লেখকঃ Daily Passenger
২
অ্যালার্ম বেজে উঠতেই মাটি থেকে উঠে দাঁড়িয়ে পড়লাম। লোকের ভিড় আরও বেড়েছে। আমি যেদিকে আছি সেদিকে লোকের ভিড় বেশ কম। কেউ কেউ আমার দিকে তাকাতে তাকাতে যাচ্ছে। এই সব জায়গায় আলাপ থাকুক বা নাই থাকুক সবার মুখ চেনা হয়ে যায় ধীরে ধীরে। বোধহয় একটা নতুন মুখ দেখে, আর মাটির ওপর বসে ধ্যান করতে দেখে সবাই একটু বিস্মিত হয়েছে। হাতে সময় খুব কম। অ্যালার্মটা রিসেট করে দৌড় শুরু করলাম। না এইবার অভদ্রের মতন পাঁচিল টপকে বেরতে হল না। একটা ছোট গেট আছে, সেটা খুঁজে পেয়ে সেটা দিয়েই বেড়িয়ে গেলাম। এবার রাস্তার অন্য দিকের দোকানগুলো দেখতে দেখতে ফিরতে হবে। একটা বড় মদের দোকানও চোখে পড়ল। যদিও সেটা এখন বন্ধ। হোটেলের সামনে যখন পৌঁছেছি তখন ঘড়িতে বাজে ৭ টা ১০। একটু দেরী হয়েছে। গেট দিয়ে ঢোকার সময় সিকিউরিটির মুখোমুখি হলাম। আমাকে এত সকালে এইভাবে ঘামে চুপসে যাওয়া অবস্থায় দেখে ও যারপরনাই আশ্চর্য হয়েছে। একটা স্যালুট ঠুকে আমতা আমতা করে জিজ্ঞেস করল “এত সকালে কোথা থেকে, মানে…” আমি ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে বললাম “এইতো…” এই এইতো কথাটার ভেতর দিয়ে যে কি বোঝাতে চাইলাম সেটা আমি নিজেই জানি না। ও কি বুঝল সেটা নিয়েও আমার কোনও মাথা ব্যথা নেই। বিল্ডিঙে ঢুকেই রিসেপশনের ওপর একবার চোখ বুলিয়ে নিলাম। দেখলাম মালিনী দাঁড়িয়ে আছে। ওর সাথে চোখা চুখি হল, কিন্তু আমি পাত্তা না দিয়ে লিফটে ওপরে উঠে গেলাম। ওর চোখের দৃষ্টিতে যে কিছু না বলা কথা ছিল সেটা বুঝতে পারছিলাম। কিন্তু এখন দিনের শুরুতে মাগিবাজি করার সময় নেই। ঘরে ঢুকেই ব্রেকফাস্টের অর্ডার দিয়ে দিলাম। সাথে দু পেয়ালা চা। কলেজে পৌঁছেছি প্রায় সকলের আগে। দেখলাম আমার আগে একটা মাত্র মেয়ে এসে পৌঁছেছে। এর নাম তমালী। সেই গতকালই লাসট ক্লাসে জানতে পেরেছি। মেয়েটা ছাপোষা সালোয়ার কামিজ পরে এসেছে। বেশভুসা দেখে বোঝা যায় মধ্য বিত্ত বাড়ির মেয়ে। চোখে একটা সন্ত্রস্ত ভাব স্পষ্ট। গায়ের রঙ সামান্য চাপা। মালিনীর গায়ের রঙ এর থেকে আরেকটু চাপা। মুখটা সাদা মোটা। সাজলে কেমন লাগবে বলা শক্ত, কিন্তু এই অবস্থায় দেখলে আকর্ষণ বিকর্ষণ কোণটাই অনুভব করার মতন মুখ নয়। মানে না মিষ্টি, না সুন্দরী না কুৎসিত।
কিছুক্ষণ দুজন নিরবে বসে আছি। আমার মধ্যে কোনও অস্বস্তি নেই। আমি বসেছি গতকালের জায়গায়, মেয়েটার থেকে দুটো রো পিছনে। মেয়েটা বোধহয় একটু অস্বস্তিতেই পড়েছে এইভাবে চুপ চাপ বসে থাকার দরুন। আমাকে জিজ্ঞেস করল “আচ্ছা তুই হোস্টেল পেয়েছিস?” আমি বললাম “না। “ বলল “কোথায় আছিস তাহলে?” বললাম “এই পাশে একটা ধর্মশালায়।” বলল “ওখানে তো বেশী দিন থাকতে পারবি না। কোথায় যাবার প্ল্যান করছিস?” বললাম “জানি না। “ বলল “কিছু খুঁজছিস না?” বললাম “ খুঁজব।” আমি ঠিক এই মতনই কথা বলি। মানে যেটুকু প্রশ্ন ঠিক সেটুকু উত্তর ছাড়া একটাও অবান্তর কথা নয়। তবে প্রয়োজন হলে অনেক বকবক করতে হয় বই কি, যেমন কাল রাত্রে মালিনীর সামনে করতে হয়েছে দায়ে পড়ে। মেয়েটা বলল “আমি উত্তরপাড়া থেকে যাতায়াত করছি। মেয়েদের হোস্টেল ভর্তি বলে জায়গা পাইনি। আসলে অ্যাঁপ্লাই করতে দেরী হয়ে গেছিল।” আমি শুধু হুম মতন একটা শব্দ করে অভদ্রতা এড়ালাম। ও বলে চলল “এখানে কোথাও একটা পেয়িং গেস্ট, বা মেস বা ওই মতন কিছু একটা খুঁজতে হবে। নইলে সারাদিন যাতায়াত করেই কেটে যাবে। পড়াশুনা করার কোনও সময়ই পাব না। “ এটা কোনও প্রশ্ন নয়, তাই এর কোনও উত্তর দেওয়ার মানে নেই। একে পটাতে চাইলে তাও হয়ত কিছু খেজুর করতাম, কিন্তু এখন মাথায় অন্য চিন্তা ঘুরছে। ও বলল “তুই কোথাও মেয়েদের থাকার সস্তা জায়গার খোঁজ পেলে আমাকে একটু জানাবি প্লীজ?” বললাম “হ্যাঁ।” মেয়েটা বোধহয় এতক্ষনে বুঝতে পেরেছে যে আমি ওর সাথে কথা বলতে খুব একটা উৎসাহী নই। তাই আর কথা না বাড়িয়ে সামনের দিকে ফিরে বসল। আবার ক্লাসের মধ্যে নিরবতা ফিরে এল। ধীরে ধীরে ছাত্র ছাত্রীদের সমাবেশ শুরু হয়েছে। আমি শুধু নিরবে বসে সবাইকে লক্ষ্য করে চলেছি। প্রায় কারোর মুখেই কোনও কথা নেই। কুন্তল আজও আমার পাশে বসেছে। আমার মতন এই ক্লাসে ওরও কোনও বন্ধু নেই। আমাদের মধ্যে ফিসফিস করে দু একটা ছোট খাটো কথা হল। কিন্তু বেশী কথা বলার সময় পেলাম না কারণ স্যার চলে এসেছে। টিফিনের আগে চারটে ক্লাস ঝড়ের মতন হয়ে গেল। সত্যি বলতে কি ভীষণ বোর ফিল করছিলাম। জানা জিনিস আরেকবার নতুন করে শোনার মধ্যে কোনও আকর্ষণ আমি অনুভব করি না। এখানে এমনটাই হবে সেটা আগে থেকেই অবশ্য জানা ছিল আমার। কিছু করার নেই। বাবা পয়সা খরচ করে পাঠিয়েছে ডিগ্রি নেওয়ার জন্য। আর ডিগ্রি ছাড়া জানা না-জানা সবই সমান। ডিগ্রি ছাড়া জ্ঞানের কোনও দাম নেই। সুতরাং ক্লাসে বসে এই ভাঁটগুলো শুনতে হবে আর হজম করতে হবে। টিফিন টাইম আসতেই বুঝতে পারলাম ক্লাসের মধ্যে একটা শ্মশানের নিরবতা নেমে এল। একটা সন্ত্রস্ত ভাব মোটামুটি সবাই কে গ্রাস করেছে পাঁচ ছয় জন ছাড়া। তারা কে কে সেটা এই ফাঁকে বলে রাখা ভালো।
১। আমি। আমার সম্পর্কে আর নতুন করে কি বলব!
