Written by Anangapal
।। ৯ ।। স্মৃতিচারণঃ প্রোষিতভার্যা
ল্যাপটপটা খোলা, যদিও তার পর্দা ঢাকা নিকষ অন্ধকারে। ঘরের একটিমাত্র জানলা, উঁকি দিলে রাতের আকাশ দেখা যায়। বৃত্তাকার চাঁদ সেখানে আলো ছড়িয়ে চলেছে এখনও। তবে সন্ধের মত অত উজ্জ্বল নয়। খানিক বাদেই অস্ত যাওয়ার পালা, হয়তো তাই খানিক বিষণ্ণ; ফ্যাকাসে মুখে মৃদু ছায়া। মায়াময় জ্যোৎস্নার ছোট্ট একটা ভগ্নাংশ আপন খেয়ালে ঢুকে এসেছে এই চিলেকোঠার ঘরে। অস্পষ্ট আলো মেখে ঘরের সামান্য ক’টা আসবাব আধা-দৃশ্যমান, হঠাৎ দেখলে মনে হয় যেন কারা বসে আছে নিশ্চুপে। আর বসে আছে ঘরের মালিক, যে আগামী ভোরেই পাড়ি দেবে দু’হাজার কিলোমিটার দূরের এক শহরের উদ্দেশে, অনির্দিষ্টকালের জন্য যার পায়ের চিহ্ন পড়বে না এই ঘরে। বসে আছে ল্যাপটপের আঁধার ঘেরা পর্দার দিকে চেয়ে। ‘স্লিপ’ মোডে থাকার দরুণ কিপ্যাডের অস্তিত্ববাহী প্রতিপ্রভ আলোক বিচ্ছুরণে আঁধার খানিক তরল, চোখ সয়ে গেলে সে পর্দায় নিজের আবছায়া প্রতিচ্ছবি দেখা যায়। ঐ প্রতিবিম্ব কি বাস্তব, না কোনও স্বপ্নলোকের বাসিন্দার? কিছুক্ষণ আগে সে-ই কি নিজের প্রেমিকার সাথে চ্যাটে মগ্ন ছিল এই চেয়ারে বসে? সামনের ল্যাপটপের পর্দা তখন বৈদ্যুতিন উদ্ভাসে আলোকিত, আন্তর্জালের কারসাজিতে পর্দার ওপ্রান্তে ভেসে উঠেছিল প্রিয়ার মুখ। জানলার দিকে চোখ চলে যায়।
বাড়িতে এখনও বলিনি ওর কথা। যথাসময়ে সে সংবাদ প্রকাশিত হবে এবং কোনও আপত্তি আসার সম্ভাবনাও ক্ষীণ। তবু বাড়ির আর সকলের কাছে আমি আপাতত সিঙ্গল। হয়তো সেজন্যই এখানে সকলের চোখ-কান এড়িয়ে ফোনে ওর সাথে প্রেমালাপ করলে এত বছর পরেও নিষিদ্ধ প্রণয়ের রোমাঞ্চ জাগে। ফোনে আদর-ঝগড়া-খুনসুটি সারার পরে যতবার বাইরে একচিলতে আকাশের দিকে তাকিয়েছি, ওকেই দেখেছি। নীল আকাশে পেঁজা তুলোর মাঝে, বর্ষার মুখভার চিত্রপটে, প্রখর নিদাঘের খাঁ খাঁ মধ্যাহ্নে, হিমঋতুর কুয়াশার অস্বচ্ছ চাদরের ফাঁকে, সোডিয়াম ভেপার প্রতিফলিত রাতের আকাশে তারাদের চালচিত্রে। প্রতিবার আসমানের ক্যানভাসে ফুটে উঠেছে চিরচেনা দুই আয়ত চোখ, আর কল্পনা করেছি সে সুন্দরীকে নিজের বাহুপাশে, এই ঘরের মধ্যে। নানা ভাবে, নানা ভঙ্গিমাতে। জানলার ধারে দাঁড়িয়ে আনমনে এলো চুল মেলে দিয়েছে ও, আর আমি সে উন্মুক্ত কেশরাজির আঘ্রাণ নিতে নিতে তার মাঝে হারিয়ে গিয়েছি স্বর্গসুখে। কখনও সে চেয়ারে-বসা আমায় পিছন থেকে এসে জড়িয়ে নিয়েছে নিজের বুকের ওম-এ, কানে কানে অস্ফুটে শুনেছি প্রেমমুগ্ধা নারীর সোহাগ-সম্ভাষণ। সিঙ্গল খাটের একচিলতে পরিসরে দুজন দুজনের শরীরের উত্তাপে গলে মিশে একাকার হয়েছি অজস্রবার। কল্প-রমণের শেষে রমণী পরিশ্রান্ত, তার চুলের ঢেউয়ে দেখেছি ভোরের প্রথম আলোর নরম প্রতিফলন। নির্নিমেষ বিস্ময়ে চেয়ে থেকেছি আয়তাক্ষীর দিকে।
“খোলা জানালার ধারে মাথা রেখে
কত শিশির পড়েছে কবরীতে
কেন ঊষার আলোকে মিশে আমি
আহা পারিনি তোমায় ডেকে দিতে”
টেবিল-ঘড়ির টিকটিক ছাড়া আর কোনও শব্দ মগজে প্রবেশ করছে না। বাধ্য হয়ে উঠে পড়ি, অন্ধকারের মধ্যে আর কাঁহাতক বসে থাকা যায়! দরজার একপাশে অসম্পূর্ণ গুছিয়ে রাখা ট্রলিব্যাগ ও অন্যান্য সরঞ্জাম, সন্তর্পণে তাদের পেরোলেই চৌকাঠ, তারপর প্রশস্ত ছাদ। বাতাসে এখনও হিমেল কামড়। কিন্তু অস্থির মন সেসবের পরোয়া করে না। দিগন্তবিস্তৃত নীল শামিয়ানার নীচে এসে দাঁড়াতেই এতক্ষণের গুমোট ভাব উধাও। আঃ, শান্তি। মন বুঝি দখিনা হাওয়ার পরশের জন্য উন্মুখ হয়ে ছিল। বিনিদ্র রাত্রিযাপনের শ্রান্তিতে চোখ জুড়িয়ে আসতে চায়। সাথে সাথে মনের বায়োস্কোপে সচল কয়েক ঘণ্টা আগের স্মৃতিরা।
…
জেঠুর শ্যালক-দম্পতিকে বিদায় জানাতে গিয়ে বেকার খরচ হয়ে গেল পাক্কা দশটা মিনিট। কোনও মানে হয়? উদ্বাহবন্ধনের আসরে এলেই বয়স্কা মহিলাদের সামাজিকতা যেন উথলে ওঠে! পাঁচ বছরে সাকুল্যে একবার যার সঙ্গে দেখা, আধ ঘণ্টার সুযোগে তার নাড়ি ও নক্ষত্রের বায়োডেটা না নিলে বোধহয় এদের রাধাবল্লভীগুলো হজম হয় না। সিঁড়ি দিয়ে দুদ্দাড়িয়ে উঠতে উঠতেই দূরভাষে সংযোগ স্থাপনের চেষ্টা, কিন্তু এ যে বেজেই চলেছে… ব্যাপারটা কি? ঘুমিয়ে পড়ল নাকি? অধৈর্য হয়ে আবার ফোন, আবার। তৃতীয় বারেও বেজে বেজে কেটে যাওয়ার ঠিক প্রাকমুহূর্তে ওপাশ থেকে সাড়া, “উফফ একটু টয়লেটে গেছি কি কলের পর কল করতে লেগেছে!”
যাক, ধড়ে প্রাণ এল, অন্তত ঘুমিয়ে পড়েনি। আজ রাতটা কথা না বলে কাটাতে হলে উত্তেজনার চোটে যে কি দশা হত… একহাতে তত্ত্বের ট্রে আর অন্য কানে মুঠোফোন ব্যালান্স করার ফাঁকে কোনওমতে ঘরের তালাটা খোলার চেষ্টা করতে থাকি, “তুইই তো বললি বাড়ি গিয়ে ফোন করতে”।
“বাব্বাঃ, অন্তুবাবুর আর তর সইছে না দেখছি! রিং করেই যাচ্ছে, করেই যাচ্ছে, কি ব্যাপার?”, আমার যেমন ওকে রাগানোর জন্য বিশেষণ ‘পিপি’, ‘সতীরানী’, ওরও পাল্টা সম্ভাষণ ‘অন্তুবাবু’।
“ব্যাপার আর কি, তুই তো বলবি কি হল না হল”, সোজাপথে না গিয়ে বরং সাবধানে খেলি।
“হুম্ম, তোর রিসেপশান এত ফাস্ট শেষ হয়ে গেল?”, এ যে দেখি কথাটা এড়িয়ে যায়।
“না এখনও চলছে, তবে ভাঙা হাট, শেষ হওয়ার দিকে”
“আর তুই বাড়ি চলে এসছিস?”, মৃদু কৌতুকের আভাস ওর গলায়।
“ওদের কখন হবে কে জানে, বেকার বোর হয়ে কি লাভ, তাই কেটে পড়লাম”
“তাই? আর কোনও reason নেই?”
“আর কি কারণ থাকবে?”, বোকা সাজার একটা শেষ চেষ্টা।
“How do I know?”, পাল্টা ন্যাকামি… যা শুধু ওকেই মানায়।
“I was missing you “, এবারে আমি অকপট।
“উম্মম্মম্ম… রিয়েলি???”, গলাটা ঠিক আদুরে বিড়ালিনীর মত, তাতে ঝরে পড়ছে প্রশ্রয়-আদর-প্রেম…
“Yes, the entire day. You can’t imagine “, বিস্তারিত হয়ে লাভ নেই, এটুকুই বলি।
“Why? Were you jelous?”
“Sort off… তুই বল এবার কি করলি সারাদিন, এতক্ষণ ফোনই বা করিসনি কেন?”, অনেক অনেক ক্ষণ থেকে বালির বাঁধ দিয়ে আটকে রাখা প্রশ্নের স্রোত আর বাধা মানতে চাইছে না।
“হুম্ম সেটা বলব বলেই I called you”, আহ্লাদী গলায় হঠাৎই সতর্কতার সুর।
কয়েক সেকেণ্ডের নীরবতা। দু’পারেই। বুঝতে পারছি না কি বলব, ও-ও চুপ করে আছে, হয়তো মানসিক প্রস্তুতি নিচ্ছে। আমার বুকে মৃদু ঘা পড়তে আরম্ভ করেছে …
“উম্ম তুই কি স্কাইপে আসতে পারবি? লেট হয়ে যাবে না তো?”
“না না, অফ কোর্স পারব”
“শিওর হানি? কাল কিন্তু তোর আর্লি মর্নিং ফ্লাইট”
“আরে কোনও চাপ নেই, আমি এখনই লগ ইন করছি”
“এখন না, একটু বাদে। আমি মাম্মার সাথে কথা বলে নিই, কেমন?”
“ওকে”
কথোপকথনে দাঁড়ি পড়তেই গা ঝাড়া দিয়ে উঠলাম, খুব দ্রুত কিছু কাজ সারতে হবে। ল্যাপটপের পাওয়ার অন করে ইন্টারনেটে সংযোগ স্থাপিত হতে কয়েক সেকেণ্ডের বিলম্ব, তারই মধ্যে জবর জং সাজপোষাক ছেড়ে ঘরোয়া বেশ ধারণ। স্কাইপে কানেক্ট করতে করতেই চোখে পড়ল খাটের কোণে রাখা ট্রেটার দিকে। ওটার জন্য পরে রসভঙ্গ হতে পারে, তার চেয়ে ভাল এখনই দোতলায় যথাস্থানে জমা করে আসি। ক্ষিপ্রগতিতে রেখে ফিরে আসতে গিয়ে আরেক বিপত্তি, বড় এবং ছোট দুই পিসিই ফিরে এসেছেন! তাদের মুখোমুখি হওয়া মানেই একপ্রস্থ জেরা চলবে বেশ কিছুক্ষণ। শেয়ালের কুমির ছানা দেখানোর মত আবারও ব্যাগ গোছানোর অজুহাত দিলাম, সঙ্গে এবারে লেজুড়, “খুব টায়ার্ড লাগছে, তাড়তাড়ি শুয়ে পড়ব, কাল ভোরেই আবার বেরোনো আছে”। ভাগ্য সহায়, এতেই পরিত্রাণ মিলল। পিসিমা-জেঠিমাদের সামনে ‘বাছার স্বাস্থ্য’-রূপী বাণের এই ঘোর কলিতেও মার নেই!
কিন্তু এখনও তো তার কোনও সাড়াশব্দ পাওয়া যাচ্ছে না। না মেসেজ, না মিসড কল, স্কাইপেতে তার লাজুক হাস্যোজ্জ্বল মুখের পাশে সবুজ বাতিটাও নিষ্প্রভ। অগত্যা অপেক্ষা। এক একটা সেকেণ্ড যেন এক একটা প্রহর। কড়িকাঠের দিকে হাঁ করে তাকিয়ে আছি, নীচ থেকে একে একে সকলের আগমনের সংবাদ রাত্রির বুক চিরে ভেসে আসছে চিলেকোঠার ঘর পর্যন্ত। একটাই ভরসা, আলো নেভানো আছে, আজ আর কেউ বিরক্ত করতে আসবে না বোধহয়। এমনিতেই ঘুম উড়ে গেছে দুচোখের পাতা থেকে। কাল সকালে উঠতে প্রাণান্ত হবে।
কত ঘণ্টা, কত মিনিট, কত সেকেণ্ড তার হিসেব জানা নেই, তবে কোনও এক সময় দেবীর করুণা হল। স্কাইপের জানলায় তার কল-আগমনের মিঠে সুর। তড়িঘড়ি কল অ্যাকসেপ্ট করার পর মুহূর্তেই ছোটখাট ধাক্কা বুকের বাঁদিকে। এলোকেশী প্রেয়সী ল্যাপটপ সামনে রেখে খাটে আধশোয়া, অঙ্গে দ্বিস্তরীয় অর্ধস্বচ্ছ হাউসকোট। রাত্রিবাসের নামমাত্র আবরণের ভিতর দৃশ্যমান পরিচিত মানবীশরীরের সবকটি রেখা, যাবতীয় বাঁক। অবাধ্য চুলের রাশি ছড়িয়ে পড়েছে গ্রীবায়, কাঁধে, বুকের উচ্চতায়। দুপুরের প্রসাধনের অবশিষ্টাংশ এখনও লেগে ইতিউতি, গালে হাল্কা রক্তাভা। দুচোখের নীচে কাজলের সাথে ক্লান্তির আলতো প্রলেপ মুখখানা আরও মোহময়ী করে তুলেছে। ঠোঁটে ঈষৎ চটুলতা খেলা করছে নাকি আমারই দেখার ভুল, কে জানে? বঙ্কিম গ্রীবার নীচে শুরু প্রশস্ত ঢালের মসৃণতায় ঘরের আলো পিছলে কি অপূর্ব বিভ্রম! স্বল্পদৈর্ঘ্যের রাতপোষাকের বাঁধন উপেক্ষা করে ফণা তুলে রয়েছে উদ্ধত দুই স্তন, স্বচ্ছ আবরণের ভিতর প্রকট তাদের শীর্ষে জেগে থাকা পাকা টসটসে খয়েরিবর্ণ করমচা-রা। স্বাভাবিক আলস্যে পায়ের উপর পা ভাঁজ করে রাখায় হাউসকোট উত্থিত অনেকটাই, ফলে উন্মুক্ত হয়ে পড়েছে জোড়া কলা-বৌ। তাদের সুঠাম পেলবতায় প্রতিফলিত হচ্ছে মায়াবী নৈশ-আলো, তরঙ্গ যোগাযোগের এপারে থাকা নির্বাক প্রেমিকের দু’চোখ ধাঁধিয়ে দিয়ে। আঁখির তারায় মিলনের তৃষ্ণাভরা মদির কটাক্ষ, বিদ্ধ করছে দয়িতকে। অনুচ্চারিত আহ্বানের হাতছানি দেহের পরতে-পরতে। মুহূর্তেকের জন্য শ্বাসরোধ হয়ে এল, কি অসামান্য দমবন্ধ করা সৌন্দর্য, চোখ ফেরানো যায় না! দুপুরের সুসজ্জিতা আর খোলামেলা এই রূপসী কি একই নারী?
“অ্যাই, কি দেখছিস হাঁ করে?”, জলতরঙ্গের আওয়াজে সম্বিৎ ফিরল। মুখে কোনও কথা জোগাচ্ছে না, অনেক কষ্টে দু’টো অক্ষর উচ্চারণ করতে পারলাম…
“তোকে”
“কেন আমি কি আলিপুর জু’র বাঘ?”
“না”
“দেন?”
“বাঘিনী”
“Whatt???”
একটু দম নিলাম, বাতাসের অভাবে কথা বলতেও কষ্ট হচ্ছে।
“স্বর্গের অপ্সরা দেখেছিস?”
“Now don’t give me that crap যে আমায় অপ্সরা লাগছে, এগুলো আজকাল বস্তাপচা হয়ে গেছে”
“না তোকে মোটেও অপ্সরাদের মত লাগছে না”, এই উত্তরের জন্য প্রস্তুত ছিল না একেবারেই।
“Then?”, ক্ষীণকণ্ঠে প্রশ্ন ভেসে এল।
“তোকে দেখলে তারাও জেলাস হয়ে পড়ত”
“Oh come on, this is very bad ”
“সিরিয়াসলি, ইন্দ্র তোকে দেখে এক সেকেণ্ডেই বের করে দিত”
“মানে?”
“আর শুধু ইন্দ্র কেন, বিষ্ণু-শিব-সূর্য-চন্দ্র, মায় ব্রহ্মাবুড়োরও তোকে দেখলে দাঁড়িয়ে যাবে”
“ইশশ অসভ্য ছেলে…”
“অসভ্যতার এখনই কি দেখলি, কাল গিয়ে পৌঁছই তার পর দেখাব”
“থাক, খুব হয়েছে”
“আচ্ছা বল এবারে, সারাদিন কি করলি”
সুন্দরীর কলকল সহসাই স্তব্ধ। নতমুখে কি যেন ভাবছে।
“কি রে বল, তোর বয়ফ্রেণ্ডের কি খবর? তোকে আজ শাড়িতে দেখে তারও দঁড়িয়ে গেছিল নিশ্চয়ই”
“উফফ তুই থামবি?”
“Not untill you put your juicy nipples in my mouth ”
এবারে কোনও প্রত্যুত্তর নেই, আনতনয়নে ভেবেই চলেছে। হঠাৎ তাল কাটল নাকি? বেশ তো ছিল এইমাত্র।
“What is the matter baby? Anything wrong? কিছু লুকোস না আমার কাছে, প্লিজ”
একটু যেন ভরসা পেল, শিথিল দেহভঙ্গি মুহূর্তেই টানটান। এক পলক কি ভেবে সরাসরি তাকিয়েছে আমার চোখে।
“লাইটটা একটু জ্বাল”
“কেন?”
“আহহ জ্বাল না! তোর মুখটা ঠিকমত দেখা যাচ্ছে না”
অগত্যা। টিউব না জ্বেলে মৃদু রাতবাতিটা জ্বালালাম, দৈবাৎ কেউ এসে পড়লে ঘুমের ভান করতে পারব।
“এবারে বল, আর টেনশানে রাখিস না আমায়”
“You know, আজ আমার শাড়ি পরে যাওয়া উচিত হয়নি”
মস্তিষ্কের ভিতর সাইরেন বেজে উঠল যেন, হার্টবিটও বোধহয় মিস হল কয়েকটা। যা ভেবে আত্মরতি করেছিলাম সেটাই কি তবে… ?
