাথে লিফটে উঠতে দেয়নি।” আমি বললাম “ঠিক শুনেছেন ম্যাডাম। তবে তাতে আমার রাগ হত ঠিকই কিন্তু এতটা রাগ হত না। রাগের কারণ হল ওরা আমাকে ধাক্কা দিয়ে লিফটের সামনে থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে। একজন গেস্ট আরেকজন গেস্টের সাথে এরকম ব্যবহার করে কি করে? আর তোমরা সিসিটিভিতে সব কিছু দেখে চুপ করেই বা থাক কি করে? এসব ভেবেই আমার মাথা গরম হয়ে গিয়েছিল। যাই হোক। সে কথা যাক। তোমার বর কোথায় উঠেছে?” মালিনী বলল “ ও আছে। ওপরের একটা ঘরে। একটা সিঙ্গেল বেডরুম দিয়েছে এইবার। যেই ম্যানেজারের ঘরে আমরা থাকতাম, এই ভি আই পির চক্করে সে তো আর ছুটি পায়নি এইবার। তাই সমস্যা।” আমি বললাম “বাই দা ওয়ে, এই ভি আই পি ভদ্রলোক কি করেন?” মালিনী বলল “সঠিক বলতে পারব না। তবে যতদূর বুঝেছি, ডিফেন্সের কোনও একজন হোমরা চোমরা অফিসার। তবে আর্মি নয়। অন্য কিছু দেখা শুনা করেন।” আমি হেসে বললাম “সেটা আমিও জানি যে উনি আর্মির লোক নন। এত আনফিট বেঁটে মোটা লোক আর্মিতে থাকে না। আর তাছাড়া আর্মির লোক হলে গতকাল আমি…ওদের সেন্স অনেক ভয়ানক হয় বুঝলে! যাক সে কথা। “ উঠে গিয়ে আমি আলমারি খুলে একটা মদের বোতল বের করে ওর হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললাম “এটা নিয়ে যাও তোমার বরের জন্য।”
মালিনীর মুখে আবার ভয়ের ছায়া নেমে এলো। বলল “তুমি যে বললে আজ তেমন কিছু করার প্ল্যান নেই?” বললাম “বলেছিলাম। এখন প্ল্যান চেঞ্জ করেছি। যা করার আজই করব। কিন্তু সোনা তুমি যে বলেছিলে আমার সব কথা শুনবে। সে কথা কি ভুলে গেলে নাকি?” মালিনী ঠিক বুঝতে পারছে না যে এই সময় তার কি করা উচিৎ। আমি একটা প্লাস্টিকের প্যাকেটে মদের বোতলটা পুড়ে দিয়ে বললাম “এটা নিয়ে যাও। বল যে হোটেলের তরফ থেকে পেয়েছ তোমার বরের জন্য। মানে ম্যানেজ করে পেয়েছ। বুঝতে পারলে? ও খাওয়া শুরু করুক। আমি এখন একটু বেরবো। ফিরব আটটার পরে। কত নম্বর ঘরে আছে তোমার বর?” ও আমতা আমতা ভাবে বলল “৪০২”।
বললাম “ তখন এস এম এস করে কথা বলে ওখানে যাব খন। কিন্তু তখন তোমার আবার ডিউটি থাকবে না তো?” আমি জানি এখন আর ওর ডিউটি নেই। অন্য দুজন কাউন্টারে দাঁড়িয়ে আছে। তবুও জিজ্ঞেস করে নেওয়া ভালো। ও মাথা নাড়িয়ে না বুঝিয়ে ধীরে ধীরে বেরিয়ে গেল। বেরনোর আগে আমি বললাম “আজ তোমার বরের সামনে তোমাকে আমি বিয়ে করে আদর করব। ওকে ভালো করে মদ গিলতে দাও।” ও যে ভীষণ ভয় পেয়েছে সেটা ওর হাঁটা চলা থেকে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। ওর পিছন পিছন আমিও বেরিয়ে পড়লাম।