২। সুনীল। এর কথাও আগেই বলা আছে।
৩। রাকা সান্যাল। বাবা অবিনাশ বাবু বিশাল বড় উকিল। এনার নাম এখানে কারোর অজানা নয়। পেপারে প্রায়ই এনার নাম বেরোয়। বড় বড় খুন, জোচ্চুরি, ফ্রড, জমি আর সম্পত্তির লিগাল ডিলের কেস ছাড়া ইনি লড়েন না। আর সেই সব কেস লড়ে বিস্তর টাকা করেছেন। সরকারের হয়েও প্রচুর মামলা লড়েছেন ইনি। কানাঘুষা শোনা যায় যে সরকারের উপর মহলের সাথে নাকি এর খুব বেশী রকম দহরম মহরম আছে। আর খুব শিগগিরি নাকি ওকে পার্টির টিকিতে ভোটে দাঁড় করানো হবে। আর সেই জন্য মাঝে মাঝেই ওনাকে দিল্লি মুম্বাই যেখানে সেখানে ঘুরে বেড়াতে হচ্ছে। মা-সুধা সান্যাল। একটা বড় পত্রিকার পেজ-থ্রি খবর গুলোর এডিটর। এই নিয়েও একটা কানাঘুষা আছে। ওনার নাকি কোনও যোগ্যতা নেই এই এডিটর পোস্টে চাকরি করার। উনি নাকি অফিসেও খুব একটা যান না। এই পার্টি সেই পার্টি, কিটি পার্টি করে বেশীর ভাগ সময় অতিবাহিত করেন। একটা বড়লোকি মার্কা লেডিস সার্কেলে ওনার খুব নাম ডাক আছে। স্বামীর দৌলতে উপর মহলে অনেক চেনা শুনা আছে। আর যেই পত্রিকার অফিসে ইনি চাকরি করেন বা করার ভান করে লাখ লাখ টাকা বাড়ি নিয়ে যান মাসের শেষে সেটা নাকি এমন একজনের যার ছেলের হয়ে খুনের মামলা লড়ে জিতে গিয়েছিলেন ওনার স্বামী। সেই লোকের সুপারিশেই উনি চাকরিটা পেয়েছেন। কিন্তু উনি তো চাকরি করবেন না। মানে ওনার দ্বারা বোধহয় কিছু হবে না। সারাদিন পার্টি আর মদ নিয়ে মেতে থাকা মহিলাদের দিয়ে প্ত্রিকা চালানো সম্ভব নয়। তাই ওনাকে পত্রিকার সব থেকে অপ্রয়োজনীয় সেকশনের (যে খবর পড়া না পড়া সমান) মাথায় বসিয়ে দেওয়া হয়েছে এডিটর বানিয়ে। অবিনাশবাবুর চেষ্টায় সাধের নীলমণি ছেলেটাকে খুনের মামলা থেকে বাঁচিয়ে ফিরিয়ে আনতে পেরে তার ওপর কৃতজ্ঞতা বশে তার স্ত্রীকে এই চাকরিটা উপহার দিতে বাধ্য হয়েছেন এই পত্রিকার মালিক। অবশ্য এছাড়া অন্য রাজনৈতিক কারণও থাকতে পারে। সেটা বাইরে থেকে বোঝা সম্ভব নয়। তবে আগের ব্যাপারগুলো নিয়ে অনেক পেপারে লেখা হয়েছে তাই সেগুলো এখানে ছেপে দিলাম। রাকার ব্যাপারে বলতে গেলে বলতে হয় যে মুখটা বেশ মিষ্টি। উচ্চতা খুব বেশী হলে পাঁচ তিন হবে। ফিগারটা ছিপছিপে কিন্তু বেশ লোভনীয়। জামা কাপড় বেশ দামী আর স্টাইলিশ। একটু চাপা পোশাক পরে। সেই জন্যই কি না জানি না, কিন্তু গতকালও একটা জিনিস লক্ষ্য করেছিলাম আর আজও লক্ষ্য করলাম, বুকের ওপর দুটো গোল ক্যাম্বিশ বল যেন উচিয়ে কাপড় ফুঁড়ে বেড়িয়ে আসতে চাইছে। আর সামান্য নড়াচড়া করলেই বল দুটো অসম্ভব রকম উপর নিচ লাফাতে থাকে। সচরাচর পুশ আপ ব্রা পরলে এমন নড়াচড়া আর উচিয়ে থাকা ভাব দেখা যায়। হাবে ভাবে কথা বার্তায় একটা বেপরোয়া ধরাকে সরা মনে করা উগ্র ভাব। পা দুটো যেন অহংকারে মাটিতে পড়ে না। এই উগ্রতার ছাপ গিয়ে পড়েছে ওর মুখের ওপরেও। এই উগ্র ভাবটা না থাকলে বোধহয় ওকে আরেকটু বেশী মিষ্টি লাগত। ওর সম্বন্ধে পরে আরও অনেক কথা হবে।
৪। বিশাল সিং। মনোহর সিং এর এক মাত্র সুপুত্র। কোলকাতার বুকে মনোহরের চারটে ডান্স বার আছে আর আছে একটা বড় পাব। যদিও বিশাল গতকাল ডান্স বার নিয়ে কোনও কথা বলেনি, ও শুধু বলেছিল ব্যবসা আছে। রেস্টুরেন্ট আছে। পরে আমি এই ডিটেলগুলো জানতে পারি। তবু এখানেই লিখে দিলাম। ওর মা মারা গেছে বহুদিন আগে। তাই ওনাকে নিয়ে লেখার মতন কিছু নেই। পরে জেনেছিলাম মনোহর বাবুর একটা রক্ষিতা আছে। তার ব্যাপারেও পরে আসব। বিশাল সিং এর পরিবারের আরেকটা লোকের ব্যাপারে কথা না বললে চলবে না। ওর দাদার নাম শুভ সিং। অল্প বয়সেই বিশাল কন্সট্রাকসন আর প্রমোটারির ব্যবসা জমিয়ে বসেছে কলকাতার বুকে। বিশাল না বললেও, পরে জানতে পেরেছিলাম যে ওর কন্সট্রাকসন কোম্পানির লাভের অঙ্ক নিয়ে নাকি বড়সড় গরমিল পাওয়া গেছিল। আর তাই নাকি ওকে একবার পুলিশের হাতে ধরাও পড়তে হয়েছিল। কিন্তু সেই অবিনাশবাবুর কল্যাণে আর প্রমানের অভাবে বা অন্য কোনও ভাবে বেকসুর খালাস পেয়ে গেছে। এত লাভের অঙ্ক আসে কোথা থেকে সেটা প্রায় সবারই অজানা। (রাকা আর বিশাল দুজন দুজনকে যে আগে থেকেই চিনত সেটা বলাই বাহুল্য।)
৫। দোলন মুখার্জি। উচ্চতা পাঁচ ফুট পাঁচ। এক কথায় ডানা কাটা সুন্দরী। ফিগারটা ততধিক সেক্সি। শরীরের জায়গায় জায়গায় ঠিক যতটা প্রয়োজন ঠিক ততটা পরিমাণ মাংসের সমাহার। রাকার মতন এও খুব চাপা পোশাক পরে। কিন্তু শরীরে এখানে ওখানে মাংসের পরিমাণ সামান্য বেশী থাকায় শুধু উদ্ধত স্তন জোড়া নয়, শরীরের আরও অনেক জায়গার চোরা খাঁজ আর ভাঁজ বেশ পরিষ্কার ভাবে ফুটে থাকে কাপড়ের ভেতর দিয়ে। পাছাটা একটু ভারীর দিকেই আর বেশ গোল। হাঁটাচলা করার সময় গোল পাছার মাংসে থর থর করে যে বুক কাঁপানো কম্পনটা হয়ে সেটা চাপা লেগিন্সের বাইরে থেকেও পরিষ্কার বোঝা যায়। ওর পাছার দিকে তাকালেই কেমন যেন ইচ্ছে হয় যে দেওয়ালের দিকে মুখ করে ওকে দাঁড় করিয়ে লেগিন্স প্যানটি সব ছিঁড়ে ফেলে কুকুরের মতন পিছন থেকে চুদে মাগীটাকে পাগল করে দি। আরেকটা বিশেষত্ব আছে ওর। শরীরের উপরের অংশে ও যাই পরুক না কেন ওর গভীর স্তন বিভাজিকার উপরের দিকের ঠিক আধ ইঞ্চির মতন সবসময় জামার বাইরে বেড়িয়ে থাকবেই থাকবে। রাকার মুখের দিকে তাকালেই যেমন একটা উগ্রতার আভাষ পাওয়া যায় এর মুখে কিন্তু তেমন কিছু নেই। বরং বলা যায় যে সুন্দর মুখখানায় একটা কোমল নিষ্পাপ ভাব আছে। কিন্তু মুখ খুললেই যেটা প্রথম ধরা পড়ে সেটা হল টাকার গরম আর অহংকার। মাটিতে পা না পড়ার ভাবটা এর মধ্যেও পুরো মাত্রায় আছে। শুধু মুখটাই নিষ্পাপ। এর পিতার নাম রঞ্জন মুখার্জি। আমি কোলকাতায় আসার আগে থেকেই জানি রঞ্জন মুখার্জির নাম। বলা ভালো কে জানে না। কোলকাতায় আসার আগে রঞ্জন বাবু বহু যুগ আমেরিকায় ছিলেন। একজন সনামধন্য বৈজ্ঞানিক। আধুনিক অস্ত্র শস্ত্রের ব্যাপারে ওনার রিসার্চ নাকি তাক লাগিয়ে দেওয়ার মতন। ওনার তিনটে বড় বড় পেটেন্ট নেওয়া আবিস্কার নাকি গোটা দুনিয়ার যুদ্ধ বিজ্ঞানীদের মাথা ঘুরিয়ে দিয়েছে। মাল্টি মিলিয়নিয়ার। তিন বছর আগে ইনি সপরিবারে। কোলকাতায় চলে আসেন। এখানেও আরক্ষা বিভাগের হয়ে কিছু একটা গুরুতর ব্যাপার নিয়ে গবেষণা করতে শুরু করেছিলেন কিন্তু এমন সময় একটা পার্টির তরফ থেকে তাকে ভোটে দাঁড়ানোর অনুরোধ করা হয়। উনি সেই অনুরোধ ফেলতে পারেন নি। ভোটে জিতে