“And definitely not that blouse “, আমায় নিরুত্তর দেখে ক্ষণেক থামল, তারপর কেটে কেটে উচ্চারিত হল, “He was turned on by me since the moment I set foot in his flat ”
“ও তোকে কেন ডেকেছিল?”, কাঁপা কাঁপা গলায় কোনওমতে জিজ্ঞেস করলাম।
“অফিসেরই দরকারে… জানি তুই বিশ্বাস করবি না এটা…”
“না না, I trust you whole heartedly baby “, পুরোটা জানতে হবে আমায়, যে কোনও মূল্যে। অবশ্য… কথাটা সত্যি, ওকে অবিশ্বাস করার কোনও কারণ নেই আমার দিক থেকে।
“Really Honey? Thank you so much “, ওর চোখেমুখে কৃতজ্ঞতার সাথে চাপা স্বস্তি।
“তারপর কি হল?”, ভিতর ভিতর অধৈর্য হয়ে পড়ছি।
“Yah, actually you know what… I could see a small bulging within his shorts, although he tried his best to hide that. ”
“ওকে, তারপর?”
“We had lunch and then just chatting… I was on his bed, আর ও সামনে চেয়ারে বসেছিল। After sometime আফটার সাম টাইম ও ল্যাপটপে ওর একটা প্রজেক্ট দেখাতে আরম্ভ করল and we were discussing about the problem he is facing… All of a sudden I saw his bulge is growing, I was really surprised but choose to ignore it “, একটু দম নেওয়ার জন্য থামল ও, “Then it was not possible at all to ignore. It was huge!” ওর চোখে লজ্জা, গালেও তার ছোঁয়া লেগেছে। ঈষৎ ত্রস্ত ভাবে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।
আর আমি এই প্রান্তে বাক্যহারা। মুখে কোনও কথা ফুটছে না, উত্তেজনায় শরীরের রক্তকণিকারা দাপাদাপি শুরু করেছে। ওয়েবক্যামের অবস্থানটা একটু আগেই কিঞ্চিৎ ঘুরিয়ে দিয়েছি যাতে ও দেখতে না পায় আমার পৌরুষের কাঠিন্য এখন আমার দৃঢ়মুষ্টির ভিতর, থেকে থেকে প্রবলভাবে নিপীড়িত হচ্ছে নিষিদ্ধ রোমাঞ্চের আস্বাদনে। মুখের পেশীগুলো যথাসম্ভব স্থির রেখেছি, ও বুঝতে না পারে…
আমার প্রতিক্রিয়ায় বোধহয় আশ্বস্ত হল ও, মুহূর্ত কয়েকের জন্য ঠোঁট টিপে কি যেন ভাবছে। দ্বিধাদ্বন্দ্বের সমস্ত চিহ্ন মুছে যাচ্ছে ওর মুখ থেকে, মনকে প্রস্তুত করছে। অবশেষে… দৃঢ়সঙ্কল্পে বলতে শুরু করল,
“After some time I realised what the problem was. As I was leaning towords his laptop, আমার… আমার আঁচল সরে গিয়েছিল… And he could see almost my whole cleavage… ঐ ব্লাউজটা এত ছোট যে… He saw much of these two big gloves. O! God! Honey, His shorts was at its full stretch!”
“কত বড় ছিল ওর… bulging?”
“What? I mean…”, এবারে স্বাভাবিকভাবেই একটু ইতস্তত করছে ও। ওর কথার মাঝে কথা বলে খেইটা নষ্ট করে দেওয়ার জন্য নিজেকে ধমকাচ্ছি, এমন সময় লজ্জামাখা গলায় উত্তর এল, “bigger than yours ”
পাথরের মত মুখে চেয়ে আছি পর্দার ওপ্রান্তে, আমার প্রেমিকার চোখের তারায় বিচিত্র অনুভূতিদের খেলা দেখছি। ওর ধারণাতেও নেই এইমাত্র উদ্গত কি বিশাল বিস্ফোরণকে কোনওমতে চাপা দিয়েছে আমার শরীর, আমার বজ্রমুষ্টি। কেমন একটা ঘোরের মধ্যে আস্তে আস্তে ডুবে যাচ্ছে ও, চোখের পাতা ভারী হয়ে এসেছে, ঠোঁটে কাঁপন ধরেছে তিরতির, এই শেষ মাঘেও কপালে-গলায় বিন্দু বিন্দু ঘাম, নাকের পাটা স্ফুরিত হচ্ছে অনবরত। একটানা ছন্দে বিরামহীন ভাবে বলে চলল,
“I don’t know Honey what happened to me… May be I was stonned… ওর ঐ huse bulging দেখে কেমন আনইজি লাগছিল, শরীরটা আনচান আনচান করছিল, আঁচলটা সরিয়ে যে বুবস গুলো ঢাকা দেব সে ক্ষমতাও ছিল না, যাহোক করে ল্যাপির দিকে কনসেন্ট্রেট করছিলাম… একটুপর বুঝলাম ওর অবস্থাও খারাপ, থেকে থেকে আমার… দিকে তাকাচ্ছে। ও নিজেও সিচুয়েশানটা বুঝেছিল, তাই টেনশানটা কাটানোর জন্য জিজ্ঞেস করল আমি একটু French wine খাব কিনা… অ্যাণ্ড আই ওয়াজ লাইক, ওকে। তো ও wine আনতে গেল and I was trying very hard to catch my breath. আফটার দ্যাট ও ওয়াইনের বটল আর দুটো পেগ নিয়ে এল And we started drinking. আমরা নর্ম্যাল হওয়ার চেষ্টা করছিলাম But from all the tension and his huge… I was still shaking a little, My fingers were shaking and then… I spilled some wine right on top of my boobs! I was so embarrassed Honey, আর আমি হাঁদির মত আঁচলটা না ঢেকেই বসেছিলাম তো ওয়াইন ড্রিপ করে করে আমার… ক্লিভেজে চলে এসছিল, I didn’t know what to do! সঞ্জীব আমার জন্য গিয়ে দৌড়ে একটা টিস্যু নিয়ে এল বাট, বাট… আমাকে দিতে গিয়ে ও নিজেই সাডেনলি মুছতে স্টার্ট করল, I… felt his fingers on my cleavage and he got so turned on that ও… ও ওয়াইনটা আমার বুবস থেকে লিক করতে থাকল! And I was stunned, আমার ওকে আটকানোর ক্ষমতাও ছিল না। ও আমার বুবসগুলো পাগলের মত চুষছিল, টিপছিল, চাটছিল… Like a mad man and suddenly he bite so hard, see.”
মন্ত্রমুগ্ধ শিশুর মত দেখলাম আমার দয়িতার শরীরের এক অপূর্ব বিভঙ্গে হাউসকোটের বহির্ভাগ খসে পড়ল, জ্যামিতি-পরিমিতির নির্ভুল মাপে গড়া উদ্ধতযৌবনা নারীদেহ এখন আচ্ছাদিত সংক্ষিপ্ত একখণ্ড স্যাটিনের কাপড়ে। যৌবনের দীপ্তি ছড়িয়ে পড়ছে গোটা অঙ্গে, অপ্রত্যাশিত অভিজ্ঞতার বর্ণনায় রোমাঞ্চিত রমণীর শরীরে প্রতিটি রোমকূপ জাগ্রত। আর, আর… ডান স্তনের নিটোল মসৃণ ত্বকে, বহু উঁচুতে, স্তনবলয়ের গণ্ডীর কাছে পুঞ্জীভূত রক্তের রঙে আঁকা একটি ছোট্ট ক্ষতচিহ্ন। আমার প্রেমিকার স্তনে তার একলা প্রেমিকের ভালবাসার দংশন-অভিজ্ঞান!
“I slapped him and he came back to sense immediately… ও খুব কান্নাকাটি করছিল, বারবার বলছিল যে ও এই অফিসের চাকরি ছেড়ে দেবে আর আমি যেন ওকে পারলে ক্ষমা করি একদিন। আজ আমার কাছে স্বীকারও করেছে যে ও আমায় প্রথম দিন থেকেই ভালবাসে আর সেজন্যই… আমাদের জুনিয়র ব্যাচের পরিণীতার প্রোপোজাল অ্যাকসেপ্ট করেনি। ছেলেটা খুবই ভাল, He is really a good guy, বারবার বলল যে তোমার বয়ফ্রেণ্ডকে বোলো that he is damn lucky আর ও যেন আমাকে খারাপ না ভাবে, He doesn’t want to be আ কাবাব মে হাড্ডি বিটুইন আস। আমি ওকে অনেক কষ্টে শান্ত করেছি, শেষটায় তো ওকে অনেকক্ষণ বুকে জড়িয়ে রেখে… I was feeling so so weird, তুই ছাড়া আর কাউকে তো কোনওদিন এভাবে হাগ করিনি… But now we are OK, I hope everything will be normal between us hensforth… এই, তুই কিছু বলছিস না কেন? রাগ করেছিস? হানি, কথা বল… কি রে, অ্যাই অন্তু, কি হল??? চুপ করে আছিস কেন, প্লিজ কিছু একটা বল… are you angry Honey? আমাদের মধ্যে কিচ্ছু নেই trust me, it was just an accident, nothing else…”
বাহ্যজ্ঞান লুপ্ত হয়েছে জানি না কতক্ষণ, ওর শেষের কথাগুলো মনে হচ্ছিল সুদূর গ্রহান্তর থেকে ভেসে আসা কিছু অর্ধস্ফুট শব্দ। অনেক কষ্টে শরীরের সব শক্তি জড়ো করে কোনওমতে বললাম, “I trust you baby, এবারে ঘুমোতে যাই, বড্ড ঘুম পাচ্ছে”, তারপরেই স্কাইপে যোগ বিচ্ছিন্ন, অ্যাকাউণ্ট থেকে লগ আউট, ল্যাপটপকে ঘুমের দেশে পাঠানো- অভ্যস্ত যান্ত্রিকতায় কয়েক লহমায় সব সম্পন্ন।
টলতে টলতে উঠে গেলাম লাগোয়া স্নানঘরে, একে একে ছেড়ে ফেলছি টিশার্ট, বারমুডা। শরীরে একটা সুতোও অবশিষ্ট নেই, গোটা গা পুড়ে যাচ্ছে তাপমাত্রায়। জ্বরে নয়, বিজাতীয় কামে। দুচোখ বুজে গেছে, বন্ধ চোখের পাতায় পরপুরুষের সবল আলিঙ্গনে প্রবল ভাবে নিষ্পিষ্ট হচ্ছে প্রণয়িনীর কোমল তনু, তীব্র পেষণে দলিত সুপক্ব পয়োভার, শিকারী দাঁতের আচমকা হানায় ক্ষতবিক্ষত উন্নত স্তনবৃন্তেরা।
কয়েক পল, বা কয়েক যুগ। কিভাবে সময়টার ব্যাখ্যা দেওয়া যায় জানি না। তারপরে সেই অনিবার্য বিস্ফোরণ। ফুঁসতে থাকা কাঠিন্যের মর্মস্থল থেকে ঝলকে ঝলকে বেরোল পৌরুষের সান্দ্র অধক্ষেপ। তরল হয়ে মিশে গেল স্নানঘরের মাটিতে, আমায় কিছুক্ষণের জন্য সম্পূর্ণ নিঃস্ব করে দিয়ে। ক্লান্তি, শান্তি, শ্রান্তি সব একাকার। এবার পরিচ্ছন্ন হওয়ার পালা। বেরিয়ে আসার আগে ধুয়ে দিলাম স্মরগরলের শেষ বিন্দুটুকু।
মোবাইলের উজ্জ্বল পটভূমিতে একটি বার্তা অপেক্ষারত। “I am yours, only yours. Trust me Honey. Call me tomorrow after you reach. Happy journey ” শেষে একটা চুম্বনোদ্যত মুখের অভিব্যক্তি।
দ্বিধাহীন ভাষায় টাইপ করলাম মনের কথা, “you are mine. You always will be. Can’t wait to see you. ”
…
ছাদের আলসে ধরে দাঁড়িয়ে আছি, রাত কত হল খেয়াল নেই। মাথার উপরে নীল চন্দ্রাতপে খোদিত কালপুরুষ, অনাদি-অনন্তকাল ধরে অতন্দ্র প্রহরায় রত। দূর পৃথিবীর ম্লানিমা তাকে স্পর্শ করতে পারে না।
ঘরে ঢুকে এলাম, কিছুক্ষণ পরেই পুব আকাশ লাল হয়ে উঠবে, ভোরের পাখিরা জানান দেবে আমার যাওয়ার সময় হয়েছে। ততক্ষণ যাহোক করে জেগে থাকি। ল্যাপটপের ডালা নামিয়ে রাখলাম, সময়মত ব্যাগে ভরে রাখতে হবে। চেয়ারে বসে আছি আচ্ছন্নের মত, অ্যালার্মের শব্দ কখন কানে আসে সেই ভাবনায় সচল মস্তিষ্কের একাংশ।
মুখের ওপর কার যেন স্পর্শ, কোমলভাবে ছুঁয়ে যাচ্ছে চোখের পাতা, কপালের সমতল, ঠোঁটের কোণ। মুখের রেখায় সোহাগের মৃদু পরশ বুলিয়ে ঘুম পাড়াচ্ছে। কে ও? কার অবাধ্য চুলেরা এসে ঢেকে দিল আমার দৃষ্টি? চোখ মেলে দেখতে চাইছি, ঘন আঁধারে কিছুই ঠাহর হয় না। শুধু অনুভবে ধরা পড়ে কে যেন আলতো জড়িয়ে রয়েছে, অহর্নিশি। ঐ তো এক চিলতে আলো এসে পড়ল তার মুখে। বিস্রস্ত ঘন কেশ মুখময় এলোমেলো ছড়িয়ে, নিশ্চিন্তে বোজা দু’খানি চোখে খেলা করে যায় দেয়ালা।
“খোলা জানালার ফাঁকে আলো-ছায়া
দেখো তোমার নয়নে খেলা করে
শুধু মাধবীলতার ফুলগুলি
ঐ ঘুমের আবেশে ঢলে পড়ে”
কাক ডাকছে। জানলার ফাঁক গলে ঢুকে আসা ভোরের বালার্কচ্ছটায় ঘুম ভেঙে গেল, স্বপ্নটাও।
।। ১০ ।। রতিসুখসারে…
এ এক আশ্চর্য দ্বীপ। চেনা পৃথিবীর থেকে যেন সহস্র যোজন দূরে রয়েছি। অদ্ভুত রকমের শান্ত নিস্তব্ধতা বিরাজ করছে চারিদিকে, বাতাসে বুনো গন্ধ। উঁচু-নীচু তরঙ্গায়িত ভূমির ওপর হাঁটছি, এটা কোথায়? সামনে খাড়া পাহাড় সোজা উঠে গেছে আকাশ লক্ষ্য করে, শীর্ষদেশ দেখা যায় না। উল্টো দিকে চোখ ফেরালাম। দূরে ঘন বনানীর আভাস, মাঝে বিস্তীর্ণ অধিত্যকার ব্যবধান। জনপ্রাণীর সাড়া নেই, আকাশ ঢেকে রয়েছে মেঘের আস্তরণে। কেমন মায়াময় পরিবেশ। কিন্তু আমি একা কেন? এখানে এলাম কি করে? গন্তব্যই বা কোথায়? ঐ দুর্লঙ্ঘ্য পাহাড় ডিঙোনোর সাধ্য নেই, একমাত্র উপায় জঙ্গলের মধ্যে পথ খুঁজে নেওয়া। মোহাচ্ছন্নের মত পা বাড়ালাম। জায়গাটা কেমন চেনা-চেনা অথচ ঠাহর করতে পারি না। কোথা থেকে একটা শব্দ আসছে। বড় অদ্ভুত শব্দ, সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে বাড়ছে-কমছে, কিন্তু হারিয়ে যাচ্ছে না, মিলিয়ে যাচ্ছে না বাতাসে। জঙ্গলের মধ্যে কি তবে কোনও কুহকিনীর বাস? দুরুদুরু বক্ষে আরও এগিয়ে যাই, কি এক অজানা আকর্ষণ আমায় টেনে নিয়ে যাচ্ছে মায়াবী সম্মোহনে। শব্দটা এখন স্পষ্টতর, কিন্তু তবুও ভাল করে বোঝা যায় না। যেন কারও দূরাগত অস্ফুট গোঙানি। কোন ভয়ানক লুকিয়ে আছে ঐ শ্যামলিমার অন্দরে? রহস্য ক্রমশ যত ঘনীভূত হচ্ছে, ভিতরের কৌতূহল হয়ে উঠছে তীব্রতর। জয় করার অদম্য বাসনায় এক পা এক পা করে এগিয়ে চলেছি, জঙ্গলের একেবারে সামনে এসে থমকালাম এক মুহূর্ত। যা থাকে কপালে। আমার সাহস, আমার পৌরুষই একমাত্র সম্বল। শব্দটা বাড়তে বাড়তে সমগ্র সত্তা আচ্ছন্ন করে ফেলেছে। অজানা শঙ্কায় চোখ বন্ধ, তারপর… অজানিতার গভীরে এক মরণপণ ঝাঁপ। তরু-লতা-গুল্মের আড়ালে হারিয়ে গেলাম।
…
রবিবারের সাতসকাল, মেঘেদের দৌরাত্ম্যে আধফোটা রোদ তেমন সুবিধে করতে পারছে না। সপ্তাহভর কম্পিউটারের পর্দায় মুখ গুঁজে রাখা ব্যস্ত শহর উইকেণ্ডের উদ্দাম রাতপার্টির পর এখন চাদরের ভিতর গভীর সুষুপ্তিতে আচ্ছন্ন। গুটিকয় ব্যতিক্রমের মধ্যে একজন আমি। না একটু ভুল হল, একা নই, আরও একজন রয়েছে। প্রায় কাকডাকা ভোরে এসে হাজির সে অতিথি, এখন বিছানার ওপরে অর্ধশয়ান। বিশ্রাম নয়। তার নিরাবরণ দেহের প্রতিটি বিন্দুতে চুম্বনের গভীর দাগ এঁকে দিচ্ছি, শরীরের পাহাড়-উপত্যকা-গিরিখাত-অরণ্য বেয়ে খেলা করে চলেছে তিন সপ্তাহ কর্মবিরতিতে থাকা অবাধ্য আঙুলেরা। ইচ্ছেমত পেষণ আর পীড়নের দৌরাত্ম্যে থেকে থেকে শিউরে উঠছে উপোসী নারীশরীর, প্রবল কামোত্তেজনায় দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে। কমনীয় দেহলতা বেঁকেচুরে দিকস্থিতি পরিবর্তন করছে বারংবার। স্বল্পপরিসর শয্যায় স্থানাভাব, পুরুষালি হাত দু’টো তাই বাধ্য হচ্ছে তাকে শাসন করতে। দস্যুর মত ঐ কোমল দেহবল্লরীকে আছড়ে ফেলছে বিছানায় সতর্ক যত্নে, যাতে আঘাত না লাগে। কঠিন বাহুর আলিঙ্গনের স্বাদ পেয়ে মানবী আরও বল্গাহারা, এলিয়ে দিচ্ছে নিজেকে প্রবল পুরুষের পেশীতে। রোমাঞ্চিত শরীরে স্পষ্ট অধিকতর নিষ্পেষণের আহ্বান-ইঙ্গিত। অঙ্গপ্রত্যঙ্গের বিচিত্র বিভঙ্গে সৃষ্টি হচ্ছে পুরুষের বুকে আগুন ধরানো হরেক মুদ্রা, হঠাৎ দেখলে বাৎসায়নের স্বহস্তে চিত্রিত বলে ভ্রম হয়। নীল পর্দার মায়াবী দৃশ্যপটে আজ অবধি দেখা সমস্ত অচেনা রমণীদের আবেদনও ম্লান হয়ে যায় তার কাছে। অনির্বচনীয় এ সৌন্দর্য ব্যাখ্যার অতীত। দুষ্টুমি-মাখানো মিষ্টি হাসির সাথে শরীর উপচে পড়া লাস্যের হৃদয়ভেদী সম্মেলন, বুঝি কবির কলমকেও হার মানায়।
“পীনপয়োধরভারভরেণ হরিং পরিরভ্য়সরাগং”
দীর্ঘ অদর্শনের পর মিলনের প্রত্যাশায় উন্মুখ নারী আহ্লাদী স্তনভার মিশিয়ে দিচ্ছে দয়িতের আলিঙ্গনে। আপনা থেকেই মথিত হতে চাইছে, রভস আবেশে চোখদুটি অর্ধনিমীলিত। কানে কানে সোহাগ-বার্তা, আরও নিবিড়ভাবে পাওয়ার আমন্ত্রণ।
“কাপি কপোলতলেমিলিতা লপিতুং কিমপি শ্রুতিমূলে।
চারু চুচুম্ব নিতম্ববতী দয়িতং পুরকৈরনুকূলে”
উচ্ছল আবেগভরে হাত টেনে নিয়ে গুরুনিতম্বে স্থাপন করছে নির্লজ্জা, পরক্ষণেই প্রবল মর্দনে বিহ্বল গালে লজ্জারুণ আভা। নিষিদ্ধ গহ্বরের প্রবেশদ্বারে প্রেমিক-আঙুলের অনুপ্রবেশের চেষ্টা ধরা পড়ামাত্র টানা টানা চোখ পাকিয়ে ছদ্ম শাসনের ভঙ্গি, একইসাথে পিছনদিকে নরম পাছা বিভঙ্গে দুলিয়ে গোপনে সম্মতি দেওয়া। সংকীর্ণ সে গুহায় মধ্যমার অবাধ্য যাতায়াতে উত্যক্ত মুক্তকেশী ছটফটিয়ে ওঠে বলিষ্ঠ বাহুপাশের মধ্যে। কোমল তনুর সঞ্চালনে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে স্বাধীন নারী মুখ ফেরায়। ক্ষণিকের অপেক্ষা, তারপরই এলিয়ে পড়ে প্রেমাস্পদের গায়ে। সুগঠিত দুই উরুতে ভর দিয়ে প্রতিস্থাপন করে আপন দেহ, কঠিন পৌরুষে মিশিয়ে দেয় সুডৌল নিতম্ব। লৌহকাঠিন্যের নির্মম পরশে থির থির কেঁপে ওঠে, অভিভূত দুই চোখ বুজে আসে আপনা থেকে। সহজাত আকাঙ্ক্ষায় তাকে জড়িয়ে ধরি অনেক যত্নে, কামনায়, তৃপ্তিতে। বিপরীত দেয়ালের আয়নাতে ফুটে ওঠে প্রেমঘন দুই নরনারীর চিত্র। অবাক বিস্ময়ে চেয়ে দেখি কি অপরূপ অবহেলায় মেঘবরণ কেশ মরাল গ্রীবার একদিকে ঝর্নার মত নেমে গিয়েছে, সলাজে ঢেকেছে সুউচ্চ গিরিযুগল। পুরোটা নয়, আংশিক, স্বাভাবিক কারণেই। বন্ধ চোখের পাতায় মিলনের হরষ, আরও মিলনের পিয়াস; মেঘ-রোদ্দুরের লুকোচুরি। নিঃশ্বাস থমকে যায়। এ কি স্বপ্ন, না প্রখর বাস্তব?