ফিরতে ফিরতে হয়ে গেল ৯টা। দোলনের বাড়ি গেছিলাম। ওর সাথে যদিও তেমন ভাবে কোনও কথা হয়নি। কেমন জানি আনমনা হয়ে ম্যাদা মেরে বসে আছে। আমাকে কেমন জানি দেখেও দেখল না। রাকাও এসেছে দেখলাম ওদের বাড়িতে। রাত্রে নাকি রাকা ওখানেই থাকবে দোলনের সাথে। আরও অনেকে ছিল যাদের সম্বন্ধে বলা না বলা সমান, অন্তত লেখার এই জায়গায়। বেলা মুখার্জিরও দেখা পেয়েছি, উনিও খুব একটা কথা বলছেন না। একটা বড় টেবিলের ওপর শান্তনু আর রঞ্জন বাবুর বড় বড় দুটো ছবি মালা দিয়ে রাখা আছে। বেরিয়ে আসার সময়ও দেখলাম যে দোলন বা রাকা কেউ এগিয়ে এল না ভদ্রতা দেখিয়ে আমাকে সি অফ করতে। অবশ্য যার বাড়িতে এরকম দুর্ঘটনা ঘটে যায় এত কম সময়ের মধ্যে তাদের মনের মধ্যে যে কি ঝড় চলে সেটা আমার অজানা নয়। সেখান থেকে একটা অন্য কাজে গেছিলাম। এই সব মেটাতে মেটাতে ৯টা বেজে গেছে। আটটার দিকে মালিনীর একটা এস এম এস এসেছিল , “তুমি কি সত্যি এরকম করবে আজ?” আমি লিখে পাঠালাম “ ভয় নেই। তোমার কোনও বিপদ আমি ডাকব না।”
আর কোনও মেসেজ আদান প্রদান হয়নি আমাদের মধ্যে। ঘরে গিয়ে একটু ফ্রেশ হয়ে ঠিক ৯টা বেজে ১০ মিনিটে গিয়ে হাজির হলাম ৪০২ নম্বর রুমের সামনে। করিডরে দেখে নিলাম কেউ নেই। সমস্যা হল, কেউ না থাকলেও, সিসিটিভি ক্যামেরা আছে। যাই হোক। দরজা খুলল মালিনী। সেই অফ হোয়াইট রঙের শাড়ি আর একই ব্লাউজ পরে আছে। চোখে মুখে ভয়ের ছাপ। আমি মালিনী কে ধাক্কা দিয়ে দরজার মুখ থেকে সরিয়ে দিয়ে ভেতরে ঢুকে গেলাম। “কোথায় রনি দা?” ভেতর থেকে একটা আওয়াজ এল “কে?” টিভি চলছে। কিছু একটা হিন্দি গান চলছে। গানটা বন্ধ করে দিলাম। একটা সেন্টার টেবিলের পেছনে একটা চেয়ারে বসে আছেন আমাদের রনিদা। চোখ নেশায় ঘোলাটে হয়ে গেছে। বোতলটা অর্ধেক খালি হয়ে গেছে। দুটো ট্রেতে বাদাম আর ডালমুট রাখা আছে।
আমি মালিনীর দিকে ফিরে বললাম “এ কিন্তু তোমার ভারী অন্যায় হয়েছে। এত করে বললাম আমার জন্য ওয়েট করতে। আর এই দিকে দাদা শুরু করে দিয়েছে?” ওর বর আমার কোনও কথার মানেই বুঝতে পারছে না। আমার বগল দাবা করে ধরে রাখা আছে দুটো বড় বড় কাগজের প্যাকেট। তার একটার ভেতর ভরে ভরে রাখা আছে , কাবাব, স্ন্যাক্স, আরও কত কিছু। কাগজের প্যাকেটটা খুলে সেটার ভেতর থেকে তিনটে কাগজের প্লেট বের করে টেবিলে রেখে তার ওপর খাদ্য সামগ্রী সাজিয়ে রাখলাম। রনি নিজের ভাগ্য বিশ্বাস করতে পারছে না। বলল “এত সব খাবার?” কথা জড়িয়ে যাচ্ছে। বললাম “ চুরি করলাম আজ তোমার জন্য। আর তুমি আমাকে ছেড়ে খেতে শুরু করে দিয়েছ? কেন মালিনী দি তোমাকে কিছু বলেনি? “