এখন ইনি এই রাজ্যের একজন মন্ত্রী। এখনও নাকি কিছু গবেষণামূলক কাজের সাথে ইনি যুক্ত। মাঝে মাঝে ওনার ইন্টারভিউ বেরোলে সেই সব ব্যাপারে অল্প সল্প খবর পাওয়া যায়। দোলনের মা আমেরিকায় থাকতে বোধহয় কিছুই করতেন না। কিন্তু রঞ্জন বাবু মিনিস্টার হওয়ার পরেই জানি না কোথা থেকে অনেক গুলো টাকা জোগাড় করে একটা বড় এন জি ও খুলে বসেছে। তবে এই মহিলা ভীষণ লো প্রোফাইল মেইনটেইন করে চলেন। ওনার নাম পেপারে শুধু দু একবার বেড়িয়েছে। শেষ বার বেড়িয়েছিল কারণ ওনার এন জি ও র ইনকাম ট্যাক্সের ব্যাপারে নাকি কিছু গোলমাল বেড়িয়েছে। কিন্তু সেটা আর বেশী দূর গড়ায় নি। বড়লোকদের ক্ষেত্রে এইসব ব্যাপার এমনিতেই বেশী দূর এগোতে পারে না। তার ওপর ইনি আবার মন্ত্রীর গিন্নী। কার ঘাড়ে কটা মাথা যে ওনাকে নিয়ে টানাটানি করে। ওনার নাম বেলা মুখার্জি। দোলনের এক দাদাও আছে। সে অবশ্য আছে আমেরিকায়। দোলন ওর বাবা মার সাথে দেশে ফিরে এসেছে বটে তবে ওর দাদার এখনও পড়াশুনা শেষ হয়নি বলে ওখানেই রয়ে গেছে।
৬। কৌশিক জানা। এর বাবার নাম বিজন জানা। কাকুর নাম সন্দীপন জানা। মায়ের নাম শিল্পা জানা। কাকির নাম রাখী জানা। চারজনের নামই একসাথে বললাম কারণ এদের চারজনই পি ডব্লিউ ডির উচ্চ পদস্থ ইঞ্জিনিয়ার। চারজনেই একই সাথে থাকেন। কৌশিকের একটা খুড়তুতো ভাই আছে যে এখনও স্কুলে পড়ছে। পি ডব্লিউ ডির ইঞ্জিনিয়াররা যতদূর জানতাম সরকারি অফিসার। সরকারি অফিসার যতই উচ্চ পদস্থ হোক না কেন তাদের স্যালারির একটা লিমিট আছে বলেই শুনেছি। কিন্তু পরে জেনেছিলাম যে এদের নাকি একটা বিশাল বড় বাংলো আছে আর ছয়টা গাড়ি আছে। এত টাকা কোথা থেকে আসে কে জানে। মনে হয় ঘুষের টাকা! মনে হওয়ার কিছুই নেই সবাই জানে ঘুষের টাকা। তবে কৌশিকের ফ্যামিলিরও নাকি সরকারি উচ্চ মহলে বেশ জানাজানি আছে। তবে এদের ব্যাপারে আরও একটা জিনিস আছে যেটা জানতে পারি অনেক পরে। সেটা সময়ে বলব।
এখানে শুধু দুটো কথা বলে রাখা ভালো। পরে জানতে পেরেছিলাম যে এই চার জনই পূর্বপরিচিত। মানে এখানে পড়তে আসার আগে থেকেই ফ্যামিলিগত কারণে এরা সবাই একে অপরকে চিনত। এখানে আসার পরে প্রথম দিনই সুনীলও এদের দলে ঢুকে পড়েছে। কারণ স্ট্যাটাস ওর ও তো কিছু কম নয়। আর দুই নম্বর হল এই যে এদের কারুর পা মাটিতে পড়ে না। এরা সবাই বেপরোয়া আর উগ্র। অনুশাসন বলে কোনও জিনিস এদের অভিধানে নেই। তবে এদের জীবনযাত্রা নিয়ে আমার বিশেষ কৌতূহল আছে। এত টাকা খরচ করে কোলকাতায় পড়তে পাঠিয়েছে আমাকে। এখানে এসে এই বড়লোক বাপের বেপরোয়া ছেলে মেয়েগুলোর সার্কেলে ঢুকে যদি একটু ফুর্তিই না করলাম তাহলে আর কি করলাম।
সে যাই হোক বর্তমানে ফেরা যাক। টিফিন টাইম। আমার পাশে বসে বেচারা কুন্তল যেন থরথর করে কাঁপছে। আমি ওকে জিজ্ঞেস করলাম “আজ কি খাবার এনেছিস?” দেখলাম চারপাশে সবাই নিজেদের টিফিন বের করে খাওয়ার তোড়জোড় শুরু করেছে। কুন্তল ঠিকই বলেছিল। কোথাও পিজ্জা তো কোথাও চাউমিন। রাকা দেখলাম আজ বিরিয়ানি এনেছে। সেটা থেকে আবার বিশাল এসে কয়েক চামচ তুলে নিল। ক্যান্টিনে গিয়ে খাওয়াই যায়। কিন্তু ফার্স্ট মাসে নাকি কোনও অলিখিত নিয়ম আছে যে ফার্স্ট ইয়ারের ছেলেরা ক্যান্টিনে যেতে পারবে না। অবশ্য গেলে কি হবে সেটা কারোর জানা নেই। আমার অনেকক্ষণ ধরে সিগারেট খেতে মন চাইছিল। আসলে ক্লাসে এত বোরিং লেকচার হচ্ছিল (স্যারেরা ঠিকই পড়াচ্ছিলেন, কিন্তু ওই যে বললাম জানা জিনিস আর কতবার শোনা যায়) যে সিগারেটের চিন্তাটা মাথায় এসে ভর করেছে অনেকক্ষণ আগে থেকেই। আমার সাথে কোনও টিফিন নেই। কুন্তল মিনমিন করে বলল “ওই কালকের মতই।” বললাম “তো আজও ওইগুলো ঠাণ্ডা করে নষ্ট করে খাবি নাকি? বের কর। নইলে আমাকে ক্যান্টিনে গিয়ে খেতে হবে।” ও চারপাশটা দেখে নিয়ে কেমন একটা লজ্জা লজ্জা ভাব করে নিজের ছোট টিফিন বক্সটা বের করল। কমপ্লেক্স মানুষকে যে অন্ধ করে দেয় সেটা আজ বুঝতে পারলাম। ও শুধু গোটা ক্লাসের ১০ শতাংশ ছেলে মেয়ের টিফিন দেখে কমপ্লেক্সে ভুগছে। যদি চোখ থাকত তাহলে বুঝতে পারত বাকি নব্বই শতাংশ ছেলে মেয়েই ওর মতন সাধারণ টিফিন নিয়ে এসেছে। ও নিজে না খেয়ে টিফিন বাক্স টা আমার দিকে এগিয়ে দিল যেন এটা ওর জিনিস নয় আমার জিনিস। ক্ষিদে পেলে আমার মতন নির্লজ্জ কেউ নেই। আমি নির্লজ্জের মতন একটা গোটা রুটি তুলে নিয়ে তরকারি দিয়ে খেতে শুরু করে দিলাম। একটা রুটি শেষ করে দ্বিতীয় রুটিটা খাবার আগে ওকে একবার জিজ্ঞেস করলাম “কি রে? তুই খাবি না?” ও কেমন একটা লজ্জা আর সন্ত্রাস মাখা চাহুনি নিয়ে এখনও চারপাশ দেখে মাথা নেড়ে বুঝিয়ে দিল না। আমি আর বাক্যব্যয় না করে দ্বিতীয় রুটিটাও অবিলম্বে শেষ করে ফেললাম। তৃতীয় রুটিটার আগে আমি ওর ওকে জিজ্ঞেস করারও প্রয়োজন বোধ করলাম না। কিন্তু সেটা আর খাওয়া হল না। হঠাত হারেরেরেরে করতে করতে ক্লাসের মধ্যে সাতটা ছেলে মেয়ে ঢুকে পড়ে দরজাটা বন্ধ করে দিল। কুন্তল দেখলাম ভয়ে আরও সিঁথিয়ে গেল। দলে তিনটে মেয়ে আর চারটে ছেলে। মেয়েগুলো এসেই মেয়েগুলোর দিকে ধেয়ে গেল। আর ছেলেগুলো গোটা ক্লাসের ওপর চোখ বোলাতে বোলাতে ক্লাসের মাঝখানে এসে দাঁড়ালো। কথায় বলে পুলিশের সামনে পড়লে ভয়ে কুঁকড়ে যেতে নেই। মুখের চেহারার পরিবর্তন দেখলেই পুলিশ তোমার দিকেই এসে ঝাঁপিয়ে পড়বে। ঝাঁপিয়ে না পড়লেও তোমার চেহারার এই অদ্ভুত ভয় ভয় ভাব পুলিশের নজর আকর্ষণ করতে বাধ্য। তখন তুমিই ওদের আকর্ষণের কেন্দ্র বিন্দু হয়ে দাঁড়াবে। আমার পোড়া কপাল, কুন্তলের ভয় ভয় মুখ দেখেই ওরা ধেয়ে এলো কুন্তলের দিকে। আমি তৃতীয় রুটির প্রথম টুকরোটা মুখ অব্দি নিয়ে পৌঁছাতে না পৌঁছাতেই একজন বাজ পাখির মতন এসে ছোঁ করে আমার হাত থেকে টিফিন বাক্সটা নিয়ে নিল। একটা বিদ্রূপ আর শ্লেষ মাখানো স্বরে জিজ্ঞেস করল “ আপনার খুউউউব ক্ষিদে পেয়েছে দাদা?” আমি খুব ঠাণ্ডা ভাবে অথচ বেশ জোড় গলায় জবাব দিলাম “হ্যাঁ।” এখানে কারোর গলায় কোনও কথা নেই। হঠাত করে আমার গলা পেয়ে সিনিয়র জুনিয়র সবাই আমার দিকে ফিরে তাকাল। সামনে একটা সিনিয়র মেয়ে এগিয়ে এসে বলল “এই মালটাকে তো গতকাল দেখিনি। কি রে কাল কোথায় পালিয়ে গেছিলি?” আমি আবার ঠাণ্ডা ভাবে জবাব দিলাম “পালাই নি তো। এসেইছি দুপুরের পর।”