আধুনিক পাশ্চাত্য কামসূত্রে সঙ্গমের আগে দীর্ঘ সোহাগবিনিময়ের নিদান দেওয়া রয়েছে। প্রচলিত লবজে ‘ফোরপ্লে’। ‘মহাজ্ঞানী মহাজন যে পথে করে গমন…’। তাঁদের দেখানো পথে চলে ঠকিনি মোটেই, কিন্তু এখন সেটা মেনে চলা… যৌথ আলিঙ্গনে দুজনের শরীরে চকমকির ঘর্ষণে জ্বলে ওঠা আগুন নিবিড়তর নৈকট্যের প্ররোচনায় দাবানলের মত ছড়িয়ে পড়েছে। বদ্ধ ঘরে একে অন্যের উষ্ণতার সান্নিধ্যে এসে দুজনেরই শরীরে ঘামের রেখা, ওর তীব্র ফেরোমোন-ঘ্রাণের সাথে স্বেদগন্ধ মিশে আমায় বিবশ করে তুলছে… নাক ডুবিয়ে দিচ্ছি অনাবৃত ঘাড়ে, কাঁধে। কামনাবহ্নির জ্বালায় ছটফট করে উঠছে ও, অধর স্ফুরিত, ঘন ঘন শ্বাসে তীব্র হল্কা। অজানা প্রতিবর্তে মদিরাক্ষী ফিরে তাকাল, চার চোখে জ্বলে উঠল মদনাগুন। কোনও কথা হল না, শব্দ খরচ হল না একটিও, দৃষ্টির নীরব সম্মতিতে নরনারী মেতে উঠল আদিম খেলায়। দুই হাতের বেষ্টনীতে ওর ঈষৎ মেদযুক্ত কটিদেশ, সবল এক টানে প্রেয়সী বিছানায় শায়িতা… চিরাচরিত ইভের বিভঙ্গে, দুই জঙ্ঘা প্রসারিত করে আহ্বান জানাল ক্রমশ কঠিনতর হয়ে উঠতে থাকা আদমকে। প্রকৃতির প্রাচীনতম দ্বৈতযুদ্ধ, একইসাথে দ্বন্দ্বে-মিলনে ভরপুর। সাড়া দিতে একমুহূর্তও দেরি হল না, ফুঁসতে থাকা কামনার সাপ উদ্যত ফণা তুলে প্রবেশ করল তৃণাচ্ছাদিত গহ্বরে। কর্ষণ করছে জমি। অর্ধস্ফুট শীৎকার ভেসে এল… ব্যথার নয়, পুলকের। কর্ষণরত হলকে নিজের আরও গভীরে নিতে চাওয়ার আকুতিতে হলধরকে উত্তেজিত করার অস্ত্র। অব্যর্থ শরে বিদ্ধ হয়েছে পুরুষ, প্রবল বেগে কর্ষণ শুরু, সুতীব্র ঘর্ষণে তোলপাড় হচ্ছে দু’টি শরীর। আনন্দে-আবেগে-শিহরণের আতিশয্যে জান্তব শব্দে মুখর মানব-মানবী, ঘরের প্রতিটি কোণ ভরে উঠছে বিচিত্র ধ্বনিতে। মাটির গহিনে জেগে উঠেছে সুপ্ত আগ্নেয়গিরি, খুলে গেছে লাভার উৎসমুখ।
গলন্ত লাভাস্রোত ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে চরাচর। সমস্ত জমি একে একে ডুবে গেল, জন্ম নিল দিগন্তবিস্তৃত মহাসমুদ্র। সে সাগরের তলায় কোনও অচিন খনিতে রাখা আছে অমৃতভাণ্ড। কেউ তার সন্ধান পায়, অনেকে পায় না। না মিললে কোনও ক্ষতি নেই, পেলে সার্থক হয় জীবন। অমৃতের মাহাত্ম্য অবশ্য না পেলেও ক্ষুণ্ণ হয় না এতটুকু, বারবার তার সন্ধানে ডুব দেয় পুরুষ। আমিও এর ব্যতিক্রম নেই। অমৃতভাণ্ডের হদিস অবশ্য দীর্ঘ অভিজ্ঞতায় অনেকবার পেয়েছি, তবু আরও আরও পেতে সাধ যায়। অমৃতে অরুচি, সে বোধহয় কেবল মূর্খের। উদ্যমী পুরুষ অমৃতলাভের বাসনায় প্রাণপাত করে, করেই চলে, একসময় তার উপলব্ধি জাগে- এর চেয়েও বড় আকর্ষণ অসীম সাগরের অজানা প্রান্তসমূহ আবিষ্কার। গন্তব্যের চাইতেও বেশি টান অ্যাডভেঞ্চারের নেশায়।
সাগর সেঁচার মুহূর্তে এতসব মাথায় থাকে না। শুধু প্রবল মন্থনে রত হই অবিরত। অমৃত উঠল না হলাহল, সে হিসেব মনের কোণে স্থান পায় কই? সেখানে শুধু একজনের শরীর ভেসে ওঠে। প্রবল আশ্লেষে সে দাঁতে চেপে ধরে নিজের অধর, পরমুহূর্তে শরীরজুড়ে প্রবল ভূমিকম্পের অভিঘাতে কেঁপে ওঠে পক্ববিম্বোষ্ঠ।
“পীনপয়োধরপরিসরমর্দ্দন নির্দয়হৃদয়কবাটং”
পুরুষদেহের নীচে নিষ্পিষ্ট হতে থাকে কোমল গুরুবক্ষ, নিজ হৃদস্পন্দনের চাঞ্চল্য চারিয়ে দেয় প্রেমিকের বুকে। রমিত হওয়ার তালে তালে দুলতে থাকে বুকের ওপরে লুটিয়ে থাকা হার, যা এখন ওর একমাত্র অঙ্গাভরণ। প্রণয়ানুরাগে অনুরক্তা নারী কামনা করে প্রবলতর বিদলন, স্বতপ্রবৃত্ত হয়ে পুরুষের হাত টেনে নেয় পেলব দুই পাহাড়চুড়োয়, নির্দয় পেষণের অভিলাষে।
“নখলিখিতঘনস্তনভারং”
নির্মম নখের আঘাতপ্রত্যাশী স্তন মথিত হতে থাকে ভিতর ভিতর, জেগে ওঠে উন্মুখ বৃন্তেরা। নিজেকে সামলাতে পারি না আর, লোভী দাঁতের আক্রমণে ছিন্নভিন্ন করি সুউচ্চ পার্বত্যভূমির মসৃণতা। আঙুলের মাঝে উৎপীড়ন চলে সুদৃঢ় বোঁটার ওপরে, তারা দৃঢ়তর হয়ে নিজেদের ব্যাকুল সম্মতি জানায়। ও হিসিয়ে ওঠে, দশনাঘাতে ভরিয়ে দেয় আমার বলিষ্ঠ পুরোবাহু, কাঁধ, বুকের কঠিন পেশী। মিলন রভসে আপাদমস্তক শিহরিত হতে হতে উত্তেজিত রমণী তুলে ধরে কলসাকৃতি নিবিড় নিতম্ব, সবল সুগঠিত জানুদ্বয় অজগরের মত পেঁচিয়ে নেয় প্রেমাস্পদের কোমর, পাকে পাকে বেষ্টনীতে আকৃষ্ট করে রহস্যাবৃত কৃষ্ণগহ্বরের আরও অভ্যন্তরে। কর্ষণের বেগ বেড়ে চলে, সেই ছন্দে বেড়ে চলে মানব-মানবীর হৃদস্পন্দন। বহু দিনের উপবাসী দুটি দেহ একে অন্যকে ভরিয়ে দেয় আদরে-সোহাগে-যন্ত্রণায়। বহির্বিশ্বের বাকি সব বিস্মৃত এখন। সত্যি, তা কেবল এই দুর্নিবার বাঁধভাঙা সঙ্গম।
সময় কেটে যায়, মিনিট থেকে ঘণ্টা। দিন থেকে মাস। বছর থেকে যুগ। যুগের পর যুগ আদিম মানব আর মানবী এভাবেই মিলিত হয়ে আসছে। তেজোদীপ্ত নক্ষত্র ব্যাখ্যাতীত কোনও কারণে অসীম গতিতে ধাবিত হয় মহাজাগতিক ব্ল্যাকহোলের কন্দরের দিকে, মহাকর্ষ বলের প্রণোদনায়। বিজ্ঞান সে বলের সন্ধান পেয়েছে বহুকাল, কিন্তু কি তার উৎস? এখনও সে উত্তর লুকিয়ে কালের গর্ভে। নর-নারীর আদিমতম আকর্ষণের কারণই বা কি? কেউ জানে না। হয়তো সে উত্তর জানা যাবে না আদৌ। হয়তো কোনও উত্তর নেই। হয়তো প্রশ্নটাই অর্থহীন, শাশ্বত শুধু সেই… অনস্বীকার্য, অনিবার্য আকর্ষণ। যে রসায়নের কোনও ক্ষয় নেই, লয় নেই, নেই কোনও ব্যাখা।
সময়ের প্রচলিত ধারণার বাইরে চরাচরব্যাপী অসীমতায় এক জীবন কাটিয়ে আবার ফেরত আসি আমরা রুক্ষ বাস্তবের মাটিতে। নিজেদের আবিষ্কার করি একে অপরের বাহুবন্ধনে। তীব্রতম গতিতে আমার পৌরুষ সেচন করছে ওর মন্থনপাত্র। উথাল পাথাল করা আবেগে নারীযোনি নিজের ভিতরে পুরুষ-কাঠিন্যকে ধারণ করে চলে, উদ্দীপিত করে প্রবলতর সিঞ্চনে। অপারবিস্তৃত মহাসমুদ্রে দু’জনে ভেসে চলেছি, সহসা… অনতিদূরে দেখা মেলে বহুআকাঙ্ক্ষিত অমৃতভাণ্ডের। দীর্ঘ অদর্শন সঞ্জাত অভিমানে আকুল প্রেমীযুগল উন্মত্ত হয়ে ওঠে, প্রবল প্রতিযোগিতায় রত হয়। দু’জনেই চায় মিলনসাথীটিকে সে অমৃতধারায় স্নান করাতে, তার আকণ্ঠ পিপাসা মেটাতে। দ্বন্দ্ব আর মিলনের যৌথ উৎসবে প্রবলভাবে আন্দোলিত হতে থাকে আমার এককশয্যার খাট। তীব্র শীৎকার ধ্বনিতে ঘর ভরে যায়। অবশেষে এল মাহেন্দ্রক্ষণ।
শৃঙ্গারশীর্ষে চরম সুখের আকর। সে সুখের স্বাদ নিতে নিতে লুপ্ত হয় আমাদের বাহ্যজ্ঞান, তীব্র নিষ্পেষণে দলিত মথিত করি পরস্পরকে। নারীর রাগমোচনের আভাস পেয়ে উদ্দাম পৌরুষ আর ধরে রাখতে পারে না নিজেকে, সমস্ত সত্তা উজাড় করে দেয় বাঁধভাঙা স্খলনে। তার উষ্ণতার ভাপে ছটফটিয়ে ওঠে মানবীশরীর, পাগলিনীর মত বইতে থাকে। এতদিনকার জমানো স্রোত ভাসিয়ে নিয়ে যায় খাটের চাদর, বেডকভার। শেষবিন্দুটুকু নিংড়ে দিতে থাকে প্রেমিকের রেতঃস্পর্শে। আঃ, অবশেষে মুক্তি। ভালবাসার তীব্র প্রকাশে অবসন্ন হতে থাকে দু’টি শরীর। আলগোছে আলিঙ্গনে জড়িয়ে থাকে পরস্পর। পরম মমতায় শ্রান্ত পুরুষের মাথা নিজের বুকের মাঝে টেনে নেয় চিরকালীন নারী।
ধীরে ধীরে সমে ফেরে রতিতৃপ্ত প্রণয়ীযুগল, অমোঘ নিয়মে একে অপরের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়।
রমণ শেষে ক্লান্ত দু’টি দেহ শুয়ে আছে পাশাপাশি। যেন বজ্রপাতে আধপোড়া দু’খানা গাছ। কারওর মুখে কোনও কথা নেই। যে ঘর একটু আগেও ভরে ছিল তীব্র শীৎকারে, এখন সেখানে বিরাজমান অখণ্ড নীরবতা। যদিও দু’জনেই জানি আমাদের ঠোঁটের কাছে ভিড় করে আছে না-বলা হাজারো শব্দের দল। নিস্তব্ধতার মাঝে সে অব্যক্ত কথারা ইথার তরঙ্গ বেয়ে পরস্পরের কাছে গোপন বার্তা পৌঁছে দেয়। সঙ্গমশেষে কেবল শরীরেরা বিচ্ছিন্ন হয়েছে, দু’জনের হৃদয়ের যোগাযোগ এখনও অটুট। মিলন-মুহূর্তে চোখে চোখে যে নীরব কথোপকথন তা শব্দের রূপ ধরে এক না এক সময় বাঙ্ময় হয়ে উঠবে ভবিষ্যতে। সেই কঠিন প্রহরের মানসিক প্রস্তুতিতে ব্যস্ত উভয় পক্ষ, বোধহয় এই মায়াবী সকাল শুরুর অনেক আগে থেকে।
পরের কথা পরে ভাবা যাবে, আপাতত এই মধুর বর্তমানকে চুটিয়ে উপভোগ করার পালা। পাশ ফিরে দেখলাম ডানহাত আড়াআড়ি ভাঁজ করে তার ওপর মাথা রেখে ও শুয়ে আছে। চোখদু’টো বোজা, ঈষৎ নিদ্রালু ভাব। হৃদস্পন্দনের গতি এখনও পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি, উত্থিত দুই বুক নিঃশ্বাসের তালে কিঞ্চিৎ দ্রুত ওঠানামা করছে। দীর্ঘ উপবাসভঙ্গের পর এমন আগ্রাসী মিলনের তাড়সে উত্তেজনার প্রশমন হতে সময় নিচ্ছে সামান্য বেশি। ঋজু, উন্নত দুই বৃন্তে তারই আভাস। দুষ্টুমির ইচ্ছে জাগল, বাঁদিকের বোঁটায় আঙুল ছুঁইয়েছি, আলতো করে এক মোচড়। নারীদেহে মৃদু শিহরণ। আবারও, এবারে আগের থেকে বেশ খানিকটা জোরে। ত্রস্ত শরীরে হিল্লোল, সাথে মৃদু ঝংকার।
“উম্মম্ম কি হচ্ছে নটি বয়?”
গলায় যত না বিরক্তি তার চেয়ে অনেকখানি প্রশ্রয়। পরবর্তী আক্রমণ ডান দিকে। কোনও এক অজ্ঞাত কারণে দুই স্তনবৃন্তের মধ্যে এটি একটু বেশি পুরুষ্টু। তার পূর্ণ সদ্ব্যবহার করল আমার আঙুলেরা। এবার ঝংকারের মাত্রা একপর্দা চড়ায়।
“অ্যাইই মার খাবি কিন্তু!”
চোখ অবশ্য যথারীতি বন্ধই রইল, প্রশ্রয়ের অনুপাতও কমেছে বলে মনে হল না। এরকম হলে তো সাহসের মাত্রা বাড়বেই। এবার তাই যৌথ আক্রমণ চলল দু’দিকের বাদামি আঙুরে। আর শুধু মোচড়ানো নয়, বেশ জোরে টিপে দিয়েছি। সাথে সাথে ঝেঁঝেঁ উঠেছে বামাকণ্ঠ।
“কি হচ্ছেটা কি???”
চোখও খুলেছে, দৃষ্টিতে রাগের অভিব্যক্তি ফুটিয়ে ওপাশ ফিরে শুলো। অভিজ্ঞ প্রেমিক আমি, এই রাগ যে নির্ভেজাল কপট তা আমার থেকে ভাল কেউ জানে না। তবে শোওয়ার দিক পরিবর্তন করায় দুই বিপুল স্তন আপাতত আমার নাগালের সামান্য বাইরে। কিন্তু হায় অবলা নারী! বিধাতা যে তোমায় দু’হাত ভরে এত দিয়েছেন! সারা অঙ্গে রূপের ছড়াছড়ি, সে কি বিফলে যাবে? হাতের কাছেই ওর গুরুনিতম্বের শোভা। উলটোনো কলসির মত শ্রোণিদেশ খাটের ওপরে এলিয়ে রয়েছে রাজেন্দ্রানীর উদ্ধত গরিমায়। অবাধ্যতা করতে গিয়ে সহসা থমকে থেমে গিয়েছে আঙুলগুলো। কি অপরূপ এই দৃশ্য! লোভাতুর দৃষ্টি তাকিয়ে রইল বেশ খানিকক্ষণ, নীরবে পান করল অনির্বচনীয় সৌন্দর্য। কয়েক সেকেণ্ডের ব্যাপার অবশ্য। কমনীয় পশ্চাদ্দেশে চিমটি অনুভূত হতেই ফের নারীর তিরস্কার।
“অ্যাইইই!!! খুব বাড় বেড়েছে না?”