মালিনীর দিকে কপট রাগ দেখিয়ে বলে চললাম “ মালিনী দি আর আমি এক সাথে এখানে ১ বছর ধরে চাকরি করছি। তোমার কথা কত শুনেছি দিদির কাছ থেকে। কিন্তু কখনও আলাপ করার সৌভাগ্য হয়নি। আজ আমার জন্মদিন, তাই আমি ঠিক করেছিলাম যে তোমার সাথে বসে একটু আড্ডা মারব। “ ও জড়ানো গলায় বলল “মেনি মেনি হ্যাপি…(বাকি কথাটা জড়িয়ে গেল) কিন্তু এত খরচ করতে গেলে কেন?” আমি বললাম “খরচা করিনি তো। হোটেলের ভেতর থেকে মাল সাঁটিয়ে দিয়েছি।” ও নির্লজ্জের মতন বিশ্রী হেহে শব্দ করে হেসে উঠে একটা কাবাব তুলে নিল প্লেট থেকে। আমি বলে চললাম “আজ তোমার সাথে বসার আরেকটা কারণও আছে। সেটাই আসল। “ মালিনী যেন পাথর হয়ে গেছে। আমি বললাম “ আমি বিয়ে করব। “ রনি চেয়ার থেকে কোনও মতে উঠে আমাকে জড়িয়ে ধরল। “কনগ্র্যাটস ভাই।” আমি বললাম “সেইজন্যই আমি বলেছিলাম যে হোটেলের ভেতর থেকে কিছু খাবার দাবার ম্যানেজ করছি। রনিদাও এখানে আছে। ওর সাথে বসে সারা রাত আড্ডা মারা যাবে। আর এখানে এসে দেখি রনিদা সব শেষ করে দিয়েছে। এর জন্য কিন্তু দিদি তোমাকে শাস্তি পেতে হবে।”
রনি হেসে জড়ানো গলায় বলে উঠল “ ঠিক ঠিক। শাস্তি পেতে হবে। যা বলা হবে সব শুনতে হবে। “ ওর কোনও খেয়াল নেই যে নিজের বউকে একটা অন্য ছেলের সামনে কি বলছে। আমি বললাম “হুম। এইবার দাদা বলে দিয়েছে। আর কোনও সমস্যা নেই।” আরেকটা প্যাকেট খুলে সেটার ভেতর থেকে আমি আরেকটা হুইস্কির বোতল বার করে টেবিলে রাখলাম। তারপর প্যাকেটে হাত ঢুকিয়ে একটা ফ্লেভারড ভদকার বোতল বের করে টেবিলে রাখলাম। রনি বোতল দুটো দেখে বলল “বাব্বা, এতগুলো ঝেড়ে দিয়েছ হোটেলের ভেতর থেকে?” আমি হেসে বললাম “ও আমার অভ্যেস আছে। সেটিং করা আছে। ওই নিয়ে ভেব না।” ও বলল “কিন্তু এতগুলো খাবে কে?” আমি চোখ মেরে জিজ্ঞেস করলাম “কেন তোমার কি দম ফুরিয়ে গেছে নাকি?” ও তাচ্ছিল্যের সাথে তুরি মেরে বলল “রনি এত সহজে আউট হয় না। সারা রাত ধরে তোমার সাথে বসে মাল গিলতে পারি। “ আমি হেসে বললাম “তাই তো আরেকটা বোতল নিয়ে এসেছি। রাতের দিকে বোতল শেষ হয়ে গেলে, তখন মাল আসবে কোথা থেকে? আর এই ভদকাটা এনেছি দিদির জন্য।”
মালিনী এইবার এগিয়ে এলো “ না না। আমি এইসব খাব না। “ আমি রনির দিকে তাকিয়ে বললাম “ শাস্তি নিতে চাইছে না দাদা। এইবার তুমিই কিছু বল।” ও ভুরু কুঁচকে চেচিয়ে উঠল “ চুপ। যা বলছে তাই করো। ভদকা দিচ্ছে, বিষ নয়। সামান্য ম্যানারিজম জানো না? “ দুটো গ্লাসও যে আমি আমার ঘর থেকে নিয়ে এসেছি সেটা বলাই বাহুল্য। আমি চোখ কড়কে মালিনীর দিকে তাকাতেই মালিনী বলল “খাব, কিন্তু অল্প।” আমি বিছানায় বসে পরে ছি। দুটো গ্লাসে ড্রিঙ্কস ঢেলে জল মিশিয়ে দিলাম। আবার গ্লাসে গ্লাসে ঠোকা হল। রনির হাত কাঁপছে। চোখ ঢুলু ঢুলু। ওর সেন্স যে আর বেশীক্ষণ নেই সেটা বলে দিতে হয় না। মালিনী একচুমুক দিয়েই বলল “বাপরে কি মিষ্টি।” আমি বললাম “বাজে গন্ধ তো নেই? তাহলে এত নাটক করছ কেন? বসে পড়।” ওর বর আমার সাথে তাল মিলিয়ে বলল “নাটক করছ কেন, বসে পড়।”