সব সিনিয়ররা একসাথে চেচিয়ে উঠল “ওরে পালে নতুন গরু ঢুকেছে। “ একটা ছেলে এগিয়ে এসে আমার গালে একটা হালকা থাপ্পড় মেরে বলল “কি রে তোর পাশে বসা এই গান্ডুটা তোকে শেখায় নি যে আমাদের সাথে কথা বলতে হলে উঠে দাঁড়িয়ে কথা বলতে হয়? আর আমাদের স্যার বলে আর ওই দিদিদের ম্যাডাম বলে ডাকতে হয়?” আমি মাথা নেড়ে বুঝিয়ে দিলাম এরকম কোনও তথ্য আমার কাছে আসেনি। এইটা না বললেই বোধহয় ভালো হত। ওদের ইমিডিয়েট রাগটা গিয়ে পড়ল কুন্তলের ওপর। কেন রাগ আর কিসেরই বা রাগ সেটা বোঝার বুদ্ধি আমার নেই। আপাতত আমাকে এইসব না শেখানর জন্য কুন্তলের শাস্তি হল পঞ্চাশ বার কান ধরে উঠবস করা। বেচারা করুণ মুখ করে ক্লাসের সামনে গিয়ে উঠবস আরম্ভ করে দিল। ওইদিকে ইতি মধ্যে এক জন ক্লাসের সামনে দাঁড়িয়ে বেসুরো গান ধরেছে। একজন ডন বৈঠক দেওয়া শুরু করেছে। একে দেখে বুঝতে পারলাম এর ডন বৈঠক দেওয়ার কোনও পূর্ব অভিজ্ঞতা নেই। কারণ বারবার ধপাস ধপাস করে মাটিতে উপুড় হয়ে পড়ে যাচ্ছে। দু একজন ক্লাসের সামনে চলে গেল তাদের তদারকি করার জন্য। একজন সিনিয়র আমাকে হাত ধরে দাঁড় করিয়ে প্রায় টানতে টানতে ক্লাসের সামনে এনে দাঁড় করিয়ে আমাকে চেয়ারের ওপর তুলে দিল। আমিও যা করতে বলছে করে যাচ্ছি। বেশ মজা অনুভব করছি মনে মনে। আমাকে বলল “ এই যে আমাদের নতুন হিরো, তোমার এখন ইন্ট্রোডাকশন নেওয়া বাকি আছে। নাম দিয়েই শুরু করা যাক!” বললাম আমার নাম। সেই একই প্রশ্ন আবার এলো। এইবার একজন মেয়ের কাছ থেকে। “কিসের সংকেত বাবা তুমি?” নাহ ঠিক করলাম যতই বোকা বোকা শোনাক না কেন একবার অন্তত সত্যি কথাটা মন খুলে বলেই ফেলি। ঠাণ্ডা গলায় বললাম “মৃত্যুর।” সিনিয়র জুনিয়র সবাই এক মুহূর্তের জন্য হলেও যেন থমকে গেল। আমার ক্লাসের লোকজন কাল একরকম উত্তর শুনেছিল এই প্রশ্নের আর শুনেছিল আমারই মুখ থেকে। কিন্তু আজ একটা বাজে উত্তর শুনল। জানি উত্তরটা ভীষণ নাটকীয় আর তেমনই পুরো মাত্রায় বোকা বোকা, কিন্তু ওরে পাগলা সত্যি কথা যতই বোকা বোকা শোনাক না কেন সেটা সত্যিই হয়ে থাকে। ওই মেয়েটা এগিয়ে এসে কৌতুক আর তাচ্ছিল্যের স্বরে বলল “মৃত্যুর? বাহ খুব ভালো? তো কার মৃত্যুর সংকেত সেটা তো জানতে হবে? ভাই বলেই ফেলো কার মৃত্যুর?” আমার মনে কেমন একটা উৎফুল্ল ভাব জেগে উঠেছে। সিনিয়র মেয়েটা আমার দিকে এগিয়ে এসে একদম চেয়ারের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে আর আমি দাঁড়িয়ে আছি চেয়ারের ওপর। অবশ্য মেয়েটার যা উচ্চতা তাতে এক লেভেলে দাঁড়িয়ে থাকলেও একই রকম ব্যাপার হত। ওর ঢিলে কামিজের গলার কাছে ফাঁক হয়ে থাকা জায়গার ভেতর দিয়ে ওর সাদা রঙের ব্রায়ে ঢাকা দুধগুলো স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। কি সৌভাগ্য আমার। বেশ গভীর খাদ বুকের ঠিক মাঝখানে। আর সেখানে বিন্দু বিন্দু ঘামের আভাষ। ব্রায়ের কাপ দুটো বুকের ভারে একটু নেমেই গেছে। প্রায় সমস্ত স্তন দুটোই নগ্ন কামিজের নিচে (তার থেকেও বড় কথা আমার চোখের সামনে)। শুধু বোঁটার চারপাশটা আর স্তনের নিম্নভাগটা কোনও মতে ঢাকা পড়ে গেছে ব্রায়ের কাপড়ের ভিতর। উফফ হাতটা একবার ওর কামিজের ভেতর ঢুকিয়ে দিয়ে দুধ দুটোকে চেপে ধরতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু সেটাও তো সম্ভব নয়, তাই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে শুধু চোখের ক্ষিদেই মেটাতে থাকলাম। ওর নগ্ন দুধ দুটো দেখতে এতই ব্যস্ত ছিলাম যে ওর শেষ প্রশ্নটা কানেই আসেনি। পাছায় একটা সজোরে থাপ্পড় খেয়ে সম্বিত ফিরে পেলাম, কিন্তু চোখ সরালাম না। ও আমার থেকে উত্তর চায়, বিনিময়ে আমারও তো ওর থেকে কিছু নিয়ে নেওয়া উচিৎ। আবার প্রশ্নটা এলো “কার মৃত্যু ভাই? সেটা যদি একবার খোলসা করে বলে দাও তো সাবধানে থাকি।” আমি উত্তর দেওয়ার আগেই পেছন থেকে একটা উত্তর এলো “যারা ওকে র্যাগিং করবে তাদের মৃত্যু।” সব সিনিয়র গুলো একসাথে হেঁসে উঠলো। আমি কিছু একটা বলতে যাচ্ছিলাম, কিন্তু ইতিমধ্যে একটা ব্যাপার ঘটে গেল যার জন্য সবার নজর অন্য দিকে ঘুরে গেল।
কুন্তল কোনও মতে ওর ভারী শরীরটা নিয়ে দশ বার কান ধরে উঠবস করে আর পারেনি। হাঁটুর ওপর ভর করে প্রায় মুখ থুবড়ে সামনে পড়ে গেছে। সব সিনিয়রগুলো রে রে করে ওর দিকে তেড়ে গেল। আমার পোড়া কপাল। যে মাগীটার বুক গুলো এতক্ষন ধরে ওর কামিজের ফাঁক দিয়ে দেখছিলাম সেই মাগীটাও দেখলাম ওই দিকে দৌড়ে গেল। একটা মেয়ে ওর পিছনে দাঁড়িয়ে ওর পাছায় একটা সজোরে লাথি মারল। দেখলাম কুন্তলের শরীরটা একটু যেন কেঁপে উঠল, কিন্তু মুখ দিয়ে কোনও শব্দ বের করল না। একটা ছেলে বলল “শালা দশ বার তো মাত্র করলি। তাতেই উল্টে গেলি? “ আরেকজন বলল “ এত ভারী পাছা নিয়ে এর থেকে বেশী করা যায়!” মেয়েটা আবার ওর উচিয়ে থাকা পাছার ওপর একটা লাথি মেরে বলল “ঠিক আছে। আজ থেকে তোর নাম দেওয়া হল পোদু।” সবাই মিনিট খানেক ধরে পোদু পোদু বলে চিৎকার করে ওকে দাঁড় করিয়ে সিটে পাঠিয়ে দিল। বুঝলাম পরের চার বছরের জন্য ওর একটা নাম হয়ে গেল। পোদু। ওর চোখ মুখ লাল। প্যান্টের পিছনে এক রাশ ধুলো। মাথার চুল উসকো খুসকো। ও কোনও মতে টলতে টলতে গিয়ে বেঞ্চের ওপর নিজের শরীরটা ছেড়ে দিল। আমার বাম দিকে এখন তিনটে ছেলে মেয়ে একসাথে দাঁড়িয়ে বেসুরো হিন্দি গান গেয়ে চলেছে। আর তার তালে তালে আরও ছন্দহীন ভাবে আরও চার পাঁচ জন নেচে চলেছে। তাদের মধ্যে একজন সেই সকালের তমালী। মেয়েটা যে ভাবে নাচছে তাতে সন্দেহ নেই যে ও জীবনে এই প্রথম বার নাচ করছে। অবশ্য ওকে দোষ দিয়ে লাভ নেই। আমাকে নাচতে বললেও একই রকম লাগবে দেখতে। অবশ্য আমার ঠাকুর ভাসানের সময় নাচের অভিজ্ঞতা আছে। তবে এই গানের সাথে সেই নাচ একেবারেই বেমানান। আগের মেয়েটা এইবার আমার দিকে একরাশ বিরক্তি নিয়ে এগিয়ে এসে বলল “কি রে তোর উত্তর পাবার জন্য কি দরখাস্ত করতে হবে?” আমি বললাম “কার মৃত্যু সেটা আমি কি করে বলব? যার কপালে মৃত্যু আছে তারই হবে। ” একটা ছেলে হিরোর মতন এগিয়ে এসে বলল “তো ভাই এই মৃত্যুর সংকেতের নামকরণ কে করেছে?” বললাম “বাবা।” ছেলেটা হেঁসে বলল “ আর তুই যে মৃত্যুর সংকেত সেটা কে তোকে জানিয়েছে?” আমি ঘাড় নেড়ে বললাম “ এখানে আসার আগে বাবা।” ছেলেটা বলল “ এখানে আসার আগে বাবা! বেশ বেশ। তাহলে এর আগে আপনি কিসের সংকেত ছিলেন?” বললাম “মৃত্যুর।” ও বলল “ এর আগেও যে আপনি মৃত্যুর সংকেত ছিলেন সেটা