তার কথায় পূর্ণ সমর্থন জানিয়ে উপর্যুপরি আরও গোটাকয়েক চিমটি সুপ্রশস্ত নিতম্বদেশের বিভিন্ন প্রান্তে। রমণী এবার কাঁদোকাঁদো।
“উঁউঁউঁ! honey it hurts!”
পূর্বঅভিজ্ঞতা বলে এসমস্ত ক্ষেত্রে নারীশরীরকে নির্যাতনের হাত থেকে নিষ্কৃতি দেওয়ার একটা ভাল দিক রয়েছে। কিছুক্ষণের জন্য সে কল্পতরু হয়ে যায়, তখন মনোগত সুপ্ত বাসনা প্রকাশ করলে সুফল মিললেও মিলতে পারে। মনের ভিতরে জমানো বহুদিনকার নিষিদ্ধ ইচ্ছেটা চাগাড় দিয়ে উঠল। আমার পৌরুষও যথোচিত ভঙ্গিতে জানান দিল তার সম্মতি। ওর নিরাবরণ পিঠের আরেকটু কাছে এগিয়ে গেলাম। সদ্যোত্থিত পুরুষাঙ্গ স্বাভাবিক নিয়মেই হাল্কা ধাক্কা মেরেছে নিতম্বিনীর পিছনে। পরিচিত স্পর্শে সচকিত ও, গলায় সামান্য খুশির আভাস, সম্ভবত এত দ্রুত আমার ‘জেগে ওঠা’ আশা করেনি।
“উম্মম্ম কি চাই?”
নীরব রইলাম, তৎপর হল আমার আঙুলেরা। না, দুষ্টুমি করতে নয়। মিলন-পরবর্তী বিশ্রম্ভালাপের সময়ে (ওর ভাষায় যা ‘পিলো-টক’) ভাবের আদানপ্রদানের জন্য একপ্রকার যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করি আমরা। একে অন্যের শরীরের অন্তরঙ্গ জায়গায় আঙুল দিয়ে লিখে নিজের মনের কথা প্রকাশ করা। নিতান্ত খেলাচ্ছলেই আবিষ্কার, হয়তো পৃথিবীর আরও অনেক প্রেমিকযুগলের মত।
প্রথমে একটু সমস্যা হলেও দীর্ঘদিনের চর্চার অভ্যাসে আর একে অন্যের মনের কথা পড়তে পারার সৌজন্যে পাঠোদ্ধারে এখন কোনও অসুবিধে হয় না। বিশেষত ও আমার থেকেও দড় এই ব্যাপারে। নিঃসঙ্কোচে লিখে যাই মনের গোপনে জমানো বার্তা। উলটোদিকে ঘুরে থাকা অবস্থাতেই ও আগ্রহভরে পড়তে থাকে আপনমনে। বার্তাপ্রেরণ শেষ হতে না হতেই বিস্ময়ে ফেটে পড়ে গুরুনিতম্বিনী।
“Whatttt!!! You wanna fuck my as…”
এমন আকস্মিক চাহিদায় অভিভূত ও, হয়তো সে কারণে বা সহজাত লজ্জাবশে কথাটা শেষ করতে পারে না আর। নির্বাক তাকিয়ে থাকে আমার মুখের দিকে, পিছন ফিরে… বিস্ময়-লজ্জা-ভর্ৎসনার মিশ্র ব্যঞ্জনা খেলে যায় ওর চোখে। বহুদিন আগে পায়ুমৈথুনের বাসনা প্রকাশ করায় বকুনি খেতে হয়েছিল। এত বছর পরে আবার সেই অনুরোধ আসতে পারে এ বোধকরি ওর কল্পনারও অতীত। প্রতিক্রিয়া আসে না কোনও, নীরবে শয্যাত্যাগ করে উঠে যায় স্নানঘরের দিকে। পিছন থেকে ওর গজগমনের দিকে নিশ্চুপে চেয়ে থাকি। প্রতি পদক্ষেপের সাথে দুলতে থাকা শ্রোণিভার কেঁপে কেঁপে উঠছে, অনাবৃত নরম পাছা অপরূপ বিভঙ্গে নেচে চলে নৃত্যপটীয়সীর হাঁটার ছন্দে। কলেজজীবন অবধি ভরতনাট্যম শিখেছিল, এখনও তার প্রভাব দৃশ্যমান। অজান্তেই দীর্ঘশ্বাস পড়ে… হায় নিবিড় নিতম্বিনী, যদি জানতে!
স্নানঘর থেকে বারিধারার মৃদু শব্দ ভেসে আসে। চিত হয়ে শুই, দৃষ্টি সিলিং-এর দিকে। মন ভেসে চলে মেঘেদের ওপর দিয়ে… সত্যি, সকালটা যেন স্বপ্নের মত কাটছে। ভোরবেলা মেসেজের রিনিঠিনি শব্দে ঘুম ভেঙে গেছিল, ডিজিটাল ঘড়ির সময় কিছুক্ষণ হল পাঁচের ঘর ছাড়িয়েছে। চেনা নম্বর থেকে বার্তা।
“Just got up, will reach your place in almost forty five minutes.”
ঘুমচোখ রগড়ে ভাল করে পড়লাম আরেকবার। সবে তো উঠেছে, পঁয়তাল্লিশ মিনিটের মধ্যে কি করে আসবে কে জানে! রেডি হতেই কিছু না হোক আধ ঘণ্টা, তারপর এতটা পথ আসা… ক্যাব ধরলে অন্তত কুড়ি মিনিট, কিন্তু এত ভোরে সেই ঝুঁকি নেবে না জানি, বাসেই আসবে। সেক্ষেত্রে আধ ঘণ্টার কমে কোনওমতেই… ভাবনার মাঝে ছেদ, আরও একটা বার্তার আগমনধ্বনি।
“please brush your teeth immediately, please.”
কি যে সব হচ্ছে পাঁচসকালে! যাই হোক, মহারানীর হুকুম যখন, তামিল করা ছাড়া গতি নেই। শয্যাত্যাগ করার আগে সহজাত আলস্যে আরও এক প্রস্থ গড়িয়ে নিই… এই রে, সাড়ে পাঁচটা বেজে গেছে! ঘুমচোখে দাঁত মাজছি, ভয়ে ভয়ে একটা চোখ রয়েছে ঘড়ির দিকে, এসে পড়লেই মুশকিল। ঘ্যানরঘ্যানর শুরু হয়ে যাবে, এতদিন বিরহযন্ত্রণার পর প্রথম দেখার আমেজটাই তখন মাটি। যাক, মুখ ধোওয়া পর্ব শেষ, অন্তত গালাগাল খেতে হবে না এই নিশ্চিন্তিতে খাটে এসে ঝিমোনোর উদ্যোগ করছি, কলিং বেলের সুমধুর ঘণ্টি!
এসে গেছে! এত তাড়াতাড়ি! কিভাবে?
দরজা খুলতেই টের পেলাম, কিভাবে। যে মেয়ে ভোরবেলা উঠেই রোজ স্নান করে, সুসজ্জিত না হয়ে সচরাচর বেরোতে চায় না বাড়ির বাইরে, নিখুঁত প্রসাধনের প্রতি যার সদাসতর্ক দৃষ্টি… সে দাঁড়িয়ে আছে সামনে, না কোনও প্রসাধন, না সাজের ঘটা। অবাধ্য চুলগুলোও কেমন রুক্ষ, হাওয়ায় উড়ছে এলোমেলো, নির্ঘাত চান করেনি! পরনে একটা অযত্নের টিশার্ট আর জিনস, কাঁধে ঢাউস ব্যাগ… বোধহয় হাতের কাছে যা পেয়েছে তাই গলিয়েই চলে এসেছে। তাও যে কি অপরূপা লাগে!
পুরোটা লক্ষ্য করতে বড়জোর দু’ থেকে তিন সেকেণ্ড সময় পেয়েছিলাম। তারমধ্যেই অভিমানিনী এসে ঝাঁপিয়ে পড়েছে বুকে। চমকের পর চমক! স্পষ্ট বুঝলাম ভিতরে কোনও অন্তর্বাস নেই, নিবিড় আলিঙ্গনে আমার বুকে পিষ্ট হতে থাকা ওর কোমল স্তন আর ভোরের শীতল হাওয়ার স্পর্শে তীক্ষ্ণমুখী বোঁটারা সে কথাই জানান দিল।
সে মারাত্মক আলিঙ্গন থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার সুযোগ হয়েছে মাত্র কিছু মিনিট আগে। মাঝের কয়েকটা ঘণ্টা এখন শুধু সুখস্মৃতি। স্মৃতির ভাঁড়ারে ফের ডুব দিলাম। রোমন্থন করছি। শরীর-মন ফিরে যেতে চাইছে, ফিরে পেতে চাইছে ঐ মুহূর্তগুলো…
“অ্যাই, চান করবি?”
চটকাটা ভেঙে গেল। স্নানঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে ও। ভিজে চুল থেকে, শরীরের সমস্ত রেখা থেকে চুঁইয়ে পড়ছে জলের ধারা। দরজাটা আধেক খোলা, তবু সেই পরিসরেই যেটুকু দেখা যাচ্ছে, যে কোনও পুরুষের বুকে ঝড় উঠবে। মাদকতাময় বিভঙ্গে এক পায়ে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে, পীনোন্নত স্তন সিক্ত হয়ে আরও মোহময়ী করে তুলেছে ওকে। দু’চোখে খেলা করছে ফের জেগে উঠতে থাকা কামনার বহ্নি। সারা শরীর জুড়ে কামনার ঢল, অমোঘ আকর্ষণে হাতছানি দিচ্ছে নিজস্ব পুরুষকে। মাত্র একবারের মিলন এ নারীর ক্ষুধা বাড়িয়ে তুলেছে শতগুণ, সর্বগ্রাসী চাহনিতে পুড়িয়ে চলেছে আমার সর্বাঙ্গ। আপনা হতেই কঠিন থেকে কঠিনতর হয়ে উঠল উত্থিত পৌরুষের ধ্বজা।
“উম্মম্ম অ্যাই হানি…”
দ্বিতীয়বার আহ্বানের প্রয়োজন ছিল না কোনও, লাফ দিয়ে উঠে পড়লাম। জীবনে গুটিকয়বার এই বিরল সৌভাগ্য হয়েছে, আজই যে আবার হবে কে জানত! সত্যি এই সকালটা যেন শেষ না হয় কোনওদিন। স্নানঘরে ঢুকে দেখি প্রেয়সী চুলে শ্যাম্পু ঘষছেন, দুই হাত মাথার ওপর তোলা। এমন ভঙ্গিতে গুরুস্তনীদের কেমন লাগে অভিজ্ঞব্যক্তি মাত্রেই জানেন… যাঁরা দেখেননি তাঁরা কল্পনাও করতে পারবেন না সে অনির্বচনীয় অনুভূতি। বহুজাতিক মহার্ঘ্য কেশপ্রসাধনীর সুরভিতে আমোদিত বাথরুমের চৌহদ্দি, আর অনন্যভঙ্গিমায় দাঁড়িয়ে থাকা ঐ সুন্দরী। চূর্ণকুন্তল অবহেলায় লেপটে আছে ঘাড়ে, বঙ্কিম গ্রীবায়, গালের নরম জমিতে… কবোষ্ণ জলের স্পর্শে ফুটে থাকা বৃন্তশোভা… জলের স্বচ্ছ আস্তরণের চাদরে ঢাকা নগ্নিকার প্রতি রোমকূপে রোমাঞ্চের ছোঁয়া… হঠাৎ ভুলে গেলাম কাকে দেখছি। এ কি সাগরের অতল নীল জলের নীচ থেকে উঠে আসা কোনও জলপরী, না আমার বিভ্রম? উত্থিত লিঙ্গ আরও তীব্র আকার ধারণ করেছে, অনুভূমিকের ওপরের পর্যায়ে এখন তার অবস্থান। প্রেয়সীর চোখ আলতো ভাবে ছুঁয়ে গেল তাকে, তার দুর্বোধ্য দৃষ্টিতে কৌতুকের ঝিলিক। রমণী এখনও নীরব। আমন্ত্রণের অপেক্ষায় কাজ কি, যখন নারীর গোটা শরীর বাঙ্ময় হয়ে উঠে আহ্বান জানাচ্ছে? ধীর নিশ্চিত পায়ে এগিয়ে গেলাম তার দিকে, সেও বুঝি এর প্রতীক্ষাতেই ছিল। বিনা বাক্যব্যয়ে আশ্লেষে আবদ্ধ হল দুই নরনারী, মেতে উঠছে কামকেলিতে। শাওয়ারের ঝরনাতলায় ঈষদুষ্ণ জলের আঁচে উত্তপ্ত হচ্ছে আলিঙ্গন। পুরুষের ভালবাসার স্পর্শে আর বারিধারার প্ররোচনায় সিক্ততর হয়ে উঠছে নারী। দয়িতের নবোত্থানকে দেখছে মুগ্ধনীরব দৃষ্টিতে। হাতে নিয়ে বোঝার চেষ্টা করল দৈর্ঘ্য-প্রস্থ, চোখেমুখে তৃপ্তির সাথে ফুটে উঠল তারিফ। দু’জনেই বুঝেছি স্নানঘরের অন্দরে ঘটে যাওয়া এ-ই আমার সর্বোৎকৃষ্ট উত্থান। ওর চোখে তাকালাম, স্পষ্ট ইশারা গভীর থেকে আরও গভীরে যাওয়ার। কালক্ষেপ না করে প্রোথিত করছি নিজেকে ওর উর্বর ভূমিতে, অস্ফুট শীৎকারে কেঁপে উঠল একবার। পুনর্মিলনের আবেশে মদির দু’চোখ বোজা, স্নানঘরের ভেজা দেয়ালে চেপে ধরেছে নিজের পিঠ, এবারে প্রত্যাশা গাঢ়তর মন্থনের।
“রতিসুখসারে গতমভিসারে মদনমনোহরবেশম্ |
ন কুরু নিতম্বিনি গমনবিলম্বনমনুসর তং হৃদয়েশম্ ”
অস্থির হাতে নিষ্পেষিত করছি উন্নত দুই স্তন, রমণের গতিবেগ ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে। না, এত দ্রুত নয়, এবারের সঙ্গম হবে আরও দীর্ঘ, আরও মধুর। নিবিড়তর মিলনের অভীপ্সায় হারিয়ে যাচ্ছি মানবীর দেহাভ্যন্তরে, মিশিয়ে দিচ্ছি নিজেকে ওর শরীরের প্রতিটি তন্তুতে, প্রতিটি কোষে। অবগাহন করছি আপন নারীর কানায় কানায় ভরা দেহপাত্রে। এখন সিনানের পালা।
“পিপি”
“উঁউঁ?”
“এই পিপি”
“উম্মম্ম কি???”, মিলনের আবেশে রসভঙ্গের আশঙ্কায় ওর গলায় প্রচ্ছন্ন বিরক্তি, চোখ তখনও বুজে।
বিক্ষিপ্ত মনকে অনেক কষ্টেও বাগ মানাতে পারলাম না, অবাধ্য প্রশ্নটা ছিটকে বেরিয়ে এল…
“ওরটা কি এর থেকেও বড় ছিল?”
সামান্যকটা শব্দ উচ্চারণ করতে গিয়েও গলাটা শেষদিকে কেমন কেঁপে গেল, তার সঙ্গেই টের পেলাম প্রশ্নের সাথে সাথে আমার উত্থিত পৌরুষ আরেকটু দৃঢ়, আরেকটু কঠিন হয়ে উঠল ওর নরম আতপ্ত গভীরে।
বিস্ফারিত নয়নে ও তাকিয়ে আছে আমার দিকে, যেন ওর চোখের তারায় কোনও পরপুরুষের প্রতিবিম্ব!
।। ১১ ।। কাপুরুষ ও পরপুরুষ
জীবনে এমন কিছু মুহূর্ত আসে যখন সামান্য একটা ভুলের জন্য চারপাশটা ওলটপালট হয়ে যায়। ছোট্ট একটা কথা, চোখের সামান্য ইশারা, অবহেলায় মুখ ঘুরিয়ে নেওয়া- বদলে দিতে পারে অনেক কিছু। ক্ষণিকের প্রভাব কি সুদূরপ্রসারী! অথচ ঘটনাটা যখন ঘটছে ঠিক সেইসময় কিন্তু আঁচও পাওয়া যায় না তার। বোঝা যায় না কি হতে চলেছে এর ফলশ্রুতি। আর পাঁচটা সাধারণ মুহূর্ত থেকে তাকে আলাদা করে চিনে নেওয়া দায়। ঘটমান বর্তমান থেকে ভবিষ্যতের দিকে এক পা-এক পা করে যেতে যেতে যখন চারদিকের চেনা পৃথিবীটা ক্রমশ পালটে যেতে থাকে, পরিকল্পিত ছকের বাইরে অজানা সরণী বেয়ে হাঁটতে শুরু করে জীবন, মনকে তখন প্রশ্ন করি আমরা, ‘কি করে এমন হল?’ সদুত্তর পেতে মন অনুসন্ধান শুরু করে, ক্ষিপ্র গোয়েন্দার মত অতীতের সমস্ত ফাইল ধুলো ঝেড়ে বার করে খুঁজতে থাকে আতিপাঁতি। অণুবীক্ষণের নীচে ফেলে যাচিয়ে নেয় প্রতিটি খণ্ডমুহূর্ত। কম্পিউটার সায়েন্সের পরিভাষাতে যা ‘ব্যাকট্র্যাকিং অ্যালগরিদম’, কার্যকারণ পরম্পরার সেই সূত্র ধরে অবশেষে সে উপনীত হয় কঠোর নির্মম সত্যে। বিনা বাক্যব্যয়ে আমাদের সামনে তুলে ধরে সেই মুহূর্ত, যেখান থেকে জীবন বেঁকে গিয়েছিল কোনও অচেনা মোড়ে। বইতে শুরু করেছিল অন্য এক খাতে যার ঢেউগুলো ভাসিয়ে নিয়ে যেতে থাকে পরিচিত জীবনের নিশ্চিন্ত নিরাপদ গণ্ডির থেকে দূরে, আরও দূরে। দুর্নিবার স্রোতের মুখে ভেসে যাওয়ার মুহূর্তে আমরা অক্ষম প্রতিরোধের চেষ্টা করি খড়কুটো আঁকড়ে ধরে। হায়, সময় যে বহতা নদী! জীবনের শুরু থেকে শেষ অবধি একমুখী তার যাত্রা। উৎস থেকে মোহনার দিকে সে চঞ্চলা রমণী ‘নেচে চলে যেন নটিনী’, কোথায় কোন অববাহিকায় কে অবহেলায় পড়ে রইল দেখার তার ফুরসত কই?