ওর বরের গ্লাস শেষ হয়ে গেছিল, আমি সাথে সাথে তাতে একটা কড়া পেগ বানিয়ে দিলাম। এই পেগ শেষ হতে হতে রনি দা অক্কা পাবেই পাবে। গ্লাসে প্রথম চুমুক দিতেই একটা হিচকি উঠল ওর। মালিনী ধীরে ধীরে খেয়ে চলেছে। ওর হাতে এখন আর অন্য কোনও রাস্তা নেই। ও বিছানায় আমার পাশেই বসেছে। আমি এরই মধ্যে জোড় করে ওর কোমরটা জড়িয়ে ধরে ওকে নিজের দিকে সরিয়ে এনেছি। ওর পেটে মদ ঢুকছে বটে, কিন্তু উশখুশ ভাবটা এখনও যায়নি ওর ভেতর থেকে। আমার ডান হাতটা এখন ওকে জড়িয়ে ধরে রেখেছে সাপের মতন। ওর কোলের ওপর ফেলে রাখা আছে আমার হাতের মুঠোটা। রনিদা বলাই বাহুল্য এসব কিছু লক্ষ্য করার অবস্থায় আর নেই। ওর ঘাড়টা নিচের দিকে ঝুলে রয়েছে। তবে জ্ঞান আছে এখনও। তবে কি বলছে কি করছে সেই খেয়াল নেই। বললাম “রনি দা আমি দিদির সাথে একটা সেলফি তুলি?” রনিদা মাথা তুলে একবার আমাদের দুজনের দিকে তাকিয়ে দেখল। কি দেখল সেটা ওই জানে। বলল “সেলফি? তুলবে? তুলে ফেলো।”
আমি টেবিলের ওপরে রাখা মালিনীর মোবাইলটা এক ঝটকায় উঠিয়ে নিলাম। ক্যামেরা অন করেই মালিনীকে ডান হাত দিয়ে আরও ভালো করে জড়িয়ে ধরলাম আমার সাথে। রনিদা যদি হুঁশে থাকত তাহলে দেখতে পেত যে আমার ডান হাতটা ওর বিয়ে করার বউয়ের শরীরটাকে সাপের মতন জড়িয়ে ধরেছে। ওর বউয়ের বাম স্তনটাকে শাড়ির ওপর দিয়ে ওরই সামনে পিষে ধরেছে আমার ডান হাতের আঙুলগুলো। আমার ঠোঁটটা লেগে আছে ওর ঘামে ভেজা গালের সাথে। রনি কে জিজ্ঞেস করলাম “কেমন লাগছে?” ও মাথা না তুলেই জবাব দিল “ভালো । ভীষণ ভালো। খুব ভালো…” রনির সামনেই ওর বউকে জড়িয়ে ধরে স্তনের ওপর হাত রেখে গালে চুমু খেতে খেতে দুই-তিনটে সেলফি উঠিয়ে নিলাম। একটা ছবিতে ওর মুখটা আমার দিকে ঘুরিয়ে নিজের ঠোঁট চেপে ধরেছিলাম ওর ঠোঁটের ওপর। হয় মদের নেশার জন্য, বা হতে পারে ওর বরের অবস্থা দেখে মালিনীও ধীরে ধীরে সাবলীল হতে শুরু করে দিয়েছে। ঠোঁটে ঠোঁট চেপে ধরার সময় ওর দিক থেকে খুব একটা প্রতিরোধ অনুভব করলাম না। সত্যি কথা বলতে কি, ছবি তোলা হয়ে যাওয়ার পরও বেশ কয়েক সেকন্ড আমাদের ঠোঁট একে ওপরের সাথে এক হয়েছিল। আমাদের গ্লাস খালি হয়ে এসেছে দেখে আবার রিফিল করলাম। এইবার আর মালিনী মানা করল না। নেশা আস্তে আস্তে ওকে গ্রাস করছে।