কে শিখিয়েছিল আপনাকে স্যার?” বললাম “সাগর।” সবাই যেন উত্তরটা শুনে একটু ঘেঁটে গেছে। বলল “সাগর? সে আবার কে?” আমি একটু চিন্তা করে বললাম “বলতে পারি স্যার, কিন্তু চিনতে পারবেন না।” একটা মেয়ে ঝাঁঝের সাথে বলে উঠল “চিনে লাভ নেই।” একটু থেমে বিদ্রূপের সাথে বলল “ তোর কটা বাপ সেই হিসাব আছে তো? (তারপর একটু থেমে বলল) তো সেই বাবাটির নামটি কি যদি দয়া করে বলেন?” ঠাণ্ডা গলায় বললাম “সুবীর।” সবার দিকে তাকিয়ে হেঁসে উঠল “মহা বীর আর তার ছেলে মহা মৃত্যুর সংকেত। হাত তালি।” সিনিয়র জুনিয়র সবাই মিলে হাত তালি দিল। একটা ছেলে এগিয়ে এসে আমাকে বলল “চেয়ারটা আপনার বাপের সম্পত্তি নয়। ওখান থেকে যদি দয়া করে নেমে আসেন। “ পেছন থেকে একটা মেয়ে বলল “এই ক্যালানে মার্কা মৃত্যুর সংকেতটাকে আচ্ছাসে উঠবস করতে বল তো।” আমি উঠবস শুরু করে দিলাম বিনা বাক্য ব্যয়ে। একজন হাত জোড় করে নাটকীয় ভাবে আমার পাশে এসে দাঁড়িয়ে বলল “দাদা আপনার কানদুটো কে ধরবে? আপনার বাবা? তাকে টেলিগ্রাম করে আনতে তো অনেক সময় লেগে যাবে। তো এখন যদি আপানার বাবার হয়ে আপনিই নিজের কানদুটো ধরে উঠবস করেন তো আমরা সবাই বাধিত হব।” আমি লক্ষ্মী ছেলের মতন দুই হাতে দুই কান ধরে উঠবস চালিয়ে যেতে লাগলাম।
আমার উঠবসের সংখ্যা যখন প্রায় পাঁচশোতে গিয়ে পৌঁছেছে তখন দেখলাম র্যাগিঙ্গের আগুনের আঁচ অনেকটা কমে এসেছে চারপাশে। মুখ বন্ধ করে পাঁচশো বার কান ধরে উঠবস করেছি আর আমার কোনও বিকার নেই সেটা দেখে ঘরের সবাই যে যারপরনাই আশ্চর্য হয়েছে তাতে সন্দেহ নেই। অথচ আমার কপালে জমে থাকা কয়েক ফোঁটা ঘাম ছাড়া আমার মধ্যে শারীরিক ক্লান্তির আর কোনও চিহ্ন কেউ দেখতে পাচ্ছে না। সেটা ওদের অস্বস্তি আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। একজন বলল “ঠিক আছে এখনকার মতন আমাদের যেতে হবে। (আমার দিকে আঙুল তুলে বলল) তুই আমরা না যাওয়া অব্দি চালিয়ে যা। (বাকিদের দিকে তাকিয়ে বলল) এই তোদের মধ্যে ভালো হিন্দি গান কে করতে পারে? “ একজন বলল “আমি কিছুটা গাইতে পারি।” তাকে সামনে এনে দাঁড় করানো হল। এর নাম উপমন্যু। ছেলেটা সত্যিই ব্যাপাক গান করে। কিন্তু তার থেকেও ভালো লাগলো অন্য জিনিস। প্রথমে ওর গানের তালে তালে দু তিনজন জুনিয়র নাচ করছিল। কিন্তু ওর গান এতো ভালো হচ্ছে দেখে একজন সিনিয়র এসে টিচারের টেবিলটা হাত দিয়ে বাজাতে শুরু করে দিল। যারা নাচ করছিল তাদের কেউ যে নাচতে পারে না সেটা বলাই বাহুল্য। তাদেরই একজনের দিকে একটা সিনিয়র মেয়ে এগিয়ে এসে মাথার পিছনে একটা থাপ্পড় মেরে বলল “এত সুন্দর গানের সাথে এইরকম গান্ডুর মতন নাচছিস কেন? যা গিয়ে বস।” দিয়ে নিজেই এগিয়ে গিয়ে রাকাকে দু হাত ধরে তুলে নিয়ে এসে পাশা পাশি দাঁড়িয়ে নাচতে শুরু করে দিল। উফফ শরীরটা আবার কেমন আনচান করে উঠেছে। বেশ একটা পার্টি পার্টি গন্ধে ক্লাস ভরে গেছে। বাকিদের নাচ থেমে গেছে কয়েক মুহূর্তের মধ্যে। টেবিলের তাল বেড়ে গেছে বেশ খানিকটা। সিনিয়র জুনিয়র সবাই তালি দিচ্ছে তালে তালে। গানের লয়ও কয়েক মাত্রা বেড়ে গেছে। উফফ নাচের তালে তালে সে ওদের শরীরের কি দুলুনি। রাকার বুকের উপর উচিয়ে থাকা কৎবেল দুটো যেন ব্রা থেকে বেড়িয়ে এসে লাফাচ্ছে ওর টপের ভেতর। দুজনের মুখই হাঁসি হাঁসি। সিনিয়র মেয়েটার কথা কি আর বলব। মাগীটার বুকের সাইজ বেশ ভালোই। প্রতিটা লাফের সাথে সাথে বুক দুটো ছন্ন ছাড়া ভাবে এদিক ওদিক উপর নিচ লাফিয়ে চলেছে মনের আনন্দে। মাংসল পাছাটাও টাইট জিন্সের ভেতর লাফিয়ে চলেছে সমান তালে। বাইরে থেকেও সেই পাছার দুলুনি স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। ওর পেছনে দুজন সিনিয়র ছেলে দাঁড়িয়ে ছিল। আড়চোখে দেখলাম ওদের চোখ স্থির হয়ে আছে ওর জিন্সের পেছনে। মাইরি! ভেতরে ভেতরে মরে যাচ্ছি খাবি খেয়ে। এই মেয়েটা আবার বেশ ঢোলা স্লিভলেস কুর্তি পরে এসেছে। যতবার মাথার ওপর হাত তুলছে ততবার দেখতে পাচ্ছি ওর ডান দিকের কামানো নির্লোম মসৃণ বগল আর বগল সংলগ্ন মসৃণ জায়গাটা। একফোঁটা লোম নেই ওখানে। ঘামে ভিজে চক চক করছে মাগীটার বগল। ইসস যদি একবার জিভ বোলাতে পারতাম ওখানে। জীবন ধন্য হয়ে যেত। আচ্ছা শুঁকলে কেমন লাগবে মাগীটার ঘামে ভেজা বগলটা। পারফিউম ব্যবহার করলে জানি না ঘাম আর পারফিউম মিশে কেমন গন্ধ হবে। কিন্তু শুধু ঘামের গন্ধ হলে.. মা গো আর ভেবে কাজ নেই।.নগ্ন বগলের একদম নিচের দিকে মাগীটার ডান দিকের ভরাট স্তনটার কিছুটা ফোলা মাংস যেন অবাধ্যের মতন বেড়িয়ে এসেছে কুর্তির ফাঁক দিয়ে।
মাগীটার কিন্তু সেই দিকে কোনও হুঁশ নেই। জানি না আমি ছাড়া আর কে কে ওর এই নগ্ন ঘামে ভেজা নির্লোম বগলের শোভা উপভোগ করতে পারছে এত কাছ থেকে। প্রতিটা লাফের সাথে বগলের নিচে স্তনের মাংস পিণ্ডটা যেন একটু একটু করে বাইরে বেড়িয়ে আসছে। মনে হয় মেয়েটা ঢিলে ব্রা পরেছে আজ। ও বুঝতে পারছে না যে ও যত লাফাচ্ছে তত ওর ঘামে ভেজা ঢিলে ব্রাটা স্তনের নিচে নেমে গিয়ে ওর বুক দুটোকে ঠেলে ওপরে উচিয়ে ধরছে, আর তাই হয়ত স্তনের পাশের মাংসল জায়গাগুলো অবুঝের মতন নিচ থেকে চাপ খেয়ে ফুলে উঠে কুর্তির বগলের কাছ দিয়ে বাইরে বেড়িয়ে আসছে একটু একটু করে। কিন্তু আমার সব থেকে ভালো লাগলো ওর বগলের কেন্দ্র স্থলটা। এমনিতে মেয়েটার গায়ের রঙ ফর্সা। কিন্তু বগলের ঠিক মাঝখানটায় যেন একটু কালচে ভাব এসে গেছে। বোধহয় বারবার কামানোর ফলে এমনটা হয়েছে। তবে এমনিতে বগলটা বেশ ফর্সা আর মসৃণ। একবার সুযোগ পেলে জিভের লালা দিয়ে ঘষে দেখতে পারতাম যে ওই সামান্য কালচে ভাবটা দূর করে পুরোপুরি ফর্সা বানানো যায় কি না জায়গাটাকে। দুঃখের বিষয় রাকা আজ স্লিভলেস পরে আসেনি। একদম ছোট হাতা টপ পরে এসেছে, কিন্তু ওটাকে হাতকাটা জামা বলা যায় না। ইসস যদি পরে আসত তাহলে ওর বগলটাও দেখতে পেতাম। আমি নিশ্চিত যে ওর বগলটাও একদম কামানো। যার হাত এত মসৃণ করে অয়াক্সড তার বগল যে পরিষ্কার করে কামানো হবে তাতে কোনও দ্বিমত থাকতে পারে না। কিন্তু কপাল খারাপ। ওর নরম ছোট ছোট স্তনগুলো বোধহয় এর মধ্যে ব্রায়ের খাপ থেকে পুরোটাই বেড়িয়ে গেছে। কারণ এখন ওর সামনেটা দেখে হচ্ছে যে দুটো ছোট ক্যাম্বিশ বল লাগামহীন ভাবে চতুর্দিকে লাফিয়ে চলেছে একটা চাপা পাতলা টপের ভেতর। একটু আগে অব্দিও দেখে মনে হচ্ছিল যে কেউ যেন বল দুটোর