আর যার চোখের সামনে একটু একটু করে ঘটে এই অনিবার্য পরিবর্তন, কি হয় তার পরিণতি? নিষ্ফলা বালির বাঁধে যখন বাধা মানে না নির্দয়া স্রোতস্বিনী, তখন? শূন্য দৃষ্টিতে তার চলে যাওয়া দেখা ছাড়া আর কিই বা করার থাকে? সময়ের চাকা, সে তো উলটোদিকে ঘুরবে না কোনওদিন। টাইম মেশিনের অলীক প্রকৌশল বিদ্রূপভরে মুখ ভ্যাংচায় কল্পবিজ্ঞানের পাতা থেকে। কে সেই অপরাধী যার দোষে এমনটা ঘটল? মনকে চোখ ঠারা চলে না, সে জানে কার দোষে। হৃদয়ের আবছা আয়নাতে নিজেরই প্রতিফলনের দিকে চেয়ে থাকে মূক দৃষ্টি।
চোখের সমান্তরালে, ফুটকয়েক উঁচুতে স্থাবর সিলিঙ। খাট থেকে বোবা চোখ মেলে তাকিয়ে আছি সেদিকে। কয়েক ঘণ্টা আগে ঐ সিলিঙই নীরব সাক্ষী ছিল আমাদের উদ্দাম ভালবাসাবাসির। এখন সেখানে ক্যালেইডোস্কোপের খেলা। মেঘের আড়াল থেকে একটু একটু করে পরিস্ফুট হওয়া সকালের আলো জানলার গ্রিলের মধ্যে দিয়ে অনুপ্রবেশ করেছে কারওর অনুমতির তোয়াক্কা না করে। পেশাদার জাদুকরের মত নিজের ভোজবাজি দেখাতে ব্যস্ত, তার রঙ্গমঞ্চ ঘরের দেওয়াল বা মাথার ওপরের সিলিঙ। সিলিঙটাও বোধহয় স্বস্তি পেয়েছে এমন নির্দোষ সভ্যভব্য ‘আট থেকে আশি’-মার্কা চালচিত্র দেখে। স্বাভাবিক, ভোর ইস্তক একঘেয়ে প্রাপ্তবয়স্ক ছবি চোখের সামনে চলছে, কাঁহাতক আর ভাল লাগে! স্বাদবদলের প্রয়োজন সবারই আছে, সে মানুষ হোক বা ঘরের সিলিঙ।
খাটে একা একা শুয়ে এসবই ভেবে চলেছি। অবান্তর, আবোল-তাবোল। কিছুই নয়, মনটাকে অন্যদিকে ঘোরানোর ব্যর্থ চেষ্টামাত্র। বিক্ষুব্ধ অবচেতন তোলপাড় হচ্ছে সেই মুহূর্তটার কথা ভেবে। যদি ফিরে যাওয়া যেত আবার, যদি ফিরিয়ে নেওয়া যেত প্রশ্নটা? যে প্রশ্ন প্রেমিকাকে করা অনুচিত, প্রেমশাস্ত্রের পাঠে যে প্রশ্ন ঘোরতর নিষিদ্ধ। আর… কে না জানে নিষিদ্ধের হাতছানি কি প্রবল। সে অদম্য আকর্ষণ উপেক্ষা করব এতটা বীতস্পৃহ আমি নই। কিন্তু এতবড় নির্বোধও তো নই যে অমন অন্তরঙ্গ সময়ে ওরকম একটা প্রশ্ন…
অনবধানে জ্যামুক্ত তীর ফিরিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা ধনুর্ধরের থাকে না, তার কাজ তখন কম্পিতবক্ষে আগুয়ান শরকে লক্ষ্য করা। এ পর্যন্ত সকলেই জানে। প্রবাদবাক্য সাধারণত মিথ্যে হয় না। সাধারণত… কিন্তু তীর যদি লক্ষ্যভেদ করে? যদি অজ্ঞাত কারণে শরাহত হয় কোনও অজানা শত্রু যার অস্তিত্বই ছিল কার্মুকের অগোচর? ঠিক কেমন হয় তখন তার মনের অবস্থা? বিস্মিত? পুলকিত? চমৎকৃত? নাকি এ সবই মিলেমিশে থাকে অথবা… অথবা, এর বাইরে ব্যাখ্যাতীত কোনও অনুভূতি? যেমনটা আমার হয়েছিল স্নানঘরে…
…
কি করে ফেললাম? কেন জিজ্ঞেস করতে গেলাম এটা? অতি বড় মূর্খও এমন ভুল করবে না আর আমি কি না… ও ঠায় চেয়ে আছে আমার চোখের দিকে। নিষ্পলক দৃষ্টিতে মিশে অপার বিস্ময়, তার সাথে নীরব ভর্ৎসনা। এখনও আমাদের দেহ পরস্পরে সম্পৃক্ত, ঝিরিঝিরি বারিধারা শাওয়ার থেকে নেমে ভিজিয়ে দিচ্ছে একবিন্দুতে মিশে থাকা আলাদা দুটো শরীরকে। ওর নরম জমিতে দৃঢ়প্রোথিত হয়ে আমার উত্তুঙ্গ পৌরুষ, ছন্দোবদ্ধ মিলনের গতিতে যান্ত্রিকভাবে কেঁপে কেঁপে উঠছি দুজনেই। দাঁড়িয়ে থাকার দরুণ সম্ভব ছিল না স্বাভাবিক ভঙ্গিতে মিলিত হওয়া, ওর কোমল তনু তাই ঢলে পড়েছে স্নানঘরের বাষ্পসিক্ত দেওয়ালে, সুগঠিত বাম জঙ্ঘা পরম আদরে বেষ্টন করে দয়িতের কোমর। ঈষৎ তির্যক দেহভঙ্গির কারণে উন্নত স্তনেরা কি মোহময়ী এক বিভঙ্গে আমার বক্ষলগ্না। কবোষ্ণ জলের মনোরম স্পর্শে জাগ্রত দুই বৃন্ত বারংবার আছড়ে পড়ছে প্রেমিকের বলিষ্ঠ বুকে। সুডৌল দুই হাত পেলব আলিঙ্গনে আলতো করে জড়িয়ে। নমনীয়, অথচ দৃঢ় সে আলিঙ্গন। পুরুষকে যা নিশ্চিতভাবে বেঁধে ফেলে নারীর চিরন্তন বাহুপাশে। রতিক্রীড়ার তালে তালে সঙ্গতি রেখে সুপুষ্ট নিতম্ব আঘাত হানছে ওয়ালপেপারের গায়ে, বিচিত্র শব্দ তুলে। সবই মুহূর্ত কয়েক আগের মত, শুধু… আবেশে বোজা চোখের পাতারা এখন উন্মীলিত। সপ্রশ্ন দৃষ্টি সরাসরি নিবদ্ধ আমার দৃষ্টিতে। মর্মভেদী চাহনি যেন আমার চামড়া-অস্থি-স্নায়ু বিদীর্ণ করে দেখে নিচ্ছে মনের অতল অবধি। একটাও কথা বলেনি ও, কিন্তু নিরুচ্চার জিজ্ঞাসায় প্রতিধ্বনিত বুকের ভিতরটা। ঐ চোখের চাওয়ার সামনে বেশিক্ষণ প্রতিরোধের ক্ষমতা নেই। অথচ… কি কৈফিয়ত দেব এই অমার্জনীয় অপরাধের?
“Just kidding”, নিজের মুখ থেকে বেরোনো কথাগুলো নিজেরই কানে কি ভীষণ হাস্যকর শোনালো! ও কিছু বলছে না। তপ্ত শরীর এখনও নিয়মিত গতিতে পৌরুষের লাঞ্ছনা ধারণে ব্যস্ত, চোখজোড়া ঠায় চেয়ে আমার মুখের দিকে। আর ফেরবার পথ নেই, যা থাকে কপালে। মিথ্যেটাকে যে কোনও মূল্যে গ্রহণযোগ্য করে তুলতে মরিয়া আমি, ঠোঁটের কোণে একচিলতে হাসি ফোটানোর আপ্রাণ চেষ্টা করি।
“তুই সত্যিই সিরিয়াসলি নিলি কথাটা? পারিসও বটে”
পরিস্থিতি লঘু করার এর থেকে ভাল উপায় মাথায় আসছে না। এই ঠুনকো আশ্বাসে কাজ হবে কোনও? দুরুদুরু বুকে প্রতীক্ষা করি, আমার কাঠিন্য তখনও ওকে অখণ্ড মনযোগে গেঁথে চলেছে। একটা হাত আপনা থেকে উঠে যায় পুরুষ্টু বোঁটায়, উদ্বেল বৃন্তকে পীড়ন করে। কোনও প্রত্যুত্তর আসে না ওর থেকে, আয়ত চোখদু’টি আবারও মুদে যায়, টানা টানা আঁখিপল্লবে ফের রতিসুখের প্রতিভাস। অজান্তেই স্বস্তির নিঃশ্বাস পড়ে আমার। যাক, এখনকার মত ফাঁড়াটা কেটেছে। বেমক্কা প্রশ্নটার কথা ভেবে এবার নিজের ওপরে রাগ হচ্ছে। এসবই গত এক সপ্তাহব্যাপী অদ্ভুতুড়ে চিন্তাগুলোর বহিঃপ্রকাশ। কি যে ছেলেমানুষিতে পেয়ে বসেছে! আগের রবিবার দুপুরে আচমকা ভেসে ওঠা দৃশ্যকল্প থেকে শুরু, তারপরের কদিন নিয়মিতভাবে সেই চিন্তাকে প্রশ্রয় দিয়ে আজ এই দুরবস্থা। যতবার মনকে শাসন করতে গিয়েছি ফল হয়েছে উলটো। অসুস্থ ভাবনারা আরও বেশি করে ভিড় করেছে মনের ভিতর, চেতন-অবচেতনকে গ্রাস করেছে ধীরে ধীরে। বিশেষত সেদিন রাতে ওর আধখোলা বুকের চুড়োয় সঞ্জীবের দশনচিহ্ন দেখার পর… প্রতিবর্তেই বুঝি দৃষ্টি চলে গেল সেই বিশেষ স্থানটিতে। এতক্ষণে জলধারায় ভিজতে ভিজতে দু’জনেরই শরীরময় স্বচ্ছ আস্তরণ, ভাল ঠাহর হচ্ছে না। তাও এত কাছ থেকে তো ভুল হওয়ার কথা নয়। কোথায় সে দংশনের দাগ? নিষ্কলঙ্ক বিপুল বক্ষদেশ লুটিয়ে পড়ছে আমার বুকের ঘন জঙ্গলে। যেন জোড়া দুই পায়রা ছটফটিয়ে বেড়াচ্ছে থেকে থেকে। ওখানেই সঞ্জীব… আঃ আবারও সেই! বিকৃত চিন্তারা ফিরে আসছে, মস্তিষ্কের দখলদারি ধীরনিশ্চিত গতিতে তাদের অধিকারে। মাথার ভিতর অসংখ্য পোকা কিলবিলিয়ে উঠছে, কুরে কুরে খাচ্ছে আমার যুক্তি-বুদ্ধি-বোধ। রমণের মাঝেই চোখ বন্ধ করে ফেলি, ও যেন ঘুণাক্ষরেও বুঝতে না পারে আমার মনের অবস্থা। বন্ধ চোখের পাতায় আবার সেই দৃশ্যপট, সঞ্জীবের সাথে ও… আর ভাবতে পারি না। কে ঐ প্রেমিক, যে ওকে নির্দয়ভাবে আদর করে চলেছে? ওটা কি সঞ্জীব, না আমি? এখন কার সাথে ও কামকেলিতে মত্ত জলের অবিরাম বর্ষণের মাঝে? আমি, নাকি… ? মস্তিষ্কময় বিস্ফোরণ হতে থাকে ছোট-বড়, আর আমার বোধবুদ্ধি ঘুলিয়ে যায়। রমণের গতিবেগ বৃদ্ধি পেতে থাকে ক্রমশ। ওর আতপ্ত যোনিপাত্রে আমূল বিদ্ধ লৌহশলাকা বাড়তে থাকে দৈর্ঘ্যে-প্রস্থে-আয়তনে, বাড়তে থাকে তার তাপমাত্রা। লোহিত-তপ্ত… শ্বেততপ্ত। দিগ্বিদিকজ্ঞানশূন্য পুরুষ উন্মাদের মত ছিন্নভিন্ন করে চলে নারীর কোমল অভ্যন্তর। ভীমগতিতে সে মন্থন করে আমার একান্ত আপন প্রেমিকাকে… কে ও? আমি? সঞ্জীব? মনের মধ্যে বিদ্যুচ্চমকের মত উদয় হয় মারাত্মক এক প্রশ্নেরঃ তবে কি আমিই এখন সঞ্জীব? সহস্র অচেনা কণ্ঠ সম্মিলিত সাড়া দেয়- “হ্যাঁ”। কে ওকে এমন তীব্রভাবে নিষ্পেষণ করছে? আবারও সমস্বরে জবাব আসে- “সঞ্জীব”। হৃদয়ের অচেনা গলিঘুঁজিতে অনুরণিত হতে থাকে সে উত্তর। হাজার ডেসিবেলের আর্তনাদে কানে তালা লেগে যায়। সহসা এই বধিরতায় আপাদমস্তক কেঁপে ওঠে আমার। উদ্ভ্রান্তের মত চোখ খুলি। দেখি সেই আগেরই মত রমণের ছন্দে স্পন্দিত হচ্ছে প্রিয়তমা, তালে তালে দুলে উঠছে ওর নগ্নদেহ। অবিশ্রান্ত বারিধারায়, প্রিয়মিলনের তৃপ্তিতে, যৌনসুখের বিহ্বলতায় সারা অঙ্গে তার রূপের মাধুরী ছড়িয়ে পড়েছে। ধন্দে পড়ে যাই, এ কি কোনও শাপগ্রস্তা কিন্নরী, না আমারই প্রেয়সী? আমার, নাকি… না আমার নয়, এই মুহূর্তে স্নানঘরের একান্ত ঘেরাটোপে কোথাও আমার অস্তিত্ব নেই। নামহীন এক বোধ জন্ম নেয় মনের গহিনে। এখন আমি সঞ্জীব। যার ওটা নাকি… “Bigger than yours”, মধুক্ষরা সলজ্জ স্বর কানের মধ্যে বেজে ওঠে। তবে তো এই সামান্য রতিক্রীড়ায় কাজ হবে না! যে পৌরুষের দর্প যত বেশি তার আস্ফালনও ততোধিক হওয়া উচিত। আজই ওকে হাতেনাতে সে প্রমাণ দেব।
হঠাৎ কোথা থেকে এক দানব এসে ভর করে আমার শরীরে। না না আমার তো নয়… যাকগে এখন অতশত ভাবার সময় নেই। গোটা শরীরে রক্তকণিকারা ছুটে বেড়াচ্ছে, মাথার ভিতরে জান্তব হুঙ্কার। বহু বহু যুগ আগে আমার পূর্বপুরুষ এ পৃথিবীর বুকে দিনগুজরান করত হিংস্র প্রাণীদের সাথে দৈনিক সংগ্রাম করে। তখন মানুষে আর পশুতে প্রভেদ কতটুকুই বা ছিল? সেই আদিম মানবের রক্ত বইছে আমার শিরায়, ধমনীতে। প্রাণের ভিতর অনেক গভীরে এখনও বসত করে রক্তলোলুপ সে শ্বাপদ। সভ্যতা আর আধুনিকতার মোড়কে তাকে অনুক্ষণ ঘুম পাড়িয়ে রাখতে হয়। কিন্তু আজ, এই মুহূর্তে মনের কোটরে বাসা বাঁধা বিকৃত জৈবিক তাড়নায় সে বেরিয়ে এল, বেরিয়ে এল নখ-দাঁত বার করে। আরক্ত চোখে একবার নিরীক্ষণ করল নিজের দুই কামলোলুপ থাবার অধিকারে এলিয়ে পড়া রিরংসায় বিবশ নারীটিকে। পলকের মধ্যে তাকে সজোরে ঠেসে ধরেছে স্নানঘরের দেওয়ালে। হ্যাঁচকা টানে নারীর ডান জঙ্ঘাও তার কোমরে উঠে এল, দুই সুডৌল রম্ভাসদৃশ উরু বেষ্টন করে আছে পুরুষ-পশুর শ্রোণীদেশ। শরীরের সবটুকু অংশ মাটি থেকে শূন্যে, নয়তো রমণকারীর অঙ্গে ভর দিয়ে। আচমকা এই পট-পরিবর্তনে রমণী বিস্মিতা, ভূপতনের আতঙ্কে আরও নিবিড় আলিঙ্গনে বেঁধেছে প্রেমিকের ঘাড়-গলা-পিঠ। ঘটনার আকস্মিকতায় বিহ্বল হয়ে আবেশে বন্ধ চোখ খুলে দয়িতকে অবাক দৃষ্টিতে দেখছে। সে চাহনিতে পুলক-ত্রাস-চমক-বিমুগ্ধতা মিলেমিশে বিচিত্র ভাবের ব্যঞ্জনা। তার দূরতম ধারণাতেও নেই কে এই পুরুষ। সে প্রেমিকপ্রবর নয়, বিকৃত কামের জ্বালায় উন্মাদ এক নররাক্ষস। প্রেয়সীকে অন্য প্রেমিকের সাথে কল্পনা করে যার পৌরুষ আজ দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়ে উঠেছে। নির্মম গতিতে সমূলে বিদ্ধ করছে নারীকে, জরায়ুমুখে আঘাত হানছে একের পর এক। কর্কশ কাঠিন্যের প্রহারে ব্যথাতুরা রমণী আর্তনাদ করে উঠল। সে শব্দে যারপরনাই উল্লসিত পুরুষের ভিতরে লুকিয়ে থাকা জন্তু, নিষ্ঠুরতর রমণে ছিঁড়েখুঁড়ে ফেলছে পেলব নারীদেহ। বলিষ্ঠ দুই হাতের তালুতে প্রবলভাবে নিষ্পেষিত কমনীয় জঘনদেশে রক্তাভা, পরিচিত শরীরের প্রতিটি রোমকূপ আক্রোশে দলিত-মথিত করছে। অচেনা রমণ-পীড়নে অনভ্যস্ত কোমল তনু ক্রমশ সাবলীল, পাশবিক নিষ্পেষণের মাঝে প্রবল রতিসুখ খুঁজে নিচ্ছে ধীরে ধীরে। বর্বর পুরুষকে সোহাগে-লাস্যে আরও নিবিড় করে বাহুডোরে টেনে আহ্বান জানাচ্ছে সবলতর মর্দনের। জান্তব পৌরুষ সে ডাকে সাড়া দিয়েছে। নারীর আর্দ্র যোনিদেশে ধাতব পিস্টনের মত বারংবার আছড়ে পড়ছে নির্দয় কাঠিন্যে, যেন প্রজ্বলিত কামাগ্নিতে শুষে নেবে তার কামনাঘন লাভার শেষ বিন্দুটুকু। প্রচণ্ড মৈথুনের তালে দ্রুতলয়ে ওঠানামা করছে স্ফুরিতাধর মানবী, চরম সঙ্গমসুখে তার অভ্যন্তর ভেসে যাচ্ছে, স্খলিত হচ্ছে। মিলনাবেশে বন্ধ দুই চোখের পাতায় সাতরঙা রামধনুর খেলা। শাওয়ারের কৃত্রিম বারিপাতে সিক্ত স্তনদু’টি প্রবল আবেগে আরও আরও স্ফীত, মরুদেশীয় দ্রাক্ষাফলের আকার নেওয়া উন্মুখ বৃন্তদ্বয় ভিতরের বাঁধভাঙা জোয়ারে যেন ফেটে পড়বার উপক্রম। আসন্ন রাগমোচনের উত্তেজনায় রোমাঞ্চিত নারীর সংযমের বাঁধ ভেঙে গেল, উথালপাথাল অট্ট-শীৎকারে ভরে যাচ্ছে স্নানঘর। ফ্ল্যাটের সীমানির্ধারক দেওয়ালের পুরু গাঁথনিকে উপেক্ষা করে ছড়িয়ে পড়ছে প্রতিবেশী ঘরগুলিতে। বাঁধভাঙা দুকূলপ্লাবী নারীর লুপ্তপ্রায় চেতনা সে সব খেয়াল করার অবস্থায় নেই, অবসন্ন দেহে পুরুষের গায়ে এলিয়ে পড়ার প্রাকমুহূর্তে শুধু টের পেল নিজের গভীরে প্রমত্ত পৌরুষের উদ্দাম বিস্ফোরণ।
রমণের উত্তেজনা এখন স্তিমিত, রেতঃস্খলনের সাথে সাথেই উধাও প্রাণের কন্দরে লুকিয়ে থাকা বন্য পশু। ধীরে ধীরে জান্তব প্রবৃত্তিকে সরিয়ে ফিরে আসছে প্রেম, নিজস্ব নারীর প্রতি ভালবাসা পুনরায় জাগরূক হৃদয়ে। মানবীশরীরের প্রতিকোণে পরম যত্নে সাবান মাখিয়ে দিচ্ছে, জলের ঝাপটায় দূর করছে জমে থাকা ক্লেদ। তীব্রমৈথুনের উদ্দামতা মুছে গিয়ে শ্রান্ত প্রিয়তমা আবারও নিজেকে ফিরে পাচ্ছে, ফিরে পাচ্ছে প্রেমাস্পদের বাহুবন্ধনে। নীরবে পুরুষকে ঝরনাধারায় স্নান করাচ্ছে সেও। দু’জনের মুখে কোনও ভাষা নেই, শব্দের অনবরত যাতায়াত কেবল পরস্পরে নিবদ্ধ দু’জোড়া চোখের বাঙ্ময় দৃষ্টিপাতে।
যৌথস্নান শেষ, ঘরে ফিরে ক্লান্ত দেহটাকে এলিয়ে দিয়েছি বিছানার নরম আশ্রয়ে। সুদীর্ঘ মানসিক আর শারীরিক পরিশ্রমের পর কথা বলার সামান্যতম শক্তিটুকুও আর অবশিষ্ট নেই। ও ব্যস্ত স্নান সমাপনান্তে ভিজে চুল শুকোতে। স্খলিতকেশ উন্নত বুকের ওপরে মেলে চালু করেছে হেয়ারড্রায়ার, একটু একটু করে শুষ্ক হচ্ছে মেঘবরণ কেশ। একটানা যান্ত্রিক শব্দের প্ররোচনায় অবসন্ন চোখের পাতা বুজে আসতে চায়। শিথিল দেহ নিদ্রাবেশে শিথিলতর।
সহসা অজানা প্রতিবর্তে তন্দ্রা ছুটে যায়। চোখ পড়ে ওয়ার্ড্রোবের মানুষপ্রমাণ দর্পণে। আলুলায়িতকেশ নারী আয়নার মধ্যে দিয়ে অনিমিখ তাকিয়ে রয়েছে আমার দিকে। দুর্বোধ্য সে জটিল দৃষ্টিতে এক আকাশ জিজ্ঞাসা। ও কি তবে সবই বুঝতে পেরেছে?
শিরদাঁড়া বেয়ে হিমস্রোত নেমে যায়।
…
প্রশ্নোত্তরের পালা তবে অনিবার্য, মনে মনে ভাবি। অগত্যা… নিয়তিকে তো আর খণ্ডাতে পারব না। এত ভয় পাওয়ারই বা কি আছে? মনকে শক্ত করা বিশেষ দরকার। কি আর হবে বড়জোর, একটু বকাঝকা, খানিকটা রাগ-অভিমান। তার বেশি তো কিছু নয়। সে কি আর নিত্যদিনই হচ্ছে না, কারণে-অকারণে? হয়তো তিরস্কারের বহরটা একটু বেশি মাত্রায় হবে, সেটা আমার প্রাপ্যও বটে। কিন্তু স্নানের সময় যেমন নিজেকে ছেড়ে দিল আমার ওপর, ওরকম বন্য যৌনতায় সঙ্গ দিল অমন মারাত্মক প্রশ্ন করার পরেও তাতে দুর্ভাবনার তেমন কারণ নেই। খামোখাই এত ভেবে যাচ্ছি।
মনের ভিতরে লুকিয়ে থাকা বিরুদ্ধ মন সাথে সাথে বাগড়া দেয়। এতটা আত্মপ্রত্যয়ের সত্যিই কি কোনও ভিত্তি আছে? শুধোয় সে। এমনও তো হতে পারে তখন আর ও প্রশ্নটা করেনি, মুলতুবি রেখেছিল। দুজনে মিলিত হচ্ছি এতদিন পরে, অপ্রিয় জিজ্ঞাসায় মৈথুনকালে ব্যাঘাত ঘটাতে কোন উপবাসী নারীই বা চায়! সেক্ষেত্রে অন্তিম জিজ্ঞাসা কিন্তু এখনও বাকি। দর্পণে প্রতিবিম্বিত নারীর মুখাবয়বে ফুটে ওঠা প্রশ্নের রেখারা অন্তত তেমনই ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছে। অতএব আসন্ন বিপর্যয়ের জন্য মানসিক প্রস্তুতি নিতে আরম্ভ কর। সময় ঘনিয়ে এল বলে।
ক্লান্ত, অবসন্ন মনের প্রাঙ্গণে শুম্ভ-নিশুম্ভের লড়াই চলতে থাকে। বিরক্ত হয়ে উঠি, এই টানাপড়েন আর ভাল লাগে না। ব্যাপারটা চেপে গেলে কেমন হয়? আগের যে মিথ্যাচরণে তখনকার মত বিপদ কাটিয়ে উঠেছিলাম সেটারই যদি পুনরাবৃত্তি করি, ও কি আর বুঝতে পারবে? উঁহু, মেয়েদের সন্দেহ এত সহজে নিরসন করা গেলে পৃথিবীর অর্ধেক পুরুষ আজ কত সুখী হত! ওভাবে হবে না। তাছাড়া, তাছাড়া… স্নানের ঘরে যে শ্বাপদ আমার মধ্যে জেগে উঠেছিল তাকে নিবৃত্ত করব কোন উপায়ে? সে তো আবারও ফিরে ফিরে আসবে। প্রতিবার নবোদ্যমে, নতুন অস্ত্রসম্ভার সাজিয়ে। গত এক সপ্তাহ যাবৎ অবচেতনে যা চলেছে তার প্রভাব কতদূর অবধি পড়বে আমাদের জীবনে? আজকে তার ছোট্ট একটা নমুনা ট্রেলারেই তো শিউরে উঠতে হয়!
তবে কি সব সত্যি স্বীকার করে নেব? ওর কাছে হাট করে খুলে দেব নিজের মনের জানলা? তারপর? তারপর যদি ওর মন ভেঙে যায়? ছেড়ে চলে যায় আমাকে… না না, এ কোনওমতেই হতে দেওয়া যায় না। একটা বিকল্প রাস্তা আমায় খুঁজে বের করতেই হবে। অশান্ত মন অস্থির পদচারণা করে চলে, চোখ চলে যায় অজান্তেই ওয়ার্ড্রোবের আয়নার দিকে। চুল শুকোনোর পর্ব শেষ, এখন যৎকিঞ্চিৎ প্রসাধনে ব্যস্ত ও। অপাঙ্গে লক্ষ্য করে আমায়। পরক্ষণেই অবহেলাভরে দৃষ্টি সরিয়ে নেয়, মনোযোগ দেয় শৃঙ্গারে।
“…চলে গেছি ইহাদের ছেড়ে;
ভালবেসে দেখিয়াছি মেয়েমানুষেরে,
অবহেলা করে আমি দেখিয়াছি মেয়েমানুষেরে,
ঘৃণা করে দেখিয়াছি মেয়েমানুষেরে;
আমারে সে ভালবাসিয়াছে, আসিয়াছে কাছে,
উপেক্ষা সে করেছে আমারে, ঘৃণা করে চলে গেছে,
যখন ডেকেছি বারেবারে, ভালবেসে তারে;
তবুও সাধনা ছিল একদিন, এই ভালবাসা;
আমি তার উপেক্ষার ভাষা
আমি তার ঘৃণার আক্রোশ
অবহেলা করে গেছি;”
হতাশ হয়ে আবার শুয়ে পড়ি। আনমনে দেখতে থাকি সিলিঙের ক্যানভাসে বহিরাগত আলোর ঝিকিমিকি তুলির টান। অবান্তর কথাদের ভিড়ে ক্লান্ত মন কখন যেন ঘুমে ঢলে পড়ে।
“অ্যাই সরে শো না একটু”
নিদ্রালু দু’চোখ পরিচিত গলার শব্দে জেগে ওঠে। তাকিয়ে দেখি, ও। ছুটির দিনগুলো এই ফ্ল্যাটে যাপনের সুবিধার্থে ওর কিছু ঘরে পরার জামা এখানে স্থায়ীভাবে রাখা থাকে। তারই মধ্যে সংক্ষিপ্তাকার একটা নাইটি নামেমাত্র গায়ে জড়িয়েছে, দেহের বেশিরভাগটাই অনাবৃত। আমাকে ঠেলে সরিয়ে দেয় দেওয়ালের দিকে। সামান্য একচিলতে জায়গা বার করে শরীর এলিয়ে দেয়। সারা সকাল ওর ওপর দিয়েও কম ধকল যায়নি। তাই বোধহয় এত চুপচাপ। সেটাই কারণ, না কি… জিজ্ঞেস করার মত সাহস আমার নেই, তার চেয়ে মুখ বুজে পড়ে থাকাই শ্রেয়। সিঙ্গলবেড খাট, দুজনের স্থান সংকুলান হতে গেলে কিছুটা দৈহিক ঘনিষ্ঠতা অনিবার্য। দু’জনেই খানিকক্ষণ নীরব, কেবল পাশাপাশি শায়িত দু’টি শরীরে নিরুচ্চারে উত্তাপ বিনিময় হতে থাকে। অভ্যাসমত অঙ্গে দেওয়া হাল্কা বিদেশি সুগন্ধির ছোঁয়া, তার মৃদু সৌরভে আবিষ্ট হয়ে পড়ছে আমার সমগ্র সত্তা। জানলার বাইরের কোনও গাছ থেকে বিরহী এক কোয়েলের কুহুতান ভেসে আসে, যেন ঋতুরাজের আগমন-নির্ঘোষ – ‘বসন্ত জাগ্রত দ্বারে’। পর্দার ফাঁক দিয়ে ঘরের ভিতরে অনধিকার প্রবেশকারী আলোর তীব্রতায় সহসা হেরফের, সিলিঙের ক্যালেইডোস্কোপের চালচিত্র সে অভিঘাতে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যায়, আবারও ভেসে ওঠে নতুন এক নকশা নিয়ে। কেমন মায়াবী, স্বপ্নালু পরিবেশ। আহা যদি সারা জীবনটাই এমনভাবে কাটত, দু’জনে পাশাপাশি শুয়ে, নির্ঝঞ্ঝাট…
আচমকাই আমার দিকে পাশ ফিরেছে। ওর পা আমার গায়ের ওপর, পেলব বাহু বেড়াজালে বেঁধেছে ডান কাঁধ। কোমল স্তনভার উন্মুক্ত পুরুষবুকের জঙ্গলে আলতো ভাবে পিষ্ট হচ্ছে, বাঁদিকের গালে ওর নি:শ্বাসের উষ্ণ পরশ, চোখেমুখে আলগোছে হানা দিচ্ছে দু’এক গাছি চূর্ণ কুন্তল। একেই কি স্বর্গসুখ বলে?
“তুই সত্যিই জানতে চাস?”
হঠাৎ মৌনতাভঙ্গের কারণে প্রথমটায় একটু অসুবিধে হল কথাটার মর্মার্থ উপলব্ধি করতে। জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকি।
“যেটা তখন বললি… চানের সময়, সত্যি জানতে চাস?”, গলায় সামান্য অসহিষ্ণুতার আভাস। এই রে! এত তাড়াতাড়ি জেরা আরম্ভ হয়ে গেল? যা থাকে কপালে… একবার গলাখাঁকারি দিলাম।
“মানে এক্স্যাক্টলি কিসের কথা বলছিস…”
“আহহ ন্যাকামো করিসনা”, এবারে উষ্মাটা আর প্রচ্ছন্ন রইল না কণ্ঠস্বরে, “খুব ভাল করেই জানিস কিসের কথা বলছি”
কি উত্তর দেব এর? এতটা সোজাসুজি প্রশ্ন, সত্যি বলতে আশা করিনি। মনের মধ্যে ব্যাপারটাকে একটু গুছিয়ে নিতে থাকি। বেফাঁস কিছু না বেরিয়ে যায় মুখ দিয়ে! ও কিন্তু সামান্যতম সময়টুকুও দিতে রাজি নয়। সঙ্কোচ ঝেড়ে ফেলে নিজেই আবার জিজ্ঞেস করল,
“তুই জানতে চাস তো সঞ্জীবেরটা তোর থেকে বড় কিনা?”
এমন সরাসরি আঘাতের জন্য মন একেবারেই প্রস্তুত ছিল না, প্রশ্নের অভিঘাতে কেমন অসাড় হয়ে গেল। নির্জীবভাবে ঘাড়টা কোনওমতে নাড়িয়ে সম্মতিজ্ঞাপন করলাম।
“Are you absolutely sure? নিতে পারবি তো?”
নির্দয়া এই নারীকে কেমন অচেনা লাগে। এটা কি পাল্টা প্রতিশোধের পালা? স্নানের সময় উন্মত্ত পাগলামির বদলা নিচ্ছে এইভাবে? নাকি… আমার কৃতকর্মের ফল?
“By atleast two or three inches. ”
কানের মধ্যে কে যেন গরম শলাকা ঢুকিয়ে দিয়েছে। বধির হয়ে গেছি, চারপাশের কোনও শব্দ আমায় আর স্পর্শ করতে পারছে না। কর্ণকুহরে একটানা ধ্বনিত হচ্ছে পরিমাপটা, ” atleast two or three inches. ” বোধহয় একটু মায়া হল ওর, বাহুপাশে আরও নিবিড়ভাবে টানল।
“Jelus?”, নরম স্বরে প্রশ্ন ভেসে এল। কি জবাব দেব বুঝতে পারছি না। বাস্তবিকই উত্তরটা আমার অজানা। কিভাবে ব্যাখ্যা করা যায় সেই অনুভূতি? ‘ঈর্ষান্বিত’ বললে যে সত্যের ঘোর অপলাপ হবে।
বোবার শত্রু নেই। মৌন থাকাই এখন শ্রেষ্ঠ পন্থা। ওর দিকে আর তাকাতে পারছি না, অস্বস্তি হচ্ছে ঐ ডাগর আয়ত চোখের তীব্র চাহনির সামনে। যেন মর্মস্থল ভেদ করে পড়ে নেবে আমার মনের অন্ধকারে লুকিয়ে থাকা সমস্ত গূঢ়রহস্য। দৃষ্টি গিয়ে পড়ে নাইটির শাসন মানতে না চাওয়া ওর বেআব্রু বুকের মসৃণ চাতালে। নিটোল উদ্ধত স্তন সম্পূর্ণ নিদাগ, নিষ্কলুষ। গভীর বিভাজিকার বাঁ পাশে আবেদনমুখর তিল বাদে আর কিছুই দেখা যায় না। কোথায় হারিয়ে গেল সেই দশনচিহ্ন? সে কি তবে আমার দুঃস্বপ্নের একটা অংশমাত্র? আণুবীক্ষণিক তীক্ষ্নতায় খুঁজতে থাকি ওর বুকের প্রতিটি বিন্দু, প্রতিটি কোষ… উন্মাদ দৃষ্টির সামনে ফালাফালা হয়ে যায় গভীর চড়াই-উতরাই, উপত্যকাভূমি।
“কি খুঁজছিস?”
আবারও আচমকা প্রশ্নে আমি স্থাণু। অব্যক্ত কথারা কিছুতেই আর ভাষা হয়ে বেরোতে পারছে না। মূক চাহনি তাকিয়ে থাকে ওর দিকে। হিমস্বরে আপনা থেকেই উত্তর দিল, “সেরে গেছে। বম্বে যাওয়ার পর সঞ্জীব অয়েন্টমেন্ট লাগিয়ে দিয়েছিল”
।। ১২ ।। গৌরচন্দ্রিকা
ছেলেবেলায় স্কুল থেকে একবার সায়েন্স সিটিতে নিয়ে গিয়েছিল। আন্দাজ ক্লাস ফোর বা ফাইভে। তখন বয়স অল্প, পৃথিবীটাকে অন্য চোখে দেখতাম। সর্ব বিষয়ে জানতে চাওয়ার অদম্য কৌতূহল কাজ করত মনের ভিতর। প্রশ্নগুলো কিছুতেই আর ফুরোতে চাইত না। অনন্ত জিজ্ঞাসার মাঝে জীবনের গতি ছিল সহজ-সরল, একরৈখিক, একমাত্রিক। অনর্থক জটিলতার স্থান ছিল না কোনও, বোধকরি জটিলতা শব্দের মানেটাও আটকে ছিল সিঁড়িভাঙা অঙ্কের ধাপে ধাপে। একদিকে সুপ্ত বাসনা ছিল ‘বড় হয়ে’ দুনিয়াটাকে মুঠোয় পোরার, তেমনই বিস্মিত হতাম অল্পেতেই। তৎকালীন বাইপাসের সুনসান জনহীন প্রান্তরে বিজ্ঞান-নগরীর সুবিশাল গম্বুজাকৃতি প্রেক্ষাগৃহে বসে অপার বিস্ময়ে দেখেছিলাম আফ্রিকা মহাদেশের অন্যতম ভয়ঙ্কর অরণ্য সেরেঙ্গিটির বুকে বিচিত্রদর্শন হরেকরকম জীবজন্তুর কাণ্ডকারখানা। জলে-ডাঙায়-অন্তরীক্ষে তাদের বর্ণময় জীবনযাত্রার ক্যামেরাধৃত অংশবিশেষ নিরীক্ষণ করে কৈশোরের পথে পা বাড়ানো বালকের সেদিন বাক্যি হরে গিয়েছিল। কি এক অদ্ভুত ঘোরে আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছিল সে। বন্ধুদের বিদায় জানিয়ে সন্ধে-নামা অন্ধকারে বাড়ি ফেরার পরেও সেই ঘোর কাটেনি অনেকক্ষণ। রাতে ঘুমোতে যাওয়ার সময় চোখের পাতা জুড়ে ছিল সদ্য নাম-জানা বন্য প্রাণীদের দল; তাদের শিকার ধরার রকমারি পদ্ধতি, অলস গৃহস্থালীতে বেড়ে ওঠা শাবকদের প্রতি জান্তব অপত্যস্নেহ, তপ্তখরার ঊষর দিনে জলপান বিরতিতে খাদ্য-খাদকের অদ্ভুত সহাবস্থান। অন্ধকারাচ্ছন্ন মহাদেশের এক আকাশ আলোর নীচে অবিরাম বেজে চলা আদিবাসীদের ঢাকের দ্রিমিদ্রিমি শব্দের আড়ালে কখন যেন দু’চোখে জড়িয়ে এসেছিল ঘুমের চাদর।
তারপর কেটে গিয়েছে দেড় দশকেরও বেশি। প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মে সেদিনের প্রায়-কিশোর আজ পরিণতবয়স্ক যুবা। একটার পর একটা ধাপ পেরোতে পেরোতে জীবন ক্রমে জটিল থেকে জটিলতর। মুঠোয় দুনিয়াটাকে নেওয়ার অলীক স্বপ্ন সে আর দেখে না, বরং এই গ্রহেরই মত গোলাকৃতি নরম কিছুর স্পর্শে উৎফুল্ল হয় হাতের স্নায়ু-পেশীরা। জনবিরল ই.এম. বাইপাসই বা আজ কোথায়? নিত্যনতুন রেস্তোঁরা, শপিং মল আর আবাসনের বিনির্মাণে মুখ ঢেকে ফেলা সড়ককে বর্তমানে চেনা দায়। পুরনো জগতটা চোখের সামনে খোলনলচে সমেত একটু একটু করে বদলেছে, বদলেছে ভিতর-বাইরের আমিটাও। সেরেঙ্গিটি শব্দটা এখন বহুলশ্রুত, তার সম্বন্ধে কোনও কিছু জানার প্রয়োজন হলে মাউসের কয়েকটা ক্লিকেই উইকিপিডিয়া, গুগল, ইউটিউব এনে হাজির করে রাশি রাশি তথ্যের ভাণ্ডার।
গতিময় জীবনে পরিবর্তনের ভিড়ে হারিয়ে যাওয়া সেই আফ্রিকান ঢাকের সহসা নিনাদে হৃদয় আজ তাই স্বভাবতই উদ্বেল। মিহি সুরেলা নারীকণ্ঠে বোমাবর্ষণ হচ্ছে একের পর এক, আর বুকের মাঝে প্রলয়ঙ্কর ভূকম্পনে টালমাটাল এত বছরের সম্পর্কের ভিত। যে শক্ত জমির ওপরে দাঁড়িয়ে দু’জনে রচেছিলাম ভালবাসার যৌথ ইমারত, তার মাটি আলগা ঝুরো ঝুরো হয়ে নড়িয়ে দিচ্ছে তাজমহলের প্রতিটি মিনার। কয়েকশ’ বছরের স্থাপত্য কীর্তি বুঝি কয়েক সেকেণ্ডের প্রলয়েই ধূলিসাৎ হবে। কি অদ্ভুত নিয়ম এই ভাঙাগড়ার খেলায়!