গতি বিধির ওপর একটা অদৃশ্য লাগাম টেনে রেখেছে আর তাই তারা যেমন তেমন ভাবে এদিক ওদিক লাফাতে পারছে না, কিন্তু এখন সেই লাগাম সরে গেছে। অর্থাৎ এখন ওর বুক দুটো টপের নিচে পুরো পুরি নগ্ন। ছোট পুশ আপ ব্রা-টা বোধহয় বুক থেকে পুরো পুরি নেমে গেছে। ইসসস। এসব ভেবে লাভ নেই। বাঁড়াটা আবার দাঁড়িয়ে গেছে। এখন সিট অব্দি যাওয়াটাই মুশকিল হবে। একসময় ঘামে ভেজা দুটো মেয়ের নাচ থামল। আমার কান ধরে উঠবস এখনও চলছে। ওদের এখন আর আমার দিকে কোনও ভ্রুক্ষেপ নেই। রাকার চাপা টপের বুকের কাছটা ঘামে ভিজে কালো হয়ে গেছে। কোনও জিনিস ভিজে গেলে ওজনে বেড়ে যায়। হয়ত সেই জন্যই টপের বুকের জায়গাটা সামান্য নিচে নেমে গিয়ে ওর অগভীর কিন্তু কিউট বুকের খাঁজের কিছুটা নগ্ন করে রেখেছে টপের ওপর দিয়ে। আড়চোখে সেটাও দেখে নিলাম। ওর ছোট বুক দুটো যে ব্রায়ের বন্ধন থেকে সম্পূর্ণ বেড়িয়ে গেছে সেটা এখন আরও ভালো করে বুঝতে পারলাম। নিজের সিটের দিকে যেতে যেতে ও সবার সামনেই নির্লজ্জের মতন ঘামে ভেজা পাতলা টপটাকে বুকের সামনে হাত দিয়ে টেনে ধরে একটু উঠিয়ে নিল। বুঝলাম স্থানচ্যুত হওয়া ব্রা-টাকে আবার নরম বল গুলোর ওপর বসিয়ে দিল। টপটাকে ও আরেকবার আরেকটু উপরে টেনে ধরে ছেড়ে ছিল। বুঝলাম এইবার ব্রায়ের স্থানটা আরেকটু পোক্ত হল আর তার ফলে নেমে যাওয়া স্তন গুলো আবার উচিয়ে উঠল বুকের সামনে। সত্যি মজাদার মেয়ে। এদিকে সিনিয়ররা দরজা খুলে বেড়িয়ে যাচ্ছে। একজন ছেলে বেরোতে বেরোতে বলল “ এই পোদুর বন্ধু ক্যালানে! তোকে আজ থেকে সবাই ক্যালানে বলে ডাকবে। তোর কপালে ওই কান ধরে উঠবস করাই আছে। আর যখন জ্ঞান দেওয়ার সময় পাবি তখন সংকেত আর মৃত্যুর সংকেত নিয়ে কিছু জ্ঞান দিস। লোকে মস্তি পাবে। আর তোর থেকেও বড় বাল হল তোর ওই ক্যালানে বাপটা। (সব কটা ছেলে মেয়ে খিল খিল করে হেঁসে উঠল এই কথায়।) শালা আমাদের সাথে বেশী পোদে লাগতে আসবি না। এমন ক্যাল খাবি যে তোর মৃত্যু নেমে আসবে খুব তাড়াতাড়ি আর তোর ওই ঢ্যামনা বাপও সেই মৃত্যুর সংকেত বুঝতে পারবে না। চলি। ক্লাস অভারের পর আবার আসব। আজ কেউ পালাবি না কালকের মতন। “ সবাই হাওয়া হয়ে গেল। ওদের গলার আওয়াজও মিলিয়ে গেল ধীরে ধীরে। সবাই র্যাগিঙ্গের ধাক্কায় ভেঙ্গে পড়েছে। রাকা তার গ্রুপের সাথে ওর নাচটা কেমন হয়েছে সেই কথা নিয়ে মেতে উঠেছে। কুন্তল টেবিলের ওপর মাথা নিচু করে বসে আছে। কেউ আমার দিকে দেখছে না। তাই কেউ খেয়ালও করল না যে ১৭০০ বার এক টানা উঠবস করা সত্ত্বেও আমার মধ্যে কোনও ক্লান্তি বা ব্যথার ছাপ নেই, না শরীরে না মনে না মুখে। আমি কুন্তলের পাশে গিয়ে বসে পড়লাম। টিফিন বক্সটা আমার সিটের সামনেই রাখা আছে। হাতে নিয়েই বুঝতে পারলাম যে সেটা খালি। মানে যারা এসেছিল তারা আমার মুখের খাবার টুকুও কেড়ে নিয়ে চলে গেছে। খালি বাক্সটা কুন্তলের হাতে চালান করে দিলাম। কুন্তল মুখ তুলে আমাকে জিজ্ঞেস করল “কেমন লাগলোো?” আমি হেঁসে বললাম “মন্দ না। বেশ ভালো এক্সারসাইজ হয়।” কুন্তল করুণ মুখে তাকিয়ে বলল “আবার আসবে ওরা। আজই।” বললাম “শুনেছি।” স্যার এসে গেছেন। ক্লাস শুরু হয়ে গেছে।
আবার সেই বোরিং লেকচার। বক বক করেই চলেছেন স্যার। শার্টটা ঘামে ভিজে গেছিল পুরো। এখন ফ্যানের তলায় বসে বেশ একটা ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা অনুভুতি হচ্ছে। ঘুম এলে বিপদ। কলেজের দ্বিতীয় দিনেই ঘুম। কিন্তু বেশ একটা শরীর ছেড়ে দেওয়া আরামের ভাব ধীরে ধীরে আমাকে গ্রাস করতে শুরু করেছে। জোড়ে নিঃশ্বাস ভেতরে টেনে বন্ধ করে রাখলাম কয়েক সেকন্ডের জন্য। তারপর নিঃশ্বাস ছেড়ে দিয়েই আবার জোরালো নিঃশ্বাস ভেতরে নিয়ে বন্ধ করে রাখলাম। এরকম বেশ কয়েক বার করার পর বুঝলাম ঘুমের যে আমেজটা আমাকে গ্রাস করতে আসছিল সেটা ভ্যানিশ করে গেছে। শেষ ক্লাস শুরু হল। এই স্যার বেশ গম্ভীর। জানা জিনিস পড়ালেও এটা কিন্তু মানতেই হবে যে ইনি পড়ান ভালো। অন্তত যারা প্রথমবার এই সব জিনিস শিখছে তাদের জন্য উনি খুবই ভালো। আমি স্বভাববশত এদিক ওদিক সবাইকে লক্ষ্য করছি। স্যার হঠাত করে আমাকে ইশারায় ডেকে দাঁড় করালেন। “কি হে মনে হয় তোমার এই সব কিছু জানা?” আমি আশ্চর্য হওয়ার ভান করে দাঁড়িয়ে রইলাম মুখ বুজে। “কি হল? উত্তর দিতে পারছ না কেন? এসব তোমার জানা?” আমি বললাম “না। জানা নয়। কেন?” স্যার বললেন “কেন, কিভাবে এসব তো তুমি বলবে। আমি তো অনেকক্ষণ ধরে দেখছি তোমার মন এদিক ওদিক ঘুরে বেড়াচ্ছে। তো গোটা ক্লাসের এর ওর দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে কি খুঁজছ সেটা যদি একটু বলে দাও তো আমাদের সবার একটু উপকার হয়।” আমি কিছু একটা বলতে যাচ্ছিলাম স্যার আমাকে থামিয়ে বসতে ইশারা করে বোর্ডের দিকে ঘুরে গেলেন। “এখন বসে পড়ো। কিন্তু ক্লাস ওভারের পর আমার সাথে দেখা করবে। “ বুঝতে পারলাম আজ কপাল খারাপ চলছে। একে প্রায় ১৭০০ বার কান ধরে উঠবস করে ঘাম ঝরাতে হয়েছে, এখন স্যারের ধ্মকানি খেয়ে খেয়ে ঘাম ঝরাতে হবে। সময়ের নিয়মে ক্লাস শেষ হল আর স্যার হনহন করে ক্লাস থেকে বেড়িয়ে গেল। আমি দৌড় মারলাম পেছন পেছন। অবশ্য বেরনোর আগে চট করে ব্যাগটা গুছিয়ে নিলাম। এই সুযোগ কেউ ছাড়ে? আজ অবশ্য পরের দুটো ক্লাস অফ। নইলে ক্লাসেই ফিরে আসতে হত। আবার সেই ক্যালানে গুলো এসে বোকা বোকা র্যাগিং শুরু করবে। তার আগেই বেড়িয়ে পড়তে হবে। আমি দরজার দিকে ছুট মারতে যাব ঠিক এমন সময় কুন্তল বলল “কি রে ব্যাগ নিয়ে যাচ্ছিস? সিনিয়ররা এলে কি হবে?” আমি একটা খুশি খুশি ভাব দেখিয়ে বললাম “আমাকে না পেয়ে ওরা একটু দুঃখ পাবে। কিন্তু স্যারের সাথে দেখা করে আর ফিরছি না। যদি কেউ আমার কথা জিজ্ঞেস করে তো বলে দিস যে আমাকে স্যার ডেকেছেন আর তাই আমাকে চলে যেতে হয়েছে। “ আমি আর ওর উত্তরের জন্য অপেক্ষা না করে হুঁশ করে বেড়িয়ে গেলাম। তাছাড়া আমাকে অন্য একটা জায়গাতেও যেতে হবে আজ সন্ধ্যায়। ক্লাস থেকে সোজা স্যারের ঘরের সামনে গিয়ে হাজির হলাম। না স্যার সেখানে নেই। একজন পিয়নকে দেখে জিজ্ঞেস করলাম স্যারের ব্যাপারে। ও বলল স্যার নিচে নেমে গেছে। ওনার গাড়িটা গেটের বা দিকে পার্ক করা আছে। উনি ওই দিকেই না কি গেছেন। আবার দৌড় মারলাম। কালো রঙের স্যান্ট্রোর সামনে দাঁড়িয়ে স্যার মোবাইলে কি একটা করছেন আর ডান হাতের তর্জনী আর