প্রকৃতি যখন প্রলয়ঙ্করী, মানুষ তার সামনে অসহায় শিশু। নির্বাক হয়ে দেখে চলে তাণ্ডবের উল্লাস, চোখে নামে আশঙ্কার ছায়া। সব হারানোর ভয়ে আচ্ছন্ন সত্তা হাঁটু গেড়ে করজোড়ে ভিক্ষা চায় নিঠুরা দেবীর কাছে। পুরুষ ও প্রকৃতির রসায়নও সেইরকমই অনিশ্চয়তায় ভরপুর। দৈহিক বলে বলীয়ান পুরুষ নারীকে ভাবে অবলা, নিজের হাতের ক্রীড়নক, শরীরখেলার সামগ্রী। আপন অধিকারবলে গ্রাস করতে চায় অসহায়া রমণীকে। সহসা কোনও এক বিশেষ মুহূর্তে সে মায়াবিনী নিজের জাল বিস্তার করে। তার আশ্চর্য ভোজবাজির সামনে দুর্দমনীয় পুরুষ তখন নীরব দর্শকমাত্র। নিঃসহায়, নিঃসম্বল। নতজানু হয়ে দেখে চলে স্বৈরিণীর মায়ামুকুরে নিজ প্রতিবিম্ব। সৃষ্টির আদিকাল থেকে প্রবহমান এ পরম্পরা… ‘সেই ট্র্যাাডিশন সমানে চলিতেছে’।
নিঃসহায় আমিও। নতজানু নই অবশ্য, আপন নারীর বাহুপাশে আবদ্ধ। নিস্পন্দ শুয়ে আছি ওর দেহের উত্তাপ গায়ে মেখে, কোমল স্তনের উষ্ণ স্পর্শে, লুটিয়ে পড়া বিস্রস্ত চুলের বেড়াজালে। শুধু বুকের ভিতর মাদলের আদিম শব্দ একটানা বেজে চলেছে। আপাতদুর্বোধ্য সে শব্দের ভাষা জানি আমি। আর জানে ও। এ ভাষার পাঠ নেই কোনও বিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচীতে, কোনও শিক্ষাপর্ষদ নিজেদের পাঠ্যক্রমে এ ভাষা অনুমোদন করেন না। তবুও আমরা তা শিখি, শিখে যাই… প্রকৃতির পাঠশালাতে। এ ভাষার নাম ঈর্ষা। বিস্তারিত অর্থে যৌনঈর্ষা। নারীর স্বেচ্ছাচারে ক্ষতবিক্ষত পুরুষের সাধ্য কি সে ভাষা ভুলে যাওয়ার!
…
“কাঁহা খো গ্যয়ে জনাব?”
জলতরঙ্গের আওয়াজে সম্বিৎ ফেরে। স্মৃতিরা একে একে ভিড় করে আসছিল… কলকাতার বাড়িতে স্নানঘরের নির্জনতা, অনুষ্ঠানবাড়ির একান্ত নিভৃতে পাওয়া বিকেলের অংশবিশেষ, চিলেকোঠার প্রায়ান্ধকারে স্কাইপ চ্যাট। কি বিচিত্র এই জীবন, কি বর্ণময় তার গতিপ্রকৃতি! মূর্খের মত কল্পনার জাল বুনে গিয়েছি একের পর এক, ঘুণাক্ষরেও যদি জানতে পারতাম বাস্তবে কি ঘটছে, ঘটতে চলেছে…
“তুই চেয়েছিলি? না ও নিজেই…”
বাক্যটা অসমাপ্ত থেকে যায়, ইঙ্গিতটা নয়। আবারও তীব্র চোখে দেখছে আমায়। যেন বোঝার চেষ্টা কেন আমার এই জিজ্ঞাসা।
“Why are you asking this?”
“মানে কিছু না, এমনিই…”, আমতা আমতা করতে থাকি। নিজের কাছেই যে স্পষ্ট নয় প্রশ্নটা!
“How does it matter to you?”
মনের গভীরে পুনরায় ডুব দিতে হয়। না, আত্মসমীক্ষার জন্য নয় একেবারেই। জুতসই কোনও জবাবের সন্ধানে।
“আসলে ভেবেছিলাম ফিরে এসে মলম লাগিয়ে দেব, তা সে সুযোগ আর হল কই”
স্ত্রীজাতিকে বশে আনার এই এক মোক্ষম অস্ত্র। আত্মসমর্পণ করো, সাথে কিছুটা স্তাবকতা। বুঝতে সে সবই পারবে, আবার সব বুঝে নির্লজ্জ তোষামোদে গলেও যাবে ঠিক। পদ্ধতিটা অবশ্য ন্যায়সঙ্গত নয়, তা প্রেমে আর রণে সেসব কে কবে মেনেছে?
যথারীতি কাজ হল। উদ্ধত ভাব প্রশমিত, আয়ত চোখের তারায় কৌতুকের আভাস। যেন জরিপ করতে চাইছে পুরুষের আর্তির গভীরতা।
“ওওও, অন্তুবাবুর রাগ হয়েছে অন্যকে দিয়ে কাজটা করিয়েছি বলে?”
“রাগ কেন হবে, তবে এটা এক্সপেক্ট করিনি”, এবারে আমি অকপট।
“কি এক্সপেক্ট করিসনি? পরপুরুষকে নিজের বুকে হাত দিতে দেব?”
“ঠিক তা নয়, তবে তোর যা ইমেজ…”, চোখ বড় বড় করছে দেখে পাদপূরণে ইচ্ছাকৃত খোঁচা দিই সামান্য, “হাজার হোক সতীরানী বলে কথা!”
একটু থমকাল। ‘সতীরানী’ সম্বোধনের চিরকালীন স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া নেই, দূরমনস্ক চোখে কি যেন ভাবছে। ব্যাপারটা কি? রহস্যময়ী যে ক্রমশ আরও রহস্যের আবর্তে নিয়ে যাচ্ছে! নাঃ, এই উৎকণ্ঠা আর নেওয়া যায় না। উত্তরের আশায় অল্প ফোলা বাম স্তনের ওপর মৃদু চাপ দিই। আঙুলে লাগে কি এক অজানা উষ্ণতার ছোঁয়া।
“May be not any more”, যেন বহুদূর থেকে ভেসে আসে ওর কণ্ঠস্বর।
“মানে?”
“I think you may now stop calling me that.”
“Call you what, সতীরানী?”, নীরবে ঘাড়ের ঈষৎ সঞ্চালনে বুঝিয়ে দেয় সম্মতি। ওর দৃষ্টি এখনও নিবদ্ধ দূরে কোথাও।
এ যে ক্রমাগত বিষয়টা জটিল করে তুলছে! আর তো পারা যায় না, একটা হেস্তনেস্ত হওয়া দরকার। বোঝাপড়ার অভিপ্রায়ে পাশ ফিরে শুই। আমার নিঃশ্বাস এখন সরাসরি ওর গালের লালচে আভায়। সদ্যস্নাত পবিত্র মুখটাতে কি এক দ্বন্দ্ব অবিরাম খেলা করে বেড়ায়। চোখের কোণে সংশয়ের পাণ্ডুরতা। বাঙ্ময় হয়ে উঠতে চাওয়া ঠোঁটগুলো তিরতির কাঁপছে। অবাধ্য চুলের ঊর্ণনাভে ঢেকে থাকা এই কুহকিনীর আকর্ষণ আজও ফিকে হল না এতটুকু। নিষ্পলক চেয়ে থাকি। বুকের ভিতর থেকে একদলা আবেগ এসে ধাক্কা মারে কণ্ঠনালীতে। গলার কাছটা শুকিয়ে গেছে, একটু জল খেতে পারলে ভাল হত। অদম্য পিপাসার বশেই কিনা কে জানে, ওর পূর্ণযুবতী স্তনের ওপর আরও দৃঢ় হয় আমার মুঠি। যেন প্রাণপণে ঘোষণা করতে চাইছে নিজ অধিকার। কি চায় মন? খানিক আগেই যাকে অন্য পুরুষ হয়ে রমণ করেছি উন্মাদের মত, তার শরীরে বিজাতীয় স্পর্শের সম্ভাবনায় আপাদমস্তক অস্থির হয়ে উঠছে কেন? ঈর্ষায় ছটফটিয়ে ওঠে হৃদয়, চেনা নারীদেহের উপত্যকায় পুনর্বার আক্রমণের ইচ্ছে চাগাড় দেয় ভিতর থেকে। কিন্তু… উপায় নেই যে!
অস্থিরতাটা বোধহয় সঞ্চারিত হয়েছে এক মন থেকে আরেক মনে। দৃষ্টি না ফিরিয়েই আবার ও কৈফিয়তের পাতা ওল্টালো।
“তুই চাইতিস তো আমি অন্যদের সাথে… That I interact with other men more openly. Well, perhaps, I have crossed the barrier by a few miles.”
হেঁয়ালির আবরণ ছাড়িয়ে একটা আপাত অসম্ভব সম্ভাবনা উঁকি দিচ্ছে নাকি? অশান্ত হয়ে উঠতে থাকা মনকে কোনওমতে সামলাই, মুখের রেখায় অবশ্য তার প্রভাব পড়ে না তেমন। নির্নিমেষ চাহনিতে জিজ্ঞাসা ফুটে থাকে। ও-ও বুঝতে পেরেছে সেটা। আগের কথার খেই হারিয়ে কিঞ্চিৎ অসংলগ্নভাবেই বলে চলে…
“লাস্ট সানডের পরে আমার মেণ্টালিটি অনেকটা চেঞ্জ করেছে। সঞ্জীবের সাথে ওর বাড়িতে… I am not saying যে ওটা দারুণ এক্সপেরিয়েন্স ছিল….. But, but… I learned a lot from that. He is not at all a bad guy, rather I would say the opposite. And steal he ended up molesting me, even though… he, he loves me.”, যেন বহুযুগের ওপার থেকে এইমাত্র আমার দিকে চোখ মেলে তাকাল… পূর্ণদৃষ্টিতে, স্পষ্ট ভাষায় উচ্চারিত পরবর্তী শব্দগুলো, “Yes I am most certain about it. The way he was touching me, so tender, so gentle… আমি তোকে ঠিক বোঝাতে পারব না বাট ট্রাস্ট মি, মেয়েরা এগুলো ঠিক বুঝতে পারে। ইভন যখন ও আমার… বুকে হাত রেখেছিল… পাগলের মত টিপছিল তখনও আমার একটুও ব্যথা লাগেনি বরং ওকে থামাবার বদলে ওর চোখে চোখ আটকে গেছিল। I could read his mind in his deep eyes… It was like he was begging me for something, something he knows himself can not be his… আর ও তারপর যেই আমার… ব্রেস্টগুলো চুষতে লাগল, I was totally cluless what to do. I can’t blame entirely, আমি নিজেই তো ওরকম সিডাকট্রেস এর মত সেজে ওর কাছে গেছি। I realised what telling effect my body can have on a decent chap like him. আর ওর কামড়ানোটা, it was just a moment of frenzy. He did not bite me like a rapist, it was more like a… a love bite from an excited lover.”
ওর একটানা বলে চলা কথাগুলো যেন এক কান দিয়ে প্রবেশ করে আরেক কানের দিকে প্রবাহিত হয়ে ঘরের বাতাসে ফের মিশে যাচ্ছে। কর্ণেন্দ্রিয়ের সাথে মস্তিষ্কের যোগাযোগ বুঝিবা এখন বিচ্ছিন্ন, কিংবা আমার বোধশক্তিটাই আকস্মিকতার মরচে পড়ে ভোঁতা হয়ে গেছে? অসাড় জিহ্বা তারইমধ্যে যান্ত্রিক প্রতিবর্তের তাড়নায় কোনওমতে সচল হল।
“তাহলে চড় মারলি কেন?”
বহুক্ষণ পরে বিচ্ছিন্ন হল দৃষ্টিসংযোগ। বিচ্ছিন্ন হল, নাকি বিচ্ছিন্ন করল? ওর মুখের ওপর দিয়ে চকিতে খেলে যাওয়া রক্তাভা কিসের ইঙ্গিত দিচ্ছে, সে কি ওর লুকিয়ে রাখা অপরাধবোধ? না, দৃঢ়প্রত্যয়ে আবার আমার দিকে ফিরেছে, চোখের মধ্যে সংকল্প। যেন দাঁতে দাঁত চেপে স্বীকার করবে সত্যিটা। করলও তাই।
“অ্যাকচুয়ালি সেটার কারণ সঞ্জীব নয়, আমি নিজে”, প্রেমিকের বিস্মিত দৃষ্টি উপেক্ষা করে বলে চলল, “জানি না এটা ওয়াইনের এফেক্ট ছিল নাকি ওর চোখের আকুতি, But I was slowly getting turned on. May be by the ambience, May be because of our close proximity, may be because of your long absence or may be… seeing his giant tool.”, গলাটা শেষদিকে কেমন কেঁপে গেল, সেইসঙ্গে টের পেলাম ওর শরীরে মৃদু কম্পন। অঝোরধারে বরিষণের মাঝে মাধবীলতার ফুলে যেমন থিরথির কাঁপন জাগে… সামান্য কিন্তু নিশ্চিত, একটানা লয়ে কাঁপতে থাকে… অনেকটা সেরকম। এ কাঁপা ভয়ের ততটা নয়, রোমাঞ্চের যতখানি। যেন কুমারীর অপাপবিদ্ধ দেহ সহসা স্পর্শ করে ফেলেছে কোনও অচেনা পুরুষের দীর্ঘ, সুকঠিন শিশ্ন। আচমকাই মাথার মধ্যে বিদ্যুচ্চমক, ওর শরীরও কি তবে সেই নিষিদ্ধ স্পর্শ স্মরণ করে রোমাঞ্চে পুলকিত হচ্ছে? ভাবনার মাঝেই অনুভব করলাম কোমরের নীচে, দুই উরুর সন্ধিস্থলে ক্রমশ জাগ্রত পৌরুষের অস্তিত্ব… আরেকটু উত্তেজনার ইন্ধন পেলেই যা ছুঁয়ে ফেলবে প্রেয়সীর উন্মুক্ত নিরাবরণ জঙ্ঘা। সন্তর্পণে নিজের দেহকাণ্ডকে কিছুটা সরিয়ে নিই, আসন্ন বিপদের আশঙ্কায় চোখ চলে যায় ওর চোখের দিকে, দেখে ফেলেনি তো? নাঃ, সে নিজের স্মৃতিচারণে বিভোর…
“It was a completely new situation I never faced before. ও যেন একটা ট্রান্সের মধ্যে চলে গেছিল। গোটা মুখচোখ লাল, He was breathing so heavily, Like a drowning man gasping for air and… I didn’t tell you this before, he was continuously murmuring that… He loves me”, ও নিজেই বুঝি দম নেওয়ার জন্য একটু থামল, বুকভরা বাতাসের ভারে পেলব স্তনগুলো উত্থিত হল ইঞ্চিখানেক, “It has been a long long time since anyone but you uttered those words to me… I got আই গট… I was so horny that I can’t tell you Honey! ফাইন্যালি ও যখন আমার… বুবস নিয়ে খেলা করছিল, I suddenly felt my nipples were poking through my blouse, Oh God! You can’t imagine how embarrassing it was for me… And at the same time how exciting, how sexy… আমি প্লেজারের চোটে ওর মাথাটা নিজের বুকে জড়িয়ে ধরেছিলাম for a moment, আর তখনই ও… He bit my breast, right there”, পলকের জন্য বিরতি। তারপর আবার মুখর রমণীকণ্ঠ, “I felt enormous pain and I also could feel the absolute pleasure through that pain. আমি… For a moment চাইছিলাম ওকে পেতে… may be ওকে নয়, ওর মধ্যে দিয়ে তোকেই পেতে চাইছিলাম… আমি জানি না কি চাইছিলাম এক্স্যাক্টলি… Don’t really know what was that. And then I came to my senses… আর আমার এত গিলটি ফিল হচ্ছিল! I was so so ashmed of myself, … I was trying to get rid of his embrace, but I couldn’t… He is so strong, but I had to get out of that mess at any cost… so, I had no option but to slap him… বাকিটা তো তুই অলরেডি জানিস”
নারীর কথকতা স্তব্ধ হয়েছে, অন্তত সাময়িক। পরপুরুষের আলিঙ্গনে কাটানো মুহূর্তের রোমন্থন নিজ প্রেমিকের কাছে করার গ্লানিতে, অথবা রোমাঞ্চঘন সেই বিকেলের ক্ষণিক উত্তেজনার লীনতাপে, এখনও তার দেহ উষ্ণতা বিকিরণ করে চলেছে ক্রমাগত। স্মৃতিসঞ্জাত আবেগে অধর স্ফুরিত, শ্বাস পড়ছে ঘন ঘন, দয়িতের হাতের মুঠোয় ধরা পড়া স্তনের বৃন্ত জেগে উঠেছে আচমকা। ওর বুকের লাবডুব চতুর্গুণ হয়ে আছড়ে পড়ছে আমার করতলে। শ্রান্ত, উদ্বেল মানবী টেরও পায়নি তার অনাবৃত জঙ্ঘাদেশে কঠিন পৌরুষের আতপ্ত স্পর্শ। হঠাৎ মায়ায় ঘিরে ধরল আমাকে, নিজের সবটুকু সততা উজাড় করে প্রেমিকের কাছে এমন স্বীকারোক্তি দিতে আজকের দিনেও ক’টা মেয়ে পারে? পারলেও তা করে কতজন? আমি নিজেই কি পেরেছি মনের দরজা ওর সামনে হাট করে খুলে ধরতে?
মুহূর্তেকের জন্য বিষাদগ্রস্ত হয়ে পড়ার আগেই মাথাচাড়া দিয়েছে দুর্নিবার কৌতূহল… বম্বেতে কি ঘটেছিল সেটাই তো এখনও অজানা রয়ে গেল! স্তনের ওপরে মৃদু চাপ দিই মনোযোগ আকর্ষণের জন্য, কোনও সাড়া মেলে না। হয়তো ধরে নিয়েছে এতদিনের অদর্শনের পর হাতের খিদে মেটাচ্ছি এইভাবে… অগত্যা পেষণের মাত্রা বাড়াতে বাধ্য হই।
সকাল থেকে উপর্যুপরি দু’বার রমণের ক্লান্তি আর দ্বিতীয় পুরুষের লাঞ্ছনার স্মৃতির অবসাদ সারা দেহমনে মেখে শুয়ে থাকা নারী চোখ মেলে তাকায়। মিনতিভরা চাহনিতে নীরব আর্তি। সে সব অগ্রাহ্য করে স্বার্থপর আমি প্রশ্ন করে চলি…
“অয়েণ্টমেণ্ট লাগালো কখন?”