মধ্যাঙ্গুলির মধ্যে একটা জ্বলন্ত সিগারেট ধরা। আমি গিয়ে দাঁড়ালাম স্যারের সামনে। স্যার মোবাইল থেকে মুখ না তুলেই জিজ্ঞেস করলেন “কোথা থেকে এসেছ?” বললাম “মিরাট।” উনি একটা হুম মতন শব্দ করে বললেন “শোন এটা খুব বড় কলেজ আর শহরটা মিরাট নয়, কলকাতা। একটু সাবধানে চলো আর পড়াশুনায় মন দাও এদিক ওদিক না তাকিয়ে। আজ প্রথম দিন তাই কিছু বললাম না। কিন্তু পরে এরকম অন্যমনস্ক দেখলে বাড়িতে চিঠি পাঠাতে বাধ্য হব। “ পাশ দিয়ে কয়েকজন ছেলে মেয়ে যাচ্ছিল তাদের সামনেই স্যার আমাকে ঠাণ্ডা অথচ কড়া গলায় জ্ঞান দিয়ে চললেন। স্যারের কথা শেষ হলে আমি মাথা নেড়ে বুঝিয়ে দিলাম যে আমি এরকম আর করব না। স্যার বললেন “বেশ। ভালো। পরের ক্লাসে দেখা হচ্ছে। ভালো করে পড়াশুনা করো। এখন তোমার ওইটাই কাজ। আর নিজের কাজ তুমি যদি মন দিয়ে করতে পারো তাহলে মনে হয় তোমার বাড়ির লোকও খুব খুশি হবে।” শেষের কথা গুলোয় বেশ একটা নরম গলার স্বর পেলাম। সচরাচর এরকম জ্ঞান শোনার পর স্যারের পা ছুয়ে প্রনাম করতে হয়। কিন্তু কেন জানি না প্রনাম না করে আমি ডান হাতটা বাড়িয়ে দিলাম হ্যান্ডশেক করার উদ্দেশ্য। স্যারও হাতের সিগারেটটা ফেলে দিয়ে রুমাল দিয়ে একবার ডান হাতের চেটোটা মুছে নিয়ে আমার সাথে হাত মিলিয়ে দুবার ওপর নিচে ঝাঁকিয়ে দিলেন। গাড়ি চড়ে নিজেই ড্রাইভ করে বেড়িয়ে গেলেন। আমি কলেজের গেট দিয়ে বেড়িয়ে এসেই একটা ট্যাক্সি ধরে নিলাম। মোবাইলে একবার সময় দেখে নিলাম। সময় আছে হাতে। একটা সিগারেট ধরালাম জানলার কাঁচ নামিয়ে।
বিশাল বড় ইলেক্ট্রনিক্সের জিনিস প্ত্রের দোকান। আমি এসেছি একটা ভালো ল্যাপটপ কিনতে। দোকানে ঢোকার সাথে সাথে একজন ইউনিফর্ম পরা সেলসম্যান এগিয়ে এসে কি নিতে এসেছি জানতে চাইল। আমি বললাম “ল্যাপটপ।” ও একজনকে ডেকে আমাকে ল্যাপটপ সেকশনে নিয়ে যেতে বলল। দ্বিতীয় লোকটা আমার সামনে ওদের কাছে কি কি ল্যাপটপ আছে তার একটা বিশাল লিস্ট পড়তে যাবে যাবে করছে এমন সময় আমি পকেট থেকে একটা ভাঁজ করা কাগজ বের করে ওর হাতে ধরিয়ে দিলাম। “এরকম চাই। “ লোকটা খুব মন দিয়ে কাগজের লেখাটা বার দুই তিনেক পড়ল। আমার মুখের ওপরও বার দুই তিনেক চোখা বোলাল ও। আমার বয়স দেখে বোধহয় বিশ্বাস করতে পারছে না যে এই বয়সের ছেলে এত ভয়ানক একটা ল্যাপটপ কিনতে এসেছে। লোকটা মাথা নেড়ে বলল “না। এরকম ল্যাপটপ হবে না। তবে এর ধারে কাছে বেশ কিছু জিনিস আছে আমাদের কাছে। যদি দেখতে চান তো…” আমি থামিয়ে দিয়ে বললাম “না। ধারে কাছ দিয়ে গেলে হবে না। ঠিক এটাই চাই। “ লোকটা বলল “স্যার কি কাজে ব্যবহার করবেন যদি বলেন, তাহলে হয়ত আমি বলতে পারি যে এর থেকেও শস্তা কোনও ল্যাপটপে আপনার কাজ হয়ে যাবে কি না।” বললাম “কাজ জেনে কি হবে। কিনলে বেস্ট জিনিস কিনব। নইলে আর কিনে কি লাভ।” কাচুমাচু মুখ করে বলল “সরি স্যার এটা হবে না। আর তাছাড়া এর দাম অনেক…” ইতিমধ্যে কালো ব্লেজার পরা একজন আমাদের দিকে এগিয়ে এসেছে। “কি ব্যাপার?” বুঝলাম ইনি সেলসম্যানদের ম্যানেজার বা লিড টাইপের কেউ। আগের লোকটা এই ব্লেজার পরা লোকটার হাতে নিরবে আমার দেওয়া কাগজটা ধরিয়ে দিয়ে বিদায় নিল। লোকটা একবার আগা গোরা কাগজটা পড়ে নিয়ে বলল “কিসে পেমেন্ট করবেন?” বললাম “চেক।” বলল “এর কত দাম হয় জানা আছে তো?” আমি শুধু হাসলাম কিছু বললাম না। “আসুন, এই সোফায় বসুন। আমি আসছি। “ লোকটা চলে গেল আমার দেওয়া কাগজটা আমার হাতেই ফেরত দিয়ে। দোকানে এখন বেশ ভিড়। অন্য কারোর দিকে নজর দেওয়ার মতন সময় কারোর নেই। চারপাশটা একবার দেখে নিলাম। দোকানের এখানে ওখানে সিকিউরিটি ক্যামেরা বসানো আছে। বিলিং কাউন্টারেও দেখলাম একটা বেশ বড় লাইন। সেলসম্যানরা এদিক ওদিক ব্যস্ত ভাবে দৌড়াদৌড়ি করে চলেছে। প্রায় মিনিট কুড়ি পরে কালো ব্লেজার পরা লোকটা ফেরত এলো। ডান হাতে একটা বড় অ্যাটাচির মতন জিনিস। আর অন্য হাতে একটা ল্যাপটপের ব্যাগ মুড়ে ভাঁজ করা। অ্যাটাচির মতন জিনিসটা আমার পাশে সোফায় রেখে ল্যাপটপের ব্যাগটা আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে গম্ভীর ভাবে বলল “এটা ফ্রি। আর কিছু চাই?” আমি বললাম “ ল্যাপটপের সাথে লাগে এমন যা কিছু আপনার জরুরি বলে মনে হয় সেগুলো এই ব্যাগটায় ভরে দিলে আমার বেশ ভালো লাগতো। ও হ্যাঁ একটা কথা। আচ্ছা ইন্টেরনেটের ব্যাপারে আপনাদের এখানে কোনও সাহায্য পাওয়া গেলেও আমার বেশ ভালো লাগতো। ” একটু থেমে বললাম “আমার কিন্তু আনলিমিটেড ইন্টারনেটে অভ্যাস। সেটা হলেই মঙ্গল।” লোকটা একটু হেঁসে আমার হাত থেকে ল্যাপটপের ব্যাগটা নিয়ে আবার চলে গেল। আমি সোফায় রাখা বাক্সটা একবার হাতে তুলে নেড়ে চেড়ে দেখে নিলাম। কিছুক্ষণ পর লোকটা আবার ফেরত এলো। বললাম “টোটাল কত হয়েছে?” বলল “ল্যাপটপের দাম এমনিতে পড়ে…” আমি ওকে থামিয়ে দিয়ে বললাম “টোটাল ফিগারটা একবারে বললে আমার বেশ ভালো লাগতো।” জবাব এলো “চার লাখ চৌত্রিশ হাজার।” আমি আমার নিজের ব্যাগের ভেতর থেকে একটা ভাঁজ করা চেক বার করে ওর হাতে ধরিয়ে দিয়ে উঠে দাঁড়ালাম। ও নিজের বুক পকেট থেকে একটা বিলের মতন কাগজ বের করে আমার হাতে ধরিয়ে দিল। হ্যান্ডশেক করে বললাম “আপনার সাথে কথা বলে বেশ ভালো লাগলো।” দুই কাঁধে দুটো ল্যাপটপের ব্যাগ আর ডান হাতে ওই ভারী বাক্সটা নিয়ে বাইরে বেড়িয়ে এলাম। গেটের মুখে একজন সিকিউরিটি বিল দেখতে চাইল। আমি বুক পকেট থেকে লোকটার দেওয়া কাগজটা ওর হাতে দিয়ে দিলাম। কাগজে একটা ফুটো করে আমার হাতে হাঁসি মুখে ফেরত দিয়ে দিল। বেড়িয়েই একটা ট্যাক্সি ধরলাম। এইবার হোটেলে ফিরতে হবে। কিন্তু না। ট্যাক্সিটা আমি একটু আগেই ছেড়ে দিলাম।
সকালেই দৌড়নোর সময় দেখেছিলাম এই মদের দোকানটা। একটা বড় হুইস্কির বোতল কিনলাম। মদের দোকানের তিনটে দোকান পরে একটা একটা বড় হার্ডঅয়ারের দোকান। ওখানে থেকে প্রয়োজন মতন কয়েকটা শক্ত পোক্ত অথচ ছোট খাটো জিনিস কিনে খালি ব্যাগটায় ভরে নিলাম। এখন রাস্তায় লোক আর গাড়ির ভিড়ে তিল ধারনের জায়গা নেই। প্রতি পদে কারোর না কারোর সাথে ধাক্কা খাচ্ছি। ধীরে ধীরে হাঁটতে হাঁটতে গেলাম সকালের সেই লেকের ধারে। গেটের সামনে দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় খেয়াল করলাম অনুচ্চ গেটটায় তালা মারা আছে। ভেতরে কোনও আলো নেই। বুঝলাম এখানে রাতের বেলায় আসা বারণ। আমি আরেকটু এগিয়ে গিয়ে একটা জায়গায় চায়ের দোকান পেয়ে বেঞ্চে বসে পড়লাম। একটা সিগারেট জ্বালিয়ে একটা চায়ের অর্ডার দিলাম। এখান থেকে লেকের পাশের পাঁচিল আর গেটটা ভালো ভাবে দেখা যায়। নাহ, এক কাপ চা খেয়ে উঠলাম না। প্রায় দশ কাপ চা খেলাম আর সেই সাথে প্রায় এক ডজন সিগারেট ধ্বংস করলাম। অনেকটা সময় কাটাতে হবে। অবশেষে উঠে পড়লাম। হোটেল মুখো রওয়ানা হলাম। সকালে দৌড়ে এসেছিলাম বলে বুঝতে পারিনি, কিন্তু এখন তিনটে ব্যাগ নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে বুঝতে পারলাম যে জায়গাটা হোটেল থেকে বেশ দূরে। পায়ে হেঁটে হোটেল ফিরতে অনেকক্ষণ লেগে গেল। ঘড়িতে দেখলাম ৯ টা বাজতে যায়। রিসেপশনে গিয়ে বললাম “রুম ১০৭।” সকালে যখন বেড়িয়েছি তখন মালিনী ছিল না। অন্য একজন মেয়ে ছিল। এখন দেখলাম মালিনী দাঁড়িয়ে আছে। বেশ হাঁসি হাঁসি মুখ করে আমার হাতে ঘরের চাবি ধরিয়ে দিল। ওর সাথে চোখা চুখি হতেই আমি চোখ ঘুরিয়ে নিলাম। কিন্তু একটা ব্যাপার লক্ষ্য করলাম। কাউন্টারে এখন বেশ কয়েকজন লোক ছিল। কিন্তু তারই মধ্যে মালিনী সবার দৃষ্টি এড়িয়ে নিজের নরম হাতটা দিয়ে আমার ডান হাতটা একবার চেপে ধরল কয়েক সেকন্ডের জন্য। হাত ছাড়ানোর দরকার হল না কারণ ও নিজেই হাতটা সরিয়ে নিয়েছে সময় মতন। উফফ কি নরম মাইরি ওর হাতটা। আমি ওর দিকে ফিরেও তাকালাম না। সোজা লিফটের সামনে এসে দাঁড়ালাম। একজন রুম বয়ের সাথে চোখাচুখি হল। আমাদের দুজনের ঠোঁটের কোণায় একটা অস্ফুট হাঁসি খেলে গেল। লোকটা মাথা নাড়িয়ে ইশারায় জিজ্ঞেস করল সব ঠিক আছে তো? আমিও হেঁসে মাথা নাড়িয়ে বুঝিয়ে দিলাম যে সব ঠিক আছে। ঘরে ঢুকেই প্রথম কাজ যেটা করলাম সেটা হল ডিনারের অর্ডার দেওয়া। সেই দুটো রুটি খেয়েছিলাম কোন বেলায়। তারপর থেকে একদম উপোষ। তারপর আর দেরী না করে বোতল খুলে বসলাম। অবশ্য নিচে ফোন করে আইস আর ঠাণ্ডা জল দেওয়ার জন্য বলে দিয়েছিলাম। মদ খেতে খেতে ল্যাপটপটাকে অন করে সেটা নিয়ে বসলাম। বলাই বাহুল্য যে এত লাখ টাকার ল্যাপটপ ভালোই হবে। শুধু ভালোই নয় অনেক কিছু এই ল্যাপটপে বসেই করা যায় যেগুলো সাধারণ ল্যাপটপে করতে গেলে ল্যাপটপ হ্যাং করে যাবে। ইন্টারনেটের জন্য একটা ইউ এস বি স্টিক নতুন ল্যাপটপের ব্যাগে ভরে দিয়েছে লোকটা। কয়েক মুহূর্ত মাত্র লাগল কানেক্ট করতে। ব্যাগের ভেতরে আর কি কি প্রয়োজনীয় জিনিস ও আমাকে দিয়েছে সেগুলো এক এক করে হাতে নিয়ে ভালো করে দেখে নিলাম। দামি মোবাইলটা অন করেছি। ল্যাপটপের একটা ছবি তুলে মোবাইলটাকে ল্যাপটপের সাথে কানেক্ট করলাম। ছবি ট্রান্সফার শেষ করে ফেসবুকে আপলোড করে ক্যাপশন দিলাম “ ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে এসে প্রথম ল্যাপটপ। বেশ ভারী কিন্তু অনবদ্য কনফিগারেশন। ব্যবহার করে বেশ ভালো লাগলো।” দেখলাম আগের পোস্ট করা ছবিগুলোতে প্রচুর কমেন্ট পড়েছে। কমেন্ট পড়ার এখন সময় নেই। মোবাইলটা থেকে বেশ কিছু জিনিস ল্যাপটপে ট্রান্সফার করে ফেললাম চটপট। এদিকে প্রথম গ্লাস শেষের পথে। ল্যাপটপে আরও কিছু প্রয়োজনীয় কাজ সারতে সারতে ডিনার এসে গেল। আমি উঠে শুধু আমার মোবাইলটা আলমারিতে ভরে রেখে দিলাম দরজা খোলার আগে। আজ তন্দুরি রুটি আর কষা পাঁঠার মাংস অর্ডার করেছি। তার সাথে দু প্লেট আলুভাজা। আলু খেতে আমার ভালোই লাগে। আলু না খেলে এত আলুর দোষ সচরাচর হয় না। ডিনার দিতে যে এসেছিল নতুন কেনা ল্যাপটপটা তার নজর এড়ায়নি। তার চোখে এক মুহূর্তের জন্য হলেও একটা বিস্ময়ের ঝিলিক খেলে গেল। ল্যাপটপে বসে আরও অনেক কাজ করতে হবে আজই। কিন্তু গরম গরম খাবারের গন্ধ আমার নাকে ঢুকতেই সব কিছু কেমন যেন গুলিয়ে গেল। সব মানসিক আর শারীরিক কন্ট্রোলের বাঁধ ভেঙ্গে গেল এক নিমেষে। দ্বিতীয় গ্লাসটা এখনও অর্ধেক বাকি। এক ঢোকে বাকি গ্লাসের পানীয় গলায় ঢেলে দিয়ে খেতে বসে পড়লাম। আগে ডিনার তারপর বাকি সব।
খাওয়া সেরে উঠে প্লেটগুলো বাইরে রেখে এসে তৃতীয় বার গ্লাসটা ভরে নিলাম। ডিনারের অর্ডার দেওয়ার সময় আরও দু-একটা জিনিসের অর্ডার দিয়ে দিয়েছিলাম। এইবার ওদের ক্যান্টিনে আরেকবার ফোন করে জানিয়ে দিলাম যে আধা ঘণ্টা পরে আরও কিছু বরফ, একটা ঠাণ্ডা জলের বোতল আর আগের বার যেটা আনতে বলেছিলাম সেটা যেন পাঠিয়ে দেওয়া হয়। গ্লাসে একটা চুমুক দিয়ে সোজা হয়ে বজ্রাসনে বসে পড়লাম। ছোট বেলাকার অভ্যাস। খেয়ে উঠে অন্তত হাফ অ্যাঁন আওয়ার বজ্রাসনে বসে প্রানায়ম করি যাতে খাবার খুব তাড়াতাড়ি হজম হয়। আজ অব্দি যা ফল পেয়েছি তাতে এই অভ্যেসটা ছাড়ার কোনও প্রশ্ন ওঠে না। এই সব কাজ আমি অ্যাঁলার্ম সেট করে করতে বসি। এবারও তার অন্যথা হল না। অ্যাঁলার্ম বাজার পর বজ্রাসন ভেঙ্গে একটু সোজা হয়ে বসে নিঃশ্বাস প্রশ্বাসটাকে স্বাভাবিক করছি, ঠিক এমন সময় দরজায় ধাক্কা। আজ রাতে অনেক কাজ। একটু মদ খেতে হলে খালি মুখে খেতে পারি না। তাই দুই প্লেট স্যালাড আর দুই প্লেট চিকেন টেংরি কাবাব বলে রেখেছিলাম। আমি যে খুব খাদুকে সেটা বলে দিতে হয় না। খাবার রেখে ছেলেটা চলে গেল। আমিও সেই ভয়ানক মোবাইল, দামি ল্যাপটপ আর আমার সেই বাদামি রঙের ডাইরিটা খুলে বসে পড়লাম। মোবাইল আর ল্যাপটপ দুটোই নেটে কানেক্টেড। এই বেলা কিছু কাজ সেরে রাখা দরকার। ক্লাসে অনেক নোটস দেয় ঠিকই। কিন্তু অসাধারান কিছু করতে হলে ইন্টারনেট থেকে সব কিছুর ব্যাপারে যত বেশী জানা যায় সবটাই তুলে নেওয়া ভালো। এটাই আমার পড়াশুনার নিয়ম। আর তাই আমি ক্লাসের বাকি দের থেকে অনেক বেশী এগিয়ে। অবশ্য একটা ব্যাপার স্বীকার না করে পারব না, সেটা হল এই যে, এখানে আমার বয়সও বাকিদের থেকে বছর দুয়েক হলেও বেশী।
কাবাব আর স্যালাড শেষ। পাঁচ নম্বর গ্লাস শুরু হয়েছে সবে। ল্যাপটপে কাজ এখনও শেষ হয় নি। নেশা আমার খুব কম হয়। কিন্তু সমস্যা হল কাল যে খুব ভোরে উঠতে হবে সেটা কাজের চাপে পুরো ভুলে মেরে দিয়েছিলাম। সম্বিত ফিরল। দরজায় খুব মৃদু ঠকঠক শব্দ। মোবাইলে সময় দেখলাম। রাত ১ টা বেজে ১৫। ল্যাপটপ, মোবাইল আর ডাইরি, সব বন্ধ করে আলমারিতে পুড়ে দিলাম। দরজায় ঠকঠক শব্দটা হয়েই চলেছে। কিন্তু আমি দরজা খোলার কোনও রকম তাড়া দেখালাম না। গ্লাসে আরেকটা বড় চুমুক দিয়ে বুক ভরে একটা গভীর নিঃশ্বাস টেনে নিয়ে অবশেষে গিয়ে দরজা খুললাম। অনুমান নির্ভুল। মালিনী।