মৃন্ময়ী মূর্তি সচকিতে নড়েচড়ে ওঠে, “বললাম তো বম্বেতে যাওয়ার পর”, খানিক ভেবে নেয় কি যেন, “… এখনই শুনবি?”
শোনার জন্য যে কি অপরিসীম আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষমান এই হৃদয় তা তো আর প্রকাশ করতে পারি না! তাও মনের ভাব যথাসাধ্য গোপন করে চেষ্টা করি রাজি করানোর, “হ্যাঁ বল, শুনছি তো”
“উম্মম্ম পরে বলব”, সারা গা মুচড়ে অদ্ভুত মাদকতাময় এক দেহভঙ্গি করে আদরিণী, “এখন কিছু খাওয়া না প্লিজ! I am very hungry Honey, সেই সকাল থেকে না খেয়ে আছি”
এমন কাতর অনুনয়ের কাছে পুরুষ চিরকাল অসহায়। উদগ্র কৌতূহল আপাতত নিবৃত্ত করে উঠে যাই কিচেনের দিকে। না শোনা অবধি আত্মজল্পনাই সম্বল। যাওয়ার আগে অবশ্য একটু আদিম রসিকতার লোভ সংবরণ করতে পারি না, “না খেয়ে আছিস বলছিস কেন, খাওয়ালাম যে এত কিছু?”
“কই কি আবার খাওয়ালি, I am literally starving!”, অকৃত্রিম জিজ্ঞাসা ওর চোখে।
ঠোঁটের অনুচ্চার সঞ্চালনে চ-কারান্ত তিন-অক্ষর শব্দের উল্লেখমাত্র রাঙিয়ে ওঠে দুই গাল, সলজ্জ কণ্ঠ বেজে ওঠে, “উফফ You are truly incorrigible… শেমলেস কাঁহিকা!” চোখ পাকিয়ে ছদ্ম কোপের আভাস ফুটিয়ে তুলে চকিতে গাত্রোত্থান, এলানো একঢাল চুলকে খোঁপার শাসনে বেঁধে ব্যস্ত হয়ে পড়ে কয়েক সপ্তাহব্যাপী গিন্নীপনার বিরতিতে ছেদ টানতে। ট্রলিব্যাগের আচ্ছাদন খুলে বের করছে ভেতরের যাবতীয় সামগ্রী, একে একে গুছিয়ে রাখছে জায়গামত। খানিকপরেই মতপরিবর্তন, দৃষ্টি পড়েছে আসবাবপত্রের ওপর। অগোছালো টেবিল এক মিনিটের মধ্যেই তকতকে পরিষ্কার, বাতিল কাগজ আর অন্যান্য অপ্রয়োজনীয় জিনিষের ঠাঁই হল ট্র্যাশবিনে। চোখ সরু করে নাক কুঁচকে গভীর অভিনিবেশে নিরীক্ষণ করছে চারদিক, ব্যাচেলর পুরুষের ঘরের পরিচ্ছন্নতার ছিদ্রান্বেষণে মগ্ন। ব্যস, শুরু হয়ে গেল নিরবচ্ছিন্ন ঘরকন্না, এখন চলবে ঘণ্টাখানেক।
এই হল শাশ্বত নারী। ক্ষণে ক্ষণে রূপ বদলায়। কখনও মোহিনী, কখনও বা মানিনী, পরক্ষণেই ঘর-গেরস্থালিতে বুঁদ হয়ে থাকা অভিজ্ঞ গৃহিণী। হাজার বছর পেরিয়ে গেলেও তার আবেদন একইরকম অমলিন!
প্যানকেক বানানোর উদযোগ করছি, বেডরুম থেকে রান্নাঘরের সংকীর্ণ পরিসরে ভেসে আসছে বিক্ষিপ্ত দু’-এক টুকরো অসন্তোষবার্তা। ঘর গোছানোর ফাঁকে আপনমনে গজগজ করে চলেছে। তার অধিকাংশ, বলাই বাহুল্য, আমায় এবং আমার পারিপাট্যের অভাবকে লক্ষ্য করে… কান না দিয়ে একাগ্রচিত্তে নিজের কাজ করে যাই। আর যাই হোক এ শর্মার রান্নার হাতকে উনি আজ অবধি অবজ্ঞা করতে পারেননি। জবরদস্ত একটা ব্রেকফাস্ট মুখের সামনে পেলে আপনা থেকেই এত তর্জন-গর্জন থেমে যাবে। তখন পটিয়ে পাটিয়ে বম্বের ঘটনাটা পেট থেকে বের করার আরেকটা চেষ্টা করব… অনবরত এ উৎকণ্ঠা আর সহ্য হয় না। আচ্ছা কি এমন ঘটেছিল যে পরে বলবে বলে ঝুলিয়ে রাখল? সঞ্জীবের ফ্ল্যাটের ঘটনার থেকেও বেশি সিরিয়াস কিছু? নাকি এমনিই ক্লান্ত হয়ে গিয়ে বিশ্রাম চাইল? অথবা প্রথম দিনের ঘটনাটা আরও একবার বলে আমার প্রতিক্রিয়াটা যাচিয়ে নিল, এখন বৃহত্তর সত্য উন্মোচনের জন্য মানসিক প্রস্তুতি নিচ্ছে… দুত্তোর, একা একা এই আত্মপীড়নের কোনও অর্থ হয়! তার চেয়ে বরং ডিম ফেটানোয় মন দিই।
এতাল বেতাল ভাবনার মাঝে সহসা যতিচিহ্ন, কিচেনের দ্বারে এসে উপস্থিত মহারানী। কণ্ঠস্বরে অসহিষ্ণুতার প্রবল ছোঁয়া। কি ব্যাপার, ভৃত্যের খিদমদগারিতায় ভুল ধরতে নাকি? না অন্য কোনও উপলক্ষ? সুতীক্ষ্ণ ভর্ৎসনায় দ্রুতই পরিষ্কার হয়ে গেল।
“কি ব্যাপার, কানের মাথা খেয়েছিস নাকি? ডাকছি এত করে শুনতে পাচ্ছিস না???”
“ও আচ্ছা সরি… মানে বুঝতে পারিনি ঠিক”
“ওঘরে দয়া করে আয় একবার”
“এখন যেতে পারব না, কি হয়েছে বল না”
“আমি কি হাত গুটিয়ে বসে থাকব ততক্ষণ, কি এমন রাজকার্য করছিস?”, বামাকণ্ঠ একপর্দা উঁচুতে ঝেঁঝে ওঠে।
আপনারই প্রাতরাশের বন্দোবস্ত করছি মালকিন, তবে সে কথা তো এখন মুখে আনার জো নেই। অগত্যা শান্তশিষ্ট পত্নীনিষ্ঠের মত লাঙ্গুল উঁচিয়ে সুড়সুড় করে ওনাকে অনুসরণ করি। শয্যাকক্ষে এসে চক্ষু চড়কগাছ। ট্রলিব্যাগ আর দেয়াল-লাগোয়া কাবার্ডের একটা জামাকাপড়ও বোধহয় স্বস্থানে নেই। স্তূপীকৃত বস্ত্রসম্ভার ডাঁই করে রাখা মেঝেতে। কয়েকটা খাটের ওপর বা এদিক সেদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে। যেন দক্ষযজ্ঞের আয়োজন হচ্ছে। সবকিছুর কেন্দ্রস্থলে উদ্ভ্রান্তের মত দাঁড়িয়ে দক্ষকন্যা… ওহো ঐ নামটা তো এখন নাকি আর প্রযোজ্য নয়! অসহায়ের মত পর্যায়ক্রমে আমার মুখ আর কাপড়ের রাশি দেখে চলেছে, একটু আগের দাপট কোথায় উধাও…
“কি করি বল তো, কোনটা কোথায় থাকবে কিচ্ছু বুঝতে পারছি না”, ন্যাকামি মেশানো কাঁদো কাঁদো গলায় করুণ আর্তি। ঠেকায় পড়লে প্রায়শই এই স্বর বেরিয়ে আসে।
“তোকে এখন এসব হাঁটকাতে কে বলল? সবকিছু না গোছাতে পারলে কি পিছনে কামড়ায়?”
“চুপ কর, ওয়ান উইক হয়ে গেছে ফিরেছিস, এখনও ব্যাগ যে কে সেই পড়ে আছে… নিজে গোছাসনি কেন? কাবার্ডটার কি অবস্থা দেখেছিস? Everythinh is in dis-array এভরিথিং ইজ ইন ডিসঅ্যারে”, নাও ঠেলা… যত দোষ সব এখন এই শ্রীমান নন্দ ঘোষ মহাশয়ের।
“আচ্ছা ঠিক আছে আগে খেয়ে নে তারপরে না হয় এসব করিস”
সমাধানটা মনঃপূত হয়নি সেটা দৃশ্যতই বোঝা যাচ্ছে। গোঁজ হয়ে আবার ব্যাপৃত নিজের গৃহস্থালীতে, আমিও আরব্ধ রন্ধনকার্য সমাধা করতে পাকশালায়। প্রাতরাশ বানানো সমাপ্ত, একে একে ট্রে তে সাজিয়ে নিচ্ছি টোস্ট, প্যানকেক, মাখনের কৌটো, ধূমায়িত কফির পেয়ালা। এঘরে এসে আবারও চমৎকৃত, অল্প সময়ের মধ্যে কি তুরন্ত পট-পরিবর্তন! মেঝেতে পা ছড়িয়ে থেবড়ে বসে এই চার দেওয়ালের অঘোষিত সম্রাজ্ঞী, হাতে ধরা সদ্যকেনা নিভাঁজ ময়ূরকণ্ঠী বরণ কাঞ্জিভরম সিল্ক। থেকে থেকে আঘ্রাণ নিচ্ছে সন্তর্পণে, উজ্জ্বল চোখের তারায় হঠাৎ-পাওয়া ভাললাগার পরশ। আমায় আসতে দেখে সামলে নেওয়ার একটা ব্যর্থ প্রয়াস হল বটে, তবে গদগদ স্বরে পুরোপুরি লুকোনো গেল না…
“কার জন্য এটা?”
বলিহারি! ন্যাকামির কোনও সীমা-পরিসীমা নেই! তাও একঝলক স্বস্তি ছুঁয়ে গেল আমায়। ঝাড়া তিনটি ঘণ্টা সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগে, খ্যাতনামা বস্ত্রবিপণির বিক্রেতাদের ক্রমাগত উত্যক্ত করে খরিদ করা তবে বিফলে যায়নি!
“খুব স্পেশ্যাল একজনের জন্য”
“তাই? আমি কি চিনি তাকে? Any new girlfriend that I should be worried about?”
“নোপ, For the good old one”, পাশে বসে তেরছাভাবে জড়িয়ে নিয়েছি আলিঙ্গনে। মনের সুখে চটকাচ্ছি কমকান্তি তনু। ও যেন সোহাগে গলে যাচ্ছে আমার আলতো নিষ্পেষণে…
“উম্মম্মম্মম্ম”, মুগ্ধ আঙুল তারই মধ্যে বিচরণ করছে শাড়ির আঁচলের প্রান্তদেশে, মেপে নিচ্ছে শৈল্পিক কারুকাজের ঘনত্ব। পছন্দ যে হয়েছে সেটা জানলার কাঁচ ভেদ করে পর্দার আড়াল সরিয়ে জোর করে ঘরে ঢুকে পড়া দিনের আলোর মতই স্পষ্ট। সানুনাসিক গলায় অনুযোগের ছদ্মবেশে প্রশস্তির সুর, “কি দরকার ছিল এত দাম দিয়ে কেনার?”
স্থির থাকা গেল না। মুহূর্তে রমণীকে আরও কাছে টেনে নিয়েছি, এত যত্নে কেনা বস্ত্রভূষণ দূরে সরে গেছে অবহেলায়। দুই শরীরের মধ্যে একচিলতে বাতাস গলারও জায়গা নেই আর। প্রবল আশ্লেষে বাঁধা পড়ল মানব-মানবী। উন্মত্ত, দিশেহারা চুমুতে ভরে যাচ্ছে দু’জনের গাল, গলা, চোখ, ঠোঁট। তৃষিত চকোরের মত পান করছি অধরসুধা, ছোট ছোট দংশনের যাতনায় শিউরে উঠছে ওর বিম্বোষ্ঠ। প্রথম ফাল্গুনের মৃদুমন্দ সকালেও নাকের শীর্ষবিন্দুতে জমা হয়েছে উদ্দীপনার স্বেদকণিকারা। সোহাগে অভিভূত কবরী বাঁধনহারা। এলো কেশ অশান্ত পাহাড়ি ঝরনার মত প্রবাহিত হল আধখোলা পিঠের বক্রতায়, পীনোন্নত বুকের তরঙ্গায়িত ভূমিতে। দু’-এক ফোঁটা অলকবিন্দু ছিটকে ঝরে পড়েছে আমার মুখেও, গালের উপর সযত্নে আদরের চিহ্ন এঁকে দিয়ে গেল। পেলব দুই বাহু আকর্ষণে বেঁধে নিতে গিয়েও হঠাৎ দূরে ঠেলে দিয়েছে। পুরুষের অবুঝ দাবীকে শাসন করছে কণ্ঠলগ্না নারী।
“উম্মম্ম হানি, এখন আর না”
“কি হল, এদিকে আয়”, বিচ্ছেদের আশঙ্কায় খামচে ধরি চন্দনের অদৃশ্য পত্রলেখা-শোভিত বাম পয়োধর।
“খেতে দিবি না? সকাল থেকে তো শুধু চটকেই যাচ্ছিস”
অতঃপর, মিলন-প্রচেষ্টায় ক্ষান্তি দিতে হয়। নীরব আহারে ব্যস্ত দু’জনেই, ওর মুগ্ধ দৃষ্টি ক্ষণে ক্ষণে ছুঁয়ে যাচ্ছে অদূরে বিছানো কাঞ্জিভরমের মনোলোভা দেহপট। এখনও জানে না এর থেকেও চমকপ্রদ উপহার অপেক্ষা করে আছে। মিষ্টি মুখের প্রতিটি রেখায় চুঁইয়ে পড়া গোপন তৃপ্তির আভাস তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করি, সারপ্রাইজটা একটু পরে ভাঙলেও চলবে।
পোর্সেলিনের পেয়ালার কোণ থেকে উঁকি দেয় দুষ্টুমি মাখানো চোখ, “অ্যাই, সিনেমা দেখতে যাবি?”
“কি সিনেমা?”
“উম্ম সেটা তো পরে ডিসাইড করলেও চলবে”
“আজ আর বেরোনোর কি দরকার, সবে তো ফিরলি”, অনীহার সুরটা চাপা থাকে না আমার গলায়। আরও আদরের আকাঙ্ক্ষা বাকি রয়েছে, তিনটে অদেখা সপ্তাহের চাহিদা দু’বারের চরম স্খলনেও পূর্ণ হয়নি ঠিকমত।
“গতরটা একটু নাড়া না, এত কুঁড়ে কেন তুই, উফফ!”, অসহিষ্ণু রমণী এত সহজে হার মানতে নারাজ।
এহেন অভিযোগের পর নিতান্ত পুরুষত্বের খাতিরেই রাজি হওয়া ছাড়া গত্যন্তর নেই। অবশ্য একটা আউটিং হলে মন্দ হয় না, তাছাড়া… শত হোক বিবির খুশিতেই মিঞার খুশি।
“কখন যেতে চাস?”
“Now its almost ten thirty, এখনই রেডি হই, তাহলে সাড়ে বারোটার শো তে আরামসে পৌঁছে যাব”
“OK, as you wish”
“রেডি হচ্ছি তাহলে, তুই অনলাইনে দেখ কোন টিকিট বুক করবি”
অর্থাৎ ওনার নিজের আলাদা কোনও পছন্দ নেই। অর্থাৎ সিনেমা দেখাটা মুখ্য নয়, মুখ্য বেড়ু-বেড়ু করতে বেরোনো। অর্থাৎ এখন উনি ঘটা করে সাজতে বসবেন। মন্দ কি!
ইণ্টারনেটে প্রবেশের আগেই হঠাৎ মনে পড়েছে, ট্রলিব্যাগের ভিতরে সংগোপনে রক্ষিত লঁজারির প্যাকেটটা বের করে বাড়িয়ে ধরি। অপ্রত্যাশিত চমকে নিখুঁত-চর্চিত ভ্রূলতায় ভাঁজ।
“What’s this?”
নিরুচ্চারে হাতে তুলে দিই। প্যাকেটের গায়ে বড় বড় হরফে ছাপা নাম আর বিবরণী নজরে আসতেই পানপাতা মুখশ্রী লজ্জারাঙা। চোখে অপার বিস্ময়, প্রথম প্রভাতের অরুণিমার আভা দুই কমনীয় গালে। কে যেন সেখানে মুঠো মুঠো আবির ছুঁড়ে মেরেছে!
কিছুক্ষণ এই অপার্থিব দৃশ্যের সামনে দাঁড়িয়ে থেকে লিভিং রুমে চলে আসি। আন্তর্জালে সন্ধান করছি নিকটবর্তী প্রেক্ষাগৃহে মনোমত চলচ্চিত্রের। মাথার মধ্যে অবশ্য অন্য ছক ঘুরে চলেছে, এমন মুভি বাছতে হবে যাতে ওর কোমল হৃদয় সহজেই আর্দ্র হয়ে পড়ে। বম্বের পুরো ঘটনাটা জানা সেক্ষেত্রে সহজতর হবে, আবেগের তোড়ে সব বলে ফেলার প্রভূত সম্ভাবনা। আবার সিনেমা দেখে বেশি কান্নাকাটি করলেও মুশকিল, রোদনোন্মুখ নারীর উচ্চারণ বোঝাই তখন দায়। অনেক খুঁজেপেতে একটা হলিউডি রম-কম পাওয়া গেল, টিকিটও সহজলভ্য। এটাই এই মুহূর্তে প্রয়োজন, মুখ খোলানোর জন্য।
দক্ষ ষড়যন্ত্রকারীর মত নিপাট ভালমানুষ মুখ করে টিকিট বুক করলাম দু’জনের, কোণের ব্যালকনির আধো-অন্ধকারের নিভৃতে। চড়ামূল্যে ক্রয় করা একফালি নির্জনতা। বিশ্বায়নের যুগে এগুলোও এখন খরিদযোগ্য।
হঠাৎই নিঃশব্দচরণে পাশে এসে হাজির জেনানা, উল্টোদিকে মুখ করে রয়েছে। বাঁ হাতে ধরা বাহারি কঙ্কতিকা, দেখেই বোঝা যায় কেশসজ্জা মাঝপথে। ঈর্ষণীয় ভরাট দেহলতা সলাজে আবৃত করে রেখেছে শুধুমাত্র ওপর-নীচের অন্তর্বাস। সদ্য পাওয়া প্রণয়-উপচার। জলপ্রপাতের মত চুল আছড়ে পড়েছে সামনে বুকের উপত্যকায়, মসৃণ নির্লোম পিঠের পরিমিতি প্রায় সম্পূর্ণ উন্মুক্ত। জলপাইবর্ণা ত্বকের চালচিত্রে ব্যতিক্রম কেবল আধুনিকতম কাঁচুলির দুই প্রান্ত। অনাবদ্ধ।
মেঘবরণ কেশের মধ্যে ব্যস্ত চিরুনি চালাতে চালাতেই নরম স্বরে অনুরোধ ভেসে এল,
“হুকটা লাগিয়ে দে না প্লিজ!”
#অসমাপ্ত#